কুরআনুল কারীম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে বড় মুজিযা। প্রত্যেক নবীর গোত্রের অবস্থা অনুপাতেই তার মুজিযা হয়ে থাকে। এ জন্যই ফেরআউন সম্প্রদায়ের মধ্যে যখন যাদু বিদ্যা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করলো, তখন মূসা আলাইহিস সালাম এমন একটি লাঠি নিয়ে আসলেন, যা যাদুকরেরা ব্যবহার করতো। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালামের যাদুকরদের সাপ সদৃশ সব লাঠি গিলে ফেললো। এতে যাদুকররা হয়রান হয়ে গেলো এবং বিস্মিত হলো। তারা বিশ্বাস করে নিলো যে, মূসা আ. যা নিয়ে এসেছেন, তা সত্য-সঠিক; যাদু নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَلْقَىٰ مُوسَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ﴾
‘‘তারপর মূসা নিজের লাঠিটি নিক্ষেপ করলেন। সে তাদের বানোয়াট কীর্তিগুলো গ্রাস করতে থাকলো। তখন সকল যাদুকর সিজদাবনত হয়ে পড়লো এবং বলে উঠলো, আমরা রাববুল আলামীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। মূসা ও হারুনের রবের প্রতি’’। (সূরা শুআরা: ৪৬-৪৮)।
ঈসা আলাইহিস সালামের যুগে যখন ডাক্তারী বিদ্যা ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছিল, তখন তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন মুজিযা নিয়ে আসলেন, যা দেখে সে যুগের ডাক্তারগণ দিশেহারা হয়ে গেলেন। তিনি মৃতদেরকে জীবিত এবং জটিল ও কঠিন রোগ ভালো করতেন। যেমন জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করতেন এবং মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে তাতে ফুঁ দিলেই তা আল্লাহর অনুমতিতে পাখি হয়ে যেতো। এতে ডাক্তারদের বিবেক-বুদ্ধি হয়রান হয়ে গেলো এবং তারা স্বীকার করে নিলো যে, এগুলো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতেই।
ঐদিকে আরবরা যখন ফাসাহাত ও বালাগাত তথা বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় বাগপটুতা ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্যিক মান দিয়ে ভাষণ-বক্তৃতা দেয়ায় পারদর্শিতা অর্জন করেছিল, তখন আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য এমন সাহিত্যিক মান সম্পন্ন কুরআনুল কারীম দান করলেন, যার ভাষাগত মান তাদের কথা-বার্তা ও ভাষণ-বক্তৃতায় ব্যবহৃত বাক্যসমূহের বহু উর্ধ্বে এবং যার সম্মুখ অথবা পশ্চাৎ হতে বাতিল প্রবেশ করতে পারে না। আর এ কুরআন হলো সর্বযুগের চিরন্তন মুজিযা।
আল্লাহ তা‘আলা সর্বযুগের সমস্ত মানুষের জন্য সর্বশেষ আসমানী রিসালাত হিসাবে কুরআনুল কারীমকে একটি উজ্জ্বল মুজিযা বানিয়েছেন। প্রত্যেক যামানার লোকেরা কুরআনের মুজিযা প্রত্যক্ষ করছে এবং সেটা তেলাওয়াত করছে। তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছে যে, কুরআন প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর কালাম। এটি কোনো মানুষের কালাম নয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষ ও জিনকে কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব অথবা কুরআনের সূরার অনুরূপ দশটি সূরা কিংবা সেটার সূরার অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করেছেন।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে প্রেরণ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত কুরআনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ভবিষ্যতেও ইসলামের শত্রুরা কখনো কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব কিংবা কুরআনের সূরার ন্যায় একটি সূরা রচনা করে আনতে পারবেনা। যদিও ইতিহাসের প্রত্যেক যুগেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও দীন ইসলামের শত্রুর সংখ্যা প্রচুর।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ﴾
‘‘আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার উপর নাযিল করেছি তাতে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করো তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্টীকে ডেকে আনো আল্লাহকে ছাড়া। তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো। কিন্তু তোমরা যদি এমনটি না করো আর নিঃসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবেনা, তাহলে ভয় করো সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর যা তৈরি রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য’’। (সূরা আল বাকারা: ২৩-২৪)
সুতরাং কুরআনের চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান রয়েছে। ইহা কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা যদি এখন এমনটি করতে না পারো, নিঃসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿أَمْ يَقُولُونَ تَقَوَّلَهُ بَل لَّا يُؤْمِنُونَ فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِّثْلِهِ إِن كَانُوا صَادِقِينَ﴾
‘‘তারা কি বলে যে, এ ব্যক্তি নিজেই কুরআন রচনা করে নিয়েছে? প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে তারা ঈমান গ্রহণ করতে চায় না। তাদের এ কথার ব্যাপারে তারা যদি সত্যবাদী হয় তাহলে এ বাণীর মত একটি বাণী তৈরি করে আনুক’’। (সূরা তুর: ৩৩-৩৪)
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ চ্যালেঞ্জটি ছিল মক্কায়। কেননা সূরা হুদ, সূরা ইউনুস এবং সূরা তুর মক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। মদীনায় হিজরত করার পর এ চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। মাদানী সূরা বাকারায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ﴾
‘‘আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার উপর নাযিল করেছি তাতে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করো তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্টীকে ডেকে আনো আল্লাহকে ছাড়া। তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো। কিন্তু তোমরা যদি এমনটি না করো আর নিসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবেনা, তাহলে ভয় করো সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর যা তৈরি রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য’’। (সূরা আল বাকারা: ২৩-২৪) এখানে দু’টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ﴾
‘‘কিন্তু তোমরা যদি এমনটি না করো আর নিঃসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবে না, তাহলে ভয় করো সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর’’। তোমরা যখন এমনটি করতে পারবেনা, তখন জেনে নিবে যে, এটি সত্য। সুতরাং তোমরা তাকে মিথ্যায়ন করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। আর তা না করলে, তোমাদেরকে পরিবেষ্টন করবে সেই আযাব, যার ওয়াদা করা হয়েছে সত্য অস্বীকার কারীদের জন্য।
(২) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَن تَفْعَلُوا ‘‘আর নিঃসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবেনা’’। এখানে لن অব্যয় দ্বারা ভবিষ্যতে তাদের ক্ষমতা অর্জিত হওয়াকে নাকোচ করা হয়েছে। এতে সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, ভবিষ্যতেও তারা কুরআনের অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে আনয়ন করতে পারবেনা। কুরআন এভাবেই সংবাদ প্রদান করেছে।
কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং মুতাওয়াতির হাদীছের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে যে, সূরা বানী ইসরাঈল মাক্কী সূরা। ইসরা বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈশ ভ্রমণের মাধ্যমে এ সূরার সূচনা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا﴾
‘‘হে নবী তুমি বলো, সমস্ত মানব ও জিন যদি এ কুরআনের অনুরূপ রচনা করার জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনো এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না’’। (সূরা বনী ইসরাঈল: ৮৮)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেছেন, তিনি যেন সমস্ত সৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ করে অকাট্যভাবে এ সংবাদ দিয়ে দেন যে, তারা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করলেও কুরআনের অনুরূপ কিতাব রচনা করতে পারবে না। যদিও তারা এ ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে। সমগ্র সৃষ্টির জন্যই কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ। যারা কুরআন শুনেছে, তাদের প্রত্যেকেই এ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অবগত আছে। কাছের কিংবা দূরের সকলেই এটি শুনেছে। সেই সঙ্গে এটি অবগত হওয়া গেছে যে, কাফেরদের কেউই কুরআনের মোকাবেলা করার সাহস পায়নি এবং কুরআনের অনুরূপ একটি সূরাও আনয়ন করতে পারেনি।