সুদের ক্ষতি-অপকার-কুপ্রভাব তৃতীয় পর্ব ড. সাঈদ ইব্‌ন আলী ইব্‌ন ওয়াহফ আল-ক্বাহত্বানী ৩ টি
যে সব ক্ষেত্রে কম-বেশি করা বা বাকি দেয়া জায়িয আছে

এ পর্বে রয়েছে তিনটি অধ্যায়। যথা-

প্রথম অধ্যায় : যে সব ক্ষেত্রে কম-বেশি করা বা বাকি দেয়া জায়িয আছে

দ্বিতীয় অধ্যায় : বাইয়ে সরফ এবং তার বিধান।

তৃতীয় অধ্যায় : সন্দেহ থেকে দূরে থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করণ।

প্রথম অধ্যায় : যে সব ক্ষেত্রে কম-বেশি করা বা বাকি দেয়া জায়িয আছে

(ক) কম-বেশি করা জায়িয যখন ‘ইল্লত’ অনুপস্থিত থাকবে :

ইমাম নাববি রহ. বলেন, আলেমগণ একমত যে, রেবা জাতীয় পণ্যকে রেবা জাতীয় পণ্যের বিনিময়ে কমবেশি করে এবং বাকিতে বিক্রি করা বৈধ যদি উভয়ের ইল্লত ভিন্ন হয়। যেমন- গমের বিনিময়ে সোনা বিক্রি এবং যবের বদলে রুপা ইত্যাদি পরিমাপযোগ্য পণ্য বিক্রি। তেমনি জাত ভিন্ন হলে নগদে কমবেশি করে বেচা-কেনা জায়িয এ ব্যাপারেও তাঁরা একমত। যেমন- এক সা’ গমের বিনিময়ে দুই সা’ যব কেনা ইত্যাদি।[1]

(খ) অপরিমাপযোগ্য জিনিসের মাঝে কমবেশি করে বিক্রি জায়িয :

ফিকাহবিদগণ প্রাণীকে প্রাণীর বদলে বাকিতে বিক্রির বৈধতা সম্পর্কে মতবিরোধ করেছেন। অধিকাংশ উলামার মতে, এটা বৈধ। তাদের দলিল আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা. এর হাদিস। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার উটের পালের পিঠে আমাকে একটি সৈন্যদল পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। আমি লোকদের উটের পিঠে চড়ালাম। এক পর্যায়ে আমার উট শেষ হয়ে গেল। বাকি রয়ে গেল কয়েকজন- আমি তাদের বাহনের ব্যবস্থা করতে পারলাম না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি আমার পক্ষে কয়েকটি উট কেন সদকার উট দিয়ে আমি তা পরিশোধ করে দেব। যাতে এ দলটি পূর্ণ হয়ে যায়। আব্দুল্লাহ রা. বলেন, তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কথা মত আমি একেকটি উট কিনতে থাকি দুটি তিনটি করে উটের বিনিময়ে। এমনকি দল পূর্ণ হয়ে গেল। তিনি বলেন, যখন সদকার উট বাটোয়ারা শুরু হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিশোধ করে দিলেন।[2]

জাবের রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন দাস এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতে হিজরতের বাইয়াত করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টের পান নি যে সে একজন গোলাম। পরে দাসের মুনিব এসে তাকে চাইল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, একে আমার কাছে বিক্রি করে দাও। অতপর তিনি তাকে দুইজন হাবশি গোলামের বিনিময়ে কিনে নেন। পরবর্তীতে তিনি কাউকে বাইয়াত করতেন না যতক্ষণ না জিজ্ঞেস করেন (সে কারো দাস কি না)।[3]

এ থেকে বুঝা যায়, দুই গোলামের বিনিময়ে এক গোলাম বিক্রি করা জায়িয আছে। চাই এদের মূল্য একই রকম হোক বা ভিন্ন। এটা নগদ হলে সবাই এর বৈধতার ব্যাপারে একমত। মানুষ ছাড়া অন্যান্য পশুর ক্ষেত্রেও একই বিধান।[4]

কেউ যদি এক গোলাম দুই গোলামের বিনিময়ে কিংবা এক উট দুই উটের বিনিময়ে বাকিতে বিক্রি করে তাহলে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মতানুযায়ী তা বৈধ। এটাই ইমাম শাফেয়ি এবং জমহুরের মত।[5]

উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান যে, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মতানুসারে বাকিতে বা কমবেশি করে প্রাণীর বদলে প্রাণী বিক্রি করা জায়িয। কয়েকজন সাহাবি এবং তাবেয়ির বক্তব্যও প্রমাণ করে এমনটি। ইমাম বুখারি রহ. তদীয় সহি বুখারিতে বলেন-

১-ইবনে উমর রা. একটি সাওয়ারি প্রাণী খরিদ করেছেন নিজের জিম্মায় চারটি উটের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে। যা তিনি দিয়ে দিয়েছেন রাবাযা নামক স্থানে।

২-রাফে বিন খাদিজ রা. দুই উটের বিনিময়ে এক উট কেনেন। তাকে একটি উট দেন আর বলেন, অপরটা তোমাকে কাল দেব ইনশাআল্লাহ।

৩-ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘এক উট কখনো দুই উটের চেয়ে উত্তম হয়।’

৪-ইবনে মুসাইয়াব বলেন, বাকিতে এক উটের মোকাবেলায় দুই উট কিংবা এক ছাগলের বিনিময়ে দুই ছাগল বেচায় কোনো সুদ নেই।[6]

[1]. শারহুন নাবাবি : ১১/০৯

[2]. মুসনাদে আহমদ : ২/২১৬, আবু দাউদ : ৩৩৫৭

[3]. মুসলিম : ১৬০২, শরহুন নাবাবি : ১১/৩৯

[4]. শরহুন নাবাবি : ১১/৩৯

[5]. শরহুন নাবাবি : ১১/৩৯

[6]. চারটি হাদিসই দেখুন ফাতহুল বারি : ৪/৪১৯

(ক) মুরাতালা :

আরবি مراطلة শব্দটি رطل থেকে উদ্গত। যা مفاعلة এর মাসদার। পরিভাষায় মুরাতালা বলা হয় ওজনে সোনার বিনিময়ে সোনা কিংবা রুপার বিনিময়ে রুপা বিক্রি করাকে।[1]

ইমাম মালেক রহ. বলেন, ‘আমাদের মতে তোলার হিসেবে স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করায় কোনো সমস্যা নেই। যেমন- কেউ নগদ মূল্যে দশ দিনারের বিনিময়ে দশ দিনার কিনল সেটাকে টাকা হিসেবে নয় স্বর্ণ হিসেবে পরিমাপ করে। এতে কোনো অসুবিধা নেই যদিও সংখ্যা কমবেশি হয়। এ ব্যাপারে দিরহামের হুকুমও অভিন্ন।[2]

এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় এর সংখ্যা নয় ; ওজন। অতএব কারো কাছে যদি সোনার দশটি টুকরো থাকে এবং সে তা বিক্রি করে পাঁচ টুকরো সোনার বিনিময়ে। আর দশ টুকরো সোনা যদি ওজনে পাঁচ টুকরোর সমান হয় তাহলে তা বৈধ। ইমাম মালেক রহ. মুরাতালা বলে এটাই উদ্দেশ্য নিয়েছেন।

(খ) সরফ :

মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটি লেনদেন পদ্ধতি সরফ। এদিকে সময় দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বদলাচ্ছে মানুষের লেনদেন পদ্ধতি। ইসলাম এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন নয়। তাই সরফ কোনটা বৈধ কোনটা বৈধ নয়- ইসলাম সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করেছে।

মালেক বিন আউস বিন হাদাসান রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, কে আমার সঙ্গে দিরহাম দিয়ে বাইয়ে সরফ করবে ? তালহা বিন উবাইদুল্লাহ বললেন, (তিনি তখন উমর বিন খাত্তাবের রা. কাছে ছিলেন)- আমাদেরকে তোমার স্বর্ণ দেখাও। তারপর আমাদের গোলাম যখন আসবে তোমাকে তোমার রৌপ্য দিয়ে দিব। উমর বিন খাত্তাব রা. বললেন, খোদার দোহায় এমন করো না কখনো। তাকে রৌপ্য দাও নয়তো তার স্বর্ণ তাকে ফেরত দিয়ে দাও। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রুপা সোনার বিনিময়ে বিক্রি করা সুদ; হ্যা যদি হাতে হাতে তথা নগদ বিক্রি করা হয়। গম গমের বিনিময়ে বিক্রি করা সুদ; হ্যা, যদি নগদ বিক্রি করা হয়, যব যবের বিনিময়ে বিক্রি করা সুদ হ্যা যদি নগদ বিক্রি করা হয় এবং খেজুর খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করা সুদ হ্যা যদি নগদ বিক্রি করা হয়।[3]

ইমাম নাববি রহ. বলেন, ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, এ হাদিসের অর্থ- পণ্য এবং মূল্য হস্তগত হওয়া। সুতরাং এ হাদিস দ্বারা জানা গেল, সুদী পণ্যকে সুদী পণ্যের মোকাবেলায় বেচতে হলে শর্ত হলো, পণ্য এবং মূল্য উভয়টা নগদ হস্তগত হতে হবে- যখন উভয়ের ইল্লত অভিন্ন হবে। চাই উভয়ের জাত এক হোক যেমন- স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ কিংবা জাত ভিন্ন যেমন- রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ সোনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইল্লত এক জাত ভিন্ন- এমন দুই সামগ্রীর লেনদেনের ব্যাপারেই উপরিউক্ত হাদিসে সতর্ক করেছেন।

আর তালহা বিন আব্দুল্লাহ রা. স্বর্ণ মালিকের সঙ্গে সরফ করতে চেয়েছিলেন। অভিপ্রায় ছিল তিনি স্বর্ণ নিবেন আর রৌপ্য দিবেন পরে খাদেম এলে। এমন করেছিলেন তিনি অন্যান্য বিক্রয় চুক্তির মতো এটাকে হালাল মনে করে। তখনো তিনি মাসআলা জানতেন না যে এটা অবৈধ। সেহেতু উমর রা. তাঁর কাছে হাদিসটি পৌঁছে দেন। ফলে তিনি সরফের এ চুক্তি বাতিল করে দেন।[4]

সুফিয়ান বিন উয়ায়না আমর বিন মিনহাল থেকে বর্ণনা করেন, একদা আমার এক ভাগীদার আগামী মৌসুম বা হজ পর্যন্ত সময় দিয়ে বাকিতে রুপা বিক্রি করল। আমার কাছে আগমন করে সে এ কথা বললে আমি তাকে বললাম, এটা অবৈধ কাজ। সে বলল, আমি এটা বাজারে বিক্রি করলাম কেউ তো আমাকে বারণ করল না। এ কথা শুনে আমি বারা বিন আযেবের রা. কাছে গেলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় তাশরিফ আনলেন, আমাদের মাঝে তখন এমন বিক্রয় চুক্তির প্রচলন ছিল। তিনি আমাদের বললেন, ‘যেটা নগদ হবে সেটায় সমস্যা নেই আর যা বাকিতে হবে সেটা সুদ।’ তুমি যায়েদ বিন আরকাম রা. এর কাছে যাও। কারণ তিনি আমার চেয়ে বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। (সুতরাং তিনি এ ব্যাপারে ভালো জানবেন।) আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি একই উত্তর দিলেন।[5]

ইমাম বুখারি রহ. বলেন, (এ অধ্যায় নগদ মূল্যে সোনা দিয়ে রুপা কেনা সম্পর্কে) তারপর তিনি আবু বাকরা রা. এর হাদিস উল্লেখ করেছেন। হাদিসে বলা হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুপার বিনিময়ে রুপা এবং সোনার বিনিময়ে সোনা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। হ্যা যদি সমান সমান হয় তাহলে বৈধ। এবং তিনি আমাদেরকে যেভাবে ইচ্ছে সোনার বিনিময়ে রুপা এবং রুপার বিনিময়ে সোনা কেনার অনুমতি দিয়েছেন।[6]

ইমাম বুখারি বারা বিন আযেব এবং যায়েদ বিন আরকাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকিতে স্বর্ণ দিয়ে রেŠপ্য কিনতে নিষেধ করেছেন।[7]

উপরের হাদিসগুলো দ্বারা আমরা বুঝলাম-

  1. সোনার বিনিময়ে সোনা বাইয়ে সরফ হিসেবে বিক্রি করা বৈধ। শর্ত হলো, সমান সমান এবং নগদ নগদ হতে হবে।
  2. সোনার বিনিময়ে রুপা এবং রুপার বিনিময়ে সোনা বেচা জায়িয। শর্ত হলো, তা হতে হবে নগদ। আর কমবেশি করা, যেমন ওজনে সোনা বেশি হওয়া বা রুপা বেশি হওয়া- তো এতে কোনো সমস্যা নেই। শর্ত শুধু এই যে, সেটা হতে হবে সরফ চলাকালেই একেবারে হাতে হাতে।
  3. সোনার বিনিময়ে সোনা বা সোনার বিনিময়ে রুপা কেনা বা বেচা বাকিতে কোনোটাই বৈধ নয়। সুতরাং কেউ যদি সোনার বিনিময়ে সোনা খরিদ করতে চায় আর একজন সোনা হস্তান্তর করে অন্যজন বাকি রাখে তাহলে তা কিছুতেই বৈধ হবে না। কারণ এ চুক্তিতে পণ্য এবং মূল্য হস্তান্তর করার শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।
[1]. শারহুয যারকানি আলা মুযাত্তা : ৩/২৮৪

[2]. মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ২/৬৩৮

[3]. বুখারি : ২১৭৪, মুসলিম : ১৫৮৬

[4]. শরহুন নাবাবি : ১১/১৩

[5]. বুখারি : ২১৮০, মুসলিম : ১৫৮৯

[6]. বুখারি : ২১৮২

[7]. বুখারি : ২১৮১, যারকানি, শরহুল মুয়াত্তা : ৩/২৮২

মুসলমান মাত্রেই চায় শরিয়তের বিষয়গুলো দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে। তাই সে ওয়াজিবগুলো পালন করে। হারাম এবং মাকরুহ বিষয়গুলো বর্জন করে। সচেষ্ট থাকে মুস্তাহাব কাজগুলো বেশি বেশি করতে। মুবাহ কাজগুলোর মধ্যে নিজ অবস্থা ও প্রয়োজন অনুপাতে কোনোটা করে আবার কোনোটা ছাড়ে। আর দূরে থাকে অস্পষ্ট এবং শংকাপূর্ণ কাজ থেকে। কারণ সে জানে অস্পষ্ট কাজগুলোই সুস্পষ্ট হারাম কাজে লিপ্ত করে।

নুমান বিন বাশির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে বলতে শুনেছি (এ কথা বলে তিনি আঙ্গুল দিয়ে নিজ কানের দিকে ইঙ্গিত করেন; অর্থাৎ নিজ কানে শুনেছি।)- ‘নিশ্চয় হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট; এতদুভয়ের মাঝে রয়েছে অস্পষ্ট বিষয়াবলি- যা অধিকাংশ লোকই জানে না। সুতরাং যে অস্পষ্ট বিষয়াবলি থেকে দূরে থাকবে তা তার সম্মান ও দীনদারি উভয়ের জন্য কল্যাণকর সাব্যস্ত হবে। পক্ষান্তরে যে এতে পতিত হবে সে হারামে লিপ্ত হবে। যেমন- রাখাল সংরক্ষিত এলাকা থেকে সভয়ে দূরে থাকে যাতে সে এতে ঢুকে না পড়ে। মনে রেখ প্রত্যেক রাজারই কিছু সংরক্ষিত স্থান থাকে আরও মনে রেখ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা (যার সীমানা অতিক্রম করা নিষিদ্ধ) হলো, তাঁর হারাম ঘোষিত বিষয়গুলি। তোমরা মনে রেখ, নিশ্চয় (মানুষের) শরীরে একটি মাংসপিন্ড আছে। সেটা যদি সুস্থ থাকে তাহলে সারা দেহ সুস্থ আর সেটা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সারা শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। মনে রেখ সেটা হলো কলব বা আত্মা।’[1]

ইমাম নাববি রহ. বলেন, ‘এ হাদিসের সীমাহীন গুরুত্ব ও অপরিসীম তাৎপর্যের ব্যাপারে আলেমগণ একমত। এটি সে হাদিসসমূহের অন্যতম যেগুলোর ওপর শরিয়তের ভিত্তি। একদল আলেম বলেছেন, হাদিসটি ইসলামের এক তৃতীয়াংশ। অপর দুই তৃতীয়াংশের একটি ‘নিশ্চয় কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল’[2] এবং মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হলো, সে অনর্থক কাজ পরিহার করবে শীর্ষক হাদিস।[3]

ইমাম আবু দাউদ রহ. বলেন, পুরো ইসলাম চারটি হাদিসকে ঘিরে আবর্তিত। উল্লেখিত তিনটি এবং ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে অপর ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে নিজের জন্য যা করে’[4] শীর্ষক হাদিস। কেউ বলেছেন, চতুর্থ হাদিসটি হলো, তুমি দুনিয়ার ব্যাপারে বিরাগ হও আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন আর মানুষের হাতে যা রয়েছে তা থেকে বিরাগ হও লোকে তোমাকে ভালোবাসবে।[5]

উলামায়ে কিরাম বলেন, (নুমান বিন বাশির রা. বর্ণিত) হাদিসটি অবর্ণনীয় গুরুত্বের দাবিদার এ জন্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতে বস্ত্র, আহার্য ও পানীয়সহ মৌলিক সবকিছু সংশোধন করার কথা বলেছেন। তাগিদ দিয়েছেন অস্পষ্ট বিষয় থেকে সচেতনভাবে দূরে থাকার প্রতি। কারণ তা ধার্মিকতা ও সম্মান রক্ষায় সহায়ক। সতর্ক করেছেন সন্দেহে পতিত হওয়া থেকে। উপরন্তু বিষয়টাকে স্পষ্ট করেছেন সংরক্ষিত স্থানের চমৎকার এক দৃষ্টান্ত পেশ করে। অবশেষে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটিও উল্লেখ করেছেন। আর সেটা হলো, আত্মার প্রতি লক্ষ্য রাখা। তাঁর কথা, আত্মা শুদ্ধ থাকলে সারা দেহ ঠিক এর ব্যতিক্রম হলে পুরো দেহে সমস্যা দেখা দিবে।

তবে পয়গম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্তি ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট’ এর অর্থ, - বিষয় মোট তিন প্রকার।

(ক) সুস্পষ্ট হালাল- যা বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না; যে কেউ বুঝতে পারে। যেমন- রুটি, মধু ইত্যাদি।

(খ) সুস্পষ্ট হারাম- যা বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না; যে কেউ বুঝতে পারে। যেমন- মদ, শূকর ইত্যাদি।

(গ) মুশ্তাবিহাত অর্থাৎ যার হালাল হওয়া বা হারাম হওয়া কোনোটাই স্পষ্ট নয়। অধিকাংশ লোকই এর হুকুম বুঝতে পারে না। শুধু উলামায়ে কিরাম কিয়াস, নস বা অন্য কোনোভাবে তার হুকুম জানেন।[6]

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর প্রিয় কাজগুলো করার এবং অপ্রিয় কাজগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দেন। আমিন।

[1]. বুখারি : ৫২, মুসলিম : ১৫৯৯

[2]. বুখারি : ০১, মুসলিম : ১৯০৭

[3]. মুয়াত্তা মালেক : ৩/৯০৩

[4]. বুখারি : ১৩, মুসলিম : ৪৫

[5]. ইবনে মাজাহ : ৪১০২, ইমাম নাববি বলেন, ইবনে মাজা র. এ হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। শরহুন নাববি ১১/২৮

[6]. শরহুন নাববি : ১১/২৮
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে