যখন মানুষ কবর থেকে উঠে দাড়াবে তাদের বলা হবে, তোমরা আসো তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, আর থামো, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন সকল মানুষ হতাশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। পরাক্রমশালী এক অদ্বিতীয় প্রভুর সামনে সকলে মাথা নত করে দিবে। তারা সেদিন এ আহবানে সাড়া দিতে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দিবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَوۡمَئِذٖ يَتَّبِعُونَ ٱلدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُۥۖ وَخَشَعَتِ ٱلۡأَصۡوَاتُ لِلرَّحۡمَٰنِ فَلَا تَسۡمَعُ إِلَّا هَمۡسٗا ١٠٨﴾ [طه: ١٠٨]
“সেদিন তারা আহ্বানকারীর (ফিরিশতার) অনুসরণ করবে। এর কোনো এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না”। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১০৮]
﴿وَعَنَتِ ٱلۡوُجُوهُ لِلۡحَيِّ ٱلۡقَيُّومِۖ وَقَدۡ خَابَ مَنۡ حَمَلَ ظُلۡمٗا ١١١ وَمَن يَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَا يَخَافُ ظُلۡمٗا وَلَا هَضۡمٗا ١١٢﴾ [طه: ١١١، ١١٢]
“আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে যে যুলুম বহন করবে। এবং যে মুমিন অবস্থায় ভালো কাজ করবে সে কোনো যুলুম বা ক্ষতির আশংকা করবে না”। [সূরা ত্বাহা আয়াত: ১১১-১১২]
﴿فَذَرۡهُمۡ يَخُوضُواْ وَيَلۡعَبُواْ حَتَّىٰ يُلَٰقُواْ يَوۡمَهُمُ ٱلَّذِي يُوعَدُونَ ٤٢ يَوۡمَ يَخۡرُجُونَ مِنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ سِرَاعٗا كَأَنَّهُمۡ إِلَىٰ نُصُبٖ يُوفِضُونَ ٤٣ خَٰشِعَةً أَبۡصَٰرُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۚ ذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمُ ٱلَّذِي كَانُواْ يُوعَدُونَ ٤٤﴾ [المعارج: ٤٢، ٤٤]
“অতএব তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা (বেহুদা কথায়) মত্ত থাকুক আর খেল-তামাশা করুক যতক্ষণ না তারা দেখা পায় সেদিনের, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। যেদিন দ্রুতবেগে তারা কবর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন তারা কোনো লক্ষ্যের দিকে ছুটছে অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল”। [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ৪২-৪৪]
আমাদের মানব সমাজে বহু মানুষ আছে যারা পরকালকে অস্বীকার করে থাকে। তারা বলে থাকে দুনিয়ার জীবনই জীবন। যা দেখি না তা বিশ্বাস করি না। পরকাল অস্বীকার করার ফলে তারা যে পরকালের শিকার হবে না তা কিন্তু নয়। কেউ আগুনের দাহ্য শক্তি অস্বীকার করলেও আগুন তাকে পেলে দগ্ধ করবেই।
আল্লাহ তা‘আলা এদের সম্পর্কে বলেন:
﴿وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ١٠ ٱلَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ ١١ وَمَا يُكَذِّبُ بِهِۦٓ إِلَّا كُلُّ مُعۡتَدٍ أَثِيمٍ ١٢ إِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا قَالَ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ ١٣ كَلَّاۖ بَلۡۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ١٤ كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّهُمۡ لَصَالُواْ ٱلۡجَحِيمِ ١٦ ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ١٧﴾ [المطففين: ١٠، ١٧]
“সেদিন ধ্বংস অস্বীকারকারীদের জন্য। যারা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করে। আর সকল সীমালঙ্ঘনকারী পাপাচারী ছাড়া কেউ তা অস্বীকার করে না। যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, পূর্ববর্তীদের রূপকথা। কখনো নয়, বরং তারা যা অর্জন করত তা-ই তাদের অন্তরসমূহকে ঢেকে দিয়েছে। কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। তারপর নিশ্চয় তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে”। [সূরা আল-মুতাফফিফিন, আয়াত: ১০-১৭]
﴿وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يَنسِلُونَ ٥١ قَالُواْ يَٰوَيۡلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرۡقَدِنَاۜ ۗ هَٰذَا مَا وَعَدَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَصَدَقَ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ٥٢ إِن كَانَتۡ إِلَّا صَيۡحَةٗ وَٰحِدَةٗ فَإِذَا هُمۡ جَمِيعٞ لَّدَيۡنَا مُحۡضَرُونَ ٥٣ فَٱلۡيَوۡمَ لَا تُظۡلَمُ نَفۡسٞ شَيۡٔٗا وَلَا تُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٥٤ ﴾ [يس: ٥١، ٥٤]
“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? (তাদেরকে বলা হবে) এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুনাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন। তা ছিল শুধুই একটি বিকট আওয়াজ, ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের সকলকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে। সুতরাং আজ কাউকেই কোনো যুলম করা হবে না এবং তোমরা যা আমল করছিলে শুধু তারই প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫১-৫৪]
﴿وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تَرَى ٱلَّذِينَ كَذَبُواْ عَلَى ٱللَّهِ وُجُوهُهُم مُّسۡوَدَّةٌۚ أَلَيۡسَ فِي جَهَنَّمَ مَثۡوٗى لِّلۡمُتَكَبِّرِينَ ٦٠﴾ [الزمر: ٥٩]
“আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি?” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬০]
﴿وَقَالُوٓاْ إِنۡ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا وَمَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوثِينَ ٢٩ وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذۡ وُقِفُواْ عَلَىٰ رَبِّهِمۡۚ قَالَ أَلَيۡسَ هَٰذَا بِٱلۡحَقِّۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَرَبِّنَاۚ قَالَ فَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡفُرُونَ ٣٠ قَدۡ خَسِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِلِقَآءِ ٱللَّهِۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتۡهُمُ ٱلسَّاعَةُ بَغۡتَةٗ قَالُواْ يَٰحَسۡرَتَنَا عَلَىٰ مَا فَرَّطۡنَا فِيهَا وَهُمۡ يَحۡمِلُونَ أَوۡزَارَهُمۡ عَلَىٰ ظُهُورِهِمۡۚ أَلَا سَآءَ مَا يَزِرُونَ ٣١ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَعِبٞ وَلَهۡوٞۖ وَلَلدَّارُ ٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٣٢﴾ [الانعام: ٢٩، ٣٢]
