خطر الشرك ووجوب الحذر منه بتجنب أسبابه - শিরকের ভয়াবহতা এবং যেসব বিষয় মানুষকে শিরকের দিকে নিয়ে যায়, তা বর্জন করার মাধ্যমে শিরক থেকে আত্মরক্ষা করা আবশ্যক

শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা শিরক থেকে তাওবা করবে না, তিনি তাদের জন্য ক্ষমার কোনো ব্যবস্থা রাখেননি। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নিজের উপর রহমত করাকে আবশ্যক করেছেন। শিরকের অবস্থা যেহেতু এরকমই এবং তা যেহেতু সর্বাধিক বড় গুনাহ, তাই বান্দার উপর আবশ্যক হলো শিরক থেকে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা এবং সেটাকে খুব ভয় করবে। শিরক থেকে বাঁচার জন্য সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে। কেননা সর্বাধিক নিকৃষ্ট গুনাহ এবং সবচেয়ে বড় যুলুম। লুকমান আলাইহিস সালাম স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে যা বলেছিলেন, তা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَا بُنَيَّ لا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ﴾

‘‘হে প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা যুলুম’’। (সূরা লুকমান: ১৩)

শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ হওয়ার কারণ হলো এতে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মর্যাদা কমানো হয় এবং অন্যকে আল্লাহ তা‘আলার সমান করে দেয়া হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ﴾

অতঃপর কাফেররা অন্যদেরকে তাদের রবের সমকক্ষ দাঁড় করাচ্ছে। (সূরা আল আনআম: ১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,  

﴿فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ﴾

অতএব জেনে-বুঝে তোমরা আল্লাহর সাথে সমকক্ষ নির্ধারণ করো না। (সূরা আল বাকারা: ২২)

আল্লাহ তা‘আলা যে উদ্দেশ্যে মাখলুক সৃষ্টি করেছেন, শিরক সে উদ্দেশ্যের পরিপন্থী এবং আল্লাহ তা‘আলাই যে হুকুম করার একমাত্র মালিক, শিরক তারও পরিপন্থী। শিরক করার মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সাদৃশ্য করা হয়। অভাবী অক্ষম সৃষ্টিকে ক্ষমতাবান এবং সৃষ্টি থেকে অভাবমূক্ত অমুখাপেক্ষী সত্তার সাথে তুলনা করা সর্বনিকৃষ্ট সাদৃশ্য স্থাপন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে শিরক থেকে সাবধান করেছেন এবং শিরকের দিকে নিয়ে যায় এমন সমস্ত পথ বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন, তখন আরবের অবস্থা এমনকি অল্প সংখ্যক আহলে কিতাব ব্যতীত সমগ্র পৃথিবীর অধিবাসীর অবস্থা ছিল খুব নিকৃষ্ট।


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

   ﴿لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾

‘‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি তাদের মধ্য থেকে একজন রসূল পাঠিয়ে বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তার আয়াতসমূহ তাদেরকে পাঠ করে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪)

এ সময় মানুষ সঠিক পথের দিশা হারিয়ে মূর্তিপূজার মধ্যে ডুবে ছিল। তারা পাথর খোদাই করে নির্মিত মূর্তিকে এবং মাঠে-ময়দানে স্থাপিত ভাস্কর্যকে তাদের মাবুদ হিসাবে গ্রহণ করতো। ইবাদতের নিয়তে তারা এগুলোর উপর অবস্থান করতো, এগুলোর চারপাশে তাওয়াফ করতো, এগুলোর জন্য তাদের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ থেকে কোরবানী করতো। এমনকি তারা তাদের সন্তা-সন্ততিও উৎসর্গ করতো।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿وَكَذَٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ قَتْلَ أَوْلَادِهِمْ شُرَكَاؤُهُمْ لِيُرْدُوهُمْ وَلِيَلْبِسُوا عَلَيْهِمْ دِينَهُمْ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ﴾

‘‘আর এভাবেই বহু মুশরিকের জন্য তাদের শরীকরা নিজেদের সন্তান হত্যা করাকে সুশোভিত করে দিয়েছে, যাতে তাদেরকে ধ্বংসের আবর্তে নিক্ষেপ করতে এবং তাদের দীনকে তাদের কাছে সংশয়িত করে তুলতে পারে। আল্লাহ চাইলে তারা এমনটি করতে পারতো না। কাজেই তাদেরকে ছেড়ে দাও। তারা নিজেদের মিথ্যা রচনায় ডুবে থাকে’’। (সূরা আল ‘আনআম: ১৩৭)

ঐ সময় আরেকদল ছিল আহলে কিতাব। আহলে কিতাবদের একদল ছিল খৃষ্টান। তারাও দিশেহারা হয়ে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছিল। তারা তিন মাবুদের ইবাদত করতো। তারা তাদের পাদ্রীদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করেছিল। আর ধ্বংসকারী ইয়াহূদীরা তো পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেই যাচ্ছিল, ফিতনার আগুন জ্বালিয়ে রেখেছিল, আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেই যাচ্ছিল এবং তারা তাদের কিতাবের মূলবক্তব্য নিয়ে খেল-তামাশা করে সেটাকে স্বীয় স্থান হতে পরিবর্তন করেই যাচ্ছিল।

তৃতীয় আরেকদল লোক ছিল অগ্নিপূজক। তারা আগুন পূজা করতো। তারা দুই মাবুদের ইবাদত করতো। তাদের মতে এক মাবুদ কল্যাণের স্রষ্টা আরেক মাবুদ অকল্যাণের স্রষ্টা।

চতুর্থ আরেকদল ছিল, বেদীন। তারা গ্রহ-নক্ষত্রের ইবাদত করতো। তারা মনে করতো, পৃথিবীর উপর এগুলোর প্রভাব রয়েছে। পঞ্চম আরেক দল ছিল দাহরিয়া সম্প্রদায়। এরা কোনো দীন মানতো না। এমনকি পুনরুত্থান কিংবা আখিরাতে হিসাব-নিকাশে বিশ্বাস করতোনা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেরণের সময় পৃথিবীর অধিবাসীদের অবস্থা এরকমই ছিল। মূর্খতায় পৃথিবী ছেয়ে গিয়েছিল এবং গোমরাহীর অন্ধকারে পৃথিবী ভরে গিয়েছিল। অতঃপর যে তার দাওয়াত কবুল করলো এবং তার আহবানে সাড়া দিল, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসলেন। তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মহাপবিত্র দীনে হানীফ ফিরিয়ে আনেন এবং শিরক থেকে নিষেধ করেন ও শিরকের দিকে নিয়ে যায় এমন সকল পথই বন্ধ করার চেষ্টা করলেন।