বিদআত প্রথমত দু’প্রকার: (১) পার্থিব বিষয়ে বিদআত এবং (২) দীনের ক্ষেত্রে বিদআত। পার্থিব বিষয়ে বিদআতের অপর নাম নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। এ প্রকার বিদআত বৈধ। কেননা দুনিয়াবী সকল বিষয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা বৈধ। তবে শর্ত হলো তাতে শরঈ কোন নিষেধ না থাকা। দীনের ক্ষেত্রে বিদআত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা হারাম। কারণ দীনের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা অহীর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দীনের সমস্ত বিধান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করতে হবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ»

যে দীনের মধ্যে নতুন কিছু তৈরী করবে যা তার অমর্ত্মভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।[1]


তিনি আরও বলেন,

«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»

‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যে বিষয়ে আমার অনুমোদন নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে’’।[2]

দীনের মধ্যে বিদআত দু’প্রকার। (ক) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত এবং (খ) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত।

ক) আকীদার ভিতরে বিদআত, যেমন যাহমীয়া, মু‘তাযিলা, রাফেযী এবং অন্যান্য সকল বাতিল ফির্কার আকীদাসমূহ।

খ) ইবাদতের ক্ষেত্রে বিদআত, যেমন আল্লাহ আদেশ দেননি কিংবা রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেননি, এমন বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা। এটি আবার কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমন

(১) নতুন কোনো ইবাদত আবিষ্কার করা। এমন নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা, ইসলামী শরী‘আতে যার কোনো ভিত্তি নেই। যেমন নতুন কোনো সালাত, সিয়াম এবং ঈদে মীলাদুন্ নবী ও অন্যান্য নামে বিভিন্ন ঈদের প্রচলন করা।

(২) শরী‘আত সম্মত ইবাদতের মধ্যে কম-বেশি করা। শরী‘আত সম্মত ইবাদতের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি করা অথবা হ্রাস করা। যেমন কোনো ব্যক্তি আসর কিংবা যোহরের সালাত  এক রাকাত বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে আদায় করলো।

(৩) শরী‘আত সম্মত ইবাদত বিদআতী নিয়মে পালন করা। শরী‘আত সম্মত ইবাদত বিদআতী নিয়মে পালন করা। যেমন হাদীছে বর্ণিত যিকিরের বাক্যগুলি দলবদ্ধভাবে সংগীতাকারে উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা কিংবা ইবাদত পালনে শরীরকে এমন কষ্ট দেয়া, যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের বিরোধী।

(৪) শরী‘আত সম্মত ইবাদতকে সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করা, যা শরী‘আতে নির্ধারিত নয়। শরী‘আত সম্মত ইবাদতকে এমন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে আদায় করা, যা শরী‘আত নির্ধারণ করেনি। যেমন অর্ধ শাবানের দিনের বেলা রোযা রাখা এবং রাতে নির্দিষ্ট সালাত  আদায় করা। মূলত রোযা ও সালাত শরী‘আত সম্মত ইবাদত। কিন্তু ইহাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাছ করার কোনো দলীল নেই। রোজা নির্দিষ্ট মাস এবং সালাত নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশিস্নষ্ট। প্রতিটি ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। কিন্তু অর্ধ শাবানের দিনের বেলা রোজা রাখা এবং দিবাগত সারা রাত নফল সালাত  আদায় করা নিশ্চিতভাবে বিদআত। কারণ এ সম্পর্কে কোন সহীহ দলীল নেই।


[1]. সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭ ও সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮, সুনানে আবূ দাউদ ৪৬০৬।

[2]. সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।