আমাদের সমাজে আরো অগণিত ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা দীনের নামে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। এ সকল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথার মধ্যে রয়েছে:
১. কুলুখ মীযানের পাল্লায় ওজন করা হবে। এজন্য সাহাবীগণ বড় বড় ঢিলা ব্যবহার করতেন এবং তা দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুচকি হাসতেন।
২. ‘‘১৪০০ বছর পর কি হবে আমি জানি না’’।
৩. মূসা (আঃ) মহান আল্লাহকে তাঁর রাজ্জাকিয়্যাত সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তখন আল্লাহ তাঁকে হাতের লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করার নির্দেশ। প্রথম পাথর ভেঙ্গে ভিতরে দ্বিতীয় পাথর দেখা যায়। দ্বিতীয় পাথর ভাঙ্গলে ভিতরে তৃতীয় পাথর দেখা যায়। তৃতীয় পাথর ভাঙ্গলে তার ভিতর থেকে কচি ঘাস মুখে একটি পোকা বেরিয়ে আসে....।
৩. শুক্রবার হজ্জ হলে তা আকবারী হজ্জ বলে গণ্য হবে। আর এ হজ্জে আরব দেশের সরকারের দায়িত্ব সকল হাজ্জীকে উপহার দেওয়া।
৪. ঝড় হলে আযান দেওয়া এবং এ আযানে ‘হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলা বাদ দেওয়া।
৫. শূকর বা শুয়র বললে ৪০ দিন মুখ নাপাক থাকে।
৬. ‘‘যে মুরশিদ সে রাসূল খোদাও সে কোরানে কয়’’।
৭. তাসের উদ্ভব: যাকারিয়া (আঃ)-কে হত্যা করে তাঁর রক্ত গাছের পাতায় লাগিয়ে খেলা করা হয় এবং তা থেকেই তাস খেলার উদ্ভব।
৮. ফুটবলের উদ্ভব: জনৈক নবীকে হত্যা করে তাঁর মাথা নিয়ে খেলা থেকে ফুটবল খেলার উদ্ভব।
৯. সুলাইমান (আঃ) আকাশ দিয়ে উড়ছিলেন। তা দেখে একজন সুবহানাল্লাহ বলেন। তখন তিনি আকাশ থেকে নেমে এসে তাঁর ‘সুবহানাল্লাহর’ সাওয়াবের বিনিময়ে তাঁর রাজত্ব দিতে চান।
১০. জনৈক দরিদ্র মুসা (আঃ)- কে বলেন, হে মুসা, আল্লাহকে বলুন, আমার সারা জীবনের রিজক যেন একদিনে দিয়ে দেন। তাই হলো, সবকিছু দিয়ে সে বিভিন্ন উপাদেয় খাবার তৈরি করল এবং দেশের ফকিরদের দাওয়াত করে খাওয়াল। ফকিররা দুআ করল, হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিদেনের রিজক তুমি এর মাধ্যমেই দিও। তাই হলো, তার দুঃখ ঘুচল।
১১. কলা হাত দিয়ে ভেঙে খাওয়া সুন্নাত।
১২. জন্মের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হারিয়ে যান। তাঁর মাতা আমিনা পেরেশান হয়ে যান। তখন গায়েবী আওয়াজ হয়: তোমার ছেলেকে সারা মাখলুক দেখতে চেয়েছে....।
১৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খেলছিলেন। আবু জাহল তাঁকে উঠের পিঠে নিজের পিছনে উঠিয়ে নেয়। তখন উঠ আর চলে না। তাঁকে সামনে নেবার পর চলা শুরু করে।
১৪. পানিতে পেশাব করলে কেয়ামতে আল্লাহ পানি থেকে পেশাব আলাদ করতে বলবেন।
১৫. পুরুষেরা জুমুআ পড়ে না এলে মহিলারা নামায পড়বেন না।
১৬. ঔষুধ খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বলে ‘আল্লাহ শফি, আল্লাহ কাফি, আল্লাহ মাফি’ বলতে হবে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঔষুধ খেলে ঔষুধ পানি হয়ে যায়।
১৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর হায়াত ৯০ বছর। ৬৩ বছর পৃথিবীতে ২৭ বছর মি’রাজ।
১৮. শবে মেরাজের ইবাদতে ১০০ রাতের ইবাদতের সাওয়াব।
১৯. আলী (রা) একবার মাত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে দেখে ফেলেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে তা বলতে নিষেধ করেছিলেন। এ অতি আশ্চর্য বিষয় বলতে না পেরে তাঁর পেট ফেটে যাচ্ছিল। অবশেষ তিনি বাধ্য হয়ে মাঠের মাঝে এক বিরান কুয়ার মধ্যে নেমে কথাটা বলেন, তাতে কুয়া ফেটে পানি বের হয়ে যায়। সে পানিতে কুয়ার পাশে বাঁশ জন্মে। সে বাঁশের বাশি থেকে আওয়াজে এ গোপন কাহিনী প্রচার হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ জালিয়াতদের লাঞ্ছিত করুন।
হাদীসের নামে জালিয়াতির এ আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আমাদের চারিপাশে অগণিত জাল হাদীসের ছড়াছড়ি। ওয়াযে, আলোচনায়, লেখনিতে ও গবেষণায় সর্বত্রই এ সকল মিথ্যা ও বানোয়াট কথার ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। হাদীসের নামে বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে প্রচলিত ও প্রচারিত এ সকল অগণিত জাল কথার মধ্য থেকে কিছু বিষয় এ পুস্তকে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। অনেক বিষয়েই আলোচনা করা সম্ভব হলো না। আমরা আশা করছি, নতুন প্রজন্মের আলিমদের মধ্যে গবেষকগণ কলম ধরবেন এবং এ বিষয়ে নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে এদেশের মুসলিমদেরকে জাল হাদীসের পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করবেন।
সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সহীহ সুন্নাতকে জীবিত করা এবং মিথ্যা, জাল, ভিত্তিহীন বা অনির্ভরযোগ্য কথা আলোচনা, বর্ণনা, পালন বা বিশ্বাসের কঠিন পাপ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার আবেগে অযোগ্যতা ও দুর্বলতা সত্ত্বেও এ বিষয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। স্বভাবতই এর মধ্যে অনেক ভুলভ্রান্তি রয়েছে। আমি সকল ভুলভ্রান্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি ও তাওবা করছি।
এ নগণ্য প্রচেষ্টার মধ্যে যা কিছু কল্যাণকর রয়েছে তা সবই মহান আল্লাহর দয়া ও তাওফীক। তাঁর পবিত্র দরবারে দোয়া করি, তিনি যেন দয়া করে তাঁর প্রিয়তম রাসূলের (ﷺ) সুন্নাতের খেদমতে এ নগণ্য প্রচেষ্টাটুকু কবুল করে নেন এবং একে আমার, আমার পিতামাতা ও সকল পাঠকের নাজাতের ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন!
وصلى الله على محمد النبي الأمي وآله وأصحابه أجمعين. والحمد لله رب العالمين.