তাক্বদীরঃ আল্লাহ্‌র এক গোপন রহস্য ভূমিকা আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার ১ টি

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। দরূদ এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর।

তাক্বদীর ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ। প্রকৃত মুমিন হতে হলে অবশ্যই তাক্বদীরে বিশ্বাস করতে হবে, তাক্বদীরে বিশ্বাস স্থাপন বৈ কেউ মুমিন হতে পারবে না। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে তাক্বদীর সংক্রান্ত অসংখ্য বর্ণনা এসেছে। সেজন্য ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিষয়টি সরাসরি আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে এর গুরুত্ব এবং তাৎপর্য যারপর নেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আল্লাহ্‌র কতিপয় নাম ও গুণাবলীর সাথেই এর সরাসরি সম্পর্ক।

তাক্বদীরে বিশ্বাস মানুষের স্বভাবগত বিষয়। সেজন্য এমনকি জাহেলী যুগেও মানুষ এতে বিশ্বাস করত। জাহেলী অনেক কবির কবিতায় এমন বিশ্বাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কবি আনতারা তার প্রেমিকা আবলাকে লক্ষ্য করে বলেন,

يا عَبلُ أينَ من المَنيَّة ِ مَهْربي إن كانَ ربي في السَّماءِ قَضاها

‘হে আবলা! আমার প্রভূ আসমানে যদি আমার মৃত্যুর ফায়ছালা করেই রাখেন, তাহলে মৃত্যু থেকে আমার পালাবার পথ কোথায়!’[1]

এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে তাক্বদীরের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তুলে ধরেন। ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে সরাসরি দ্বীনের জ্ঞান লাভ করেন। সেজন্য তাঁরা ছিলেন তাক্বদীর উপলব্ধির ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রগণ্য এবং এর প্রতি তাঁদের বিশ্বাসও ছিল অটুট। ফলে তাঁরা তাক্বওয়া এবং শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কিন্তু ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর যুগের শেষের দিকে ইসলামের ব্যাপক বিস্তৃতির পর মুসলিম দেশসমূহে গ্রীক, পারসিক, ভারতীয় দর্শনের অনুপ্রবেশ ঘটতে শুরু করে। ফলে তাক্বদীর অস্বীকারের মত নিকৃষ্ট মতবাদের জন্ম হয়। তারপর উমাইয়া যুগে জন্ম হয় জাবরিইয়াহ মতবাদের। এসব ভ্রান্ত মতবাদের অপতৎপরতা আজও অব্যাহত রয়েছে।

মহান আল্লাহ আহলুস্‌ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতকে তাক্বদীরের সঠিক উপলব্ধি দান করেছেন। কারণ তারা সরাসরি পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ এবং সালাফে ছালেহীনের বক্তব্য অনুযায়ী তাক্বদীর বুঝার চেষ্টা করেছেন। মূলতঃ তাক্বদীরসহ শরী‘আতের  যেকোনো বিষয় বুঝার ক্ষেত্রে এই পথেই মুক্তি নিহিত রয়েছে।

তাক্বদীরের মৌলিক বিষয়গুলি উপলব্ধি করতে পারলে একজন মুমিনের ঈমান পরিপক্ক হবে, আল্লাহ সম্পর্কে তার ধারণা সুন্দর হবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সে প্রভূত কল্যাণ অর্জন করতে পারবে। পক্ষান্তরে তাক্বদীরে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হলে উভয় জীবনে নেমে আসবে চরম হতাশা এবং মর্মন্তুদ শাস্তি।

আমরা এ প্রবন্ধে তাক্বদীরের মৌলিক বিষয়গুলি সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহই একমাত্র তাওফীক্বদাতা।

[1]. দিওয়ানু আনতারা ইবনে শাদ্দাদ, (বৈরূত: মাত্ববা‘আতুল আদাব, প্রকাশকাল: ১৮৯৩ ইং), পৃ: ৯২।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে