وَالْمُسْنَدُ الْمُتَّصِلُ الإسْنادِ مِنْ| رَاوِيهِ حَتَّى الْمُصْطَفَى وَلَمْ يَبِنْ

“মুসনাদ”: যার সনদ রাবি থেকে মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মিলিত এবং কোথাও বিচ্ছেদ ঘটেনি”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের ষষ্ঠ প্রকার মুসনাদ।

‏مسْنَدُ‏ কর্মবাচক বিশেষ্য, অর্থ সম্পৃক্ত ও মিলিত বস্তু। إسناد ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য থেকে উদ্‌গত। إسناد الشيء إلى الشيء অর্থ এক বস্তুকে অপর বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত করা। এ থেকে রাবি বা গ্রন্থকার থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মিলিত হাদিসকে ‘মুসনাদ’ বলা হয়।

কেউ বলেন: سند ধাতু থেকে مسند উদ্‌গত। سند শব্দের অর্থ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উঁচু ভূমি। রাবি বা গ্রন্থকার যখনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সনদকে নিয়ে যান, তখন তিনি সনদকে উচ্চ শিখরে পৌঁছে দেন, তাই তার বর্ণিত হাদিসকে মুসনাদ বলা হয়। রাবিকে বলা হয় مسنِد "بكسر النون" আর গ্রন্থকার থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত রাবিদের দীর্ঘ পরম্পরাকে বলা হয় সনদ।

আরবদের প্রবাদ فلان سنَد ‘অমুক ব্যক্তি গ্রহণযোগ্য’ থেকেও ‏‏مسْنَدُ‏ উদ্‌গত হতে পারে। এ থেকে সনদের পরম্পরায় বাতলানো মতনকে মুসনাদ বলা হয়। কারণ, মতনের শুদ্ধতার জন্য মুহাদ্দিসগণ সনদের উপর নির্ভর করেন।[1]

‏‏ُمسْنَدُ‏ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “রাবি থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মুত্তাসিল সনদে বর্ণিত হাদিস মুসনাদ, যার সনদে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোনো ছেদ বা ইনকিতা‘ নেই”। এটাই অধিকাংশ আলেমের সংজ্ঞা। এখানে رَاويهِ দ্বারা উদ্দেশ্য হাদিস লিপিবদ্ধকারী গ্রন্থকার, যেমন বুখারি, মুসলিম প্রমুখগণ, সনদের যে কোনো রাবি নয়।

মুসনাদের দু’টি শর্ত:

১. মারফূ‘: মুসনাদ হওয়ার জন্য হাদীসটি মারফূ‘ তথা হাদীসের মূল বক্তব্য (মতন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হওয়া জরুরি। অতএব মাওকুফ ও মাকতু‘ মুসনাদ নয়। কারণ, ‘মাওকুফে’র শেষ প্রান্ত সাহাবি, মাকতু‘র শেষ প্রান্ত তাবে‘ঈ।

২. মুত্তাসিল: মুসনাদ হওয়ার জন্য সনদ মুত্তাসিল হওয়া জরুরি। অতএব মুরসাল, মুনকাতি‘, মু‘দ্বাল, মু‘আল্লাক ও মুদাল্লাস মুসনাদ নয়। কারণ, এগুলোর সনদ মুত্তাসিল নয়।

মারফূ‘ ও মুত্তাসিলের সমন্বয়ে মুসনাদ হয়। মারফূ‘র সম্পর্ক মতনের সাথে, অর্থাৎ সনদ মুত্তাসিল হোক বা মুনকাতি‘ হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কর্মকে মারফূ‘ বলা হয়, পক্ষান্তরে মুত্তাসিলের সম্পর্ক সনদের সাথে, মতন মারফূ‘ হোক বা মাওকুফ হোক। অতএব আপনি যখন বললেন: هذا حديث مسند তার অর্থ ‘এ হাদিস মারফূ‘ ও মুত্তাসিল’, এতে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোনো ইনকিতা‘ নেই। এ বাক্য هذا حديث متصل مرفوع থেকে অধিক শক্তিশালী, কারণ এতে স্পষ্ট ইনকিতা‘ না থাকলেও অস্পষ্ট ইনকিতা‘ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কেউ বলেন: মুসনাদ অর্থ আরো ব্যাপক, তাদের নিকট বক্তার সাথে সম্পৃক্ত হাদিস মুসনাদ। তারা মুসনাদের আভিধানিক অর্থকে প্রাধান্য দেন। আভিধানিক অর্থানুসারে এক বস্তুর সাথে মিলিত অপর বস্তুকে মুসনাদ বলা হয়। এ সংজ্ঞা মতে মারফূ‘, মাওকুফ ও মাকতু‘ মুসনাদের অন্তর্ভুক্ত, সনদ মুত্তাসিল হোক বা মুনকাতি‘ হোক। কারণ, হাদিসের এসব প্রকার হয় মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত, বা সাহাবির সাথে সম্পৃক্ত বা তাবে‘ঈ ও তাদের পরবর্তী কোনো মনীষীর সাথে সম্পৃক্ত। আভিধানিক অর্থানুসারে এ সংজ্ঞা অধিক যুক্তিসংগত, তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত হাদিসকে মুসনাদ বলেন।

[1] আন-নুকাত: (১/৪০৫), আল-জওয়াহিরুস সুলাইমানিয়াহ: (১৪৬)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে