ثانيا: عموم رسالة محمد صلى الله عليه وسلم والرد على من أنكره - দ্বিতীয়ত: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত বিশ্বজনীন এবং তা অস্বীকারকারীদের প্রতিবাদ

ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টান এবং তাদের অন্ধ অনুসারীদের এক দল লোকের কথা হলো, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবদের নিকট প্রেরিত হয়েছেন এবং তিনি ইয়াহূদী- খ্রিষ্টানদের নবী নন। তারা সত্যকে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করার জন্য বলে থাকে, তার দীন সত্য হলে আমাদের দীনও সত্য। আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে পৌঁছার বহু পথ রয়েছে। তারা তাদের দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনকে ইমামদের ফিকহী মাযহাবের সাথে তুলনা করে। ফিকহী মাযহাবের কোনো একটি মাযহাব প্রাধান্যপ্রাপ্ত হওয়ার দ্বারা অন্যান্য মাযহাবের অনুসারীরা কাফের সাব্যস্ত হয় না।

এটি একটি বাতিল কথা। তারা যেহেতু তার রিসালাতকে সত্যায়ন করেছে, তাই তার সমস্ত সংবাদকে সত্যায়ন করা আবশ্যক। তিনি বলেছেন যে, তাকে সমস্ত মানুষের নিকট রসূল হিসাবে পাঠানো হয়েছে। রসূলগণ কখনো মিথ্যা বলেন না। সুতরাং তার সমস্ত সংবাদকেই সত্য হিসাবে বিশ্বাস করা আবশ্যক।

তিনি ইসলামের দাওয়াতপত্র সহ বিভিন্ন অঞ্চলের রাজা-বাদশাহদের নিকট দূতগণকে পাঠিয়েছেন। তিনি পারস্যের বাদশাহ কেসরা ও রোমের সম্রাট কায়সার, আবিসিনিয়ার রাজা নাজ্জাশী, মুকাওকিস এবং তৎকালীন সমস্ত রাজা-বাদশাহর নিকটেই দূত পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন।

অতঃপর আহলে কিতাবদের সাথে যুদ্ধ করা, তাদের নারী-শিশুদেরকে বন্দী করা, তাদের রক্ত হালাল করা এবং তাদের উপর জিযিয়া নির্ধারণ করা মুতওয়াতির সূত্রে বর্ণিত একটি জ্ঞাত বিষয়। তিনি মুশরেকদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করেছেন এবং ইয়াহূদী- খ্রিষ্টানদেরকেও ইসলামের দিকে আহবান করেছেন। মুশরেকদের বিরুদ্ধে তিনি যেভাবে যুদ্ধ করেছেন, আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে সেভাবেই যুদ্ধ করেছেন। তিনি বানী কায়নুকা, বানী নাযীর, বানী কুরায়যা এবং খায়বারবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এরা সবাই ছিল ইয়াহূদী। তিনি ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করেছেন এবং ধন-সম্পদকে গণীমত হিসাবে দখল করেছেন। তাবুক যুদ্ধের বছর তিনি তার সেনাবাহিনী নিয়ে খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে তার আযাদ করা গোলাম যায়েদ ইবনে হারেসা, জা’ফর ইবনে আবু তালেব এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। তিনি নাজরানের খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে জিযিয়া কর ধার্য করেছেন।

তার মৃত্যুর পর খোলাফায়ে রাশেদাগণ আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করেছেন। যারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করেছেন এবং যারা স্বেচ্ছায় নত হয়ে জিযিয়া কর দিতে রাযী হয়েছে তাদের উপর তারা জিযিয়া কর নির্ধারণ করেছেন।

কুরআনের জ্ঞানসম্পন্ন প্রত্যেকেই অবগত রয়েছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কিতাব নিয়ে এসেছেন, তাতে আহলে কিতাবদেরকে তার আনুগত্য করার দাওয়াত দেয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্য থেকে যারা তার আনুগত্য করতে অস্বীকার করেছে, তাদেরকে কাফের বলা হয়েছে এবং তাদের প্রতি অভিশাপ করা হয়েছে। তেমনি যেসব মুশরেক এবং যিম্মী তার আনুগত্য করে নেই, তাদেরকেও কাফের বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ آمِنُوا بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَىٰ أَدْبَارِهَا أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّا أَصْحَابَ السَّبْتِ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا﴾