“আর তারা বলেছিল, আমাদের এ দুনিয়ার জীবন ছাড়া কিছু নেই এবং আমরা পুনরুজ্জীবিত হব না। আর যদি তুমি দেখতে যখন তাদেরকে দাঁড় করানো হবে তাদের রবের সামনে এবং তিনি বলবেন, এটা কি সত্য নয়? তারা বলবে, হ্যাঁ, আমাদের রবের কসম! তিনি বলবেন, সুতরাং তোমরা যে কুফুরী করতে তার কারণে আযাব আস্বাদন কর। যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকার করেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি যখন হঠাৎ তাদের কাছে কিয়ামত এসে যাবে, তারা বলবে, হায় আফসোস! সেখানে আমরা যে ত্রুটি করেছি তার উপর। তারা তাদের পাপসমূহ তাদের পিঠে বহন করবে; সাবধান! তারা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট! আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু না। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না?” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ২৯-৩২]
﴿وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ٢٨ ٱنطَلِقُوٓاْ إِلَىٰ مَا كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ٢٩ ٱنطَلِقُوٓاْ إِلَىٰ ظِلّٖ ذِي ثَلَٰثِ شُعَبٖ ٣٠ لَّا ظَلِيلٖ وَلَا يُغۡنِي مِنَ ٱللَّهَبِ ٣١ إِنَّهَا تَرۡمِي بِشَرَرٖ كَٱلۡقَصۡرِ ٣٢ كَأَنَّهُۥ جِمَٰلَتٞ صُفۡرٞ ٣٣ وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ٣٤﴾ [المرسلات: ٢٨، ٣٤]
“মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ! (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা যা অস্বীকার করতে সেদিকে গমন কর। যাও তিন শাখা বিশিষ্ট আগুনের ছায়ায়, যা ছায়াদানকারী নয় এবং তা জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখার মোকাবেলায় কোনো কাজেও আসবে না। নিশ্চয় তা (জাহান্নাম) ছড়াবে প্রাসাদসম স্ফুলিঙ্গ। তা যেন হলুদ উষ্ট্রী। মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ!” [সূরা আল-মুরসালাত, আয়াত: ২৮-৩৪]
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা এরপর আকাশসমূহকে ডান হাতে আর পৃথিবীগুলোকে অন্য হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করবেন। অতঃপর বলবেন, কোথায় শক্তিধর স্বৈরাচারীরা? কোথায় অহংকারীরা?
আল্লাহ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
﴿وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٧﴾ [الزمر: ٦٦]
“আর তারা আল্লাহ-কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্ঠিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৭]
﴿يَوۡمَ نَطۡوِي ٱلسَّمَآءَ كَطَيِّ ٱلسِّجِلِّ لِلۡكُتُبِۚ كَمَا بَدَأۡنَآ أَوَّلَ خَلۡقٖ نُّعِيدُهُۥۚ وَعۡدًا عَلَيۡنَآۚ إِنَّا كُنَّا فَٰعِلِينَ ١٠٤﴾ [الانبياء: ١٠٤]
“সে দিন আমরা আসমানসমূহকে গুটিয়ে নেব, যেভাবে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত দলীল-পত্রাদি। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য। নিশ্চয় আমি তা পালন করব”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৪]
হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَقْبِضُ اللَّهُ الأَرْضَ، وَيَطْوِي السَّمَوَاتِ بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا المَلِكُ، أَيْنَ مُلُوكُ الأَرْضِ »
“আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবী মুষ্ঠিবদ্ধ করবেন আর আকাশকে নিজ ডান হাতে ভাজ করে ধরবেন অতঃপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় আজ পৃথিবীর রাজা-বাদশাগণ?”[1]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يَطْوِي اللهُ عَزَّ وَجَلَّ السَّمَاوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ، أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ. ثُمَّ يَطْوِي الْأَرَضِينَ بِشِمَالِهِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ؟ »
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আকাশসমূহকে ভাঁজ করে ফেলবেন। অতঃপর তা ডান হাতে ধারণ করবেন আর বলবেন, আমি বাদশা। কোথায় আজ স্বৈরাচরীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা? এরপর পৃথিবীগুলোকে বাম হাতে ভাঁজ করে ধরবেন। অতঃপর বলবেন, কোথায় আজ স্বৈরাচরীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা?”[2]
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮৮।
হাদীসে এসেছে: সাহল ইবন সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ، كَقُرْصَةِ النَّقِيِّ، لَيْسَ فِيهَا عَلَمٌ لِأَحَدٍ»
“কিয়ামতের দিবসে মানুষকে সাদা পোড়ামাটি রংয়ের উদ্ভিদহীন একটি যমীনে একত্র করা হবে। যেখানে কারো জন্য কোনো আলামত থাকবে না”।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন:
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ»
“কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আয়েশা! সেদিন অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না”।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَنۡ أَعۡرَضَ عَن ذِكۡرِي فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةٗ ضَنكٗا وَنَحۡشُرُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ أَعۡمَىٰ ١٢٤ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرۡتَنِيٓ أَعۡمَىٰ وَقَدۡ كُنتُ بَصِيرٗا ١٢٥ قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتۡكَ ءَايَٰتُنَا فَنَسِيتَهَاۖ وَكَذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمَ تُنسَىٰ ١٢٦ ﴾ [طه: ١٢٤، ١٢٦]
“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হলো”। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ১২৪-১২৬]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَنَحۡشُرُهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمۡ عُمۡيٗا وَبُكۡمٗا وَصُمّٗاۖ مَّأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ كُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنَٰهُمۡ سَعِيرٗا ٩٧ ﴾ [الاسراء: ٩٧]
“আর আমরা কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯৭]
হাদীসে এসেছে: আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
«أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ يُحْشَرُ الكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ؟ قَالَ: «أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ» قَالَ قَتَادَةُ: بَلَى وَعِزَّةِ رَبِّنَا»
“এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কাফিরদের কীভাবে চেহারার উপর উপুর করে উঠানো হবে? তিনি বললেন: যে মহান সত্ত্বা দুনিয়াতে দু’পা দিয়ে চলাচল করিয়েছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখ-মন্ডল দিয়ে চলাচল করাতে পারবেন না? কাতাদা বললেন: অবশ্যই তিনি পারবেন, মহান রবের সম্মানের কসম করে বলছি”।[1]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ القِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ فِي الأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا، وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ»
“কিয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মাক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে”।[2]
মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«تُدْنَى الشَّمْسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْخَلْقِ، حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ» - قَالَ سُلَيْمُ بْنُ عَامِرٍ: فَوَاللهِ مَا أَدْرِي مَا يَعْنِي بِالْمِيلِ؟ أَمَسَافَةَ الْأَرْضِ، أَمِ الْمِيلَ الَّذِي تُكْتَحَلُ بِهِ الْعَيْنُ - قَالَ: «فَيَكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فِي الْعَرَقِ، فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى حَقْوَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ الْعَرَقُ إِلْجَامًا» قَالَ: وَأَشَارَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ إِلَى فِيهِ
“কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবন আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল বলতে এখানে কোনো মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমা দানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন? মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর”।[3]
হে আল্লাহর বান্দা! আপনি এভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন, আমার অবস্থা তখন কেমন হবে? আমি কি সেদিন সৌভাগ্যবান হবো না দুর্ভাগা? আমার জীবনের অধিকাংশ কাজ কি সৎ কাজ হয়েছে না পাপাচার বেশি হয়েছে? আমি কি মদ, ব্যভিচার, জুয়া, প্রতারণা, মিথ্যা কথা, দুর্নীতি, আমানতের খেয়ানত, অপরের সম্পদ আত্নসাৎ, অপরের মানহানি, অপরের দোষ চর্চা, অপবাদ, মিথ্যা মামলা-মুকাদ্দামা, সূদী কারবার, ঘুষ লেনদেন, খাবারে ভেজাল, ওয়াদা খেলাফী, ঋণ খেলাফী, ইসলামের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব, ইসলাম অনুসারীদের নিয়ে উপহাস তামাশা ইত্যাদি অনৈতিক কাজগুলো পরিহার করে চলতে পেরেছি, না এগুলো ছিলো আমার জীবনের নিত্য দিনের সঙ্গী? কাজেই কিয়ামতের এ কঠিন দিনের মুখোমুখী হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ-কে ভয় করুন। সকল বিষয়ে আল্লাহ-কে ভয় করে সাবধানতার সাথে পথ চলুন। দুনিয়ার জীবনে একবার ব্যর্থ হলে তা কাটিয়ে উঠা যায়। কিন্তু কিয়ামতের সময়ের ব্যর্থতার কোনো প্রতিকার নেই। কাজেই এখন থেকেই নিজের আমলের হিসাব নিজে করতে থাকুন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿كَلَّآۖ إِذَا دُكَّتِ ٱلۡأَرۡضُ دَكّٗا دَكّٗا ٢١ وَجَآءَ رَبُّكَ وَٱلۡمَلَكُ صَفّٗا صَفّٗا ٢٢ وَجِاْيٓءَ يَوۡمَئِذِۢ بِجَهَنَّمَۚ يَوۡمَئِذٖ يَتَذَكَّرُ ٱلۡإِنسَٰنُ وَأَنَّىٰ لَهُ ٱلذِّكۡرَىٰ ٢٣ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي قَدَّمۡتُ لِحَيَاتِي ٢٤﴾ [الفجر: ٢١، ٢٤]
“কখনো নয়, যখন পৃথিবীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে পরিপূর্ণভাবে। আর তোমার রব ও ফিরিশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। আর সেদিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু সেই স্মরণ তার কী উপকারে আসবে? সে বলবে, হায়! যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২১-২৪]
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৩২।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৪।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ اللهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: «أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي، الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي»
“আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, যারা আমারই জন্য পরস্পরকে ভালোবেসেছে তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া নেই”।[1]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ، يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ: الإِمَامُ العَادِلُ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي المَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ، أَخْفَى حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ»
“কিয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ‘আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোনো ছায়া থাকবে না- ন্যায়পরায়ন বাদশাহ, এমন যুবক যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে, ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা সংশিষ্ট থাকে মসজিদের সাথে, এমন দু ব্যক্তি যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য, এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া এক রমণী আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি, এমন ব্যক্তি, যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না। আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু-চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা”।[2]
আবু ইয়াসার কা‘আব ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ عَنْهُ، أَظَلَّهُ اللهُ فِي ظِلِّهِ»
“যে কোনো ঋণগ্রস্ত বা অভাবী ব্যক্তিকে সুযোগ দিবে অথবা তাকে ঋণ আদায় থেকে অব্যাহতি দিবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ ছায়ায় আশ্রয় দিবেন”।[3]
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩১।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩০২।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«أَوَّلُ مَنْ يُدْعَى يَوْمَ القِيَامَةِ آدَمُ، فَتَرَاءَى ذُرِّيَّتُهُ، فَيُقَالُ: هَذَا أَبُوكُمْ آدَمُ، فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، فَيَقُولُ: أَخْرِجْ بَعْثَ جَهَنَّمَ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ كَمْ أُخْرِجُ، فَيَقُولُ: أَخْرِجْ مِنْ كُلِّ مِائَةٍ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ " فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِذَا أُخِذَ مِنَّا مِنْ كُلِّ مِائَةٍ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ، فَمَاذَا يَبْقَى مِنَّا؟ قَالَ: «إِنَّ أُمَّتِي فِي الأُمَمِ كَالشَّعَرَةِ البَيْضَاءِ فِي الثَّوْرِ الأَسْوَدِ»
“কিয়ামতের দিন যাকে প্রথম ডাকা হবে তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম। তিনি তার সন্তানদের দেখবেন। বলা হবে এ হলো তোমাদের পিতা আদম। তিনি তখন বলবেন, উপস্থিত হয়েছি হে রব! আপনার কাছেই কল্যাণ। আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তোমার সন্তানদের মধ্যে জাহান্নামবাসীদের নিয়ে আসো। আদম বলবেন, হে রব, কত জনকে নিয়ে আসবো? আল্লাহ বলবেন, শত করা নিরানব্বই জনকে নিয়ে আসো। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যখন আমাদের একশ জনের মধ্য হতে নিরানব্বই জনকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে তাহলে বাকী থাকবে কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন অন্যান্য উম্মতের সংখ্যার তুলনায় আমার উম্মত হবে এমন অল্প যেমন একটি কালো ষাড়ের গায়ে সাদা পশম থাকে”।[1]
আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يَقُولُ اللَّهُ: يَا آدَمُ، فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالخَيْرُ فِي يَدَيْكَ، قَالَ: يَقُولُ: أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ، قَالَ: وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟ قَالَ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ، فَذَاكَ حِينَ يَشِيبُ الصَّغِيرُ (وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سَكْرَى وَمَا هُمْ بِسَكْرَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ) " فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّنَا ذَلِكَ الرَّجُلُ؟ قَالَ: «أَبْشِرُوا، فَإِنَّ مِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفًا وَمِنْكُمْ رَجُلٌ» ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنِّي لَأَطْمَعُ أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الجَنَّةِ» قَالَ: فَحَمِدْنَا اللَّهَ وَكَبَّرْنَا، ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنِّي لَأَطْمَعُ أَنْ تَكُونُوا شَطْرَ أَهْلِ الجَنَّةِ، إِنَّ مَثَلَكُمْ فِي الأُمَمِ كَمَثَلِ الشَّعَرَةِ البَيْضَاءِ فِي جِلْدِ الثَّوْرِ الأَسْوَدِ، أَوِ الرَّقْمَةِ فِي ذِرَاعِ الحِمَارِ»
“আল্লাহ বলবেন হে আদম! তখন আদম বলবেন, হে প্রভূ আমি উপস্থিত। আপনার হাতেই সৌভাগ্য ও সকল কল্যাণ। আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদের আমার কাছে উপস্থিত করো। আদম বলবেন, কত জন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাজারে নয় শত নিরানব্বই জন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটা হলো সেই সময় যখন ভয়াবহ অবস্থার কারণে বাচ্চারাও বুড়ো হয়ে যাবে। প্রসব কারীনিরা প্রসব করে দিবে। আর তুমি মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্ত অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। সাহাবায়ের কেরামের কাছে বিষয়টা কঠিন মনে হলো। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি সে, যে মুক্তি পাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের চার ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের তিন ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের অর্ধেক হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, অন্যান্য জাতির তুলনায় তোমাদের সংখ্যা হবে এমন যেন একটি কালো ষাড়ের গায়ে কিছু সাদা লোম থাকে। অথবা গাধার পায়ের গোছার সাদা অংশের মতো”।[2]
হাদীস দুটো থেকে শিক্ষা, মাসায়েল ও জ্ঞাতব্য:
এক. দেখা গেল এক হাদীসে শতকরা নিরানব্বই জন জাহান্নামী হবে বলা হয়েছে। আবার অন্য হাদীসটিতে এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে। আসলে কোনটি সঠিক।
এর উত্তর হলো দুটোই সঠিক। যেখানে একশ জনে নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে উম্মতে মুহাম্মাদী উদ্দেশ্য হবে। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পরে যে সকল মানুষ জন্ম গ্রহণ করেছে তাদের একশজনের একজন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আর যেখানে এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে তাদের হাজারে একজন মুক্তি পাবে।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতীদের চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ সর্বশেষে অর্ধেক হবে তার অনুসারীদের মধ্য থেকে যে কথা বলেছেন সেটা হলো তার আশা-আকাংখা। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার এ আশা পূরণ করবেন বলে হাদীসে এসেছে।
তিন. উম্মতে মুহাম্মাদীর ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হলো এ হাদীস দিয়ে। মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তারা জান্নাত বাসীদের মধ্যে সংখ্যায় অনেক বেশি হবে।
চার. যখন জাহান্নামী আর জান্নাতীদের বাছাই করা হবে তখনকার অবস্থার ভয়াবহতার একটি চিত্র এ হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ নিজে এ সম্পর্কে বলেছেন,
﴿وَٱمۡتَٰزُواْ ٱلۡيَوۡمَ أَيُّهَا ٱلۡمُجۡرِمُونَ ٥٩ ۞أَلَمۡ أَعۡهَدۡ إِلَيۡكُمۡ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ أَن لَّا تَعۡبُدُواْ ٱلشَّيۡطَٰنَۖ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٦٠ وَأَنِ ٱعۡبُدُونِيۚ هَٰذَا صِرَٰطٞ مُّسۡتَقِيمٞ ٦١ وَلَقَدۡ أَضَلَّ مِنكُمۡ جِبِلّٗا كَثِيرًاۖ أَفَلَمۡ تَكُونُواْ تَعۡقِلُونَ ٦٢ هَٰذِهِۦ جَهَنَّمُ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٦٣ ٱصۡلَوۡهَا ٱلۡيَوۡمَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡفُرُونَ ٦٤﴾ [يس: ٥٩، ٦٤]
“আর (বলা হবে) হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও। হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ। আর অবশ্যই শয়তান তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করনি? এটি সেই জাহান্নাম, যার সম্পর্কে তোমরা ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছিলে। তোমরা যে কুফুরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫৯-৬৪]
পাঁচ. ভালো কোনো কিছু শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলা ও আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২২।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ هُوَ خَيۡرٗا لَّهُمۖ بَلۡ هُوَ شَرّٞ لَّهُمۡۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِۦ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١٨٠﴾ [ال عمران: ١٨٠]
“আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০]
﴿وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ يَوۡمَ يُحۡمَىٰ عَلَيۡهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوبُهُمۡ وَظُهُورُهُمۡۖ هَٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِأَنفُسِكُمۡ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمۡ تَكۡنِزُونَ ٣٥﴾ [التوبة: ٣٤، ٣٥]
“এবং যারা সোনা ও রূপা (টাকা-পয়সা) পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর”। [সূরা আত তাওবা, আয়াত: ৩৪-৩৫]
আয়াত দুটো থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. কৃপণতা একটি নিন্দনীয় কাজ।
দুই. কৃপণতা কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না।
তিন. ধন-সম্পদ আল্লাহ তা‘আলারই দান।
চার. কৃপণতা করে সঞ্চিত ধন-সম্পদ কেয়ামতে শাস্তির কারণ হবে।
পাঁচ. টাকা পয়সা ধন-সম্পদে গরিবদের যে অধিকার আছে তা যাকাত দানের মাধ্যমে আদায় না করলে কেয়ামতে এগুলো শাস্তির মাধ্যম হবে।
ছয়. এ অপরাধে কি ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ، مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ - يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ - يَقُولُ: أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ " ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ: ﴿وَلَا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ﴾ [ال عمران: ١٨٠] إِلَى آخِرِ الآيَةِ»
“যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দিলেন, কিন্তু সে যাকাত আদায় করলো না তার সম্পদকে বিষধর চুলওয়ালা সাপে পরিণত করা হবে। যার শিংয়ের মত দুটো বিষাক্ত দাঁত থাকবে। কিয়ামতের দিন এ সাপ তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। এ দিয়ে সে তাকে দংশন করতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চয়। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন:
﴿ وَلَا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ هُوَ خَيۡرٗا لَّهُمۖ بَلۡ هُوَ شَرّٞ لَّهُمۡۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِۦ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ ﴾ [ال عمران: ١٨٠]
“আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮][1]
হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ، لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِينُهُ وَظَهْرُهُ، كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيدَتْ لَهُ، فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيلَهُ، إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ»
“যে সকল স্বর্ণ রৌপ্য (টাকা পয়সা) সঞ্চয়কারী সম্পদের হক (যাকাত) আদায় করে নি, সেগুলোকে কিয়ামতের দিন আগুনে দিয়ে পাত বানানো হবে। জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে। অতঃপর তা দিয়ে তার পার্শদেশ, কপাল ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই তা ঠান্ডা হবে আবার গরম করা হবে। সে দিনটির সময়ের পরিমাণ হবে হাজার। এ শাস্তি হবে মানুষের মধ্যে বিচার ফয়সালার পূর্বে। এরপর জান্নাতীরা জান্নাতে যাবে আর জাহান্নামীরা যাবে জাহান্নামে”।[2]
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. দরিদ্র মানুষের অধিকার যাকাত আদায় না করে সম্পদ সঞ্চয় করে রাখা অন্যায়
দুই. সঞ্চয়কৃত সম্পদ দিয়েই সম্পদের মালিককে শাস্তি দেওয়া হবে।
তিন. হিসাব নিকাশ ও জান্নাত জাহান্নামের ফয়সালা হওয়ার পূর্বে এ শাস্তি দেওয়া হবে।
চার. পৃথিবীর সময়ের হিসাবে কিয়ামত দিবসের সময়ের পরিমাণ হবে হাজার বছর।
হাদীসে এসেছে: জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«وَلَا صَاحِبِ كَنْزٍ لَا يَفْعَلُ فِيهِ حَقَّهُ، إِلَّا جَاءَ كَنْزُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، يَتْبَعُهُ فَاتِحًا فَاهُ، فَإِذَا أَتَاهُ فَرَّ مِنْهُ، فَيُنَادِيهِ: خُذْ كَنْزَكَ الَّذِي خَبَأْتَهُ، فَأَنَا عَنْهُ غَنِيٌّ، فَإِذَا رَأَى أَنْ لَا بُدَّ مِنْهُ، سَلَكَ يَدَهُ فِي فِيهِ، فَيَقْضَمُهَا قَضْمَ الْفَحْلِ "
“যে সঞ্চিত সম্পদের মালিক তার পাওনা (যাকাত) আদায় করে নি, কিয়ামতের দিন সেই সম্পদ একটি বিষধর সাপ হয়ে আসবে। সাপটি মুখ হা করে তাকে ধাওয়া করতে থাকবে আর সে পালাতে চেষ্টা করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ডাক দিয়ে বলবেন, তোমার সম্পদ গ্রহণ করো, যা তুমি সঞ্চয় করেছিলে। আমি তোমার সম্পদের মুখাপেক্ষী নই। যখন সে দেখবে যে সাপটি থেকে বাঁচা সম্ভব নয় তখন সে নিজেই তার মুখে হাত ডুকিয়ে দিবে। সাপটি এমনভাবে তার হাত গ্রাস করবে যেমন উট ঘাস মুখে নেয়”।[3]
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৭।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৮।
কিয়ামতের দিন মুসলিমগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য সমবেত হবে। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, মেশকের চেয়ে এর সুঘ্রাণ তীব্র আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত। যে এ থেকে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না।
হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«تَرِدُ عَلَيَّ أُمَّتِي الْحَوْضَ، وَأَنَا أَذُودُ النَّاسَ عَنْهُ، كَمَا يَذُودُ الرَّجُلُ إِبِلَ الرَّجُلِ عَنْ إِبِلِهِ» قَالُوا يَا نَبِيَّ اللهِ أَتَعْرِفُنَا؟ قَالَ: " نَعَمْ لَكُمْ سِيمَا لَيْسَتْ لِأَحَدٍ غَيْرِكُمْ تَرِدُونَ عَلَيَّ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، وَلَيُصَدَّنَّ عَنِّي طَائِفَةٌ مِنْكُمْ فَلَا يَصِلُونَ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ هَؤُلَاءِ مِنْ أَصْحَابِي. فَيُجِيبُنِي مَلَكٌ، فَيَقُولُ: وَهَلْ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ؟ "
“হাউজে কাউসারে আমার উম্মত সমবেত হবে। আমি অনেক মানুষকে এমনভাবে তাড়িয়ে দেব যেমন একজনের উট অন্য জনের উটের পাল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাদের তখন চিনবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা, তোমাদের এমন কিছু আলামত আছে যা অন্যদের নেই। তোমরা আমার কাছে উপস্থিত হবে আর তোমাদের অজুর স্থানগুলো চকমক করতে থাকবে। তোমাদের একটি দলকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে, তারা হাউজের কাছে পৌছতে পারবে না। সে সময় আমি বলব, হে আমার প্রভূ এরা আমার অনুসারী। তখন এক ফিরিশতা উত্তর দিবে, আপনি কি জানেন আপনার পরে তারা কি প্রচলন করেছে?”[1]
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. উম্মতের সকল মানুষ হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য ভীড় করবে।
দুই. অজুর আলামত দেখে মুসলিমদের চেনা যাবে।
তিন. অজুর ফযীলত।
চার. মুসলিমদের একটি অংশকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। কারণ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গত হওয়ার পর ইসলামে নতুন বিষয়ের প্রচলন করেছে বা তাতে লিপ্ত হয়েছে।
পাঁচ. ইসলামে বিদ‘আত প্রচলন ও তার অনুসরণ একটি মহা-পাপ।
হাদীসে এসেছে: আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«ِنِّي عَلَى الحَوْضِ حَتَّى أَنْظُرَ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ مِنْكُمْ، وَسَيُؤْخَذُ نَاسٌ دُونِي، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ مِنِّي وَمِنْ أُمَّتِي، فَيُقَالُ: هَلْ شَعَرْتَ مَا عَمِلُوا بَعْدَكَ، وَاللَّهِ مَا بَرِحُوا يَرْجِعُونَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ »
“আমি হাউজে কাউসারে থাকব আর দেখব তোমাদের কে কে আসছে। কিন্তু কিছু মানুষকে আমার অনুমতি ব্যতীত নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে রব! এরা আমার অনুসারী, আমার উম্মতের অংশ। আমাকে বলা হবে, আপনি কি জানেন, আপনার পরে এরা কি কাজ করেছে? আল্লাহর শপথ! তারা পিছনে ফিরে যাবে”।[2]
হাউজে কাউসারে মুসলিম উম্মাহ কখন সমবেত হবে? এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা পুলসিরাতের পূর্বে হবে। আবার কেউ কেহ বলেছেন এটা হিসাব-কিতাব, মিযান ও পুলসিরাতের পরে হবে।
আমি মনে করি প্রথম মতটি অধিকতর সঠিক। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের সাক্ষাতের ওয়াদা করেছেন হাউজে কাউসারে কাছে। যেমন, হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ ইবন আসেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,
«إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ بَعْدِي أُثْرَةً، فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوْنِي عَلَى الحَوْضِ»
“আমার পরে তোমরা অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে শাসকদের অগ্রাধিকার দেখতে পাবে। তোমরা তখন ধৈর্য ধারণ করবে হাউজে কাউসারে আমার কাছে সাক্ষাত লাভ পর্যন্ত”।[3]
হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ، مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ، وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ المِسْكِ، وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ، مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلاَ يَظْمَأُ أَبَدًا»
“আমার হাউজের প্রশস্ততা হবে এক মাসের সমান দূরত্ব। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুঘ্রান মেশকের চেয়ে উত্তম। আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মতো। যে তা থেকে পান করবে কখনো পিপাসিত হবে না”।[4]
এ হাদীসটি দিয়ে বুঝা যায় কিয়ামত সংঘটনের পর পরই জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারণ হওয়ার আগে হাউজে কাউসারে সমবেত হওয়ার বিষয়টি চলে আসবে।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৯৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪৫।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৯২।
কিয়ামতের পর জান্নাতকে ঈমানদারদের নিকটে নিয়ে আসা হবে। তারা তাতে প্রবেশ করার জন্য অস্থির হয়ে যাবে। অপরদিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিচার, হিসাব নিকাশে দেরী করবেন। তখন মানুষেরা নবী ও রাসূলদের কাছে যাবে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার জন্য। তখন প্রত্যেক নবীই বলবে, আমি আমার জন্য চিন্তিত তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও।
জান্নাত ঈমানদারদের নিকটবর্তী করা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأُزۡلِفَتِ ٱلۡجَنَّةُ لِلۡمُتَّقِينَ غَيۡرَ بَعِيدٍ ٣١﴾ [ق: ٣١]
“আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের অদূরে কাছেই আনা হবে”। [সূরা কাফ, আয়াত: ৩১]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَإِذَا ٱلۡجَنَّةُ أُزۡلِفَتۡ ١٣﴾ [التكوير: ١٣]
“আর যখন জান্নাতকে নিকটকর্তী করা হবে”। [সূরা আত তাকবীর, আয়াত: ১৩]
একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা ও হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يَجْمَعُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى النَّاسَ، فَيَقُومُ الْمُؤْمِنُونَ حَتَّى تُزْلَفَ لَهُمُ الْجَنَّةُ، فَيَأْتُونَ آدَمَ، فَيَقُولُونَ: يَا أَبَانَا، اسْتَفْتِحْ لَنَا الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: وَهَلْ أَخْرَجَكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ إِلَّا خَطِيئَةُ أَبِيكُمْ آدَمَ، لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى ابْنِي إِبْرَاهِيمَ خَلِيلِ اللهِ......»
“আল্লাহ তা‘আলা যখন সকল মানুষকে একত্র করবেন তখন ঈমানদারগণ দাঁড়িয়ে যাবে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য। তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করুন। আদম আলাইহিস সালাম উত্তরে বলবেন, তোমরা কি জান না, তোমাদের পিতা আদমের ভুলের কারণে তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে? আমার আবেদন করার অধিকার নেই। বরং তোমরা ইবারহীম খলীলুল্লাহর কাছে যাও.........”।[1]
হাদীসে এ বিষয়ে বিস্তারিত এভাবে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِلَحْمٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ، وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَشَ مِنْهَا نَهْشَةً، ثُمَّ قَالَ: " أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَهَلْ تَدْرُونَ مِمَّ ذَلِكَ؟ يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ، يُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي وَيَنْفُذُهُمُ البَصَرُ، وَتَدْنُو الشَّمْسُ، فَيَبْلُغُ النَّاسَ مِنَ الغَمِّ وَالكَرْبِ مَا لاَ يُطِيقُونَ وَلاَ يَحْتَمِلُونَ، فَيَقُولُ النَّاسُ: أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ بَلَغَكُمْ، أَلاَ تَنْظُرُونَ مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ؟ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ: عَلَيْكُمْ بِآدَمَ، فَيَأْتُونَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَيَقُولُونَ لَهُ: أَنْتَ أَبُو البَشَرِ، خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ، وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ، وَأَمَرَ المَلاَئِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ آدَمُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ، فَيَأْتُونَ نُوحًا فَيَقُولُونَ: يَا نُوحُ، إِنَّكَ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ، وَقَدْ سَمَّاكَ اللَّهُ عَبْدًا شَكُورًا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي دَعْوَةٌ دَعَوْتُهَا عَلَى قَوْمِي، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُونَ: يَا إِبْرَاهِيمُ أَنْتَ نَبِيُّ اللَّهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَيَقُولُ لَهُمْ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ كُنْتُ كَذَبْتُ ثَلاَثَ كَذِبَاتٍ - فَذَكَرَهُنَّ أَبُو حَيَّانَ فِي الحَدِيثِ - نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُوسَى فَيَأْتُونَ، مُوسَى فَيَقُولُونَ: يَا مُوسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، فَضَّلَكَ اللَّهُ بِرِسَالَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ عَلَى النَّاسِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ قَتَلْتُ نَفْسًا لَمْ أُومَرْ بِقَتْلِهَا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، فَيَأْتُونَ عِيسَى، فَيَقُولُونَ: يَا عِيسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَكَلَّمْتَ النَّاسَ فِي المَهْدِ صَبِيًّا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ عِيسَى: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ قَطُّ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَذْكُرْ ذَنْبًا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ، فَيَأْتُونَ مُحَمَّدًا فَيَقُولُونَ: يَا مُحَمَّدُ أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَخَاتِمُ الأَنْبِيَاءِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَأَنْطَلِقُ فَآتِي تَحْتَ العَرْشِ، فَأَقَعُ سَاجِدًا لِرَبِّي عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيَّ مِنْ مَحَامِدِهِ وَحُسْنِ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئًا، لَمْ يَفْتَحْهُ عَلَى أَحَدٍ قَبْلِي، ثُمَّ يُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ سَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ أَدْخِلْ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ مِنَ البَابِ الأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الأَبْوَابِ، ثُمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ مَا بَيْنَ المِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الجَنَّةِ، كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَحِمْيَرَ - أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى - "
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একদিন বকরীর ডানার মাংস পরিবেশন করা হলো। তিনি এটা পছন্দ করতেন। তিনি এটি দাতের কিনারা দিয়ে চিবাতে লাগলেন। তখন তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এটা কীভাবে হবে? কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্র করবেন একটি প্রান্তরে। তারা সকলকে শুনবে ও দেখবে। সূর্য মানুষের নিকটবর্তী হবে। মানুষেরা এমন দুঃচিন্তা অস্থিরতায় বন্দি হবে, যা তারা সহ্য করতে পারবে না আবার এর থেকে বাঁচতেও পারবে না। তখন মানুষেরা একে অপরকে বলবে, দেখছো আমরা কি দুরবস্থায় পতিত হয়েছি? আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে কে সুপারিশ করবে আমরা কি সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবো না? চলো আমরা আদম আলাইহিস সালামের কাছে যাই। তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে আদম! আপনি মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে আপনার মধ্যে আত্মা ফুকে দিয়েছেন। তিনি আপনাকে সাজদাহ করার জন্য ফিরিশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে শুপরিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি দুরাবস্থায় আছি? আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পতিত হয়েছি? আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। তিনি তো আমাকে সেই গাছের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি তা অমান্য করেছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। নূহের কাছে যাও। তারা নূহ আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে হে নূহ! আপনি পৃথিবীতে প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে কৃতজ্ঞ বান্দা বলে অভিহিত করেছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে দো‘আ করেছিলাম। আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তারা বলবে, আপনি আল্লাহর নবী ও পৃথিবী বাসীর মধ্যে তার খলীল (বন্ধু)। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি কিছু মিথ্যা বলেছিলাম। তাই আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে মূছা আপনি আল্লাহ তা‘আলার রাসূল। আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে ধন্য করেছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি একজন মানুষকে হত্যা করেছিলাম। অথচ আমি এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলাম না। এখন আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি দোলনাতে থাকাকালেই মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনাকে আল্লাহর বাক্য ও তার পক্ষ থেকে রূহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা মারইয়ামের কাছে পাঠানো হয়েছে। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেন নি। আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। তারা আমার কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি আল্লাহ রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? আমি চলে আসবো তখন ‘আরশের নিচে। আর আমার রবের জন্য সাজদাহ করবো। তখন আল্লাহ আমার জন্য তার রহমত উম্মুক্ত করবেন। আমাকের এমন প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনার বাণী অন্তরে গেথে দিবেন যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয় নি। অতঃপর আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি প্রার্থনা করো, তোমার প্রার্থনা কবুল করা হবে। তুমি সুপারিশ করো তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। তখন আমি বলবো, হে রব! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত!! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মতদের জান্নাতে প্রবেশ করাও। তবে তাদেরকে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না। তাদের জান্নাতের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অবশ্য অন্যসব দরজা দিয়েও তারা প্রবেশ করতে পারবে। যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তার শপথ, জান্নাতের গেটের দু পাটের মধ্যে প্রশস্ততা হবে মক্কা ও বসরার মধ্যে দূরত্বের সমান”। [2]
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. হাদীসে দেখা যায় নবীগণ সেদিন প্রত্যেকে নিজেদের অন্যায়গুলোর কথা মনে করবেন। আসলে নবীগণ সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত ছিলেন। তবে তারা যে পাপের কথা বলবেন তা হলো আল্লাহ তা‘আলার প্রতি তাদের বিনয় ও পরিপূর্ণ আত্ন-সমর্পনের প্রকাশ।
দুই. ইবারহীম আলাইহিস সালাম যে মিথ্যা বলেছিলেন এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে, ইবারহীম আলাইহিস সালাম তিনটি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। প্রথমটি হলো, তাকে যখন মূর্তি পুজার উৎসবে যেতে বলা হলো, তখন তিনি বলেছিলেন আমি অসুস্থ। দ্বিতয়টি হলো, যখন তিনি মূর্তিগুলো ভেঙ্গে বড় মূর্তিটি রেখে দিয়েছিলেন আর লোকরা জিজ্ঞস করল এটা কে করেছে? তখন তিনি বলেছিলেন, বড় মূর্তিটি এ কাজ করেছে। তৃতীয়টি হলো, যখন তিনি নিজ স্ত্রী সারাকে নিয়ে সফর করছিলেন তখন এক অত্যাচারী লোকের থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য স্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, এ আমার বোন।
আসলে এগুলো ইবরাহীমের দৃষ্টিভংগিতে মিথ্যা ছিল না। কিন্তু কোনো কোন শ্রোতার কাছে এগুলো মিথ্যার মত মনে হয়েছে। আর এগুলো মিথ্যা হলেও নিন্দনীয় মিথ্যা নয়। এগুলো নন্দিত মিথ্যা। নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কিয়ামতের সময় যে বলবেন আমি মিথ্যা বলেছি সেটা আল্লাহর কাছে চরম বিনয় ও পূর্ণ আত্নসমর্পনের বহি:প্রকাশ হিসাবেই বলবেন। সেদিন ভয়াবহতা এমন হবে যে, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাগনও তাদের অনেক ভালো কাজকে খারাপ বলে ধারনা করতে থাকবে।
তিন. সকল নবী ও রাসূলগণের ওপর আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হলো।
চার. আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ-প্রার্থনার সুন্নত তরিকা হলো, দো‘আর শুরুতে তার গুণগান, প্রশংসা ও হামদ-সানা করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ভয়াবহ সময়েও আল্লাহ তা‘আলার হামদ-প্রশংসার সুন্দর এ আদর্শটি ভুলে যাবেন না।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৪।