المبحث الثالث: القيامة الكبرى والقيامة الصغرى - তৃতীয় অনুচ্ছেদ: ছোট ও বড় কিয়ামত

মৃত্যু আখেরাত দিবসের ভূমিকা স্বরূপ। এটি হলো ছোট কিয়ামত। প্রত্যেক মানুষের আয়ু শেষ হয়ে গেলে সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এটি তার জন্য ছোট কিয়ামত। এর মাধ্যমেই বান্দা দুনিয়া থেকে আখিরাতের দিকে পাড়ি জমায়। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে বারবার মাওতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যাতে করে তারা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি স্বরূপ সৎ আমল সম্পাদন করে এবং খারাপ কাজ থেকে তাওবা করে। কেননা মরণ এসে গেলে আমল করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। মৃত্যু এসে গেলে মোটেই অবকাশ দেয়া হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْخَاسِرُونَ وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ (10) وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾

‘‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে। যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্থ। আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তোমরা তা হতে ব্যয় করো তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বেই। অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাওনা কেন? দিলে আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকেও অবকাশ দিবেন না। তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত’’। (সূরা মুনাফিকূন: ৯) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ﴾

 ‘‘প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে’’। (সূরা আনকাবুত: ৫৭) সুতরাং মৃত্যু হলো ছোট কিয়ামত। আর ছোট কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বড় কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা একই সূরাতে ছোট কিয়ামত ও বড় কিয়ামতের আলোচনা করেছেন। যেমন সূরা আল-ওয়াকেয়ার শুরুতে বড় কিয়ামতের কথা আলোচনা করেছেন। এখানে তিনি বলেছেন যে, মানুষ সেদিন তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ (1) لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ (2) خَافِضَةٌ رَافِعَةٌ (3) إِذَا رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا (4) وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا (5) فَكَانَتْ هَبَاءً مُنْبَثًّا (6) وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً﴾

‘‘যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। তখন এর সংঘটন অস্বীকার করার আর কেউ থাকবেনা। ওটা কাউকে করবে নীচ, কাউকে করবে সমুন্নত। যখন প্রবল কম্পনে পৃথিবী প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। তখন ওটা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকনায় পরিণত হবে এবং তোমরা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে’’। (সূরা আল-ওয়াকেয়া: ১-৭)

অতঃপর সূরার শেষাংশে ছোট কিয়ামত তথা মৃত্যু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৃত্যুর পরও লোকেরা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَلَوْلَا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ (83) وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ (84) وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لَا تُبْصِرُونَ (85) فَلَوْلَا إِنْ كُنْتُمْ غَيْرَ مَدِينِينَ (86) تَرْجِعُونَهَا إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (87) فَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ (88) فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّتُ نَعِيمٍ (89) وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ (90) فَسَلَامٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ (91) وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِينَ الضَّالِّينَ (92) فَنُزُلٌ مِنْ حَمِيمٍ (93) وَتَصْلِيَةُ جَحِيمٍ﴾

‘‘তবে কেন নয়; প্রাণ যখন গণ্ঠাগত হয় এবং তখন তোমরা তাকিয়ে দেখো। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা তার নিকটতম। কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। তবে কেন নয়; যদি তোমরা প্রতিদান প্রাপ্ত না হও। তবে তোমরা ওটা ফিরাও না কেন? যদি তোমরা সত্যবাদী হও। যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়। তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম রিযিক ও নিয়ামতময় জান্নাত। আর সে যদি হয় ডান দিকের একজন। তাহলে তাকে সাদর অভিনন্দন জানানো হবে এভাবে যে, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আর সে যদি হয় অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের একজন। তাহলে তার সমাদরের জন্য রয়েছে ফুটন্ত গরম পানি এবং জাহান্নামের দহন’’। (সূরা আল-ওয়াকেয়া: ৮৩-৯৪)

মৃত্যুর সময় মানুষের রূহ তার দেহ থেকে আল্লাহর আদেশে কবয করা হয়। রূহ কবয করার বিষয়টি কখনো আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾

‘‘মৃত্যুর সময় আল্লাহই রূহসমূহ কবয করেন। আর যে এখনো মরেনি নিদ্রাবস্থায় তার রূহ কবয করেন। অতঃপর যার মৃত্যুর ফায়ছালা কার্যকরী হয় তাকে রেখে দেন এবং অন্যদের রূহ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেরত পাঠান। যারা চিন্তা-ভাবনা করে তাদের জন্য এর মধ্যে বড় নিদর্শন রয়েছে’’। (সূরা যুমার: ৪২)

আবার কখনো রূহ কবয করার বিষয়টি ফেরেশতাদের প্রতি সম্বন্ধ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لَا يُفَرِّطُونَ﴾

‘‘তিনি নিজের বান্দাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন এবং তোমাদের উপর রক্ষক নিযুক্ত করে পাঠান। অবশেষে যখন তোমাদের কারোর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয় তখন তার প্রেরিত ফেরেশতারা তার প্রাণ বের করে নেয় এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তারা সামান্যতম শৈথিল্যও প্রদর্শন করে না’’। (সূরা আনআম: ৬১)  আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَوْ تَرَى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ﴾

‘‘আর যদি তুমি দেখতে যখন ফেরেশতারা কাফেরদের জান কবয করার সময় তাদের মুখে এবং তাদের পশ্চাৎদেশে প্রহার করতে করতে বলবেঃ তোমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো’’। (সূরা আনফাল: ৫০) আবার কখনো মালাকুল মাওতের দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ﴾

‘‘এদেরকে বলে দাও, মৃত্যুর যে ফেরেশতাকে তোমাদের উপর নিযুক্ত করা হয়েছে সে তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবযায় নিয়ে নেবে এবং তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে’’। (সূরা সাজদাহ: ১১)

 মূলত আয়াতগুলোর মধ্যে কোনো বৈপরিত্য নেই। এ আয়াতগুলোতে রূহ কবয করাকে প্রত্যেকের প্রতি সম্বন্ধ করা হয়েছে আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোন থেকে। আল্লাহ তা‘আলাই মওতের ফায়ছালা করেছেন এবং সেটা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারণ ও আদেশ অনুযায়ী মৃত্যু হয়। সে হিসাবে মৃত্যুকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। মালাকুল মাওত যেহেতু রূহ কবয করা ও দেহ থেকে সেটাকে বের করার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। অতঃপর মালাকুল মাওতের নিকট থেকে রহমতের ফেরেশতারা অথবা আযাবের ফেরেশতারা নিয়ে নেয়। এরপর তারাই রূহের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। তাই প্রত্যেকের প্রতি রূহ কবয করার সম্বন্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে।