এ কথা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, মেঘ বা অন্য কোন কারণে চাঁদ যথাসময়ে না দেখা গেলে মাসের তারীখ ৩০ পূর্ণ করে নিতে হবে। অবশ্য ঈদের চাঁদ প্রমাণ করার জন্য ২ জন মুসলিমের সাক্ষ্য প্রয়োজন। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ছাড়। যদি চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে মাস ৩০ পূর্ণ করে নাও। কিন্তু যদি দুই জন মুসলিম সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তোমরা রোযা রাখ ও রোযা ছাড়।’’[1]

পক্ষান্তরে রোযার মাসের শুরু হওয়ার কথা প্রমাণ করার জন্য এ কথা প্রমাণিত যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) একজন লোকের সাক্ষি নিয়ে রোযা রেখেছেন।[2]

[1] (আহমাদ, মুসনাদ ৪/৩২১, নাসাঈ, দারাকুত্বনী, সুনান, সহীহ নাসাঈ, আলবানী ১৯৯৭, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৯০৯নং)

[2] (আবূ দাঊদ ২৩৪২, দাঃ, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী ৪/২১২, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৯০৮নং)

ঈদের চাঁদ কেউ একা দেখলে সে কিন্তু একা একা ঈদ করতে পারে না। বরং চাঁদ দেখা সত্ত্বেও তার জন্য রোযা রাখা ওয়াজেব। কেননা, শওয়ালের চাঁদ দুই জন মুসলিম দেখার সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রমাণ হয় না। তা ছাড়া মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘ঈদ সেদিন, যেদিন লোকেরা ঈদ করে। কুরবানী সেদিন, যেদিন লোকেরা কুরবানী করে।’’[1] যেহেতু শরীয়তে জামাআতের বড় মর্যাদা আছে।

মতান্তরে যে ব্যক্তি একা চাঁদ দেখবে সে পরের দিন রোযা রাখবে না। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ছাড়।’’ তবে প্রকাশ্যে নয়, বরং গোপনে ইফতার করবে সে। যাতে সে জামাআত-বিরোধী না হয়ে যায়। অথবা তাকে কেউ অসঙ্গত অপবাদ না দিয়ে বসে। আর আল্লাহই অধিক জানেন।[2]

[1] (সহীহ তিরমিযী, আলবানী ৬৪৩, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৯০৫নং)

[2] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩২৯, আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী স্বালাতিল ঈদাঈন ২৫পৃঃ, আহকামুস সাওমি অল-ই’তিকাফ, আবূ সারী মঃ আব্দুল হাদী ৪২পৃঃ)

২৮ দিন রোযা রাখার পর শওয়ালের চাঁদ শরয়ী সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হলে জানতে হবে যে, রমাযান মাসের প্রথম দিন অবশ্যই ছুটে গেছে। সুতরাং সে ক্ষেত্রে ঐ দিন ঈদের পরে কাযা করতে হবে। কারণ, চান্দ্র মাস ২৮ দিনের হতেই পারে না। হয় ৩০ দিনে মাস হবে, নচেৎ ২৯ দিনে।[1]

[1] (ফাসিঃ মুসনিদ ১৫পৃঃ)

পূর্ব দিককার (প্রাচ্যের) দেশগুলিতে চাঁদ ১ অথবা ২ দিন পরে দেখা দেয়। এখন ২৯শে রমাযান চাঁদ দেখার পর অথবা ৩০শে রমাযান ঐ দিককার কোন দেশে সফর করলে সেখানে গিয়ে দেখবে তার পরের দিনও রোযা। সে ক্ষেত্রে তাকে ঐ দেশের মুসলিমদের সাথে রোযা রাখতে হবে। অতঃপর তারা ঈদ করলে তাদের সাথে সেও ঈদ করবে; যদিও তার রোযা ৩১টি হয়ে যায়। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,

(فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ)

অর্থাৎ, অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)

আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘রোযা সেদিন, যেদিন লোকেরা রোযা রাখে। ঈদ সেদিন, যেদিন লোকেরা ঈদ করে।’’[1]

কিন্তু যদি কেউ পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ২৮শে রমাযান সফর করে, অতঃপর তার পর দিনই সেখানে ঈদ হয়, তাহলে সেও রোযা ভেঙ্গে লোকদের সাথে ঈদ করবে। অবশ্য তার পরে সে একটি রোযা কাযা রাখবে। কারণ, মাস ২৯ দিনের কম হয় না। পক্ষান্তরে যদি ২৯শে রমাযান সফর করে তার পরের দিন ঈদ হয়, তাহলে তাদের সাথে ঈদ করার পর তাকে আর কোন রোযা কাযা করতে হবে না। কারণ, তার ২৯টি রোযা হয়ে গেছে এবং মাস ২৯ দিনেও হয়।[2]

পরন্তু যদি কেউ ঈদের দিনে ঈদ করে প্রাচ্যের দেশে সফর করে এবং সেখানে গিয়ে দেখে সেখানকার লোকেদের রোযা চলছে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে পানাহার বন্ধ করতে হবে না এবং রোযা কাযা করতেও হবে না। কেননা, সে শরয়ী নিয়ম মতে রোযা ভেঙ্গেছে। অতএব এ দিন তার জন্য পানাহার বৈধ হওয়ার দিন।[3]

[1] (তিরমিযী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৯০৫, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২২৪নং)

[2] (ইবনে বায, ফাসিঃ মুসনিদ ১৬পৃঃ)

[3] (আআসাঈঃ ২৮পৃঃ)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে