দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম [যাকাত অধ্যায়] যাকাতুল ফিতর শরীফুল ইসলাম বিন যয়নুল আবেদীন ১ টি
টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিৎর আদায় করার হুকুম

টাকা দ্বারা ফিৎরা আদায়ের রীতি ইসলামের সোনালী যুগে ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম টাকা দ্বারা ফিৎরা আদায় করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা বাজারে চালু থাকা সত্ত্বেও তিনি খাদ্য বস্ত্ত দ্বারা ফিৎরা আদায় করেছেন, আদায় করতে বলেছেন এবং বিভিন্ন শস্যের কথা হাদীছে উল্লেখ রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা এক ছা‘ ত্বা‘আম বা খাদ্য, অথবা এক ছা যব, অথবা এক ছা খেজুর, অথবা এক ছা পনির, অথবা এক ছা কিশমিশ থেকে যাকাতুল ফিৎর বের করতাম।[1] ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব ফরয করেছেন এবং তিনি ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[2]

অতএব খাদ্যশস্য দ্বারা ‘যাকাতুল ফিৎর’ আদায় করাই ইসলামী শরী‘আতের বিধান। টাকা-পয়সা দ্বারা ফিৎরা প্রদান করা তার পরিপন্থী। ছায়েম নিজে যা খান, তা থেকেই ফিৎরা দানের মধ্যে অধিক মহববত নিহিত থাকে। যে ব্যক্তি ২০ টাকা কেজি দরের চাউল খান সে উক্ত মানের চাউল এক ছা‘ ফিৎরা দিবেন। আর যে ব্যক্তি ৫০ টাকা কেজি দরের চাউল খান সে উক্ত মানের চাউল এক ছা‘ ফিৎরা দিবেন। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে টাকা-পয়সার দ্বারা ফিৎরা আদায়ের ফলে একজন রিক্সা চালক যে ২০ টাকা কেজি দরের চাউল খায়, আর একজন দেশের মন্ত্রী যে ৭০-১০০ টাকা কেজি দরের চাউল খান, উভয়ের যাকাতুল ফিৎরের মান সমান হয়ে যায়। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত টাকা দ্বারা রাজা প্রজা সকলেই ফিৎরা আদায় করে থাকে। যা ইসলাম ও মানুষের বিবেক বিরোধী।

[1]. বুখারী হা/১৫০৬; মুসলিম হা/৯৮৫; মিশকাত হা/১৮১৬।

[2]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিৎর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।