আল্লাহ খুব খুশী হন যখন তাঁর কোন বান্দা তাওবা করে (তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে)। আল্লাহ খুশী হলে আর কোন কল্যাণের ঘাটতি হবে না। ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ খুব খুশী হন যখন কোন বান্দা তাঁর দিকে তাওবা (প্রত্যাবর্তন) করে। সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশী খুশী হন যে এক মরুভূমিতে সফর করছিল। সে এক স্থানে বিশ্রামের জন্য একটু নামে। ওর সওয়ারীর উপর তার খানাপিনা ছিল। সে গাছের একটু ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। যখন জেগে উঠে দেখে যে, তার বাহনটি কোথায় চলে গেছে। সে এর খোজ করতে থাকে। এক উচু টিলাতে উঠেও দেখতে পায় না। এরপর আরেক টিলার উপর উঠে কিন্তু সেখান থেকেও তা দেখতে পায়না। এরপর যখন প্রচন্ড তাপ ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে, তখন বলে, আমি যেখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম সেখানে গিয়ে শুয়ে থাকবো মরণ না আসা পর্যন্ত। অতঃপর গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ে এবং বাহনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যায়। এ অবস্থায় একবার সে মাথা উঠিয়ে দেখে যে, তার শিয়রে সেটি দাঁড়িয়ে আছে তার লাগাম মাটিতে ছেচড়াচ্ছে, যার উপর তার খানাপিনা ছিল। সে তখন দ্রুত গিয়ে তার লাগাম ধরে এবং প্রচন্ডভাবে খুশি হয়। কেউ তাওবা করলে মহান আল্লাহ এই লোকটির খুশীর চেয়েও বেশী খুশী হন। (এ ঘটনাটি বিভিন্ন বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, দেখুন তারতীবু সাহিহুল জামে’ ৪/৩৬৮)
প্রিয় ভাই! সঠিক তাওবাকারীর জন্য পাপ শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট নম্রতা ও বিনয়ী ভাব সৃষ্টি করে। তার মাঝে অনুশোচনার জন্ম দেয় এবং তাওবাকারীর চাপা কান্না বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট খুবই পছন্দনীয় বস্ত্ত। কোন মুমিন বান্দা যদি তার গুনাহকে সদাসর্বদা চোখে চোখে রাখে, তাহলে তার মধ্যে অনুশোচনা ও অনুতপ্ত ভাব সৃষ্টি হবে, যার ফলে সে বেশী বেশী আনুগত্য ও নেকীর কাজ করতে থাকবে। অবস্থা এমন হয় যে, শয়তান হয়তো বলে বসে, যদি আমি একে পাপে না ফেলতাম তাহলেই ভাল ছিল। এজন্য দেখা যায় যে, কিছু তাওবাকারীর অবস্থা তাওবা করার পর খুবই ভাল হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কখনো ছেড়ে দেন না, যে তার দিকে তাওবা করে এগিয়ে আসে। দেখুন, যদি কোন সন্তান তার পিতার তত্বাবধানে থাকে তাকে সর্বোত্তম খানাপিনা খাওয়ায়, ভাল শিক্ষা-দীক্ষা দান করতে থাকে। তাকে চলার জন্য খরচা-পাতিও দেয় এবং তার সব কিছু দেখাশুনা ও দায়-দায়িত্ব পালন করে। একদিন তার পিতা তাকে এক কাজে পাঠালো সে কাজে গেলে পথে তাকে তার দুশমনেরা পাকড়াও করে বন্দী করে ফেললো। তাকে শৃংখলাবদ্ধ করে হাত পা বেঁধে ফেললো। এরপর তাকে শত্রুর দেশে নিয়ে গেল এবং তার সাথে তার পিতা যে আচরণ করছিল তার উল্টোটি শুরু করল।
সুতরাং সে যত বারই তার পিতার কথা ও তার শিক্ষা-দীক্ষার এবং আচরণের কথা মনে করবে, তত বারই তার মনে ব্যথা ও দুঃখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে এবং সে চিন্তা করবে যে, সে কত নিয়ামতের মধ্যে ছিল।
সে যখন শত্রুর হাতে বন্দী, প্রতিনিয়ত (সর্বদা) শাস্তির সম্মুখীন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যাই করে ফেলবে এ অবস্থায় দেখতে পেল যে, সে তার বাড়ীর নিকটে এবং তার আব্বাও তার খুবই নিকটে। সে দৌড়ে গিয়ে তার সামনে লুটিয়ে পড়লো এবং তার পায়ে পড়ে সাহায্য চাইল, আর চিৎকার করে বলতে লাগলো, আব্বা ... আব্বা ... আব্বা ... আমাকে বাঁচান! দেখুন; তার আব্বার গালবেয়ে পানি ঝরছে। সে তার আব্বাকে জড়িয়ে ধরেছে আর তার আব্বাও তাকে জড়িয়ে ধরছে।
আপনি বলবেন কী তার আব্বা তাকে এই অবস্থায় শত্রুর হাতে ছেড়ে দেবে? তাকে উদ্ধারের কোন চেষ্টাই করবে না? তাহলে সেই সত্বার ব্যাপারে আপনার ধারণা কি?
যিনি এই পিতার সন্তানের উপর দয়ার চেয়েও দয়াবান, মাতার সন্তানের উপর মহববতের চেয়েও বেশী মহববত রাখেন, যে বান্দা শত্রুর কাছ থেকে পালিয়ে তার নিকটে আশ্রয় নিয়েছে এবং তার কাছে নিজেকে অর্পণ করেছে, তার সামনে মাথা নত করেছে, ধূলায় কপালকে লুটিয়েছে, চোখ দিয়ে পানি বের করে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলছে, হে প্রভূ! হে দয়াবান! যার জন্য তোমার দয়া ছাড়া আর কোন দয়া নেই, যার তুমি ছাড়া আর কেউ সাহায্যকারী নেই, তুমি ছাড়া আর কেউ নেই, সে তোমারই ... তোমারই কাঙ্গাল, তোমারই কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। তুমি ছাড়া তার আর কোন আশ্রয়দাতা, বিপদ থেকে উদ্ধারকারী এবং ত্রাণকর্তা নেই।
সুতরাং, ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত ছুটে আসুন, নেকী কামাই করুন এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হোন, সুপথ পাবার পর ভ্রান্তপথ থেকে সতর্ক হোন, হেদায়াত প্রাপ্তির পর গোমরাহী থেকে দূরে থাকুন। নিশ্চয় আল্লাহর তাওফীক আপনার সাথেই রয়েছে। আপনার এবং আমাদের সকলের ওপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত নাজিল হোক। আমীন।