১.বড় জামরায় ৭ টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা।
২. হাদী জবেহ করা।
৩. মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা।
৪.তাওয়াফে যিয়ারা সম্পন্ন করা।
কঙ্কর নিক্ষেপের সময়সীমা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)সূর্য ওঠার প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পর কঙ্কর মেরেছিলেন।[1] সে হিসেবে এ সময়টাতেই ১০ তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপ করা সুন্নত। সূর্য ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ-সুন্নত সময় চলতে থাকে। সূর্য ঢলে যাওয়া থেকে শুরু করে ১১ তারিখের সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত জায়েয। বর্তমান-যুগে বিশ লক্ষাধিক হজ্জ পালনকারীর ভিড়ে সুন্নত সময়ে কঙ্কর মারা দুঃসাধ্য না হলেও অনেকের পক্ষেই কষ্টকর। তাই প্রথমে খবর নিন কখন ভিড় কম থাকে। অনেক সময় সকাল-বেলা ভিড় কম থাকে। কেননা অনেকেই ভাবেন যে এখন মনে হয় প্রচন্ড ভিড়, তাই পরে যাই। আবার অনেক সময় সকাল-বেলায় প্রচন্ড ভিড় থাকে। তাই উচিৎ হবে, ভিড় আছে কি-না, তা খবর নিয়ে দেখা।
১০ জিলহজ্জ সূর্যোদয় থেকে শুরু করে ১১ জিলহজ্জ সুবহে সাদেক উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত কঙ্কর মারা চলে, এটাই আপনি মাথায় রাখুন। এ সময়ের মধ্যে যখন ভিড় কম বলে খবর পাবেন তখনই কঙ্কর মারতে যাবেন।
নারীদের জন্য ১০ তারিখ সূর্য ওঠার আগেও কঙ্কর নিক্ষেপ চলে।[2] তবে বর্তমানে এ সময়টায় পথঘাটে প্রচন্ড ভিড় থাকে। যার কারণে এ সময়ে জামারাতে গিয়ে কঙ্কর মেরে ফিরে আসা কঠিন ব্যাপার। তবে বিকেল বেলায় ও রাতে সাধারণত ফাঁকা থাকে। তাই নারীদের জন্য এ সময়ে কঙ্কর নিক্ষেপ সহজ।
[2] - দেখুন মুসলিম : হাদিস নং ১২৯০
তালবিয়া পড়ে পড়ে জামারাতের দিকে এগোবেন। মিনার দিক থেকে তৃতীয় ও মক্কার দিক থেকে প্রথম জামরায়- যাকে জামরাতুল আকাবা বা জামরাতুল কুবরা (বড় জামরা) বলা হয়-৭ টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। কাবা ঘর বাঁ দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে দাঁড়াবেন। আল্লাহ আকবার (الله أكبر) বলে প্রতিটি কঙ্কর ভিন্ন ভিন্নভাবে নিক্ষেপ করবেন। খুশুখুজুর সাথে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। কঙ্কর নিক্ষেপ আল্লাহর একটি শাআয়ের বা নিদর্শনসমূহের অন্যতম। কালামে পাকে এসেছে,
وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
-এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে তাজিম করলে তার হৃদয়ের তাকওয়ার কারণেই তা করে থাকে।’[1] হাদিসে এসেছে, ‘বায়তুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা মারওয়ার সাঈ ও জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ আল্লাহর জিকির কায়েমের উদ্দেশ্যে।[2] সে হিসেবে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় ধীরস্থিরতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে আল্লাহর নিদর্শনের অসম্মান না হয়। রাগ-রোষ নিয়ে জুতো কিংবা বড় পাথর নিক্ষেপ করা কখনো উচিৎ নয়। জামারাতে শয়তান বাঁধা আছে বলে যে কেউ কেউ ধারণা করেন তা ঠিক নয়।
[2] - إنما جعل الطواف بالبيت وبين الصفا والمروة ورمي الجمار لإقامة ذكر الله (আবু দাউদ : হাদিস নং ১৬১২)
কঙ্কর নিক্ষেপের ফজিলত
হাদিসে এসেছে, ‘আর তোমার কঙ্কর নিক্ষেপ, সে তো তোমার জন্য সঞ্চিত করে রাখা হয়।[1]
দুর্বল ও নারীদের কঙ্কর নিক্ষেপ
যারা দুর্বল অর্থাৎ হাঁটা-চলার ক্ষমতা রাখে না, তারা নিজের কঙ্কর অন্যকে দিয়ে মারাতে পারেন। এক্ষেত্রে যিনি প্রতিনিধি হবেন তাকে অবশ্য হজ্জ পালনকারী হতে হবে, এবং নিজের কঙ্কর প্রথমে মেরে, পরে অন্যেরটা মারতে হবে।
নারী মাত্রই দুর্বল এ কথা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সাথে উম্মাহাতুল মুমিনিন সকলেই ছিলেন। তাঁদের সবাই নিজের কঙ্কর নিজেই মেরেছেন। কেবল সাওদা (রাঃ) মোটা স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ায় ভিড় হওয়ার পুবে,র্ ফজরের আগেই, কঙ্কর নিক্ষেপের অনুমতি নিয়ে কঙ্কর নিক্ষেপ শেষ করেন। তবু তিনি নিজের কঙ্কর নিজেই মেরেছেন। তাই নারী হলেই প্রতিনিধি নিয়োগ করা যাবে, তেমন কোনো কথা নেই। যখন ভীড় কম থাকে নারীরা তখন গিয়ে কঙ্কর মারবে। এবং নিজের কঙ্কর নিজেই মারবে, এটাই উত্তম তরিকা। হাঁ যদি ভীড় লাঘব হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে প্রতিনিধির মাধ্যমে কঙ্কর নিক্ষেপ করালে সমস্যা হবে না। তবে বর্তমানে জামারাতের স্তম্ভ যেভাবে লম্বা করে দেয়া হয়েছে তাতে, সময়-ক্ষণ বুঝে, যে কেউ অনায়াসে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে পারে।
বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষ করে হাদী জবেহ বিষয়ে মনোনিবেশ করুন। তামাত্তু ও কেরান হজ্জ পালনকারীর জন্য হাদী জবেহ করা ওয়াজিব। ইফরাদ হজ্জকারীর জন্য মুস্তাহাব। উট-গরু-বকরি-মেষ হাদী হিসেবে জবেহ করা যায়। উট হলে ৫ বছর বয়সের, গরু হলে দুই বছর বয়সের ও মেষ হলে এক বছর বয়সের হতে হবে। উট ও গরু হলে একটাতে সাতজন অংশ নিতে পারবেন। তবে কারো অংশই যেন একসপ্তমাংসের কম না হয় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বকরি ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এক হাদী একজনের জন্য জবেহ করতে হবে।
মিনায় হাদী বিক্রির হাট বসে। মক্কায়ও কোথাও কোথাও বসে। তবে সাধারণ হাজির পক্ষে এসব হাটে গিয়ে হাদী ক্রয় করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই হাদী জবাই করার ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিসমূহের যে কোনো একটি অবলম্বন করুন।
এক. ব্যাংকের মাধ্যমে হাদী জবেহ করার ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে, হজ্জের পূর্বে যে কোনো এক সুযোগে আল-রাজী ব্যাংক (بنك الراجحي) অথবা অন্য কোনো ব্যাংক, যেখানে হাদীর টাকা নেয়া হচ্ছে বলে শুনবেন, টাকা জমা করে রসিদ নিয়ে নেবেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, ১০ জিলহজ্জ, সকাল দশটার পর হাদী জবাই শুরু করেন। সকাল ১০টা ১১টার দিকে আপনার হাদী জবাই হয়ে গেছে বলে ধরে নিতে পারেন ও মাথা মুন্ডন করতে পারেন। এটাই হল হাদী জবেহ করার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মাধ্যম। বিশেষ করে ব্যালটি হাজিদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি বেশি উপযোগী। কেননা ব্যালটি হাজিদের কোরবানির পয়সা যার যার কাছে ফেরত দেয়া হয়। এই সুযোগে অনেক অসৎ লোক হাজিদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নানা প্রলোভন দেখায়, ও হাদী জবেহ না করেই ফোনের মাধ্যমে জবেহ হয়ে গিয়েছে বলে খবর দিয়ে দেয়। তাই ব্যালটি হাজিদের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে হাদী জবেহ করাই হল সর্বোত্তম পন্থা।
দুই. নন ব্যালটি হাজিগণ বিভিন্ন কাফেলার আওতায় থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাফেলার লিডাররা হাদী জবেহ করার দায়িত্ব নেন। এ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়ার জন্য করণীয় হল বিশ্বস্ত কয়েকজন যুবক-হাজি কাফেলার লিডারের সাথে দিয়ে দেয়া, যারা সরেজমিনে হাদী ক্রয় ও জবাই প্রক্রিয়া স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবেন ও সহযাত্রী অন্যান্য হাজিদেরকে এ মর্মে অবহিত করবেন। এরূপ না করে কেবল কাফেলা লিডারকে টাকা দিয়ে দেওয়া ও হাদী জবেহ হল কি-না ফোনের মাধ্যমে যেনে নেয়া উচিৎ হবে না।
তিন. মক্কায় কারও বিশ্বস্ত আত্মীয়-স্বজন কর্মরত থাকলে তাদের মাধ্যমেও হাদী জবেহ করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে যার মাধ্যমে হাদী জবেহ করানো হচ্ছে তার যথেষ্ট সময় আছে কি-না। কেননা হজ্জ মৌসুমে মক্কায় অবস্থানকারীরা নানা ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
নিয়ম মোতাবেক হজ্জের প্রত্যেকটি কর্ম সম্পাদনের পরও কেউ কেউ এরূপ সন্দেহ পোষণ করতে থাকেন যে কে জানে কোথাও কোনো ভুল হল কি-না। কাফেলা লিডারদের কেউ কেউ হাজি সাহেবদেরকে উৎসাহিত করেন যে ভুলত্রুটি হয়ে থাকতে পারে তাই একটা দমে-খাতা দিয়ে দিন, শত-ভাগ বিশুদ্ধ হয়ে যাবে আপনার হজ্জ। এরূপ করাটা মারাত্মক অন্যায়। কেননা আপনার হজ্জ সহিহ-শুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও নিজ ইচ্ছায় তাকে সন্দেহযুক্ত করছেন। আপনার যদি সত্যি সত্যি সন্দেহ হয় তাহলে একজন বিজ্ঞ আলেমকে আপনার হজ্জের বিবরণ শুনান। তিনি যদি বলেন যে আপনার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে তবেই কেবল দম দিয়ে শুধরিয়ে নেবেন। অন্যথায় নয়। শুধু আন্দাজের ওপর নির্ভর করে দমে-খাতা দেওয়ার কোনো বিধান ইসলামে নেই। তাই যে যাই বলুক না কেন এ ধরনের কথায় আদৌ কর্ণপাত করবেন না। হাঁ, আপনি যদি নফল হাদী অথবা কোরবানি জবেহ করতে চান তাহলে যত ইচ্ছা করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বিদায় হজ্জের সময় হাদী ও কোরবানি মিলিয়ে একশত উট জবেহ করেছিলেন।[1]
বিজ্ঞ ওলামাগণ হজ্জের হাদী উভয়টার জন্যই যথেষ্ট হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাজি যদি মুকিম হয়ে যায় এবং নেসাবের মালিক হয় তবে তার উপর ভিন্নভাবে কোরবানি করা ওয়াজিব বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে হাজি মুকিম না মুসাফির, এ নিয়েও একটা বিতর্ক আছে।
ইচ্ছাকৃতভাবে হাদী জবেহ করার পূর্বে মাথা-মুন্ডন করা নিয়ম-বহির্ভূত কাজ। তদ্রূপভাবে এদিনের অন্যান্য কাজেও তরতিবের উল্টো করা উচিৎ নয়। তবে যদি কেউ অপারগ হয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারে, অথবা ভুলবশত উলট-পালট করে বসে তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সাথে হজ্জ করার সময় সাহাবায়ে কেরামদের কেউ কেউ এরূপ আগে-পিছে করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, ‘কর, কোনো অসুবিধা নেই। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে—
كان النبي صلى الله عليه وسلم يسأل يوم النحر بمنى، فيقول: لا حرج ، فسأله رجل فقال: حلقت قبل أن أذبح ، قال: إذبح ولا حرج وقال: رميت بعد ما أمسيت ، قال: لا حرج .
-মিনায়, কোরবানির দিন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হত। তিনি বলতেন, ‘সমস্যা নেই’। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি জবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন জবেহ কর, কোনো সমস্যা নেই। লোকটি বললেন, ‘আমি সন্ধ্যার পর কঙ্কর মেরেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, সমস্যা নেই।[1]
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় এসেছে—
عن عبد الله بن عمرو بن العاص قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم، وأتاه رجل يوم النحر، وهو واقف عند الجمرة، فقال : يا رسول الله، إني حلقت قبل أن أرمي، فقال : ارم ولا حرج، وأتاه آخر، فقال : إني ذبحت قبل أن أرمي، قال : ارم ولا حرج، وأتاه آخر، فقال : إني أفضت إلى البيت قبل أن أرمي، قال : ارم ولا حرج، قال : فما رأيته سئل يومئذ عن شيء، إلا قال : افعلوا ولا حرج.
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে শুনেছি- এক ব্যক্তি ১০ জিলহজ্জ তাঁর কাছে এল। তিনি তখন জামরার কাছে দাঁড়ানো ছিলেন। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি, তিনি বললেন, নিক্ষেপ করো সমস্যা নেই। অন্য আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে জবেহ করেছি। তিনি বললেন, নিক্ষেপ কর সমস্যা নেই। অন্য আরেক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল, আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছি। তিনি বললেন, নিক্ষেপ করো সমস্যা নেই। বর্ণনাকারী বললেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে যে প্রশ্নই করা হয়েছে তার উত্তরেই তিনি বলেছেন, করো সমস্যা নেই।[2]
এ সম্পর্কে আরো হাদিস রয়েছে যেগুলো শুদ্ধ ও যেগুলোর আলোকে আমল করলে হজ্জের আদৌ কোনো ক্ষতি হবে না। বিশেষ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে ও কোরবানি আদায় প্রক্রিয়া জটিল, এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে অজ্ঞাত থাকা অবস্থায়, বিষয়টিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)যেভাবে সরল আকারে দেখেছেন আমদেরও সেভাবে নেয়া উচিৎ। বিশেষ করে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর প্রখ্যাত দুই ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ—যাদেরকে সাহেবাইন বলা হয় ও ইমামের বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কথার ওপরই ফতোয়া দেয়া হয়—১০ জিলহজ্জের কাজসমূহে তরতিব তথা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলেও দম ওয়াজিব হবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। হানাফি ফেকাহর প্রসিদ্ধ কিতাব, بدائع الصنائع -তে এসেছে:
فإن حلق قبل الذبح من غير إحصار فعليه لحلقه قبل الذبح دم في قول أبي حنيفة وقال أبو يوسف ومحمد وجماعة من أهل العلم أنه لا شيء عليه -
যদি জবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করে তবে এর জন্য দম দিতে হবে আবু হানিফা (র) মতানুযায়ী। আর ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহম্মদ ও আহলে ইলেমের একটি জামাতের মতানুযায়ী, কিছুই দিতে হবে না।[3]
[2] - মুসলিম : মুসলিম হাদিস নং ‘২৩০৫
[3] - বাদায়েউস্সানায়ে’ : খন্ড : ২, পৃ:১৫৮
হাদী জবেহ হয়েছে বলে নিশ্চিত হলে মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করুন। তবে মুন্ডন করাই উত্তম। পবিত্র কুরআনে মুন্ডন করার কথা আগে এসেছে, ছোট করার কথা পরে। এরশাদ হয়েছে, ‘مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ - তোমাদের কেউ কেউ মাথা মুন্ডন করবে ও কেউ কেউ চুল ছোট করবে।[1] রাসূলুল্লাহ (ﷺ)নিজেও মাথা মুন্ডন করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)মিনায় এলেন, জামরাতে এসে তিনি কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি মিনায় তাঁর অবস্থানের জায়গায় এলেন ও কোরবানি করলেন। এরপর তিনি ক্ষৌরকারকে বললেন, নাও। তিনি হাত দিয়ে (মাথার) ডান দিকে ইশারা করলেন, অতঃপর বাম দিকে। এরপর মানুষদেরকে তা দিতে লাগলেন।[2] যারা মাথা মুন্ডন করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন তিন বার। আর যারা চুল ছোট করে তাদের জন্যে দোয়া করেছেন এক বার।
[2] - عن أنس بن مالك رضى الله عنه : أن النبي صلى الله عليه وسلم أتى منى ، فأتى الجمرة ، فرماها ثم أتى منزله بمنى ونحر ثم قال للحلاق : خذ ، وأشار إلى جانبه الأيمن ثم الأيسر ثم جعل يعطيه الناس (মুসলিম :২২৯৮ )