প্রশ্ন: দিনে দিনে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যারা কর্ম পদ্ধতি, দা‘ওয়াতী মূলনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরস্পরে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী। আর হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হক জামা‘আত হবে একটিই। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দল ও সংগঠনের হুকুম কি?

উত্তর: এসব দল ও সংগঠনের ব্যাপারে শরীআতের হুকুম হচ্ছে, এগুলি হারাম এবং বিদ‘আত। সেজন্য এগুলি থেকে দূরে থেকে কিতাব ও সুন্নাহ্‌র দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া একজন মুসলিমের কর্তব্য। তবে কেউ যেন কিছুতেই ধারণা না করে যে, আমরা কোনো মুসলিমকে ইসলামের জন্য একাকী কাজ করতে বলছি; বরং আমরা একজন মুসলিমকে আরব-অনারব, সাদা-কালো সকল মুসলিমের সাথে কাজ করতে বলছি। কারণ দলবদ্ধভাবে কাজ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائ‍دة: ٢]

‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না’ (আল-মায়েদাহ ২)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পারস্পরিক ভালবাসা, দয়ার্দ্রতা এবং সহানুভূতিশীলতার ক্ষেত্রে গোটা মুমিন সম্প্রদায় একটি দেহের মত। দেহের একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে তার জন্য পুরো দেহ ব্যথা অনুভব করে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ‘আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ’ যদি তাদের দা‘ওয়াতী দায়িত্ব যথারীতি পালন করে, তাহলে এতসব দলাদলি পানিতে লবণ গলে যাওয়ার মত গলে যাবে। কেননা এসব দলাদলি ধোঁকার উপর প্রতিষ্ঠিত।([1])

শায়খের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ শায়খ মুক্ববিল ইয়েমেনের দাম্মাজ নগরীর ওয়াদেআহ এলাকায় ১৩৫০ হিজরীর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইয়েমেন, নাজদ, মক্কা ও মদীনায় শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছগণের অন্যতম। তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে ১. রিয়াযুল জান্নাহ ফির-রদ্দি আলা আ‘দাইস-সুন্নাহ, ২. আশ-শাফা‘আহ, ৩. ক্বম্‌উল মুআনেদ ওয়া যাজ্‌রুল হাক্বেদিল হাসেদ, ৪. ফাযায়েহ্‌ ওয়া নাছায়েহ্‌ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০০১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
=============================


([1]) মুক্ববিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদেঈ, ক্বম্‌উল মু‘আনেদ ওয়া যাজ্‌রুল হাক্বেদিল হাসেদ, পৃ: ৩৫৫-৩৮৪ (দারুল হাদীছ, দাম্মাজ, প্রথম প্রিন্ট: ১৪১৩/১৯৯৩)।
প্রশ্ন: দা‘ওয়াতের মহান উদ্দেশ্যে মুক্বীম অবস্থায় কাউকে ‘আমীর’ বানানোর ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

উত্তর: মুক্বীম অবস্থায় মুসলিম খলীফা বা তাঁর নিযুক্ত আমীর ও গভর্ণর ছাড়া অন্য কাউকে আমীর বানানো প্রমাণিত নয়। কিন্তু বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে খেলা শুরু হয়ে গেছে; ফলে তিন জনের একটি গ্রুপ থাকলে তাদেরও একজন ‘আমীরুল মুমিনীন’ সেজে বসে থাকছে। নিঃসন্দেহে এটি বিদ‘আত, যা মুসলিম ঐক্যকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।([1])

([1]) প্রাগুক্ত, পৃ: ৫২৯-৫৩২।
প্রশ্ন: বর্তমান যুব সমাজে ব্যাপক আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে, তারা বলছে, কেউ কেউ বায়‘আতকে বৈধ মনে করে, আবার কেউ কেউ বৈধ মনে করে না। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্চে, বায়‘আত কি? বায়‘আতের শর্ত কি? আমাদের কি কারো হাতে বায়‘আত গ্রহণ যরূরী?

