সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি অতীব দয়ালু, বেশী বেশী তাওবা কবুলকারী, সঠিক পথের দিশাদাতা, গুনাহ মাফকারী এবং ওযর গ্রহণকারী, কঠিন শাস্তিদাতা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি একক এবং তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব এবং তিনিই রুজিদাতা। এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি এবং তাঁর সমস্ত সাহাবার প্রতি অসংখ্য দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন। অতঃপর:
আমি তাওবা সংক্রান্ত লিখা এ বইটি পড়েছি যা খুবই মূল্যবান এবং উপকারী। লেখক এতে তাওবার শর্তাবলী, এর প্রমাণাদি এবং তাওবাকারীদের বিভিন্ন অবস্থার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন এবং অনেক গুনাহের উল্লেখ করেছেন যা থেকে তাওবা করা জরুরী। এজন্য আমি সকল গুনাহগারকে -আমরা সবাই গুনাহগার- অনুরোধ করছি এ শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করার এবং দ্রুত তাওবার পানে ধাবিত হবার জন্য। আমাদের সবাইকে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, মহান প্রভূ তার বান্দার তাওবা কবুল করবেন এবং গুনাহ-খাতা মাফ করে দিবেন। বান্দা যেন তার রবের রহমতের ব্যাপারে আশাবাদী হয় এবং এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, তিনি তাকে সৎ আমলের ব্যাপারে সাহায্য করবেন এবং তার পথে চলতে সহায়তা করবেন। তাকে পাপ পরিত্যাগ করতে এবং পাপীদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবেন।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে কল্যাণের পথে চলার তাওফীক দান করেন, আমাদের ভাই লেখককে এ কাজের প্রতিফল দান করেন এবং এর দ্বারা মুসলমান ভাইদেরকে উপকৃত করেন। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ এর প্রতি তাঁর পরিবার এবং সাহাবাদের প্রতি মহান আল্লাহ দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আ-মী-ন ।
আব্দুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-জিবরীন
তারিখ: ১১/০৭/১৪১০ হিজরী
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করছি এবং তাঁরই কাছে সাহায্য চাচ্ছি। আল্লাহ তা’আলা যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারেনা। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি একক এবং তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর:
মহান আল্লাহ সমস্ত মুমিনদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর পানে তাওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, নিশ্চয় তোমরা সফলকাম হবে।’’ (আননূর: ৩১)
তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাওবাকারী ও অত্যাচারী হিসেবে ভাগ করেছেন। এখানে তৃতীয় কোন ভাগ নেই। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘যারা তাওবা করবে না, তারাই অত্যাচারী।’’ (আলহুজুরাত: ১১)
আর এখন এমন এক সময় এসেছে যাতে মানুষ আল্লাহর দ্বীন থেকে দূরে সরে গেছে এবং পাপাচার ব্যাপকতা লাভ করছে ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, এ থেকে কেউই বাঁচতে পারছে না আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া।
আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছা এই যে, তিনি তাঁর নূরকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন, যার ফলে অনেক লোকই তাদের গাফলতী ও তন্দ্রা থেকে জেগে উঠেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, তারা আল্লাহর হকের ব্যাপারে কার্পণ্য করেছে, তার অবাধ্যতার জন্য অনুতপ্ত, যার ফলে তারা তাওবার দিকে এগিয়ে এসেছে। অন্যরা এই বিষাক্ত জীবনের ব্যাপারে বিতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে। তারা পথ খুঁজছে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের হয়ে আসার জন্য। কিন্তু তাদের সামনে বাধা হয়ে উঠেছে কিছু প্রতিবন্ধকতা যা তাদের মাঝে ও তাওবার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কিছু হলো মনের মধ্যে, আর কিছু হলো তার চতুর্পাশে। আমি এ পুস্তিকা রচনা করেছি এ আশা করে যে, এসব বিষয় পরিষ্কার করা ও এর হুকুম স্পষ্ট করে বর্ণনা করার লক্ষ্যে এবং শয়তানকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে।
এ পুস্তিকায় একটি ভূমিকা থাকবে গুনাহকে তুচ্ছজ্ঞান করার ভয়াবহতা সম্পর্কে, এরপর তাওবার শর্তাবলীর ব্যাখ্যা ও তার মানসিক চিকিৎসা সম্পর্কে। এরপর থাকবে তাওবা সম্পর্কে ফাত্ওয়া, দলীল প্রমাণসহ কুরআন, হাদীস এবং আহলুল ইলমের অভিমত। পরিশেষে থাকবে একটি উপসংহার। আল্লাহর নিকট দু’আ করি, তিনি যেন আমাকে এবং আমার ভাই-বোনদেরকে এ থেকে নসিহত ও উত্তম দাওয়াত গ্রহণ করার তাওফীক দান করেন এবং আমাদের সকলের তাওবা কবুল করেন। ([1])
মুহা্ম্মদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
পোস্ট বক্স নং - ২৯৯৯
আল-খুবার, সোউদী আরব
আপনি জেনে রাখুন (আল্লাহ আপনার প্রতি ও আমার প্রতি দয়া করুন) পরাক্রমশালী আল্লাহ তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন নিষ্ঠার সাথে তাওবা করার জন্য। তিনি বলেন: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট নিষ্ঠার সাথে তাওবা কর (প্রত্যাবর্তন কর)।’’ (আত্তাহরীম: ৮)
কেরামান কাতেবীন (ফেরেশতা) আমাদের কারো গুনাহ্ লিখার পূর্বে আল্লাহ আমাদেরকে তাওবার ব্যাপারে অনেক ঢিল দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নিশ্চয় বামপাশের ফেরেশতা কলম উঠিয়ে রাখে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত ভূলকারী মুসলিম বান্দা থেকে। বান্দা যদি অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তাহলে তা মাফ করে দেয়া হয়, নতুবা একটি গুনাহ লিখা হয়। (তাবারানী, বায়হাকী, ইমাম আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলে অভিহিত করেছেন) আরেকটি ফুরসত হলো লিখার পরে এবং মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার পূর্বে।
বর্তমান যুগের সমস্যা হলো অনেক মানুষই আল্লাহকে ভয় করে না, তারা রাতদিন বিভিন্ন রকমের গুনাহ করে চলেছে। এদের কেউ কেউ আবার গুনাহকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এজন্য দেখবেন এদের কেউ কেউ সগীরা গুনাহকে খুবই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। যেমন বলে, একবার খারাপ কিছু দেখলে অথবা কোন বেগানা মহিলার সাথে করমর্দন করলে কি-ই বা ক্ষতি হবে?
অনেকেই আগ্রহ ভরে হারাম জিনিসের দিকে নজর দেয় পত্র-পত্রিকায় বা টিভি সিরিয়াল বা সিনেমার দিকে, এমনকি এদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে এটি হারাম, তখন খুবই রসিকতা করে প্রশ্ন করে, এতে কত গুনাহ রয়েছে? এটি কি কবীরা গুনাহ না সগীরা গুনাহ? আপনি যখন এটির বাস্তব অবস্থা জানবেন তখন তুলনা করে দেখুন নিম্নোক্ত দুটি বর্ণনার সাথে যা ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেন:
এক: হযরত আনাস রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা এমন সব কাজ কর যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহর যুগে এগুলোকে মনে করতাম ধ্বংসকারী।
দুই: হযরত ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মুমিন গুনাহকে এভাবে দেখে থাকে যে, সে যেন এক পাহাড়ের নিচে বসে আছে যা তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে পাপী তার গুনাহকে দেখে যেন মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, তাকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়।
এরা কি বিষয়টির বিপজ্জনকতা উপলব্ধি করতে পারবে যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীস পাঠ করবে ;
"إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَمَثَلِ قَوْمٍ نَزَلُوا بِبَطْنِ وَادٍ فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى حَمَلُوا مَا أنْضَجُوا بِهِ خُبْزَهُمْ وَإنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يَأخُذُ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكُهُ" وَفِي رِوَايَةٍ: "إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُـلِ حَتَّى يُهْلِكَنَّهُ" رواه أحمد (صحيح الجامع: ২৬৮৬ু ২৬৮৭)
‘‘তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও! নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলোর উদাহরণ হল ঐ লোকদের মত যারা কোন মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ) সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত এতটা লাকড়ি তারা সংগ্রহ করল যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো হল। নিশ্চয় নগণ্য ছোট ছোট গুনাহতে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদেরকে যখন সেই নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলো গ্রাস করবে (পাকড়াও করবে) তখন তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।’’ অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, ‘‘তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও; কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়।’’ (আহমদ, সহীহ আল-জামে’ ২৬৮৬-২৬৮৭)
বিদ্যানগণ উল্লেখ করেছেন: যখন সগীরা গুনাহর সাথে লজ্জাশরম কমে যাবে, কোন কিছুতে ভ্রূক্ষেপ করবে না, খোদাভীতি থাকবে না এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভক্তি হবে না তখন একে কবীরা গুনাহতে পরিণত করবে। এজন্যই বলা হয়েছে যে, ক্রমাগত পাপ করলে তা আর সগীরা থাকে না এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে কবীরা থাকে না। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে সগীরা গুনাহ করতে থাকলে তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলে কবীরা গুনাহ আর থাকে না তা মাফ হয়ে যায়। যার এ অবস্থা তাকে আমরা বলি, গুনাহ ছোট আপনি এদিকে দৃষ্টি দিবেন না, বরং আপনি দৃষ্টি দিবেন এদিকে যে, আপনি কার অবাধ্যতা করছেন।
আমার এ কথাগুলো দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ সত্যবাদীগণ, যারা অনুভব করছেন তাদের গুনাহ ঘাটতির ব্যাপারটি। তারা নয় যারা তাদের গোমরাহীতে অনড়, তাদের বাতিল অবস্থার প্রতি অবিচল। এটি তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে মহান আল্লাহর এ বাণীকে: ‘‘আপনি আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয় আমিই একমাত্র ক্ষমাকারী দয়ালু ’’। (সূরা আল হিজর: ৪৯)
তেমনি যারা ঈমান রাখে এ বাণীর উপর: ‘‘আর নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হলো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’ (সূরা আল হিজর: ৫০)
তাওবা শব্দটি এক মহান শব্দ। এর অর্থ খুবই গভীর। এমন নয় যা অনেকেই মনে করে থাকেন, মুখে শব্দটি বললাম অতঃপর গুনাহে লিপ্ত থাকলাম। আপনি আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী অনুধাবন করে দেখুন। আল্লাহ্ কি বলছেন:‘‘তোমরা তোমাদের প্রভূর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন (তাওবা) কর।’’ (সূরা হুদ: ৩)
আয়াতের মধ্যে সকলকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে, অতঃপর তাওবা করতে বলা হয়েছে। সুতরাং তাওবা হচ্ছে ক্ষমা প্রার্থনার পর অতিরিক্ত আলাদা বিষয়।
কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য অবশ্যই কিছু শর্ত থাকে। আলেম-ওলামাগণ কুরআন ও হাদীস মন্থন করে তাওবার জন্য কতিপয় শর্ত উল্লেখ করেছেন, তা হলো:
এক: দ্রুত পাপ থেকে বিরত হওয়া।
দুই: পূর্বে যা ঘটে গেছে সে জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
তিন: পুনরায় পাপ কাজে ফিরে না আসার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
চার: প্রাপকদের হক ফিরিয়ে দেয়া যা অন্যায়ভাবে নেয়া হয়েছিল অথবা তাদের নিকট থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া।
আর খালেসভাবে তাওবার জন্য কতিপয় আলেম যেসব শর্ত উল্লেখ করেছেন, নিম্নে সেগুলো উদাহরণসহ আলোচনা করা হচ্ছে।
[এক]: শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য পাপ ত্যাগ করা, অন্য কোন কারণে নয়, যেমন;
~ অক্ষমতার কারণে পাপ থেকে দূরে থাকা, এসব কর্ম করতে ভাল না লাগা অথবা লোকজন মন্দ বলবে এই ভয়ে পাপ ত্যাগ করা।
~ এজন্য তাকে তাওবাকারী বলা হবে না, যে ব্যক্তি পাপ ত্যাগ করেছে তার মানহানী ঘটায় বা এর জন্য হয়তো সে চাকুরীচ্যুত বা পদবী হারাতে পারে।
~ তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি পাপ ত্যাগ করল তার শক্তি ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য। যেমন; কেউ জেনা করা ত্যাগ করলো যেন দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে বাঁচতে পারে অথবা তার শরীর ও স্মৃতি শক্তিকে দুর্বল না করে।
~ তেমনিভাবে তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে; কোন বাড়ীতে ঢুকার পথ না পেয়ে বা সিন্দুক খুলতে অসমর্থ কিংবা পাহারাদার ও পুলিশের ভয়ে।
~ তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে দূর্নীতি দমন বিভাগের লোকজনদের জোর তৎপরতায় ধরা পড়ার ভয়ে ঘুষ খাওয়া বন্দ রেখেছে।
~ আর তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি মদ পান, মাদকদ্রব্য বা হেরোইন সেবন ইত্যাদি ছেড়ে দিয়েছে দারিদ্রের কারণে।
~ তেমনিভাবে তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে সামর্থহীন হওয়ার কারণে গুনাহ করা ছেড়ে দিলো। যেমন মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়েছে তার কথায় জড়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণে কিংবা জেনা করছে না যেহেতু সে সহবাস ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, কিংবা চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ার কারণে।
বরং এসবে অবশ্যই অনুতপ্ত হতে হবে, সব ধরনের পাপ থেকে মুক্ত হতে হবে এবং অতীত কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘অনুতপ্ত হওয়াই হলো তাওবা।’’ (আহমাদ, ইবনে মাজা, সহীহ আল-জামে ৬৮০২)
মহান আল্লাহ আকাংখা পোষণকারী অপারগকে কর্ম সম্পাদনকারীর মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আপনি জানেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন:
(إِنَّمَا الدُّنْيَا لأَرَْبَعَةِ نَفَرٍ عَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مَالاً وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلَ فِيهِ رَحِمَهُ وَيَعْلَمَ للهِ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ حَقًّا، قَالَ: فَهَذَا بِأفْضَلِ الْمَنَازِلِ، وَعَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالاً، قَالَ: فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّة، يَقُوْلُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بِنِيَّتِهِ، فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ، وَعَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ مَالاً وَلَمْ يَرْزُقْهُ عِلْماً يَخْبِطُ فِي مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلاَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَلاَ يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَلاَ يَعْلَمُ لِلّهِ فِيهِ حَقّاً، فَهَذَا بِأَخْبَثِ الْمَنَازِلِ، وَعَبْدٌ لَمْ يَرْزُقْهُ اللهُ مَالاً وَلاَ عِلْماً فَهُوَ يَقُوْلُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بِنِيَّتِهِ، فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ) رواه أحمد والترمزي وصححه. (صحيح الترغيب والترغيب ১/৯).
‘‘দুনিয়া চার প্রকার লোকের জন্য; (১) সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ মাল ও জ্ঞান দান করেছেন সুতরাং সে এতে তার প্রভূকে ভয় করছে, তার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখছে এবং তার ব্যাপারে আল্লাহর হক জানছে, এ হলো সর্বোত্তম অবস্থানে। (২) সেই বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু মাল দেননি, সে হলো সঠিক নিয়তের লোক, সে বলে, যদি আমার টাকা পয়সা থাকতো তাহলে উমুক ব্যাক্তির মত কাজ করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। এদের দুজনের নেকী সমান হবে। (৩) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ টাকা পয়সা দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। সে না জেনেই তার টাকা পয়সা খরচ করছে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হকও সে জানে না। সে হলো সর্ব নিকৃষ্ট অবস্থানে। (৪) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ মালও দেননি জ্ঞানও দেননি, সে বলে আমার টাকা পয়সা থাকলে উমুকের মতই (খারাপ কাজ) করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। এরা দুজনই গুনাহর দিক থেকে সমান। (আহমদ, তিরমিযী, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব: ১/৯)
[দুই]: পাপের কদর্যতা ও ভয়াবহতা অনুভব করা; অর্থাৎ সঠিক তাওবার সাথে কখনো আনন্দ ও মজা পাওয়া যাবেনা অতীত পাপের কথা স্মরণ হলে অথবা কখনো ভবিষ্যতে সেসব কাজে ফিরে যাবে, এ কামনা মনে স্থান পাবে না।
ইবনুল কাইয়্যেম রহমতুল্লাহ আলাইহে তার লিখা [الداء والدواء] ‘রোগ ও চিকিৎসা’ এবং [الفوائد] ‘আল্ফাওয়াইদ’ নামক গ্রন্থে গুনাহের অনেক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে: জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া, অন্তরে একাকিত্ব অনুভব করা, কাজকর্ম কঠিন হয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া, বরকত কমে যাওয়া, কাজে সমন্বয় না হওয়া, গুনাহর কাজে অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া, আল্লাহর ব্যাপারে পাপীর অনাসক্তি সৃষ্টি হয় এবং লোকজন তাকে অশ্রদ্ধা করে, জীবজন্তু তাকে অভিশাপ দেয়, সে সর্বদা অপমানিত হতে থাকে, অন্তরে মোহর পড়ে যায়, লানতের মাঝে পড়ে এবং দু’আ কবুল হয় না, জলে ও স্থলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়, লজ্জা চলে যায়, নিয়ামত দূর হয়ে যায়, আজাব নেমে আসে, পাপীর অন্তরে সর্বদা ভয় নেমে আসে এবং সে শয়তানের দোসরে পরিণত হয়, তার জীবন সমাপ্ত হয় মন্দের উপর এবং পরকালীন আজাবে নিপতিত হয়।
পাপের এই ক্ষতি ও বিপর্যয় যদি বান্দা জানতে পারে তাহলে সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকবে। কিছু কিছু লোক এক পাপ ছেড়ে আরেক পাপ করতে শুরু করে তার কিছু কারণ হলো:
১. মনে করে যে, এর পাপ কিছুটা হালকা।
২. মন পাপের দিকে বেশী আকৃষ্ট হয় এবং এর দিকে ঝোক খুবই প্রবল থাকে।
৩. এ পাপ করার জন্য পারিপার্শিক অবস্থা সহজ ও সহায়ক হয় অন্যটির তুলনায়, অন্য পাপের মোকাবেলায় যার জন্য অনেক কিছু জোগাড় করা লাগে।
৪. তার সঙ্গী সাথীরা এ পাপের সাথে জড়িত, তাদেরকে ত্যাগ করা কঠিন বলে মনে হয়।
৫. কোন কোন ব্যক্তির নিকট বিশেষ পাপ তার মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তার সঙ্গী সাথীদের মাঝে। এজন্য সে চিন্তা করে যেন তার অবস্থান সে ধরে রাখে এবং এ পাপ অব্যাহত রাখে, যেমনটি ঘটে বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধানদের বেলায়। যেমনটি ঘটেছিল অশ্লীল কবি আবু নাওয়াসের বেলায়, যখন তাকে কবি আবুল আতাহিয়া উপদেশ দেয় ও ভৎর্সনা করে তার পাপের জন্য। সে তখন জবাবে লিখে -
হে আতাহিয়া! তুমি কি চাও আমি
ছেড়ে দেই আনন্দ ফূর্তি করা
তুমি কি চাও আমি ধর্মকর্ম করে হারিয়ে ফেলি
আমার লোকদের কাছে আমার মর্যাদা।
[তিন]: যার জন্য তাওবার প্রয়োজন সে যেন তাড়াতাড়ি তাওবা করে। কারণ তাওবা করতে দেরী করাটাই পাপ।
[চার]: আল্লাহর হক যা ছুটে গেছে তা যথাসম্ভব আদায় করা। যেমন জাকাত দেয়া যা সে পূর্বে দেয়নি। কেননা এতে আবার দরিদ্র লোকজনের অধিকারও রয়েছে।
[পাঁচ]: পাপের স্থানকে ত্যাগ করা যদি সেখানে অবস্থান করলে আবার সে পাপে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে।
[ছয়]: যারা পাপ কাজে সহযোগিতা করে তাদেরকে পরিত্যাগ করা (এটিও পূর্ববর্তী ১০০টি লোক হত্যাকারীর হাদীস থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।)
মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘আন্তরিক বন্ধুরাই সেদিন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।’’ (সূরা আল-যুখরুফ: ৬৭)
খারাপ সাথীরা একে অপরকে কিয়ামতের দিন অভিশাপ দিবে। এজন্য হে তাওবাকারী, আপনাকে এদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ও এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যদি আপনি তাদেরকে দাওয়াত দিতে অপারগ হন। শয়তান যেন আপনার ঘাড়ে আবার সওয়ার হবার সুযোগ না পায় এবং আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার কুপথে নিয়ে না যায়। আর আপনি তো জানেন যে, আপনি দুর্বল তাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন না। এ ধরণের অনেক ঘটনা রয়েছে যে, অনেক লোকই তার পুরাতন বন্ধু বান্ধবের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার পর আবার পাপে জড়িয়ে পড়েছে।
[সাত]: নিজের কাছে রক্ষিত হারাম জিনিসকে নষ্ট করে ফেলা। যেমন মাদক দ্রব্য, বাদ্যযন্ত্র, যেমন একতারা, হারমনিয়াম, অথবা ছবি, ব্লু ফ্লিম, অশ্লীল নভেল নাটক। এগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাওবাকারীকে সঠিক পথে দৃঢ়ভাবে থাকার জন্য অবশ্যই সব জাহেলিয়াতের জিনিস থেকে মুক্ত হতে হবে। এ ধরণের অনেক ঘটনা রয়েছে, যাতে দেখা যায়, এসব হারাম জিনিসই তাওবাকারীর পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবার পিছনে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর দ্বারাই সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমরা আল্লাহর নিকট সঠিক পথে টিকে থাকার জন্য তাওফীক কামনা করছি।
[আট]: ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করতে হবে যারা তাকে দ্বীনের ব্যাপারে সহায়তা করবে এবং এরা হবে খারাপ সঙ্গী সাথীর বিকল্প। আর চেষ্টা করতে হবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও ইলমী আলোচনায় বসার জন্য। নিজেকে সব সময় এমন কাজে মশগুল রাখতে হবে যাতে কল্যাণ রয়েছে, যেন শয়তান তাকে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সুযোগ না পায়।
[নয়]: নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাকে সে হারাম দিয়ে প্রতিপালন করেছে। একে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লাগাতে হবে এবং হালাল রুজি খেতে হবে যেন শরীরে আবার পবিত্র রক্ত-মাংস সৃষ্টি হয়।
[দশ]: তাওবা দম আটকে যাওয়া বা ফুরিয়ে যাবার (মৃত্যুর পূর্বক্ষণে শ্বাসকষ্ট শুরু হবার) পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবার পূর্বে হতে হবে। ঘড়ঘড়ার অর্থ হলো কণ্ঠনালী হতে এমন শব্দ বের হওয়া যা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো কিয়ামতের পূর্বেই তাওবা করতে হবে তা ছোট কিয়ামত হোক (মৃত্যু) বা বড় কিয়ামতই হোক (পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া)। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাওবা করবে ঘড়ঘড়া উঠার পূর্বে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।’’ (আহমাদ, তিরমিযী, সহীহ আল জামে’ : ৬১৩২) অপর হাদীসে তিনি বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার পূর্বে তাওবা করবে, আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা কবুল করবেন।’’ (মুসলিম)
আমরা এখানে এই উম্মতের প্রথম যুগের রাসূলের সাহাবাদের তাওবার ঘটনা উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করবো।
হযরত বুরায়দা রাযিআল্লাহু তা’আল আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মায়েয ইবনে মালেক আল আসলামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার আত্মার উপর জুলুম করেছি, আমি জিনা করেছি। আমি চাই আপনি আমাকে পবিত্র করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্প্রদায়ের নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে, তার মানসিক কোন সমস্যা আছে বলে তোমরা জান কি? তারা বললো, আমরা তো এ ধরণের কিছু জানিনা। তাকে আমরা পূর্ণ জ্ঞানবানই দেখছি। আমাদের দৃষ্টিতে সে সুস্থ মানুষ। এরপর সে তৃতীয়বার আবার রাসূলের নিকট আসে এবং রাসূল আবার তার কবিলার নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন। তারা জানায়, তার কোন মানসিক সমস্যা নেই। অতঃপর যখন সে চতুর্থবার আসে তখন তার জন্য গর্ত খুঁড়া হয়, তাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, গামেদিয়া (গামেদিয়া গোত্রের জনৈকা মহিলা) এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করেছি, আপনি আমাকে পবিত্র করুন! তখন রাসূল তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরের দিন সে আবার এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কেন আপনি আমাকে ফেরত পাঠালেন? হয়তো আপনি আমাকে মায়েযের মত ফেরত