وَما لِتابِعٍ هُوَ الْمَقْطُوعُ |وَما أُضِيفَ لِلنَّبِيْ الْمَرْفُوعُ

“আর যে হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তা-ই মারফূ‘। আর যা তাবে‘ঈর সাথে সম্পৃক্ত করা হয় তাই মাকতু‘”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের চতুর্থ ও পঞ্চম প্রকার মারফূ‘ ও মাকতু‘। হাদিসের এ দু’প্রকারের সম্পর্ক মতনের সাথে।

এখান থেকে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বক্তার বিবেচনায় হাদিসের প্রকারসমূহ উল্লেখ করেছেন। বক্তার বিবেচনায় হাদিস চার প্রকার: ১. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম, সমর্থন ও শারীরিক গুণগান। ২. সাহাবিদের কথা ও কর্ম। ৩. তাবে‘ঈদের কথা। ৪. আল্লাহ তা‘আলার বাণী।

লেখক চতুর্থ প্রকার উল্লেখ করেননি, আমরা সম্পূরক হিসেবে তার আলোচনা করব। মওকুফ বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ধারাবাহিকতা রক্ষা করেননি। তাই অনেকে তার সমালোচনা করেছেন।

‏‏َمرْفوعُ‏‏ এর আভিধানিক অর্থ উঁচু, উত্তোলিত বস্তু ও উচ্চ শিখরে উন্নীত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত হাদিস সনদের সর্বশেষ ও উচ্চ শিখরে উন্নীত হয়, তাই এ প্রকার হাদিসকে মারফূ‘ বলা হয়।

‘মারফূ‘’র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত কথা, অথবা কর্ম, অথবা সমর্থন, অথবা তার চারিত্রিক ও শারীরিক গঠনের বর্ণনা; হোক স্পষ্ট মারফূ‘ কিংবা হুকমান মারফূ‘। সাহাবি তার সাথে সম্পৃক্ত করুক কিংবা তাবে‘ঈ কিংবা তাদের পরবর্তী কেউ, সকল প্রকার মারফূ‘র অন্তর্ভুক্ত”। অতএব মারফূ‘র সংজ্ঞায় মুত্তাসিল, মুরসাল, মুনকাতি‘, মু‘দ্বাল ও মু‘আল্লাক অন্তর্ভুক্ত, তবে মাওকুফ ও মাকতু‘ অন্তর্ভুক্ত নয়।

মারফূ‘ দু’প্রকার: ১. স্পষ্ট মারফূ‘ ও ২. হুকমান মারফূ‘।

১. স্পষ্ট মারফূ‘: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, কাজ, সমর্থন ও গুণগান ইত্যাদিকে تصريحا مرفوع বা স্পষ্ট মারফূ‘ বলা হয়। স্পষ্ট মারফূ‘ কয়েকভাগে বিভক্ত: ক. মারফূ‘ কাওলি বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী। খ. মারফূ‘ ফে‘লি বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম। গ. মারফূ‘ তাকরিরি বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থন। ঘ. মারফূ‘ সিফাতি বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের শারীরিক গঠনের বর্ণনা।

ক. মারফূ‘ কাওলি: যেমন, ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ»

“নিশ্চয় সকল আমল নিয়তের সাথে গ্রহণযোগ্য হয়, আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই যা সে নিয়ত করেছে। অতএব যার হিজরত দুনিয়ার জন্য যা সে উপার্জন করবে, অথবা নারীর জন্য যাকে সে বিয়ে করবে, তাহলে সে যে জন্য হিজরত করেছে তার হিজরত সে জন্য গণ্য হবে।[1]

খ. মারফূ‘ ফে‘লি: মুগিরা ইব্‌ন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

«وَضَّأْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ وَصَلَّى»

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওজু করিয়েছি, তিনি তার মোজার উপর মাসেহ করেছেন ও সালাত পড়েছেন”।[2]

গ. মারফূ‘ তাকরিরি: যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক দাসীকে বলেন:

«أَيْنَ اللَّهُ ؟ قَالَتْ: فِي السَّمَاءِ، قَالَ: مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، قَالَ: أَعْتِقْهَا، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ»

“আল্লাহ কোথায়? সে বলল: আসমানে। তিনি বলেন: আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বলেন: তাকে মুক্ত কর, কারণ সে মুমিন”। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাঁদির কথা প্রত্যাখ্যান না করে সমর্থন করেছেন, তাই বাদীর কথা তার কথা হিসেবে গণ্য। এটা তার তাকরির বা সমর্থন।

ঘ. মারফূ‘ সিফাতি: চারিত্রিক ও শারীরিক উভয় বিশেষণ উদ্দেশ্য। চারিত্রিক বিশেষণ যেমন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:

«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُورِهِ وَفِي شَأْنِهِ كُلِّهِ»

“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডান দিক আনন্দিত করত, তার জুতা পরিধান করায়, তার মাথার চুল আঁচড়ানোতে ও তার পবিত্রতা অর্জন করায় এবং তার প্রত্যেক অবস্থায়”।[3]

শারীরিক বিশেষণ যেমন, বারা ইব্‌ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

«مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ أَحْسَنَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ بَعِيدُ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ، لَمْ يَكُنْ بِالْقَصِيرِ وَلَا بِالطَّوِيلِ».

“লাল পোশাকে কোঁকড়ানো কেশগুচ্ছ বিশিষ্ট নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুন্দর কাউকে আমি দেখিনি। তার চুল উভয় কাঁধকে স্পর্শ করত। উভয় কাঁধের মধ্যে তফাৎ ছিল, তিনি বেটে বা লম্বা ছিলেন না”।[4]

জ্ঞাতব্য: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থনও কর্ম, তবে অধিক স্পষ্ট করার জন্য সমর্থন পৃথক করা হয়েছে, নচেৎ কারো ধারণা হত সমর্থন তার কর্ম নয়, তাই পৃথক করা যথাযথ হয়েছে। সাহাবি কিংবা তাদের পরবর্তী কারো সমর্থন বা চুপ থাকা দলিল নয়, এ জন্যও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থনকে পৃথক করা জরুরি ছিল। অনুরূপ তার কথাও কর্ম, তবে স্পষ্ট করার জন্য পৃথক করা হয়েছে।

২. হুকমান মারফূ‘: এ প্রকার হাদিস প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রকাশিত নয়, তাই মওকুফ অথবা মাকতু, তবে অন্যান্য নিদর্শন প্রমাণ করে এগুলো তার থেকে প্রকাশিত, তাই হুকমান মারফূ‘ বলা হয়, যেমন:

এক. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাথে সম্পৃক্ত করে কোনো সাহাবির এটা বলা যে, আমরা এরূপ বলতাম, অথবা এরূপ করতাম, অথবা এরূপ দেখতাম, তাহলে এ জাতীয় কর্ম হুকমান মারফূ‘, তথা সরাসরি মারফূ‘ নয়, তবে মারফূ‘র হুকুম রাখে। কারণ, সাহাবিদের এরূপ বলা প্রমাণ করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কর্ম জানতেন এবং তিনি তাদেরকে এসব কর্মের উপর স্থির রেখেছেন। দ্বিতীয়ত তাদের যুগ ছিল অহির যুগ, তাদের কর্মের উপর নীরবতা অবলম্বন অহির সমর্থন প্রমাণ করে। সমর্থন একপ্রকার মারফূ‘, তবে সরাসরি নয় তাই হুকমান মারফূ‘। যেমন, ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

عن ابن عمر رضي الله عنهم قال: «كُنَّا فِي زَمَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لاَ نَعْدِلُ بِأَبِي بَكْرٍ أَحَداً، ثُمَّ عُمَرَ، ثُمَّ عُثْمَانَ، ثُمَّ نَتْرُكُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لاَ نُفَاضِلُ بَيْنَهُمْ.

“ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আবু বকরের সাথে কাউকে তুলনা করতাম না, অতঃপর ওমর অতঃপর উসমান। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য সাহাবি সম্পর্কে মন্তব্য থেকে বিরত থাকতাম, তাদের কারো মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করতাম না”।[5]

অনুরূপ সাহাবির বলা যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এ জাতীয় কর্ম আমরা দোষণীয় মনে করিনি। অথবা তার যুগে সাহাবিগণ এরূপ করত কিংবা এরূপ বলত কিংবা এতে কোনো সমস্যা মনে করা হত না ইত্যাদি হুকমান মারফূ‘, যেমন জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:

" كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ "

“আমরা আযল করতাম, আর কুরআন নাযিল হত”।[6] তারা কুরআন নাযিলের যুগে আযল করত, কুরআন তাদেরকে আযল থেকে নিষেধ করেনি, হারাম হলে অবশ্যই কুরআন তাদেরকে নিষেধ করত, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবহিত করা হত, কারণ আল্লাহ হারামের উপর নীরবতা অবলম্বন করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿يَسۡتَخۡفُونَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَلَا يَسۡتَخۡفُونَ مِنَ ٱللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمۡ إِذۡ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرۡضَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡلِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا يَعۡمَلُونَ مُحِيطًا ١٠٨﴾ [النساء : ١٠٨]

“তারা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, আর আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে চায় না। অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন তারা রাতে এমন কথার পরিকল্পনা করে যা তিনি পছন্দ করেন না। আর তারা যা করে আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন”।[7]

আয়াতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাতের আধারে আল্লাহর অসন্তুষ্টির পরামর্শ করেছে, যা কেউ জানত না, তবে তাদের কর্ম ছিল আল্লাহর অপছন্দনীয়, তাই তিনি তাদের নিন্দাজ্ঞাপন করেছেন। এ ঘটনা প্রমাণ করে নবী যুগের আমল, যার উপর আল্লাহ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি বৈধ, তবে সরাসরি মারফূ‘ নয়, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোচরে হয়নি।

কতক আলেম বলেন: এরূপ হাদিস হুকমান মারফূ‘ নয়, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবগতিতে হয়নি, তবে দলিল হিসেবে গণ্য, কারণ আল্লাহ তাদের সমর্থন করেছেন।

দুই. কোনো সাহাবির বলা যে, “এরূপ করা সুন্নত”, অথবা “এরূপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে”, অথবা “এ কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে”, অথবা “অমুককে এরূপ আদেশ করা হয়েছে”, অথবা “আমাদের জন্য এটা হালাল ও ওটা হারাম করা হয়েছে” ইত্যাদি হুকমান মারফূ‘। কারণ, নির্দেশ দাতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হালাল ও হারামকারী তিনি, সুন্নত দ্বারা তার সুন্নতই উদ্দেশ্য। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

" مِنَ السُّنَّةِ: إِذَا تَزَوَّجَ الرَّجُلُ الْبِكْرَ عَلَى الثَّيِّبِ أَقَامَ عِنْدَهَا سَبْعًا، وَقَسَمَ وَإِذَا تَزَوَّجَ الثَّيِّبَ عَلَى الْبِكْرِ أَقَامَ عِنْدَهَا ثَلَاثًا، ثُمَّ قَسَمَ ".

“সুন্নত হচ্ছে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তি যদি কুমারী নারী বিয়ে করে, তাহলে তার নিকট সাত দিন অবস্থান করবে। অতঃপর বারি বণ্টন করবে। আর যখন কুমারী নারীর উপর বিধবা নারীকে বিয়ে করে, তাহলে তার নিকট তিন দিন অবস্থান করবে, অতঃপর বারি বণ্টন করবে”।[8] এখানে সুন্নত অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। অনুরূপ ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেন:

‏عَنْ ‏‏أَبِي سَعِيدٍ رضي الله عنه‏ ‏قَالَ: أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ ‏بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ‏وَمَا تَيَسَّرَ.

আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে, আমরা যেন সূরা ফাতেহা এবং যতটুকু সম্ভব তিলাওয়াত করি”।[9] এখানে নির্দেশদাতা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

তিন. সাহাবি যদি এমন বিষয়ে সংবাদ দেয়, যাতে ইজতিহাদ ও নিজস্ব মত প্রকাশের সুযোগ নেই, যা দেখে ধারণা হয় তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বলেছেন, তাহলে সাহাবির এ জাতীয় সংবাদ হুকমান মারফূ‘, যদি কিতাবি তথা ইয়াহূদী ও নাসারাদের থেকে সংবাদ গ্রহণ করার অভ্যাস তার না থাকে। উদাহরণত কোনো সাহাবি সৃষ্টির সূচনা, অথবা নবী ও পূর্ববর্তী উম্মত সম্পর্কে সংবাদ দিল, অথবা যুদ্ধ-বিগ্রহ, ফেতনা, কিয়ামতের আলামত ও কিয়ামতের অবস্থা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ সংবাদ দিল, অথবা কোনো আমলের নির্দিষ্ট সওয়াব অথবা নির্দিষ্ট শাস্তির বর্ণনা দিল, যেখানে গবেষণার সুযোগ নেই, অথবা কঠিন শব্দের ব্যাখ্যা দিল অথবা অপরিচিত শব্দের বিশ্লেষণ করল, যা সাধারণ অর্থের বিপরীত ইত্যাদি হুকমান মারফূ‘। যেমন ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন:

عَنْ ‏أَبِي هُرَيْرَةَ ‏رضي الله عنه ‏أَنَّهُ قَالَ: ‏تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ كُلَّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ، يَوْمَ الْاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ، فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلَّا عَبْدًا كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ، فَيُقَالُ: اتْرُكُوا هَذَيْنِ حَتَّى ‏‏يَفِيئَا.‏ ‏أَوِ ‏‏ارْكُوا (يعني أخِّروا)‏ ‏هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا.

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: প্রতি জুমায় [সপ্তাহে] বান্দার আমল দু’বার পেশ করা হয়: সোমবার ও বৃহস্পতিবার। অতঃপর প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়, তবে সে বান্দা ব্যতীত যার মাঝে ও তার ভাইয়ের মাঝে বিদ্বেষ রয়েছে। বলা হয়: তাদেরকে ত্যাগ কর, যতক্ষণ না তারা সংশোধন করে নেয়”।[10] অন্যত্র ইমাম মালিক বর্ণনা করেন:

أن ‏أَبَا هُرَيْرَةَ رضي الله عنه‏ ‏قَالَ: إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يُلْقِي لَهَا بَالًا يَهْوِي بِهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يُلْقِي لَهَا بَالًا يَرْفَعُهُ اللَّهُ بِهَا فِي الْجَنَّةِ.

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন: নিশ্চয় ব্যক্তি কতক শব্দ উচ্চারণ করে, যার কোনো পরোয়া সে করে না, অথচ তার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর ব্যক্তি কতক বাক্য উচ্চারণ করে, যার কোনো পরোয়া সে করে না, অথচ তার কারণে আল্লাহ তাকে জান্নাতে উন্নীত করেন”।[11] ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

عَنْ ‏ ‏أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه‏ ‏أَنَّهُ قَالَ: (في وصف جهنم): ‏أَتُرَوْنَهَا حَمْرَاءَ كَنَارِكُمْ هَذِهِ؟ لَهِيَ أَسْوَدُ مِنْ الْقَارِ.‏ ‏

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি [জাহান্নামের বর্ণনা সম্পর্কে] বলেন: “তোমরা কি জাহান্নামের আগুনকে তোমাদের এ আগুনের ন্যায় লাল মনে করছ? অথচ তা আলকাতরার চেয়ে কালো”।[12]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর এসব বর্ণনা হুকমান মারফূ‘, কারণ এসব বিষয়ে গবেষণার কোনো সুযোগ নেই। অধিকন্তু ইমাম মুসলিম[13] প্রথম হাদিস এবং ইমাম বুখারি[14] দ্বিতীয় হাদিস স্পষ্ট মারফূ‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তৃতীয় হাদিস সম্পর্কে বাজি[15] রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: আবু হুরায়রার এ সংবাদ অহির উপর নির্ভরশীল, কারণ তার সর্ম্পক গায়েব ও অদৃশ্যের সাথে, তাই হুকমান মারফূ‘।

চার. হাদিস বর্ণনাকারী রাবি যদি সাহাবি সম্পর্কে বলেন:

يرفعه أو يَنْمِيه، أو يبلغ به النبي صلى الله عليه وسلم أو رواية.

তাহলে হুকমান মারফূ‘, যেমন ইমাম বুখারি বর্ণনা করেন:

عن أنس رضي الله عنه يرفعه: «أَنَّ اللهَ يَقُولُ لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَاباً: لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ كُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَقَدْ سَأَلْتُكَ مَا هُوَ أَهْوَنُ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ ؛ أَنْ لاَ تُشْرِكَ بِي، فَأَبَيْتَ إِلاَّ الشِّرْكَ».

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি মারফূ‘ বর্ণনা করেন: “আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের সবচেয়ে কম শাস্তি ভোগকারীকে বলবেন: যদি তোমার দুনিয়া ভর্তি সম্পদ হয়, তুমি কি সেগুলো ফিদিয়া [মুক্তিপণ] হিসেবে প্রদান করবে? সে বলবে: হ্যাঁ, তিনি বলবেন: আমি তোমার নিকট এর চেয়ে নগন্য বস্তু চেয়েছিলাম, যখন তুমি আদমের পৃষ্ঠদেশে ছিলে, যে আমার সাথে শরীক কর না। কিন্তু তুমি শির্ক ব্যতীত ক্ষান্ত হওনি”।[16] এতে يرفعه শব্দ হুকমান মারফূ‘র নিদর্শন। ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

عن أبي هريرة رضي الله عنه رواية: «الْفِطْرَةُ خَمْسٌأَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: الْخِتَانُ، وَالاسْتِحْدَادُ، وَنَتْفُ الْإِبْطِ، وَتَقْلِيمُ الْأَظْفَارِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত: “স্বভাব পাঁচটি, অথবা পাঁচটি স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত: খৎনা করানো, নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও মোচ ছোট করা”।[17] এতে رواية শব্দ হুকমান মারফূ‘র নির্দশন।

পাঁচ. শানে নুযূল সংক্রান্ত সাহাবির সংবাদ হুকমান মারফূ‘। কারণ, অহি ও কুরআন নাযিল প্রত্যক্ষকারী সাহাবি কোনো আয়াত সম্পর্কে যখন বলেন, এ আয়াত অমুক ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে, তখন তিনি ঘটনাটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাথে সম্পৃক্ত করলেন, অতএব হুকমান মারফূ‘। অনুরূপ সাহাবি যদি কোনো আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান করেন, যাতে ইজতেহাদের সুযোগ নেই, অথবা যার সাথে শব্দের অর্থ সম্পৃক্ত নয়, তাহলে তা হুকমান মারফূ‘। এ তাফসির তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছেন, যেমন ইমাম বুখারি বর্ণনা করেন:

عن ابن عباس رضي الله عنهم قال: كَانَ أَهْلُ الْيَمَنِ يَحُجُّونَ وَلاَ يَتَزَوَّدُونَ وَيَقُولُونَ: نَحْنُ الْمُتَوَكِّلُونَ، فَإِذَا قَدِمُوا مَكَّةَ سَأَلُوا النَّاسَ، فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى: (وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى).

ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “ইয়ামান বাসীরা হজ করত কিন্তু খাদ্য-সামগ্রী বহন করে আনত না, তারা বলত: আমরা ভরসাকারী। অতঃপর মক্কায় পৌঁছে মানুষের নিকট ভিক্ষা করত, তাই আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:

﴿ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ ١٩٧ ﴾ [البقرة: ١٩٧]

“তোমরা সামগ্রী বহন কর, কারণ তাকওয়া সর্বোত্তম সামগ্রী”।[18] অপর জায়গায় বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ আবু ইসহাক শায়বানি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমি ‘যির’কে আল্লাহর বাণী[19]:

﴿فَكَانَ قَابَ قَوۡسَيۡنِ أَوۡ أَدۡنَىٰ ٩ فَأَوۡحَىٰٓ إِلَىٰ عَبۡدِهِۦ مَآ أَوۡحَىٰ ١٠﴾ [النجم:٩، ١٠]

সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন: আমাদেরকে ইব্‌ন মাসউদ বলেছেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলাইহিস সালামকে দেখেছেন, তার ছয়শ পাখা রয়েছে”।[20] ইব্‌ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যাখ্যা আরবির কোনো নিয়মে পড়ে না, তাতে গবেষণারও সুযোগ নেই, অতএব তিনি এ তাফসির নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, তাই হুকমান মারফূ‘।

ছয়. নির্দিষ্ট কোনো কর্ম সম্পর্কে সাহাবি যদি বলেন, “এতে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য রয়েছে”, অথবা বলেন “এ কাজ আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি”, তাহলে হুকমান মারফূ‘। কারণ, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ শুনেছেন। উদাহরণত ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:

عن أبي هريرة رضي الله عنه أنه كان يقول: «شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ، يُدْعَى لَهَا الْأَغْنِيَاءُ وَيُتْرَكُ الْفُقَرَاءُ، وَمَنْ تَرَكَ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ تَعَالَى وَرَسُولَهُ صلى الله عليه وسلم».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন: “সবচেয়ে খারাপ খানা ওলীমার খানা, যেখানে ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয় কিন্তু গরিবদের দাওয়াত দেওয়া হয় না। আর যে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল, সে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করল”।[21]জান্নাত, জাহান্নাম, অতীত, ভবিষ্যৎ ও ইজতিহাদ চলে না বিষয়ে সংবাদদাতা সাহাবি যদি বনু ইসরাইল থেকে জ্ঞানার্জন করে প্রসিদ্ধ হন, তাহলে তার সংবাদ হুকমান মারফূ‘ হবে না। কারণ, হয়তো তিনি সংবাদটি তাদের থেকে গ্রহণ করেছেন, যেমন ইয়ারমুকের যুদ্ধে রূমী ও অন্যান্য কিতাবিদের রেখে যাওয়া অনেক কিতাব আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌নুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সংগ্রহ করেছেন, তখন এর অনুমতি ছিল।), (১৪৩২)

>

[1] বুখারি: (১), মুসলিম: (৩৫৩৭)

[2] বুখারি: (৩৭৮), মুসলিম: (৪০৭)

[3] বুখারি: (১৬৫)।

[4] মুসলিম: (২৩৩৮), তিরমিযি: (৩৫৯৭)

[5] বুখারি, বাবু মানাকিবে উসমান ইব্‌ন আফ্‌ফান রা.: (৭/৫৩-৫৪), হাদিস নং: (৩৬৯৭), মুসনাদে আবু ইয়ালা, তাবরানি ও অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথা শুনতেন, কিন্তু নিষেধ করতেন না। মুসনাদে আবু ইয়ালা: (৯/৪৫৬), হাদিস নং: (৫৬০৪), মুজামুল কাবির লি তাবরানি: (১২/২৮৫), হাদিস নং: (১৩১৩২)

[6] বুখারি: (৪৮৩৪), মুসলিম: (২৬১৮)

[7] সূরা নিসা: (১০৮)

[8] বুখারি: (৫২১২), মুসলিম: (১৪৬৩)

[9] আবু দাউদ: (১/২১৬), হাদিস নং: (৮১৮), ইব্‌ন হিব্বান হাদিসটি সহি বলেছেন: (৫/৯২), (১৭৯০)

[10] মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (২/৯০৮), হাদিস নং: (১৭)

[11] মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (২/৯৮৫), হাদিস নং: (৬)

[12] মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (২/৯৯৪), হাদিস নং: (২)

[13] মুসলিম: (৪/১৯৮৯৭)

[14] বুখারি: (১১/৩০৮), হাদিস নং: (৬৪৭৮)

[15] أ.د عبد الرحمن البر রচিত উসুলে হাদিসের উপর ‘একাদশ ভাষণ’।

[16] বুখারি: (৬/৩৬৩), হাদিস নং: (৩৩৩৪)

[17] বখারি: (১০/৩৩৪), হাদিস নং: (৫৮৮৯)

[18] বুখারি: (৩/৩৮৩-৩৮৪), হাদিস নং: (১৫২৩)

[19] অর্থ: “তখন সে নৈকট্য ছিল দু’ ধনুকের পরিমাণ, অথবা তারও কম। অতঃপর তিনি তার বান্দার প্রতি যা ওহি করার তা ওহি করলেন”। সূরা আন-নাজম: (৯-১০)

[20] বুখারি: (৮/৬১০), হাদিস নং: (৪৮৫৭)

[21] বুখারি: (৯/২৪৪), হাদিস নং: (৫১৭৭), ইমাম মুসলিম হাদিসটি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে স্পষ্ট মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মুসলিম: (২/১০৫৪), হাদিস নং: (১০৭

কেউ বলেছেন: কোনো তাবে‘ঈ যদি বলেন: ‘এটা সুন্নত’ তাহলে মাওকুফ গণ্য হবে, মারফূ‘ নয়। কারণ, তাবে‘ঈ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ পাননি, তাই তার সুন্নত বলার অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত নয়, বরং সাহাবিদের সুন্নত, অতএব মাওকুফ।

কেউ বলেছেন: কোনো তাবে‘ঈ যদি বলেন: ‘এটা সুন্নত’ তাহলে হুকমান মারফূ‘ হবে। তাদের সুন্নত বলার অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, তবে তাদের এ কথা এক হিসেবে মুরসাল ও অপর হিসেবে মুনকাতি‘, কারণ সনদে সাহাবির উল্লেখ নেই।মোদ্দাকথা: কোনো তাবে‘ঈর ‘এটা সুন্নত’ বলা যদি হুকমান মারফূ‘ মানি তাহলে মুরসাল, যা একপ্রকার দুর্বল হাদিস, কারণ সনদ মুত্তাসিল নয়, তাই তার সাথে মুরসাল হাদিসের ব্যাবহার করা হবে। আর তাবে‘ঈর ‘এটা সুন্নত’ বলা যদি মাওকুফ মানি তাহলে সাহাবির কথা বা কর্ম হয়। সাহাবির কথা বা কর্মের হুকুম ‘মাওকুফে’র বর্ণনায় আসছে।[1]

[1] ১৫-নং পঙক্তি দেখুন। যার সারাংশ: তিনটি শর্তে সাহাবির কথা বা কর্ম দলিল হয়: ১. সাহাবি যদি ফকিহ হন। ২. সাহাবির কথা যদি দলিল বিরোধী না হয়। ৩.  সাহাবির কথা যদি অপর সাহাবির কথার বিপরীত না হয়। এ তিনটি শর্তে সাহাবির কথা ও কর্ম দলিল হিসেবে গণ্য হবে। অতএব সাহাবি ফকিহ না হলে তার কথা দলিল নয়। আবার ফকিহ সাহাবির কথা দলিল বিরোধী হলে গ্রহণযোগ্য নয়, তখন দলিল গ্রহণযোগ্য। ফকিহ সাহাবির কথা যদি দলিল বিরোধী না হয়, তবে অপর সাহাবির কথার বিপরীত, তাহলে প্রাধান্য দেওয়ার দিকটি বিবেচনা করব। অতএব তাবেঈর কথা ‘এটা সুন্নত’ যদি মাওকুফ মানি, এ তিনটি শর্তের ভিত্তিতে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে