এই ঘটনা থেকে নিম্নের মাসআলাগুলোও জানা যায়
  • সলাত না পড়ে ঘুমিয়ে পড়লে অথবা সলাত পড়তে ভুলে গেলে যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হবে কিংবা যখন স্মরণ হবে, তখনই সলাত পড়ে নিবে।
  • সুন্নাতে রাতেবারও কাযা আছে।
  • কাযা সলাতেরও আযান-ইকামত আছে।
  • জামআতের সাথে কাযা সলাত পড়তে হবে।
  • কারণ বশতঃ ছুটে যাওয়া সলাত বিলম্বে আদায় করা চলে। রসূল (ﷺ) ঐ স্থান থেকে একটু দূরে গিয়ে কাযা করার কারণ হল, তা ছিল শয়তানের স্থান।
  • শয়তান বসবাসের জায়গায় সলাত আদায় করা যাবেনা। যেমন টয়লেট ও অন্যান্য স্থান।

মুসলিমগণ যখন মদ্বীনায় ফেরত আসলেন তখন মুহাজিরগণ আনসারদের ঐ সমস্ত মাল ফেরত দিলেন, যেগুলো তারা তাদের মুহাজির ভাইদেরকে দিয়ে রেখেছিলেন। খায়বার থেকে ফেরত এসে নাবী (ﷺ) শাওয়াল মাস পর্যন্ত মদ্বীনায় অবস্থান করলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন স্থানের দিকে ছোট ছোট অভিযান প্রেরণ করেছেন। এগুলোর মধ্যে আব্দুল্লাহ্ ইবনে হুযাফার অভিযান অন্যতম। সেনাপতি আব্দুল্লাহ্ ইবনে হুযাফা তার সৈনিকদেরকে আগুনে ঝাপিয়ে পড়ার আদেশ দিয়েছিলেন। লোকেরা তার কথা অমান্য করেছিল এবং আগুনে ঝাপ দেয়া থেকে বিরত রইল। মদ্বীনায় ফেরত এসে যখন তারা রসূল (ﷺ) কে জানাল, তখন তিনি বললেন- তারা যদি আগুনে ঝাপ দিত, তাহলে তা থেকে কখনই বের হতে পারতনা। অতঃপর তিনি বললেন- শুধু ভাল কাজেই আমীরের আনুগত্য করতে হবে। সহীহ বুখারীতে এই ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَلِيٍّ  قَالَ: بَعَثَ النَّبِيُّ  سَرِيَّةً فَاسْتَعْمَلَ رَجُلاً مِنَ الأنْصَارِ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يُطِيعُوهُ، فَغَضِبَ فَقَالَ: أَلَيْسَ أَمَرَكُمُ النَّبِيُّ  أَنْ تُطِيعُونِي؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَاجْمَعُوا لِي حَطَبًا فَجَمَعُوا، فَقَالَ: أَوْقِدُوا نَارًا فَأَوْقَدُوهَا، فَقَالَ: ادْخُلُوهَا فَهَمُّوا وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يُمْسِكُ بَعْضًا وَيَقُولُونَ: فَرَرْنَا إِلَى النَّبِيِّ  مِنَ النَّارِ فَمَا زَالُوا حَتَّى خَمَدَتِ النَّارُ فَسَكَنَ غَضَبُهُ فَبَلَغَ النَّبِيَّ فَقَالَ: لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوف

‘‘আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসূল (ﷺ) একটি সেনাবাহিনী পাঠালেন। জনৈক আনসারকে তার আমীর নিযুক্ত করলেন এবং সেনা দলের সবাইকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। কোন কারণে আমীর ক্রুদ্ধ হলেন। নাবী (ﷺ) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার হুকুম দেন নি? তারা বলল- হ্যাঁ। আমীর বললেন- তাহলে তোমরা আমার জন্য কিছু কাঠ সংগ্রহ কর। তারা কাঠ সংগ্রহ করল। তিনি বললেন- এবার কাঠে আগুন লাগাও। তারা কাঠে আগুন লাগালো। তখন তিনি বললেন- তোমরা আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়। লোকেরা ঝাঁপিয়ে পড়ার সংকল্প করল। কিন্তু তারা পরস্পরকে বাধা দিতে লাগল এবং বলতে লাগলোঃ আমরা তো জাহান্নামের আগুন থেকে নাবী (ﷺ) এর নিকট আশ্রয় নিয়েছিলাম। এভাবে তারা ইতস্তত করতে করতে একসময় আগুন নিভে গেল। সেই সাথে আমীরের রসূও থেমে গেল। নাবী (ﷺ) এর কাছে যখন এ খবর পৌঁছল,

তখন তিনি বললেন- তারা যদি ঐ আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তা থেকে বের হতে পারতনা। আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে’’।[1]

এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, তারা যদি আগুনে ঝাপ দিত, তাহলে নেতার আদেশকে আল্লাহ্ ও আল্লাহর রসূলের আদেশ মনে করেই তো প্রবেশ করত। যদিও তাদের ইজতেহাদ ভুল ছিল। তাহলে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হত কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, তাদের যেহেতু জানা ছিল যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আত্মহত্যা করতে নিষেধ করেছেন, তাই তারা যদি বিনা ইজতেহাদে আমীরের হুকুমের সাথে সাথেই আগুনে ঝাঁপ দিতেন, তাহলে আত্মহত্যার অপরাধে তারা জাহান্নামী হতেন। সুতরাং সৃষ্টির আনুগত্য করতে গিয়ে স্রষ্টার নাফরমানি করা জায়েয নেই এবং আমীরের আনুগত্য করে আগুনে ঝাঁপ দেয়া আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসূলের নাফরমানির শামিল।

অতএব, আনুগত্যই কখনও নাফরমানিতে পরিণত হয় এবং শাস্তি আবশ্যক করে দেয়। সুতরাং আল্লাহর আনুগত্য মনে করে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে কেউ যদি নিজেকে কষ্ট দিয়ে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়, তাহলে যে ব্যক্তি শাসকের হুকুমে কোন মুসলিমকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয় তার অবস্থা কেমন হবে? উপরোক্ত সাহাবীগণ আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসূলের আদেশ মনে করে আগুনে ঝাঁপ দিলে যদি তা থেকে বের হতে না পারেন, তাহলে যারা দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের আশায় কিংবা শাসকের বা উপরস্ত কর্মকর্তার ভয়ে কেউ আল্লাহর বান্দাদেরকে কষ্ট দেয় তার অবস্থা কেমন হবে? আর যে সমস্ত সুফী শয়তানের আনুগত্য করে আগুনে ঝাঁপ দেয় এবং মূর্খরা মনে করে এটি হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ) এর আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মতই, তাদের জন্য আগুন শান্তিময় এবং ঠান্ডা হয়ে যাবে, যেমন হয়েছিল ইবরাহীম (আঃ) এর জন্য, তাদের অবস্থা কেমন হবে? সুফীদের এই কাজ মূর্খতা ও শয়তানের খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।[2]

[1]. বুখারী, তাও. হা/৪৩৪০

[2]. বন্ধুদের সাথে কথা বলে এবং কতিপয় বই পড়ে জানা গেছে যে, কিছু ভন্ড ও ধোঁকাবাজ আছে, যারা শরীরে বিশেষ এক প্রকার পদার্থ ব্যবহার করে এবং বিশেষ এক প্রকার পোশাক পরিধান করে আগুনে ঝাপ দেয়। এই পোশাক ও পদার্থের কারণে তাদের শরীরে আগুন জ্বলে না। তাদের এ কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে অজ্ঞ লোকদের কাছে নিজেদেরকে আল্লাহর অলী হিসাবে প্রকাশ করা এবং এর বিনিময়ে মানুষের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া। মূলতঃ এরা আল্লাহর অলী নয়; শয়তানের অলী।