পাঠাচ্ছেন! আল্লাহর শপথ! আমি গর্ভবতী। তখন তিনি তাকে বললেন, যখন সন্তান প্রসব করবে, তারপর আসবে। সন্তান জন্ম নেবার পর বাচ্চাটিকে একটি কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে তিনি রাসূলের নিকট হাজির হলেন। তিনি তাকে বললেন, যাও যখন সে খাবার খেতে পারবে তখন আসবে। এরপর যখন বাচ্চা খাবার খেতে শুরু করে তখন মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে এসে হাজির হয়, তখন বাচ্চার হাতে এক টুকরা রুটি ধরা ছিল। সে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! বাচ্চা এখন খাবার খাচ্ছে। অতঃপর তার বাচ্চাটাকে একজন মুসলমানের জিম্মায় দেয়া হলো। এরপর তার বুক পর্যন্ত গর্ত খুড়তে নির্দেশ দেয়া হলো। এরপর লোকদের নির্দেশ দেয়া হলো তাকে যেন পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। হযরত খালিদ ইবনে অলিদ একটা পাথর ছুঁড়ে তার মাথায় মারেন, যার ফলে রক্ত ছুটে খালিদের মুখে এসে পড়ে, এজন্য খালিদ তাকে গালি দেন। নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তার গালি শুনতে পেয়ে বলেন, ধীরে, হে খালিদ! আমার জীবন যে সত্বার হাতে রয়েছে তার কসম। এই মহিলা এমন তাওবা করেছে যদি এ তাওবা কোন অবৈধ ট্যাক্স আদায়কারী করতো তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হতো। এরপর নির্দেশ দেয়া হয় এবং তার জানাযা পড়ে তাকে দাফন করা হয়। (মুসলিম)
এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত উমার রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে রজম (পাথর ছুড়ে হত্যা) করলেন এরপর তার আবার জানাযা পড়বেন? তখন তিনি বললেন, সে এমন তাওবা করেছে তা যদি মদ্বীনার সত্তর জন লোকের মাঝে বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তা যথেষ্ট হতো। তুমি কি এর চেয়ে আর কাউকে উত্তম দেখেছো যে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিজের জীবন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে? (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক ৭/৩২৫)
কেউ হয়তো বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু কে আমাকে নিশ্চয়তা দেবে যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন? আমি সঠিক পথে চলতে চাই কিন্তু আমার মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে, যদি আমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারতাম যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন তাহলে আমি তাওবা করতাম?
আমি তাকে বলবো আপনার ভিতরে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে সে অনুভূতি ইতিপূর্বে রাসূলের সাহাবাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে নিম্নোক্ত দুটি রেওয়ায়েত পড়েন তাহলে অপানার মনের প্রশ্ন আশা করি দূর হয়ে যাবে।
প্রথমত: ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহ আলাইহি আমর ইবনে আ’স রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: মহান আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামকে পছন্দনীয় করে দিলেন, তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গিয়ে বললাম, আপনি আপনার হাত বাড়ান আমি বাইয়াত করবো। তখন তিনি হাত বাড়ালে আমি হাত গুটিয়ে নি। তিনি বলেন, হে আমর তোমার কি হলো? আমি বললাম, আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বলেন, কিসের শর্ত? বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। তিনি বললেন, হে আমর! তুমি কি জাননা যে, ইসলাম পূর্বের সবকিছু ধ্বংস করে দেয় এবং হিজরত পূর্বের সমস্ত গুনাহ ধ্বংস করে দেয়।
দ্বিতীয়ত: মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে। কিছু মুশরিক লোক মানুষ হত্যা করে এবং তারা অনেক হত্যাকান্ড ঘটায়, জিনা করে এবং অনেক ব্যভিচার করে এরপর হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলে, আপনি যা বলেন এবং যার দিকে আহবান করেন তা অতি উত্তম। এখন আপনি যদি আমাদেরকে জানাতেন যে, আমরা যা করেছি এর কি কাফ্ফারা রয়েছে? তখন আল্লাহর এ বাণী নাযিল হয়:‘‘আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের উপাসনা করে না এবং আল্লাহ যাকে (হত্যা করা) হারাম করে দিয়েছেন, তাকে হত্যা করে না, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত এবং তারা ব্যভিচার করে না, আর যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে, তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে আর নেক কাজ করতে থাকবে আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ বড়ই করুণাময়। (সূরা আল ফুরকান: ৬৮-৭০)
এবং এ আয়াতটিও নাযিল হয়: ‘‘আপনি বলে দিন, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।’’ (সূরা আয্যুমার: ৫৩)
আপনি হয়তো আমাকে বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার গুনাহের পরিমাণ অনেক বেশী, যত রকমের গুনাহ আছে আমি তা সবই করেছি। পাপ কামাই করেছি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, বিগত এত বছরের সব পাপ কি আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন?
হে সম্মানিত ভাই! আপনাকে আমি বলছি, এটি বিশেষ কোন সমস্যা নয় বরং এটা অনেকেরই সমস্যা যারা তাওবা করতে চায়। একজন যুবকের কথা উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করতে চাই যে একবার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল, খুব অল্প বয়স থেকেই সে পাপ কাজ করতে শুরু করে। এখন তার বয়স মাত্র সতের বছর। এই বয়সেই তার পাপের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। ছোট বড় সব ধরণের পাপই সে করেছে। সে ছোট বড় বিভিন্ন মানুষের সাথে পাপ কর্ম করেছে। এমনকি সে ছোট মেয়েদেরকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। সে অনেক চুরিও করেছে। এরপর সে বলে, আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি। মাঝে মধ্যে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ি। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখি এবং ফজর নামাযের পর কুরআন মজীদ পড়ি, আমার কি তাওবা কবুল হবে?
আমরা ইসলামের অনুসারী। আমাদের মূলনীতি হলো কুরআন সুন্নাহ থেকে ফয়সালা ও প্রতিকার গ্রহণ করা। তাতে পেলাম মহান আল্লাহর এ বাণী: ‘‘আপনি বলে দিন যে, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু। আর তোমরা তোমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তার নিকট আত্মসমর্পণ কর আযাব আসার পূর্বেই, অতঃপর আর সাহায্য করা হবেনা।’’ (সূরা আযযুমার: ৫৩-৫৪)
এটিই হচ্ছে উল্লিখিত সমস্যার সূক্ষ্ম জবাব এবং এটি অত্যন্ত স্পষ্ট, ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাপের পরিমাণ বেশী হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন কিনা এ অনুভূতির কারণ হচ্ছে:
প্রথমত: আল্লাহর রহমতের ও ক্ষমার ব্যাপকতা সম্পর্কে বান্দার দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা। এর ব্যাখ্যা হিসেবে মহান আল্লাহর এ বাণীই যথেষ্ট হবে: ‘‘ নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।’’ (সূরা আয্যুমার: ৫৩)
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর রহমত যে কত ব্যাপক সে সম্পর্কে ঈমানে ঘাটতি থাকা। এক্ষেত্রে হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি জানলো যে, আমি গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা রাখি তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেব এ ব্যাপারে কোন কিছুতেই পরওয়া করবো না। যদি সে আমার সাথে কোন কিছু শরীক (অংশীদার) করে থাকে।’’ (তাবারানী, হাকেম, সহীহ আল জামে’ ৪৩৩০) এটি হবে, যখন বান্দা আল্লাহর সাথে পরকালে সাক্ষাত করবে।
তৃতীয়ত: তাওবার কার্যকর ক্ষমতা সম্পর্কে এ ধারনা না থাকা যে, তা সব গুনাহকেই ক্ষমা করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে রাসূলের এ হাদীসই যথেষ্ট, ‘‘যে ব্যক্তি তাওবা করবে তার যেন কোন গুনাহ থাকবে না।’’
ক্ষমাকে যারা খুব কঠিন বলে মনে করে এবং চিন্তা করে, আল্লাহ কঠিন পাপ ক্ষমা করবেন কিনা? তাদের জন্য নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করছি।
হযরত আবু সাঈদ সাদ বিন মালেক বিন সিনান আল খুদরী রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্বের জাতির একটি লোক নিরানববই জনকে হত্যা করে, এরপর সে সবচেয়ে বড় একজন জ্ঞানী লোকের (আলেমের) খোঁজ করে, তখন তাকে একজন আবেদের কথা বলা হয়। সে তাকে গিয়ে বলে, আমি নিরানববই জন মানুষকে খুন করেছি, আমার তাওবা হবে? সে বলল, না। অতঃপর তাকে হত্যা করে সে একশ জন লোক পুরা করে। অতঃপর সে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির খোঁজ করলে একজন আলেমের খোজ দেয়া হয়। সে তাকে গিয়ে বলে, আমি একশটি লোক হত্যা করেছি, আমার কি তাওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। কে তোমার ও তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে? তুমি উমুক স্থানে যাও সেখানে কিছু মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর ইবাদত করে, তুমি তাদের সাথে গিয়ে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তুমি তোমার এলাকায় ফিরে যেও না। কেননা তোমার এলাকাটা খুব খারাপ এলাকা। সে তখন যাত্রা শুরু করে। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার সময় তার মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর তার ব্যাপারে রহমত ও আযাবের ফেরেশতারা বিবাদে লিপ্ত হয়। রহমতের ফেরেশতারা বলে, সে তাওবা করে আল্লাহর পানে ছুটে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতারা বলে, সে কখনো কোন ভালো কাজই করেনি। অতঃপর সেখানে মানুষের বেশে একজন ফেরেশতা আসে। তারা তাকে বিচারক মানে। তিনি বলেন, তোমরা দুদিকটা মেপে দেখ। সে যেদিকে নিকটবর্তী হবে, তাকে সেদিকের বলে ধরে নেয়া হবে। অতঃপর মেপে দেখা গেল যে, সে যেদিকে যাচ্ছিল সে দিকটাই নিকটে। এর ফলে তাকে রহমতের ফেরেশতারা নিয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর বর্ণনায় এসেছে- সে ছিল ভাল গ্রামটার দিকে এক বিঘত পরিমাণ আগানো যার ফলে তাকে সেদিকের ধরে নেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ অহি করে দেন যেন এদিক দূরে হয়ে যায় এবং ঐদিকটা নিকটে হয়ে যায় এবং বলেন এর মধ্যখান মাপো যার ফলে তারা মাত্র এক বিঘত পরিমাণ এর দিকে আগান পায়, যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
হ্যাঁ, তার মাঝে ও তাওবার মাঝে কে বাধা হয়ে দাঁড়াবে? যারা আজকে তাওবা করতে চান তাদের গুনাহ কি এ ব্যক্তির চেয়েও বেশী বলে মনে করেন, তাহলে হতাশা কেন?
বরং হে মুসলিম ভাই! বিষয়টি এর চেয়েও বড়। আপনি মহান আল্লাহর এ বাণীকে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন:
‘‘আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের উপাসনা করে না এবং আল্লাহ যাকে (হত্যা করা) হারাম করে দিয়েছেন, তাকে হত্যা করে না, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত এবং তারা ব্যভিচার করে না, আর যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে, তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে আর নেক কাজ করতে থাকবে আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ বড়ই করুণাময়। (সূরা আল ফুরকান: ৬৮-৭০)
একটু ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন এ বাণীটি, ‘‘তাদের পাপকে আল্লাহ নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন’’। এতে আপনার নিকট মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের কথাই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। আলেমগণ বলেন, পরিবর্তন দুভাবে হতে পারে:
এক: খারাপ গুণকে ভালগুণে পরিবর্তন করে দেয়া। যেমন তাদের শিরককে ঈমানে পরিবর্তন করে দেয়া এবং ব্যভিচারকে পুত-পবিত্রায়, মিথ্যাকে সত্যবাদিতায় এবং খিয়ানতকে আমানদারীতে পরিবর্তন করে দেয়া।
দুই: তারা যে পাপ করেছে তা কিয়ামতের দিন নেকীতে রূপান্তরিত করে দেয়া। আপনি একটু ভাল করে পাঠ করুন, তাদের পাপকে নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন। তিনি একথা বলেননি প্রত্যেক পাপের স্থান নেকীতে পরিবর্তন করবেন। কেননা হতে পারে কম বা সমান অথবা বেশীতে পরিবর্তন করে দিবেন। এটা নির্ভর করছে তাওবাকারীর নিষ্ঠা ও পূর্ণতার উপর। আপনি কি এর চেয়ে উত্তম অনুগ্রহ আরো আছে বলে মনে করেন? আপনি মহান প্রভূর বাণীর উত্তম ব্যাখ্যা দেখুন নিম্নোক্ত হাদীসে:
হযরত আবদুর রহমান বিন জুবাইর হযরত আবু তালীব শাতবুল মামদুদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একজন খুবই বৃদ্ধ ব্যক্তি লাঠিতে ভর দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন যার চোখের পাতা তার চোখের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি রাসূলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, যদি কোন লোক সব ধরণের পাপ করে থাকে, এমন কোন পাপ নেই যা সে করেনি (ছোট বড় সব ধরনের পাপই করেছে)।
(অপর বর্ণনায় এসেছে যে, সে সব পাপই করেছে, তার পাপ যদি দুনিয়াবাসীর উপর বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিত) এর কি তাওবা করার সুযোগ রয়েছে? তিনি বললেন, আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করছেন? সে বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, ভাল কাজ করবেন এবং মন্দ (পাপ) কাজ পরিত্যাগ করবেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য সব পাপকে ভাল কাজে পরিণত করে দিবেন। সে বলল, আমার গাদ্দারী ও কুকীর্তি সমূহ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, সে বার বার আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান) ধ্বনি উচ্চারণ করছিল যতক্ষণ না সে চোখের আড়াল হয়ে যায়। (তবারানী, বাজ্জার; আল-মুনজেরী তারগীব গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, এর সনদ মজবুত ৪/১১৩; ইবনে হাজার ইসাবা গ্রন্থে বলেন, হাদীসটি শর্ত মোতাবেক রয়েছে ৪/১৪৯)
এখানে তাওবাকারী হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আমি ছিলাম পথভ্রষ্ট, নামায পড়তাম না, ইসলামের গন্ডির বাইরে ছিলাম, আমি কিছু ভাল কাজও করেছি, এখন তাওবা করার পর এগুলো কি ধরা হবে, নাকি সব হাওয়া হয়ে যাবে?
আপনার প্রশ্নের জবাব হলো, হযরত উরওয়া ইবনে জুবাইর হতে বর্ণিত হাদীসটি। হাকীম ইবনে হিজাম তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহেলিয়াতের যুগে দান-খয়রাত, গোলাম মুক্ত করা, আত্মীয় রক্ষা করা ইত্যাদি নেকীর কাজ করতাম। আমি কি এতে নেকী পাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছো, পূর্বেরগুলোকে উত্তম ভাবেই পাবে।’’ (বুখারী)
সুতরাং এসব পাপ ক্ষমায় পরিবর্তন করে দেয়া হবে এবং এসব জাহেলিয়াতের যুগের নেকী তাওবার পরে ঠিক রাখা হবে। তাহলে আর কি-ইবা বাকী থাকলো?
আপনি হয়তো বলতে পারেন, যখন আমার দ্বারা পাপ হয়ে যাবে তখন কিভাবে দ্রুত তাওবা করতে পারি? এমন কোন কাজ রয়েছে কি যা পাপ করার সাথে সাথেই করতে পারি?
উত্তর: পাপ থেকে বিরত হয়েই দুটি কাজ করতে হবে:
এক: অন্তঃকরণের কাজ হলো অনুতপ্ত হওয়া এবং এই বলে দৃঢ় সংকল্প নেয়া যে, এ ধরণের কাজ আর করবো না। এটি হবে মূলত আল্লাহর ভয়ের ফলে।
দুই: অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ বিভিন্ন প্রকারের নেকীর কাজ করার মাধ্যমে। এর মধ্যে অন্যতম হলো তাওবার নামায। এর দলীল হলো: হযরত আবু বকর রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কোন মানুষ পাপ করার পর যদি পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর নামায পড়ে এরপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (আসহাবুস সুনান, সহীহ আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ১/২৮৪) অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন:
‘‘যারা অশ্লীল কাজ করার পর অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করার পর আল্লাহকে স্মরণ করে এরপর নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর আল্লাহ ব্যতীত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করতে কেউ সক্ষম নয় এবং তারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর অটল থাকে না এবং তারা (গুনাহের বা পাপের উপর অটল থাকার ভীষণ পরিণাম) জানে।’’ (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৫)
অন্যান্য সহীহ বর্ণনায় এসেছে এই দু’রাকাতের গুণাবলীর কথা যা গুনাহ মাফের কারণ হবে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
(১) যে কেউ সুন্দরভাবে অযু করে তার সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় (কেননা অযু করলে ধৌত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সগীরা পাপ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে পড়ে)
আর উত্তমভাবে অযু হলো: প্রথমে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা এবং শেষে এ দু’আ করা:
"أَشْهَدُ اَنْ لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَحْدهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَ أَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ. اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ، سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ إِلَيْكَ"
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের এবং পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনার স্ত্ততির সাথেই আমি আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তাওবা করছি।’’
(২) এতে মনে মনে কোন কথা বলা যাবে না।
(৩) এতে একাগ্রতা ও বিনয়ীভাব আনতে হবে।
(৪) এরপর ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
পূর্বোক্ত কাজের ফলাফল:
(ক) পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
(খ) জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। (সহীহ আততারগীব ১/৯৪-৯৫)
(গ) বেশী বেশী নেকী ও সৎকর্ম করা।
আপনি সহীহ হাদীসে উল্লিখিত এই উদাহরণটি ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
(إِنَّ مِثْلَ الَّذِي يَعْمَلُ السَّيِّئَاتِ ثُمَّ يَعْمَلُ الْحَسَنَاتِ كَمَثَلِ رَجُلٍ كَانَتْ عَلَيْهِ دِرْعٌ ضَيِّقَةٌ قَدْ خَنَقَتْهُ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً فَانْفَكَّتْ حَلَقَةٌ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً أُخْرَىْ فَانْفَكَّتْ حَلَقَةً أُخْرَى حَتَّى يَخْرُجَ إِلَى الأَرْضِ) (مسند الإمام أحمد، والطبراني في الكبير)
‘‘ঐ ব্যক্তির উদাহরণ হলো, যে খারাপ কাজ করে সে সেই ব্যক্তির মত যার গায়ে খুব আটোসাটো লৌহবর্ম চাপান আছে যা তাকে চেপে ধরে রেখেছে, অতঃপর সে একটি নেক কাজ করলে একটি আংটা খুলে গেল, অতঃপর আরেকটি নেক কাজ করলে আরেকটি আংটা খুলে গেল, এভাবে সব খুলে মাটিতে পড়ে যায়’’। (মুসনাদে আহমাদ, তরারানী)
সুতরাং নেকী পাপীকে গুনাহের বন্দীখানা থেকে মুক্ত করে তাকে আনুগত্যের প্রশস্ত ময়দানে বের করে নিয়ে আসে। প্রিয় ভাই! নিম্নোক্ত ঘটনা আপনাকে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে দিবে।
হযরত ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এক মহিলাকে বাগানের ভিতর একাকী পেয়ে সব কিছুই করেছি কিন্তু সহবাস করিনি। চুমা খেয়েছি, তাকে চেপে ধরেছি, এছাড়া আর কিছু করিনি। এখন আপনি আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা করতে পারেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কিছু বললেন না, সুতরাং লোকটি চলে গেল। অতঃপর হযরত উমর রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আল্লাহ লোকটির অবস্থা গোপন রেখেছিলেন যদি সে নিজের কথা গোপন রাখত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চোখ তুলে তাকালেন এবং বললেন, ওকে আমার কাছে নিয়ে এসো। যখন তাকে ডেকে নিয়ে আসা হলো তখন তাকে এ আয়াত পাঠ করে শুনালেন: ‘‘আপনি নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের একটি অংশে। নিশ্চয়ই নেকী গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। এটি হলো উপদেশ, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য।’’ (সূরা হুদ: ১১৪)
মুয়ায রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, অপর বর্ণনায় এসেছে হযরত উমার থেকে তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসুল! এটি কি তার একার জন্য না সকল মানুষের জন্য? তখন তিনি বললেন, বরং সমস্ত মানুষের জন্য। (মুসলিম)
আপনি হয়তো বলবেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার সঙ্গী-সাথী খারাপ লোকেরা সর্বত্র আমাকে তাড়া করে চলেছে। তারা আমার মধ্যে সামান্য পরিবর্তনের কথা জেনেই প্রচন্ড চাপ ও আক্রমণ শুরু করেছে এবং আমি নিজেকে খুব অসহায় মনে করছি। এখন আমি কি করবো?
আমি আপনাকে বলছি, আপনি সবর (ধৈর্যধারণ) করুন। এটিই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার পদ্ধতি যেন তিনি সত্যবাদীদেরকে মিথ্যাবাদীদের মধ্যে থেকে পৃথক করে দেন এবং ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করেদেন।
আপনি যেহেতু পথের শুরুতে পা রেখেছেন, সেহেতু মজবুত থাকুন। এসব মানুষ ও জিন শয়তান একে অপরকে প্ররোচিত করে, যেন আপনাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে। সুতরাং আপনি তাদের আনুগত্য করবেন না। তারা আপনাকে বলবে, এ একটু আবেগী হয়ে উঠেছে, কয়েক দিনের মধ্যে এসব দূর হয়ে যাবে। এটা সাময়িক ব্যাপার। আশ্চর্যের বিষয় হলো তাওবা করার প্রথম দিকে কেউ কেউ তার সঙ্গীকে বলে, খুব সহজেই আবার খারাপ পথে ফিরে আসবে!!
এক ব্যক্তি এক মহিলার মুখের উপর টেলিফোন বন্ধ করে দেয় যেহেতু সে তাওবা করেছে, আর পাপ করতে চায়না। সে মহিলা বেশ কিছু দিন পর আবার যোগাযোগ করে বলে, আশা করি তোমার ঐসব নাক সিটকানো দূর হয়ে গেছে? এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
‘‘বলুন! আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রভূর নিকট, মানুষের মালিকের নিকট, মানুষের মাবুদের নিকট খান্নাস শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে। যারা মানুষের বক্ষে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষ ও জিনদের মধ্যে থেকে। (সূরা আন্নাস: ১-৬)
সুতরাং আপনার প্রভূই কি উত্তম নন আনুগত্যের দিক থেকে, নাকি খারাপ লোকদের অনুশোচনা?!
আপনাকে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে যে; তারা আপনাকে সর্বত্র তাড়া করে বেড়াবে। তারা সর্বদাই আপনাকে যে কোন ভাবেই হোক খারাপ পথে ফিরয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।
আমাকে এক ব্যক্তি বলে যে, সে তাওবা করার পর তার এক সময়কার দুষ্ট বান্ধবীটি তার ড্রাইভারকে বলতো তুমি ওর পিছনে পিছনে গাড়ী নিয়ে যাও। সে মসজিদে যাবার পথে ঐ বান্ধবী গাড়ীর জানালা দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতো।
তবে ঈমানদার ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ রক্ষা করবেন; এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘আল্লাহ তাদেরকে দৃঢ় পদ রাখবেন যারা ঈমান এনেছে পবিত্র তাওহীদের বাণীর প্রতি দুনিয়ার ও আখেরাতের জীবনে।’’ (সূরা ইবরাহীম: ২৭)
তারা চেষ্টা করবে আপনাকে অতীতের কথা স্মরণ করাতে এবং পূর্বের গুনাহকে চাকচিক্যময় করে তুলতে সব রকমের পন্থায়, স্মরণ করে ... ছবি ... চিঠিপত্র ... ইত্যাদির মাধ্যমে। আপনি তাদের কথা শুনবেন না। আপনি সতর্ক থাকবেন যেন তারা আপনাকে ফেতনায় না ফেলতে পারে। আপনি এখানে বিখ্যাত সাহাবী কা’ব ইবনে মালেকের ঘটনা স্মরণ করুন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত সাহাবীকে তাকে বয়কট করে চলতে বলে ছিলেন, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনুমতি আসে। তার নিকট গাস্সানের বাদশা চিঠি লিখে এ বলে, ‘আমি জানতে পেরেছি যে, আপনার সাথী আপনার সাথে রুঢ় ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না এবং শেষ করেও দিবেন না। সুতরাং আপনার উচিৎ আমাদের সাথে মিলে যাওয়া।’ সে কাফের চেয়েছিল এ মুসলমানকে মদ্বীনা থেকে বের করে নিয়ে নিজের দলে টেনে নিতে এবং সে যেন কাফেরের দেশে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
এখানে সম্মানিত সাহাবীর ভূমিকা কি? কা’ব t বলেন, আমি তা পাঠ করে বললাম এটিও একটি পরীক্ষা, আমি সে চিঠিটি দলা পাকিয়ে চুলার মধ্যে ছুড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেললাম।
আপনিও এই রকম শক্ত হবেন, যে পুরুষ বা মহিলাই আপনাকে লিখবে তা পুড়িয়ে ফেলবেন, যেন তা ছাই হয়ে যায় এবং আপনি স্মরণ করবেন কিভাবে জাহান্নামে পুড়তে হবে সে কথা: ‘‘অতএব, আপনি ধৈর্যধারণ করুন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য, আর এই অবিশ্বাসীরা যেন আপনাকে বিপথগামী করতে না পারে।’’ (আর-রূম: ৬০)