‘‘হে কিতাবধারীগণ! সেই কিতাবটি মেনে নাও যেটি আমি এখন নাযিল করেছি এবং যেটি তোমাদের কাছে আগে থেকে মওজুদ কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করে ও তার প্রতি সমর্থন জানায়। আর আমি চেহারা বিকৃত করে পেছন দিকে ফিরিয়ে দেবার অথবা শনিবার-ওয়ালাদের মতো তাদেরকে অভিশপ্ত করার আগে এর প্রতি ঈমান আনো। আর মনে রেখো, আল্লাহর নির্দেশ প্রতিপালিত হয়েই থাকে’’।

আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে يأهل الكتاب ‘‘হে আহলে কিতাবগণ’’ এবং يا بني إسرائيل ‘‘হে বাণী ইসরাঈল সম্প্রদায়’’ বলে এত বেশি সম্বোধন করেছেন যে, বিনা কষ্টে তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ مُنفَكِّينَ حَتَّىٰ تَأْتِيَهُمُ الْبَيِّنَة رَسُولٌ مِّنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفًا مُّطَهَّرَةً فِيهَا كُتُبٌ قَيِّمَةٌ وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ أُولَٰئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَٰئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ﴾

‘‘আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফুরী করেছে তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ না আসা পর্যন্ত তারা আপন মতে অবিচল ছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রসূল যিনি পবিত্র সহীফা পড়ে শুনাতেন। যাতে রয়েছে সঠিক-সহজ বিধান। যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে তো বিভেদ সৃষ্টি হলো তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর। তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোনো আদেশ দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তার এবাদাত করবে, সালাত  কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য-সঠিক দীন। আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফুরী করেছে তারা নিশ্চিতভাবে জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। তারাই সৃষ্টির অধম। যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সেরা’’। (সূরা বাইয়্যিনাহ: ১-৭)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا﴾ ‘‘বলো, হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল হিসাবে এসেছি’’। (সূরা আরাফ: ১৫৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا﴾  ‘‘আর আমি তো তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি’’। (সূরা সাবা: ২৮)

প্রসিদ্ধ হাদীছে এসেছে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমাকে পাঁচটি জিনিস দ্বারা অন্যান্য নবীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ হাদীছে আরো এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«كَانَ النَّبِىُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً»

 ‘‘আমার পূর্বেকার নবীগণ প্রেরিত হতেন খাস করে তাদের গোত্রের লোকদের নিকট। আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানব জাতির জন্য’’।[1] বরং মুতাওয়াতির সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সমস্ত জিন-ইনসানের প্রতি রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন।

সুতরাং সন্দেহাতীতভাবে এবং মুতাওয়াতির বর্ণনার মাধ্যমে যেভাবে পৃথিবীর বুকে তার দাওয়াত প্রকাশিত হওয়ার কথাটি জানা যাচ্ছে, ঠিক সেভাবেই জানা যাচ্ছে যে, তিনি আহলে কিতাবদেরকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের দাওয়াত দিয়েছেন এবং যারা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেনি, তাদেরকে কাফের সাব্যস্ত করেছেন। সেই সঙ্গে ইসলাম কবুল অথবা নতি স্বীকার করে জিযিয়ার কর না দেয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার আদেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। তিনি তাদের উপর জিযিয়া নির্ধারণ করেছেন, তাদের যুবকদেরকে হত্যা করেছেন, শিশুদেরকে বন্দী করেছেন এবং তাদের ধন-সম্পদগুলো গণীমত হিসাবে আয়ত্ত করেছেন। তিনি বনী কায়নুকাকে কেল্লার মধ্যে ঘেরাও করেছেন। অতঃপর তাদেরকে আযরেআত নামক স্থানে নির্বাসন করেছেন। বনী নাযীরদেরকে তিনি ঘেরাও করেছেন। অতঃপর তাদেরকে খায়বারে নির্বাসন করেছেন। তাদের ব্যাপারেই সূরা হাশর নাযিল হয়েছে। ঐদিকে বনী কুরায়যার লোকেরা যখন অঙ্গিকার ভঙ্গ করলো, তখন তাদেরকেও অবরোধ করেছেন। অতঃপর তাদের মধ্যকার যুবকদেরকে হত্যা করেছেন এবং নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করেছেন। তাদের ধন-সম্পদগুলো গণীমত হিসাবে বাজেয়াপ্ত করেছেন। তাদের এ ঘটনা কুরআনের সূরা আহযাবে আলোচিত হয়েছে। তিনি খায়বারের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সেটা জয় করেছেন এবং তাদের পুরুষদের থেকে কাউকে হত্যা করেছেন, কাউকে বন্দী করেছেন এবং সেখানকার জমাজমি মুমিনদের মাঝে ভাগ-বণ্টন করে দিয়েছেন। কুরআন মাজীদের সূরা ফাতাহ এ আল্লাহ তা‘আলা তাদের ঘটনা আলোচনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম খ্রিষ্টানদের উপর জিযিয়া কর নির্ধারণ করেছেন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সূরা আলে-ইমরান নাযিল করেছেন। তাবুক যুদ্ধের বছর তিনি খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাদেরকে কেন্দ্র করে সূরা তাওবা নাযিল হয়েছে। অধিকাংশ মাদানী সূরা যেমন আল বাকারা, আলে-ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়িদা এবং অন্যান্য মাদানী সূরাগুলোতে আহলে কিতাবদেরকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান আনয়নের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে এবং তাদেরকে এতবার সম্বোধন করা হয়েছে যে, এ সংক্ষিপ্ত কিতাবে তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে তার খলীফাগণ যেমন আবু বকর ও উমার তার আদেশ-নিষেধের সর্বাধিক আনুগত্যকারী ও তার সাথে কৃত ওয়াদা-অঙ্গিকারের সর্বাধিক সংরক্ষণকারী মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের সাথে নিয়ে রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তারা অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতই খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। খ্রিষ্টানদের মধ্য থেকে যারা নতি স্বীকার করে জিযিয়া কর দিতে সম্মত হয়েছে, তাদের উপর তারা সেটা ধার্য করেছেন।

উপরোক্ত বিষয়ে তার থেকে অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

«والذي نفسي بيده لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ لا يُؤْمِنُ بِي إِلاَّ دخل النَّارِ»

‘‘এ উম্মতের যে কেউ আমার ব্যাপারে শুনবে, চাই সে ইয়াহূদী হোক বা খ্রিষ্টান হোক, অতঃপর সে যদি আমার প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’।[2]

সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর কিতাবে এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الْأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ﴾  ‘‘আর মানব গোষ্ঠীর মধ্য থেকে যে-ই তার প্রতি কুফুরী করবে জাহান্নাম হবে তার জন্য প্রতিশ্রুত স্থান’’। (সূরা হুদ: ১৭) হাদীছের অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। সর্বসাধারণের নিকট ইহা খুবই সুস্পষ্ট।

সুতরাং ব্যাপারটি যেহেতু এরকমই, তাই প্রমাণিত হলো যে, তিনি সমগ্র মানব জাতির জন্যই রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। উপরোক্ত আলোচনা থেকে সাব্যস্ত হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে সমগ্র মানবের জন্য তিনি রসূল হিসাবে এসেছেন। আল্লাহর রসূল কখনো মিথ্যা বলেন না এবং তার আনুগত্য করার জন্য আল্লাহর আদেশ ব্যতীত মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেন না। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মানুষের জান-মাল ও বসতবাড়ির উপর আক্রমণও চালাতে পারেন না।

সুতরাং যে মনে করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরবের কাফের-মুশরেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ করেছেন কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা করার আদেশ করেন নি, সে মিথ্যুক ও যালেম বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ﴾