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করার সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে আরবের সকলেই ছিল কাফের। তিনি যখন নবী হিসাবে প্রেরিত হলেন তখন অল্প সংখ্যক লোকই কেবল তার অনুসরণ করলো। কাফেররা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথাকে বাতিল প্রমাণ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এবং সম্ভাব্য সকল পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। তারা কখনো কখনো আহলে কিতাবদের কাছে গিয়ে গায়েবী বিষয়ে প্রশ্ন শিখে নিতো। যাতে পরবর্তীতে তারা এ বিষয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করতে পারে। যেমন তারা প্রশ্ন করেছিল ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা সম্পর্কে, আসহাফে কাহাফ সম্পর্কে এবং যুলকারনাইনের ঘটনা সম্পর্কে। সেই সঙ্গে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে সম্মিলিতভাবে একটি মিথ্যা কথা বলার জন্য একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। তারা তার জন্য একাধিক উদাহরণ পেশ করতে লাগলো। অতঃপর তারা তাকে এমন ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্য দিল, যার সাথে তার পার্থক্য সুস্পষ্ট। কখনো তারা তাকে পাগল বলেছে, কখনো যাদুকর বলেছে, কখনো গণক বলেছে এবং কখনো কবি বলেছে। তারা তার সম্পর্কে এমনসব কথা বলেছে, যা তারা নিজেরা এবং প্রত্যেক বিবেকবান লোক শুনে বুঝতে সক্ষম হতো যে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
কুরআন যেহেতু তাদের দাবিকে বাতিল করে সেটার মোকাবেলা করার জন্য চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ করেছে, তাই জানা গেলো যে, তারা যদি মোকাবেলা করতে পারতো, তাহলে অবশ্যই তারা তা করতো। সুতরাং চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করার যথেষ্ট প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও যদি তাদের মোকাবেলা করার ক্ষমতা থাকতো, তাহলে অবশ্যই তারা কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব কিংবা সেটার অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আসতো। সমগ্র যমীনবাসীর জন্যই কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সুতরাং প্রত্যেকের কাছেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত যমীনবাসী কৌশল কিংবা বিনা কৌশলে এই কুরআনের অনুরূপ একটি কুরআন আনয়ন করতে অক্ষম। কুরআনের মুজিযা ঐসব নিদর্শনের চেয়েও অধিক সু্স্পষ্ট ও পরিপূর্ণ যা কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন মৃতদেরকে জীবিত করার বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। কুরআনের অনুরূপ মুজিযা আর কোনো নবী আনয়ন করতে পারেনি।
ইসলামের প্রথম যুগে মক্কাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীর সংখ্যা যখন একদম কমছিল তখন তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে একটি অকাট্য খবর দিয়েছেন যে, সমস্ত জিন এবং ইনসান যদি ঐক্যবদ্ধ হতো তবুও সে যুগে কুরআনের ন্যায় একটি কিতাব রচনা করে আনতে পারতো না। পরবর্তী যুগসমূহেও একই কথা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ও সুদৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এ কথা বলেছেন। কিন্তু মনের মধ্যে সন্দেহ নিয়ে এ ধরণের কথা কেবল ঐ ব্যক্তিই বলতে পারে, যে নিজের মিথ্যাবাদিতা প্রকাশিত হওয়ার ভয় করে এবং অপদস্থ হওয়া ও মানুষ তার কথা সত্যায়ন না করার আশঙ্কা করে। আর যখন দৃঢ়চিত্তে ও পর্বত সদৃশ ঈমান নিয়ে বলবে, তখন আল্লাহর পক্ষ হতে নিশ্চিত সংবাদ নিয়েই বলবে। মানুষের পরিচিত ও স্বভাবগত যেসব ইলম রয়েছে, তার মধ্যে এমন কিছু আছে বলে মানুষ জানেনা, যা সমগ্র সৃষ্টি মিলে আনয়ন করতে অক্ষম। আলেমগণ কেবল ঐসব কালাম রচনা করতে অক্ষম, যা তাদের ক্ষমতার বাইরে। সুতরাং মানুষ যেহেতু কুরআনের অনুরূপ কালাম রচনা করে আনয়ন করতে পারে না, তখন এটি বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, কুরআন একটি চিরন্তন মুজিযা। বিভিন্ন পদ্ধতিতেই কুরআনুল কারীমের মুজিযা প্রমাণ করা যায়। কুরআনের শব্দমালা, গ্রন্থনা, অলঙ্কারপূর্ণ শব্দের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর প্রতি নির্দেশনা প্রদান, তার আদেশ-নিষেধ, আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর সংবাদ প্রদান, তার ফেরেশতাদের খবরাদি, ভবিষ্যৎ ও অতীতের গায়েবী বিষয় সম্পর্কিত খবর, পুনরুত্থান দিবস সংক্রান্ত খবর, ঈমান ও ইয়াকীনের দলীল-প্রমাণাদি এবং অন্যান্য বিষয়েও কুরআন একটি চিরন্তন মুজিযা।