ফিতরা আদায় করার দুটি সময় আছে; তার মধ্যে একটি সময়ে আদায় দিলে ফযীলত পাওয়া যাবে এবং অন্য একটির সময়ে দান করলে যথেষ্ট হয়ে যাবে। প্রথম সময়ে দিতে হয় এবং দ্বিতীয় সময়ে দেওয়া চলে। প্রথম সময়ে দেওয়াই বিধেয় এবং দ্বিতীয় সময়ে দেওয়া বৈধ।

এই যাকাত আদায়ের ফযীলতের সময় হল, ঈদের সকালে নামাযের পূর্বে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে ঈদুল ফিতরের দিন এক সা’ খাদ্য দান করতাম।’[1]

ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) লোকেদের ঈদের নামাযের জন্য বের হওয়ার পূর্বে ফিতরার যাকাত আদায় দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।’[2]

ইবনে উয়াইনাহ তাঁর তফসীর-গ্রন্থে আম্র বিন দ্বীনার থেকে বর্ণনা করেছেন, ইকরামা বলেন, ‘লোকে তার ফিতরার যাকাত ঈদের নামাযের পূর্বে (মিসকীনদেরকে) পেশ করে দেবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন,

(قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى)

অর্থাৎ, সেই ব্যক্তি সাফল্য লাভ করবে, যে (যাকাত দিয়ে) পবিত্র হবে এবং তার প্রভুর নাম স্মরণ করে নামায পড়বে। (কুরআনুল কারীম ৮৭/১৪-১৫)

এই জন্যই ঈদুল ফিতরের নামায দেরী করে পড়া উত্তম। যাতে ফিতরা আদায় দেওয়ার জন্য সময় সংকীর্ণ না হয়।

এই যাকাত আদায়ের বৈধ সময় হল ঈদের আগে দু-এক দিন। নাফে’ বলেন, ‘ইবনে উমার (রাঃ) ছোট-বড় সকলের তরফ থেকে ফিতরা দিতেন; এমন কি আমার ছেলেদের তরফ থেকেও তিনি ফিতরা বের করতেন। আর তাদেরকে দান করতেন, যারা তা গ্রহণ করত। তাদেরকে ঈদের এক অথবা দুই দিন আগে দিয়ে দেওয়া হত।’[3]

এ যাকাত দিতে ঈদের নামাযের পর পর্যন্ত দেরী করা বৈধ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পর তা আদায় দেয়, তার যাকাত কবুল হয় না। কারণ, তার কাজ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ-বিরোধী। ইবনে আব্বাসের হাদীসে বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তা নামাযের পূর্বে আদায় দেয় তার যাকাত কবুল হয়। আর যে তা নামাযের পরে আদায় দেয়, তার সে যাকাত সাধারণ দান বলে গণ্য হয়।’’[4]

অবশ্য কোন অসুবিধার জন্য নামাযের পর দিলে তার যাকাত কবুল হয়ে যাবে। যেমন, যদি কেউ ঈদের সকালে এমন জায়গায় থাকে, যেখানে যাকাত নেওয়ার মত লোক নেই, অথবা সকালে হঠাৎ করে ঈদের খবর এলে ফিতরা আদায় দেওয়ার সুযোগ না পেলে, অথবা অপর কাউকে তা আদায় দেওয়ার ভার দেওয়ার পর সে তা ভুলে গেলে ঈদের নামাযের পর তা আদায় দিলে দোষাবহ নয়। যেহেতু এ ব্যাপারে তার ওজর গ্রহণযোগ্য।

ওয়াজেব হল, যথা সময়ে ঈদের নামাযের পূর্বেই গরীব-মিসকীনদের হাতে অথবা তাদের কোন প্রতিনিধির হাতে পৌঁছে যাওয়া। যাকে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাকে বা তার প্রতিনিধিকে সে সময় না পাওয়া গেলে অন্য হকদারকে দান করে দিতে হবে। তবুও যথা সময় অতিবাহিত করা যাবে না।[5]

পক্ষান্তরে ইবনে উমার কর্তৃক যে হাদীস বর্ণিত আছে, ‘ঈদের নামাযের জন্য বের হয়ে যাওয়ার পূর্বে আমাদেরকে ফিতরার যাকাত বের করে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হত। অতঃপর নামায থেকে ফিরার পর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তা মিসকীনদের মাঝে বন্টন করে দিতেন---।’ তা সহীহ নয়; বরং তা অপ্রামাণ্য ও যয়ীফ।[6]

[1] (বুখারী ১৫১০নং)

[2] (বুখারী ১৫০৯, মুসলিম ৯৮৬নং)

[3] (বুখারী ১৫১১, আবূ দাঊদ ১৬১০নং)

[4] (সহীহ আবূ দাঊদ ১৪২০, ইবনে মাজাহ ১৮২৭, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪০৯, বাইহাকী ৪/১৬৩)

[5] (মাজালিসু শাহরি রামাযান মজলিস নং ২৮)

[6] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৮৪৪নং দ্রঃ)