‘‘আর সে ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম আর কে হবে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ রটায় অথবা বলে আমার কাছে অহী এসেছে অথচ তার উপর কোনো অহী নাযিল করা হয়নি’’। (সূরা আনআম: ৯৩)

যে ব্যক্তি এমন কিছু দাবি করবে, সে যালেম মিথ্যুক হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীতে সর্বাধিক ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও অহংকারী হিসাবে গণ্য হবে। সেই সঙ্গে সে ভয়ানক যালেম বাদশাহদের চেয়েও ক্ষতিকর হবে। কেননা অহংকারী যালেম রাজা-বাদশাহরা তাদের আনুগত্যের উপর বাধ্য করার জন্য মানুষের সাথে যুদ্ধ করে। কিন্তু তারা এটি বলে না যে, আমরা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য রসূল স্বরূপ প্রেরিত হয়েছি। তাই যারা আমাদের আনুগত্য করবে, তারা জান্নাত পাবে এবং যারা আমাদের অবাধ্য হবে, তারা জাহান্নামে যাবে। ফেরাউন এবং তার অনুরূপ যালেমরাও এমন কথা বলেনি। সত্য নবী কিংবা মিথ্যুক নবীরাই এমন কথা বলে থাকে। যেমন মুসাইলামা কায্যাব, আসওয়াদ আনাসী এবং তাদের অনুরূপ অন্যান্য মিথ্যুকরা বলেছিল।

সুতরাং যখন জানা গেলো যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার নবী, তখন তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব সংবাদ দিয়েছেন, তাও সত্য হওয়া আবশ্যক। তিনি যেহেতু আল্লাহর রসূল, তাই তার প্রত্যেকটি কথার আনুগত্য করা জরুরী।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ﴾ ‘‘আমি একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই রসূল পাঠিয়েছি, যাতে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তার আনুগত্য করা হয়’’। (সূরা আন-নিসা: ৬৪)

আর তিনি যখন সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আহলে কিতাবদের জন্যও আল্লাহর রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন এবং তাদের উপর তার আনুগত্য করা ওয়াজিব তখন তার সংবাদ সত্য হিসাবে কবুল করে নেয়া জরুরী।

যে লোক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর রসূল বলে স্বীকার করার সাথে সাথে ইয়াহূদী- খ্রিষ্টানদের প্রতি তার প্রেরিত হওয়ার কথা অস্বীকার করবে সে ঐ ব্যক্তির মতোই, যে বলল মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর রসূল ছিলেন ঠিকই; কিন্তু সিরিয়ার পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করা তার উপর আবশ্যক ছিল না, মিশর থেকে বনী ইসরাঈলকে বের করাও তার জন্য আবশ্যক ছিল না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সে বিষয়ে আদেশও করেনি, শনিবারের পবিত্রতা রক্ষা করার আদেশও তাকে করা হয়নি, তার উপর তাওরাত কিতাবও নাযিল করা হয়নি এবং তুর পাহাড়ে তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথাও বলেন নি। সে ঐ ব্যক্তির মতোই যে বললো, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর রসূল ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি বনী ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত হননি, তার আনুগত্য করা বনী ইসরাঈলের প্রতি আবশ্যকও ছিলনা এবং তিনি ইয়াহূদীদের উপর যুলুম করেছেন। উপরোক্ত কথার অনুরূপ আরো যেসব কথা রয়েছে, তা সবই কুফুরী কথা। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا أُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا﴾

‘‘যারা আল্লাহ ও তার রসূলদের সাথে কুফুরী করে, আল্লাহ ও তার রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে আমরা কারো প্রতি ঈমান আনয়ন করবো ও কারো প্রতি ঈমান আনয়ন করবোনা। আর তারা কুফর ও ঈমানের মাঝখানে একটি পথ বের করতে চায়, তারা সবাই আসলে কট্টর কাফের। আর কাফেরদের জন্য আমি লাঞ্ছনাকর শাস্তি তৈরী করে রেখেছি’’। (সূরা নিসা: ১৫০-১৫১)


[1]. তিরমিযী, হাদীছ নং- ১৪৪০।

[2]. মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।