উত্তর: কুরাইশ বংশের কোনো ব্যক্তিকে ‘আহলুল হাল্ ওয়াল আক্বদ’ নির্বাচন করলে অথবা তিনি নিজে খলীফা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে তার হাতে বায়‘আত করা ওয়াজিব। কুরাইশ বংশের বাইরে যদি কেউ খলীফা হয়ে জনগণের কাছ থেকে বায়‘আত তলব করে, তাহলে তার হাতেও বায়‘আত করতে হবে।

তবে যেসব দল ও সংগঠন মুসলিমদেরকে বিভক্ত করেছে, তাদের ঐক্য ও শক্তি বিনষ্ট করেছে, তাদের বায়‘আত গ্রহণতো দূরের কথা, বরং তাদের এই দলাদলির বিরোধিতা করতে হবে। আমরা আগেই বলেছি, মুসলিমদেরকে দলে দলে বিভক্ত করে ফেলা বর্তমান সময়ের একটি নিকৃষ্ট বিদ‘আত। সেকারণে তাদের বায়‘আতও বিদ‘আত।

যদি কেউ প্রশ্ন করে, নিম্নোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বায়‘আতের প্রশংসা করেছেন:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ ٱللَّهِ فَوۡقَ أَيۡدِيهِمۡۚ ﴾ [الفتح: ١٠]

‘যারা আপনার কাছে বায়‘আত করে, তারা তো আল্লাহর কাছেই বায়‘আত করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর’ (আল-ফাত্‌হ ১০); তাহলে আপনারা কিভাবে বায়‘আতকে বিদ‘আত বলছেন? জবাবে বলব, উক্ত আয়াতে উল্লেখিত বায়‘আত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কুরাইশ বংশের খলীফার জন্য নির্দিষ্ট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার কাঁধে বায়‘আত না থাকা অবস্থায় মারা যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যু’। উক্ত হাদীছে উল্লেখিত বায়‘আতও কুরাইশ বংশের খলীফা বা ক্ষমতায় চলে আসা অন্য যে কোনো খলীফার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ অন্য বংশের কেউ ক্ষমতায় চলে আসলে যদি তার বায়‘আত গ্রহণ না করা হয়, তাহলে মুসলিমদের রক্তের হেফাযত সম্ভব হবে না। অতএব, যে ব্যক্তি মানুষকে এসব বায়‘আতের দা‘ওয়াত দেয়, তার বিরোধিতা করতে হবে; যে বায়‘আত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে, তার বিরোধিতা নয়।

যদি কেউ বলে, নিম্নোক্ত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়‘আতের কথা বলেছেন, ‘যখন তিন জন সফরে বের হবে, তখন তারা তাদের একজনকে আমীর বানাবে’। জবাব হচ্ছে, এই বায়‘আত সফর অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট। ...সেকারণে বিভিন্ন জামা‘আতের আমীরদের বায়‘আত বর্তমান যুগের একটি অন্যতম বিদ‘আত। প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে যখন প্রহার করা হয়েছিল, বিখ্যাত ছাহাবী আনাস ইবনে মালেককে যখন হাজ্জাজ অপমান করতে চেয়েছিল, ইমাম মালেককে যখন প্রহার করা হয়েছিল, ইমাম শাফেঈকে যখন লোহার বেড়ী পরিয়ে হাযির করা হয়েছিল, ইমাম বুখারীকে যখন নিশাপুর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তখন বায়‘আত কোথায় ছিল? এভাবে আমাদের মুসলিম উম্মাহ্‌র স্বনামধন্য বহু আলেমে দ্বীনকে প্রহার করা হয়েছিল, তাদেরকে জেল-যুলম ভোগ করতে হয়েছিল এবং তাদেরকে নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এতদ্‌সত্ত্বেও তারা মানুষকে বায়‘আতের দা‘ওয়াত দেননি। অতএব, এসব বায়‘আত বর্তমান যুগের বিদ‘আত ছাড়া আর কিছুই নয়।([1])

([1]) মুক্ববিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদেঈ, ফাযায়েহ্‌ ওয়া নাছায়েহ্‌, পৃ: ৬৭-৬৯ (দারুল হারামাইন, কায়রো, প্রথম প্রিন্ট: ১৪১৯/১৯৯৯)।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে