আপনি হয়তো বলবেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার সঙ্গী-সাথী খারাপ লোকেরা সর্বত্র আমাকে তাড়া করে চলেছে। তারা আমার মধ্যে সামান্য পরিবর্তনের কথা জেনেই প্রচন্ড চাপ ও আক্রমণ শুরু করেছে এবং আমি নিজেকে খুব অসহায় মনে করছি। এখন আমি কি করবো?
আমি আপনাকে বলছি, আপনি সবর (ধৈর্যধারণ) করুন। এটিই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার পদ্ধতি যেন তিনি সত্যবাদীদেরকে মিথ্যাবাদীদের মধ্যে থেকে পৃথক করে দেন এবং ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করেদেন।
আপনি যেহেতু পথের শুরুতে পা রেখেছেন, সেহেতু মজবুত থাকুন। এসব মানুষ ও জিন শয়তান একে অপরকে প্ররোচিত করে, যেন আপনাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে। সুতরাং আপনি তাদের আনুগত্য করবেন না। তারা আপনাকে বলবে, এ একটু আবেগী হয়ে উঠেছে, কয়েক দিনের মধ্যে এসব দূর হয়ে যাবে। এটা সাময়িক ব্যাপার। আশ্চর্যের বিষয় হলো তাওবা করার প্রথম দিকে কেউ কেউ তার সঙ্গীকে বলে, খুব সহজেই আবার খারাপ পথে ফিরে আসবে!!
এক ব্যক্তি এক মহিলার মুখের উপর টেলিফোন বন্ধ করে দেয় যেহেতু সে তাওবা করেছে, আর পাপ করতে চায়না। সে মহিলা বেশ কিছু দিন পর আবার যোগাযোগ করে বলে, আশা করি তোমার ঐসব নাক সিটকানো দূর হয়ে গেছে? এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
‘‘বলুন! আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রভূর নিকট, মানুষের মালিকের নিকট, মানুষের মাবুদের নিকট খান্নাস শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে। যারা মানুষের বক্ষে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষ ও জিনদের মধ্যে থেকে। (সূরা আন্নাস: ১-৬)
সুতরাং আপনার প্রভূই কি উত্তম নন আনুগত্যের দিক থেকে, নাকি খারাপ লোকদের অনুশোচনা?!
আপনাকে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে যে; তারা আপনাকে সর্বত্র তাড়া করে বেড়াবে। তারা সর্বদাই আপনাকে যে কোন ভাবেই হোক খারাপ পথে ফিরয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।
আমাকে এক ব্যক্তি বলে যে, সে তাওবা করার পর তার এক সময়কার দুষ্ট বান্ধবীটি তার ড্রাইভারকে বলতো তুমি ওর পিছনে পিছনে গাড়ী নিয়ে যাও। সে মসজিদে যাবার পথে ঐ বান্ধবী গাড়ীর জানালা দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতো।
তবে ঈমানদার ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ রক্ষা করবেন; এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘আল্লাহ তাদেরকে দৃঢ় পদ রাখবেন যারা ঈমান এনেছে পবিত্র তাওহীদের বাণীর প্রতি দুনিয়ার ও আখেরাতের জীবনে।’’ (সূরা ইবরাহীম: ২৭)
তারা চেষ্টা করবে আপনাকে অতীতের কথা স্মরণ করাতে এবং পূর্বের গুনাহকে চাকচিক্যময় করে তুলতে সব রকমের পন্থায়, স্মরণ করে ... ছবি ... চিঠিপত্র ... ইত্যাদির মাধ্যমে। আপনি তাদের কথা শুনবেন না। আপনি সতর্ক থাকবেন যেন তারা আপনাকে ফেতনায় না ফেলতে পারে। আপনি এখানে বিখ্যাত সাহাবী কা’ব ইবনে মালেকের ঘটনা স্মরণ করুন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত সাহাবীকে তাকে বয়কট করে চলতে বলে ছিলেন, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনুমতি আসে। তার নিকট গাস্সানের বাদশা চিঠি লিখে এ বলে, ‘আমি জানতে পেরেছি যে, আপনার সাথী আপনার সাথে রুঢ় ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না এবং শেষ করেও দিবেন না। সুতরাং আপনার উচিৎ আমাদের সাথে মিলে যাওয়া।’ সে কাফের চেয়েছিল এ মুসলমানকে মদ্বীনা থেকে বের করে নিয়ে নিজের দলে টেনে নিতে এবং সে যেন কাফেরের দেশে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
এখানে সম্মানিত সাহাবীর ভূমিকা কি? কা’ব t বলেন, আমি তা পাঠ করে বললাম এটিও একটি পরীক্ষা, আমি সে চিঠিটি দলা পাকিয়ে চুলার মধ্যে ছুড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেললাম।
আপনিও এই রকম শক্ত হবেন, যে পুরুষ বা মহিলাই আপনাকে লিখবে তা পুড়িয়ে ফেলবেন, যেন তা ছাই হয়ে যায় এবং আপনি স্মরণ করবেন কিভাবে জাহান্নামে পুড়তে হবে সে কথা: ‘‘অতএব, আপনি ধৈর্যধারণ করুন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য, আর এই অবিশ্বাসীরা যেন আপনাকে বিপথগামী করতে না পারে।’’ (আর-রূম: ৬০)