হাদীসের নামে জালিয়াতি বেলায়াত, আওলিয়া ও ইলম বিষয়ক ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৪১. যে দিন আমি নতুন কিছু শিখি নি সে দিন বরকতহীন

প্রচলিত একটি বাতিল কথা যা হাদীস নামে প্রচলিত:

إِذَا أَتَى عَلَيَّ يَوْمٌ لاَ أَزْدَادُ فِيْهِ عِلْماً يُقَرِّبُنِيْ إِلَى اللهِ تَعَالَى فَلاَ بُوْرِكَ لِيْ فِيْ طُلُوْعِ شَمْسِ ذَلِكَ الْيَوْمِ

‘‘যদি আমার জীবনে এমন একটি দিন আসে যে দিনে আমি আল্লাহর নৈকট্য প্রদানকারী কোনো ইলম বৃদ্ধি করতে পারি নি, সে দিনের সূর্যোদয়ে আমার জন্য কোনো বরকত না হোক্।’’

হাদীসটি আবূ নু‘আইম ইসপাহানী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাকাম ইবনু আব্দুল্লাহ নামক দ্বিতীয় শতকের এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাকাম বলেন ইবনু শিহাব যুহরী তাকে এ হাদীসটি বলেছেন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব থেকে আয়েশা থেকে, রাসূলুল্লাহ () থেকে। আবূ নু‘আইম বলেন: ‘‘এ হাদীসটি একমাত্র হাকাম ছাড়া কেউ বর্ণনা করে নি।’’[1]

হাকাম নামক এ ব্যক্তি সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ একমত যে, লোকটি একজন জালিয়াত ও জঘন্য মিথ্যাবাদী ছিল। ইমাম আবূ হাতিম রাযী বলেন, লোকটি জঘন্য মিথ্যাবাদী ছিল। ইমাম দারাকুতনী, ইবনু আদী প্রমুখ মুহাদ্দিস বলেন, এ লোকটি কঠিন জালিয়াত ছিল। সে একটি জাল পান্ডুলিপি বানিয়ে তাতে ৫০টিরও অধিক জাল হাদীস লিখে সেগুলো ইমাম যুহরীর নামে সাঈদ ইবনু মুসাইয়িবের সূত্রে প্রচার করে। এগুলো সবই জাল ও ভিত্তিহীন। এছাড়া আরো অনেক জাল সনদ তৈরি করে সে অনেক জাল হাদীস প্রচার করেছে। সকল মুহাদ্দিস একমত যে লোকটি পরিত্যক্ত, মিথ্যাবাদী ও জালিয়াত।[2]

হাকামের বানানো এ জাল হাদীসটির আরেকটি বর্ণনা:

إِذَا أَتَى عَلَيَّ يَوْمٌ لَمْ أَزْدَدْ فِيْهِ خَيْراً يُقَرِّبُنِيْ إِلَى اللهِ فَلاَ بُوْرِكَ لِيْ فِيْ ذَلِكَ الْيَوْمِ

‘‘যদি আমার জীবনে এমন একটি দিন আসে যে দিনে আমি আল্লাহর নিকটবর্তী করার মত কোনো একটি ভাল কর্ম বৃদ্ধি করতে পারি নি, সে দিনে আমার জন্য কোনো বরকত না হোক্।’’[3]

[1] আবূ নু‘আইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৮/১৮৮।

[2] নাসাঈ, আদ-দু‘আফা, পৃ. ২৯; ইবনু আদী, আল-কামিল ২/৭৯, ২০২-২১৪; ইবনুল জাওযী, আদ-দু‘আফা ১/২২৭; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ২/৩৩৭; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ২/৩৩২-৩৩৩।

[3] ইবনু আদী, আল-কামিল ২/৭৯, ৩/২৯৪; ইবনুল জাওযী, মাউযূআত ১/১৬৯; যাহাবী, তারতীব, পৃ. ৫৯; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/২৫৬, ২/২৮৯; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ২/৩৫৫; যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ. ১৫২; আলবানী, যায়ীফাহ ১/৫৫৭-৫৫৯।