মহানবী (ﷺ) বলেন, “---আর সারা পৃথিবীকে আমার জন্য মসজিদ (নামাযের জায়গা) এবং পবিত্রতার উপকরণ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তির নিকট যে কোন স্থানে নামাযের সময় এসে উপস্থিত হবে , সে যেন সেখানেই নামায পড়ে নেয়।” (বুখারী ৪৩৮নং, মুসলিম প্রমুখ)
কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সারা পৃথিবীর (সমস্ত জায়গাই) মসজিদ (নামায ও সিজদার স্থান)। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৭৩৭নং)
একদা আবূ যার (রাঃ) মহানবী (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন্ মসজিদ স্থাপিত হয়? উত্তরে তিনি বললেন, “হারাম (কা’বার) মসজিদ।” আবূ যার বললেন, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, “তারপর মসজিদুল আকসা।” আবূ যার বললেন, দুই মসজিদ স্থাপনের মাঝে ব্যবধান কত ছিল? তিনি বললেন, “চল্লিশ বছর। আর শোন, সারা পৃথিবী তোমার জন্য মসজিদ। সুতরাং যেখানেই নামাযের সময় এসে উপস্থিত হবে, সেখানেই নামায পড়ে নেবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৩নং)
নির্মিত গৃহ্ মসজিদ ছাড়া অন্য স্থানেও নামায পড়ার বৈধতা উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার জন্য এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
মহান আল্লাহ বলেন, وأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّه অর্থাৎ, আর মসজিদসমূহ আল্লাহর।(কুরআন মাজীদ ৭২/১৮)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর নিকট পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম স্থান হল মসজিদ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্টতম স্থান হল বাজার।” (মুসলিম, মিশকাত ৬৯৬নং)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোন স্থান যিয়ারতের জন্য সফর করা যাবে না; মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও আমার এই মসজিদ (নববী)।” (বুখারী,মুসলিম, সহীহ মিশকাত ৬৯৩)
তিনি বলেন, “মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদের তুলনায় আমার এই মসজিদে (নববীতে) একটি নামায হাজার নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯২নং)
“আর অন্যান্য মসজিদের তুলনায় মসজিদুল হারামের একটি নামায এক লক্ষ নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” (আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, জামে ৩৮৩৮, ৩৮৪১ নং)
প্রকাশ যে, এই ফযীলত মহিলাদের জন্য নয়। কারণ, তাদের জন্য স্বগৃহে নামায পড়াই উত্তম। যেমন নফল বা সুন্নত নামাযেও উক্ত সওয়াব নেই, কেননা, সুন্নত বা নফল নামায ঘরে পড়াই আফযল। অথবা মক্কা ও মদ্বীনার মহিলাদের জন্য তাদের স্বগৃহে এবং ঐ স্থানদ্বয়ে সুন্নত ও নফল নামায ঘরে পড়ার ফযীলত আরো অধিক। অল্লাহু আ’লাম।
মসজিদে নববীর একটি বিশেষ জায়গার কথা উল্লেখ করে মহানবী বলেন, “আমার গৃহ্ ও (আমার মসজিদের) মিম্বরের মাঝে বেহেশ্তের এক বাগান রয়েছে। আর আমার মিম্বর রয়েছে আমার হওযের উপর।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৪নং)
কুবার মসজিদ সম্বন্ধে মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি স্বগৃহে ওযু বানিয়ে কুবার মসজিদে এসে কোন নামায পড়ে, তার একটি উমরাহ্ করার সমান সওয়াব লাভ হয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, জামে ৬১৫৪ নং)
প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসায় নামায পড়লে ৫০০ বা ১০০০ নামাযের সওয়াবের কথা কোন সহীহ হাদীসে আসে নি। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৯৩-২৯৪পৃ:) অবশ্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হযরত সুলাইমান (আঃ) যখন ঐ মসজিদ নির্মাণ শেষ করেছিলেন, তখন আল্লাহর নিকট দুআ করেছিলেন যে, যে ব্যক্তি কেবলমাত্র নামাযের উদ্দেশ্যেই ঐ মসজিদে উপস্থিত হবে, সে ব্যক্তি যেন ঐ দিনকার মত নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। (নাসাঈ, সুনান ৬৬৯, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১৪০৮ নং)
আর এক বর্ণনা মতে তাতে ২৫০ নামাযের সওয়াব আছে। মহানবী (ﷺ) বলেন, “বায়তুল মাকদিস অপেক্ষা আমার এই মসজিদে নামায চারগুণ উত্তম। আর তা হল শ্রেষ্ঠ নামাযের স্থান।” (হাকেম, মুস্তাদরাক ৪/৫০৯, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, ত্বা, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/২/৯৫৪)
আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেয়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশ্তে একটি ঘর বানিয়ে দেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৭নং)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পাখির বাসার মত অথবা তার চেয়েও ছোট আকারের একটি মসজিদ বানিয়ে দেয়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশ্তে একটি গৃহ্ নির্মাণ করে দেন।” (ইবনে মাজাহ্, সুনান, জামে ৬১২৮ নং)
“যে ব্যক্তি তিতির পাখীর (পোকামাকড় খোঁজার উদ্দেশ্যে) আঁচড়ানো স্থান পরিমাণ আয়তনের অথবা তদপেক্ষা ছোট আকারের মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ্ নির্মাণ করবেন।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সহিহ তারগিব ২৬৫নং)
আর মহান আল্লাহ বলেন,
في بُيُوْتٍ أَذِنَ اللهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالآصَال رِجَالٌ لاَّ تُلْهِيْهُمْ تِجَارَةً وَّلاَ بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْماً تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالأَبْصَار
অর্থাৎ, আল্লাহ যে সব গৃহ্কে (মর্যাদায়) উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম স্মরণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন লোকেরা; যাদেরকে ব্যবসা-বানিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম এবং যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ ভীতি-বিহ্বল হয়ে পড়বে। (কুরআন মাজীদ ২৪/৩৬-৩৭)
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহ্মানীর উপকরণ প্রস্তুত করেন। যখনই সে সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহ্মানীর উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।” (বুখারী ৬৬২, মুসলিম, সহীহ ৬৬৯নং)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “পুরুষের স্বগৃহে বা তার ব্যবসাক্ষেত্রে নামায পড়ার চেয়ে (মসজিদে) জামাআতে শামিল হয়ে নামায পড়ার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি। কেননা, সে যখন সুন্দরভাবে ওযু করে কেবল মাত্র নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই মসজিদের পথে বের হয় তখন চলামাত্র প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে তাকে এক-একটি মর্যাদায় উন্নীত করা হয় এবং তার এক-একটি গুনাহ মোচন করা হয়। অতঃপর নামায আদায় সম্পন্ন করে যতক্ষণ সে নামাযের স্থানে বসে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতাবর্গ তার জন্য দুআ করতে থাকে; ‘হে আল্লাহ ওর প্রতি করুণা বর্ষণ কর। হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা কর। আর সে ব্যক্তি যতক্ষণ নামাযের অপেক্ষা করে ততক্ষণ যেন নামাযের অবস্থাতেই থাকে।” (বুখারী ৬৪৭নং, মুসলিম, সহীহ ৬৪৯নং, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
তিনি বলেন, “অন্ধকারে অধিকাধিক মসজিদের পথে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামত দিবসের পরিপূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৩১০নং)
তিনি আরো বলেন “যে ব্যক্তি কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহে থেকে ওযু করে (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তির সওয়াব হয় ইহ্রাম বাঁধাহাজীর ন্যায়। আর যে ব্যক্তি কেবলমাত্র চাশতের নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার সওয়াব হয় উমরাকারীর সমান। এক নামাযের পর অপর নামায; যে দুয়ের মাঝে কোন অসার (পার্থিব) ক্রিয়াকলাপ না থাকে তা এমন আমল যা ইল্লিয়্যীনে (সৎলোকের সৎকর্মাদি লিপিবদ্ধ করার নিবন্ধ গ্রন্থে) লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহিহ তারগিব ৩১৫নং)
“তিন ব্যক্তি আল্লাহর যামানতে; এদের মধ্যে একজন হল সেই ব্যক্তি যে মসজিদে যায়। মরণ পর্যন্ত সে আল্লাহর যামানতে থাকে। অতঃপর তিনি তাকে বেহেশ্তে প্রবেশ করান। অথবা তাকে তার প্রাপ্ত সওয়াব ও নেকীর সাথে (তার বাড়ি) ফিরিয়ে দেন।” (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭২৭নং)
“নামাযে সওয়াবের দিক থেকে সবচেয়ে বড় সেই ব্যক্তি, যার (বাড়ি থেকে মসজিদের দিকে) চলার পথ সবচেয়ে দূরের।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৯নং)
মসজিদে নববীর আশেপাশে কিছু জায়গা খালি পড়েছিল। বনী সালেমাহ্ মসজিদের পাশে (ঐ খালি জায়গায়) ঘর বানাবার ইচ্ছা করল। এ খবর আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট পৌঁছলে তিনি তাদেরকে বললেন, “আমি শুনলাম যে, তোমরা তোমাদের পূর্বের ঘর-বাড়ি ছেড়ে মসজিদের পাশে এসে বসবাস করতে চাচ্ছ।” তারা বলল, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! এ রকমই ইচ্ছা আমরা করেছি।’ তিনি বললেন, “হে বনী সালেমাহ্! তোমরা তোমাদের ঐ বাড়িতেই থাক। (দূর হলেও, মসজিদ আসার ফলে) তোমাদের পায়ের চিহ্ন (তোমাদের নেকীর খাতায়) লিপিবদ্ধ করা হবে।” এরুপ তিনি দু’বার বললেন। (মুসলিম, মিশকাত ৭০০নং)
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللهَ، فَعَسَى أُولئِكَ أَنْ يَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
অর্থাৎ, নি:সন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হবে। (কুরআন মাজীদ ৯/১৮)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,)
১। ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ্ (রাষ্ট্রনেতা),
২। সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আযযা অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদ সমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।)
৩। সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়।
৪। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহ্বান করে কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।
৫। সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডানহাত যা প্রদান করে তা তার বাম হাত পর্যন্তুও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।” (বুখারী ৬৬০নং, মুসলিম, সহীহ ১০৩১নং)
“কোন ব্যক্তি যখন যিক্র ও নামাযের জন্য মসজিদে অবস্থান করা শুরু করে তখনই আল্লাহ তাআলা তাকে নিয়ে সেইরুপ খুশী হন যেরুপ প্রবাসী ব্যক্তি ফিরে এলে তাকে নিয়ে তার বাড়ির লোক খুশী হয়।” (ইআশা:, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহিহ তারগিব ৩২২নং)
“মসজিদ প্রত্যেক পরহেযগার (ধর্মভীরু) ব্যক্তির ঘর। আর যে ব্যক্তির ঘর মসজিদ সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহ আরাম, করুণা এবং তার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রতি পুলসিরাত অতিক্রম করে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।” (ত্বাবারানী, মু’জাম কাবীর ও আওসাত্ব, বাযযার, সহিহ তারগিব ৩২৫ নং)
“যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ ঘরে ওযু করে মসজিদে আসে, তখন ঘরে না ফিরা পর্যন্ত সে নামাযেই থাকে। সুতরাং সে যেন হাতের আঙ্গুলগুলোর মাঝে খাঁজাখাঁজি না করে।” (হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ৯৯৪, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১২৯৪নং)
“যে ব্যক্তি ওযু করে মসজিদে আসে, সে ব্যক্তি আল্লাহর মেহ্মান। আর মেজবানের দায়িত্ব হল, মেহ্মানের খাতির করা।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১১৬৯ নং)
খেয়াল রাখার কথা যে, ই’তিকাফে বসা ছাড়া অন্যান্য দিনে মসজিদের মধ্যে নামাযের জন্য কোন এক কোণ বা স্থানকে নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। কারণ, মহানবী (ﷺ) নিষেধ করেছেন কাকের দানা খাওয়ার মত (ঠকঠক করে) নামায পড়তে, নামাযে হিংস্র জন্তুদের মত হাত বিছিয়ে বসতে এবং উট যেমন একই স্থানকে নিজের জায়গা বানিয়ে নেয়, তেমনি মসজিদে নির্দিষ্ট জায়গা বানাতে। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১১৬৮নং)
পূর্বে উল্লেখিত একহাদীসে এসেছে যে, ওযু করে মসজিদ যাওয়ার সময়ও আঙ্গুলসমূহের মাঝে খাঁজাখাঁজি করা নিষিদ্ধ। অনুরুপ এই সময় পথে ইকামত শুনলেও তাড়াহুড়ো করে বা ছুটাছুটি করে দৌড়ে যাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা ধীর ও শান্তভাবে (মসজিদে বা জামাআতে) যাও। ইমামের সঙ্গে নামাযের যতটুকু অংশ পাও ততটুকু পড়ে নাও এবং যেটুকু অংশ ছুটে যায় তা একাকী পূর্ণ করে নাও।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৮৬ নং)
মসজিদ যাওয়ার সময় পথে নিম্নের দুআ পড়তে হয়:-
اَللّهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْراً وَّ فِيْ لِسَانِيْ نُوْراً وَّ اجْعَلْ فِيْ سَمْعِيْ نُوْراً وَّ اجْعَلْ فِيْ بَصَرِيْ نُوْراً وَّاجْعَلْ مِنْ خَلْفِيْ نُوْراً ، وَّ مِنْ أَمَامِيْ نُوْراً، وَّاجْعَلْ مِنْ فَوْقِيْ نُوْراً وَ مِنْ تَحْتِيْ نُوْراً،
اَللّهُمَّ أَعْطِنِيْ نُوْراً।
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মাজ্আল ফী ক্বালবী নূরা, অফী লিসানী নূরা, অজ্আল ফী সাময়ী নূরা,অজ্আল ফী বাস্বারী নূরা, অজ্আল মিন খালফী নূরা, অমিন আমা-মী নূরা, অজ্আল মিন ফাউক্বী নূরা, অমিন তাহ্তী নূরা, আল্লাহুম্মা আ’তিনী নূরা।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়, রসনা, কর্ণ, চক্ষু, পশ্চাত, সম্মুখ, ঊর্ধ্ব ও নিম্নে জ্যোতি প্রদান কর। হে আল্লাহ! আমাকে নূর (জ্যোতি) দান কর। (বুখারী ৬৩১৬, মুসলিম, সহীহ ৭৬৩ নং)
মহানবী (ﷺ) যখন মসজিদ প্রবেশ করতেন, তখন ‘বিসমিল্লাহ্’ বলতেন এবং নিজের উপর দরুদ ও সালাম পড়তেন। অনুরুপ বের হওয়ার সময়ও পড়তেন। (ইবনে মাজাহ্, সুনান ৭৭১নং)
তিনি এই সময় নিম্নের দুআও পড়তেন,
أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ।
উচ্চারণ:- আঊযু বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্হিহিল কারীম, অ সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম।
অর্থ- আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
এই দুআ পড়ে মসজিদ প্রবেশ করলে শয়তান বলে, ‘সারা দিন ও আমার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করল।’ (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭৪৯ নং)
(بِسْمِ الله)، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلى رَسُوْلِ الله، اَللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِك।
উচ্চারণ- বিসমিল্লা-হ্, অসসালা-তু অসসালা-মু আলা রাসূলিল্লা-হ্, আল্লা-হুম্মাফ্ তাহ্লী আবওয়া-বা রাহ্মাতিক।
অর্থ- আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি, সালাম ও দরুদ বর্ষিত হোক আল্লাহর রসূলের উপর। হে আল্লাহ! আমার জন্য তুমি তোমার করুণার দুয়ার খুলে দাও।(জামে১/৫২৮,মুসলিম, সহীহ১/৪৯৪,ইবনুস সুন্নী ৮৮)
বের হওয়ার সময় বলতেন,
(بِسْمِ الله)، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلى رَسُوْلِ الله، اللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ।
‘বিসমিল্লাহ্’ ও দরুদের পর এ দুআও পড়া যায়,
اَللّهُمَّ اعْصِمْنِيْ مِنَ الشَّيْطَان।
উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা কর। (নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, ইবনে হিব্বান, সহীহ, জামে ৫১৪নং)
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘এক সুন্নাহ্ (নবী (ﷺ) এর তরীকা) এই যে, যখন তুমি মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন ডান পা আগে বাড়াবে এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে, তখন বাম পা আগে বাড়াবে।’ (হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২১৮)
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ বা মসজিদ সেলামীর নামায (২ রাক্আত) মসজিদ প্রবেশ করার পর বসার পূর্বেই পড়তে হয়। এর জন্য কোন সময়-অসময় নেই। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে ২ রাক্আত নামায পড়ে নেয়।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “সে যেন ২ রাক্আত নামায পড়ার পূর্বে না বসে।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ প্রমুখ ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪৬৭নং)
এই দুই রাকআত নামায বড় গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো জুমআর দিনে খুতবা চলাকালীন সময়েও মসজিদে এলে হাল্কা করে তা পড়ে নিতে হয়। (মুসলিম, মিশকাত ১৪১১নং)
আযান চলাকালে মসজিদ প্রবেশ করলে না বসে আযানের জওয়াব দিয়ে শেষ করে তারপর ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ পড়তে হবে। তবে জুমআর দিন খুতবার আযান হলে জওয়াব না দিয়ে ঐ ২ রাকআত নামায আযান চলা অবস্থায় পড়ে নিতে হবে। যেহেতু খুতবা শোনা আরো জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫)
মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়তে হলে ঐ নামায আর পড়তে হয় না। কারণ, তখন এই সুন্নতই ওর স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৭, লিকাউবাবিল মাফতূহ্, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)
যেমন হারামের মসজিদে প্রবেশ করে (বিশেষ করে মুহ্রিমের জন্য) ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ হল তওয়াফ; ২ রাকআত সুন্নত নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৬/২৬৪-২৬৫)
মসজিদ আল্লাহর ঘর। ইবাদতের জায়গা। তা হবে পবিত্র ও সুগন্ধময়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (ﷺ) মহ্ল্লায় মসজিদ বানাতে এবং তা পরিষ্কার ও সুগন্ধময় করে রাখতে আদেশ করেছেন।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৪৫৫ নং, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ আহমাদ, মুসনাদ)
সামুরাহ্ (রাঃ) নিজের ছেলেকে পত্রে লিখেছিলেন, ‘অতঃপর বলি যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ) আমাদেরকে আমাদের মহ্ল্লায় মসজিদ বানাতে, তার তরমীম করতে এবং তা পবিত্র রাখতে আদেশ করতেন।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৪৫৬নং)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “নিশ্চয়ই এই মসজিদসমূহে কোন প্রকার নোংরা, পেশাব-পায়খানা (ইত্যাদি ময়লা দ্বারা অপবিত্র করা) সঙ্গত নয়। মসজিদ তো কুরআন পাঠ, আল্লাহর যিক্র এবং নামাযের জন্য (বানানো হয়)। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, জামে ২২৬৮নং) তিনি মসজিদের দরজায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। (জামে ৬৮১৩ নং)
মসজিদে থুথু বা কফ্ ফেলা গুনাহর কাজ। থুথু ইত্যাদি নোংরা বস্তু মসজিদ থেকে পরিষ্কার করা সওয়াবের কাজ। (আহমাদ, মুসনাদ, ত্বাবারানী, মু’জাম, জামে ২৮৮৫ নং) যেমন ঋতুমতী মহিলা প্রভৃতি অপবিত্রের জন্য মসজিদে অবস্থান করা বৈধ নয়। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৪৩১নং)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি (কাঁচা) পিঁয়াজ, রসুন বা কুর্রাস খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদে আমাদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা, যে বস্তু দ্বারা মানুষ কষ্ট পায়, সেই বস্তুতে ফিরিশ্তারাও কষ্ট পেয়ে থাকেন।” (মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ৬০৮৯ নং)
বলাই বাহুল্য যে, কাঁচা পিঁয়াজ-রসুন অপেক্ষা বিড়ি-সিগারেট, গুল-জর্দা, গালি-তামাক প্রভৃতি মাদকদ্রব্যের দুর্গন্ধ আরো বেশী। সুতরাং তা খেয়েও মসজিদে এসে মুসল্লী তথা আল্লাহর ফিরিশ্তাদেরকে কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়। বরং এসব বস্তু খাওয়াইহারাম এবং তা বর্জন করা ওয়াজেব। (আদর্শ পরিবার ও পরিবেশ দ্র:)