রামাযান শেষে শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে গমনের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যাকাতুল ফিৎর আদায় করতে হবে। হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِىَ زَكَاةٌ مَقْبُوْلَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِىَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ-
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর ফরয করেছেন ছিয়াম পালনকারীর অসারতা ও যৌনাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্য স্বরূপ। যে ব্যক্তি তা ছালাতের পূর্বে (ঈদের ছালাত) আদায় করবে তা যাকাত হিসাবে গ্রহণীয় হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাতের পরে আদায় করবে তা (সাধারণ) ছাদাক্বার মধ্যে গণ্য হবে।[1]
অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,
وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ-
তিনি (রাসূল (ছাঃ) ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[2]
উল্লিখিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) زَكَاةُ الْفِطْرِ নামকরণ করেছেন; زَكَاةُ رَمَضَان নামকরণ করেননি। আর ফিৎর আরম্ভ হয় রামাযান শেষে শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে।[3] অতএব শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময় যাকাতুল ফিৎর আদায়ের প্রকৃত সময়। তবে প্রয়োজনে এক অথবা দু’দিন পূর্বে থেকে যকাতুল ফিৎর আদায় করা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) ঈদুল ফিৎরের এক অথবা দু’দিন পূর্বে ফিৎরা আদায় করেছেন।
হাদীছে এসেছে,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ رضى الله عنهما يُعْطِيْهَا الَّذِيْنَ يَقْبَلُوْنَهَا، وَكَانُوْا يُعْطُوْنَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) জমাকারীদের নিকট ছাদাক্বাতুল ফিৎর প্রদান করতেন। আর তারা ঈদুল ফিৎরের একদিন অথবা দু’দিন পূর্বে তা আদায় করত।[4]
ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে আব্দুল ওয়ারেছের সূত্রে আইয়ূব থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হল,
مَتَى كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِي الصَّاعَ؟ قَالَ إِذَا قَعَدَ الْعَامِلُ، قُلْتُ مَتَى كَانَ الْعَامِلُ يَقْعُدُ؟ قَالَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) ছাদাক্বাতুল ফিৎর কখন প্রদান করতেন? তিনি বললেন, আদায়কারী বসলে। তিনি আবার বললেন, আদায়কারী কখন বসতেন? তিনি বললেন, ঈদের ছালাতের একদিন বা দু’দিন পূর্বে।[5]
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, كَانُوْا يُعْطُوْنَ لِلْجَمْعِ لاَ لِلْفُقَرَاءِ ‘তাঁরা জমা করার জন্য দিতেন, ফকীরদের জন্য নয়’।[6]
অতএব শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাকাতুল ফিৎর জমাকারীর নিকট জমা করতে হবে। প্রয়োজনে এক দিন অথবা দু’দিন পূর্বে জমা করা জায়েয। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যাকাতুল ফিৎর জমা করে ঈদের ছালাতের পূর্বে হকদারদের মাঝে বণ্টন করা সম্ভব হলে তা বণ্টন করা জায়েয। তবে তা মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর কষ্ট সর্বদা সহজতা অন্বেষণ করে। তাই ঈদের ছালাতের পূর্বে জমা করে ঈদের ছালাতের পরে বণ্টন করলে মানুষের জন্য সহজ হয়। সুতরাং সামাজিকভাবে যাকাতুল ফিৎর জমা করার ব্যবস্থা থাকলে ঈদের ছালাতের পূর্বে জমা করে সম্ভব হলে ঈদের ছালাতের পূর্বে বণ্টন করতে পারে। আর সম্ভব না হলে ঈদের ছালাতের পরেও বণ্টন করবে। আর জমা করার ব্যবস্থা না থাকলে ব্যক্তিগতভাবে ঈদের ছালাতের পূর্বে ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করবে।
[2]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিতর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।
[3]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/১৬৬ পৃঃ।
[4]. বুখারী হা/১৫১১, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিতর’ অনুচ্ছেদ।
[5]. ছহীহ ইবনু খাযায়মা হা/২৩৯৭; আলবানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪৬।
[6]. ফাতহুল বারী (বৈরুত : দারুল মা‘রেফা) ৩/৩৭৬ পৃঃ ।