ইবাদতের প্রকারসমূহ থেকে কোনো কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য সম্পাদন করাকে শিরক বলে। আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দু‘আ করা, গাইরুল্লাহর জন্য কুরবানী করা, মানত করা এবং এমন বিষয়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের নিকট উদ্ধার কামনা করা, যা থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ রাখে না। আর তাওহীদ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইবাদতকে নির্দিষ্ট করা।

তাওহীদ বনী আদমের মূল বিষয়। পরে তাদের মধ্যে শিরক প্রবেশ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ وَأَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ﴾

‘‘প্রথমে সব মানুষ একই পথের অনুসারী ছিল। তাদের মধ্যে যখন মতভেদ শুরু হলো তখন আল্লাহ নবীদেরকে পাঠালেন। তারা ছিলেন সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য সুসংবাদদাতা এবং বেঠিক পথ অবলন্বনের পরিণতির ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শনকারী। আর তাদের সাথে সত্য কিতাব পাঠান, যাতে সত্য সম্পর্কে তাদের মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল তার মীমাংসা করা যায়’’। (সূরা আল বাকারা: ২১৩)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতি পর্যন্ত একহাজার বছরের ব্যবধান ছিল। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সকল মানুষই তাওহীদের উপর ছিল। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় এ কথাটি সঠিক। ইমাম ইবনে কাছীরও এ কথাকে সহীহ বলেছেন। অতঃপর নূহ (আ.) এর জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম শিরকের আবির্ভাব হয়। কতিপয় সৎ লোককে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই তাদের মধ্যে শিরক প্রবেশ করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا﴾

‘‘কাফেররা বলল, তোমরা নিজেদের মাবুদগুলোকে পরিত্যাগ করো না। বিশেষ করে ‘ওয়াদ’, ‘সুআ’, ‘ইয়াগুছ’ ‘ইয়াঊক’ এবং ‘নাসর’কে কখনও পরিত্যাগ করো না’’। (সূরা নূহ: ২৩)

সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আলাইহিস সালামের গোত্রের কতিপয় সৎ ব্যক্তির নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করল, তখন শয়তান তাদের কওমকে বুঝিয়ে বলল, যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসতো, সেসব জায়গাতে তাদের মূর্তি স্থাপন করো এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের নামেই মূর্তিগুলোর নামকরণ করো। তখন তারা তাই করল। তাদের জীবদ্দশায় মূর্তিগুলোর পূজা করা হয়নি ঠিকই; কিন্তু মূর্তি স্থাপনকারীরা যখন মৃত্যু বরণ করল এবং পরবর্তীরা মূর্তি স্থাপনের ইতিহাস ভুলে গেল, তখনই মূর্তিগুলোর ইবাদত শুরু হলো।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, অনেক সালাফ বলেছেন, যখন সৎ লোকগুলো মারা গেল, তখন তারা তাদের কবরগুলোর উপর অবস্থান করতে লাগল। অতঃপর তারা তাদের মূর্তি বানালো। অতঃপর যখন বহু সময় পার হলো, তখন তারা সেগুলোর ইবাদত শুরু করলো।

সৎ লোকদেরকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, তাদের ছবি নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা, সেগুলোকে তাদের মজলিসে স্থাপন করার ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ যে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তা থেকে আমরা ছবি নির্মাণ করা, সেটা দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা, মাঠে-ময়দানে ও রাজপথে সেটা স্থাপন করার ভয়াবহতা অনুভব করতে পারি। এগুলো মানুষকে শিরকের দিকে নিয়ে যায়। এ ছবিগুলো এবং রাজপথে ও মাঠে-ময়দানে স্থাপিত মূর্তিগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এমনভাবে বাড়তে থাকে যে, এক সময় এগুলোর ইবাদত শুরু হয়ে যায়। যেমন হয়েছিল নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের মধ্যে।

এ জন্যই ইসলামে ছবি অঙ্কন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবি অংকনকারীকে অভিশাপ করেছেন এবং তাকে কঠিন শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। আর ছবি অঙ্কনের মাধ্যমে যাতে এ উম্মতের মধ্যে শিরক প্রবেশ করতে না পারে, তাই এ দরজাকে বন্ধ করার জন্য এবং আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির সাদৃশ্য করা থেকে দূরে রাখার জন্যই বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন ছবি অংকনকারীরাই সবচেয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে।

নূহ আলাইহিস সালামের জাতির বিভ্রান্তির ঘটনা থেকে আমরা পথভ্রষ্ট করা ও তাদের সাথে ধোঁকাবাজি করার ক্ষেত্রে অভিশপ্ত শয়তানের সুদূর প্রসারি চেষ্টা ও আগ্রহের কথা জানতে পারলাম। মানুষকে গোমরাহ করার জন্য সে কখনো তাদের আবেগ ও সহানুভূতিকে কাজে লাগায় এবং তাদেরকে ভালো কাজে উৎসাহ দেয়ার বেশ ধরে। সে যখন নূহ আলাইহসি সালামের জাতির লোকদের মধ্যে সৎ লোকদের প্রতি প্রচুর ভালোবাসা দেখতে পেলো, তখন এতে আরো বাড়াবাড়ি করার আহবান জানালো। তাদেরকে সৎ লোকদের স্মরণার্থে ছবি স্থাপন করার আদেশ দিলো। এতে ইবলীসের উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে ধীরে ধীরে হক থেকে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যাওয়া। সে শুধু তার সামনে উপস্থিত লোকদেরকেই গোমরাহ করে ক্ষ্যান্ত হতে চায়নি; বরং পরবর্তীতে আগমনকারী স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী ও মূর্খতায় আচ্ছন্ন প্রজন্মকেও গোমরাহ করার সুদূর প্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছিল। সুতরাং সে তাদের জন্য এ ছবিগুলোর ইবাদত করাকে সুশোভিত করে দেখালো এবং শির্কে আকবারে লিপ্ত করে ছাড়লো। তারা তাদের নবী নূহের সাথে এ বলে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করলো, لَا تَذَرُنَّ آَلِهَتَكُمْ ‘‘তোমরা নিজেদের মাবুদগুলোকে পরিত্যাগ করো না’’।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, শয়তান মুশরিকদেরকে নিয়ে বিভিন্ন রকম খেল-তামাশা  করে এবং মূর্তিপূজায় লিপ্ত করে। প্রত্যেক জাতির বিবেক-বুদ্ধি অনুপাতে তার খেল-তামাশা হয় বিভিন্ন রকম।

মৃত মানুষের ছবির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নামে শয়তান কোনো কোনো সম্প্রদায়কে তার নিজের ইবাদতের আহবান জানায়। যেমনটি নূহ আলাইহিস সালামের জাতির মধ্যে লক্ষ্যণীয়। সাধারণ মুশরিকদের গোমরাহির কারণ এটিই। আর বিশিষ্ট ও অভিজাত শ্রেণীর মুশরিকরা তাদের ধারণারূপ সৃষ্টিজগতে প্রভাব বিস্তারকারী তারকাসমূহের আকৃতিতে মূর্তি বানিয়ে সেগুলোর উপাসনা করতো। এগুলোর জন্য তারা ঘর তৈরি করতো, দারোয়ান নিযুক্ত করতো, তাদের সামনে পর্দা ঝুলিয়ে রাখতো এবং তাদের জন্য কোরবানি পেশ করতো। পৃথিবীতে এগুলো অতীত ও বর্তমানের সবসময়ই লক্ষ্য করা যায়। বেদীন মুশরিকদের থেকে এ প্রথাগুলোর উৎপত্তি হয়েছে। এরা ছিল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের গোত্রের ঐসব লোক, শিরকের অসারতা বর্ণনা করার জন্য ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বিতর্কে নেমেছিলেন। আর তিনি তার ইলমের মাধ্যমে মুশরিকদের দলীল-প্রমাণগুলো খ-ন করেছিলেন এবং স্বীয় হাত দিয়ে তাদের বাতিল মাবুদগুলো ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলেছিলেন। এর কারণে মুশরিকরা তাকে আগুনে পুড়ে হত্যা করার দাবি জানিয়েছিল।

আরেক শ্রেণীর মুশরিক রয়েছে, যারা চন্দ্রের আকৃতিতে মূর্তি বানিয়েছে। তাদের ধারণা চন্দ্র তাদের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। তাদের ধারণা মতে নিমণজগত চন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনাধীন।

তাদের আরেক শ্রেণী আগুনের পূজা করে। এরা হলো অগ্নিপূজক। আরেক শ্রেণীর লোক পানির ইবাদত করে। কেউ আবার জীব-জানোয়ারের উপাসনা করে। কেউ ঘোড়ার, কেউ গরুর, কেউ জীবিত মানুষের ইবাদত করে, কেউ মৃত মানুষের ইবাদত করে, কেউ জিনের ইবাদত করে, কেউ গাছের ইবাদত করে আবার আরেক শ্রেণীর লোক ফেরেশতাদের ইবাদত করে থাকে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিমের উক্তি এখানেই শেষ। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিমের উক্তির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর অর্থ জানা গেল,

﴿وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ﴾  

এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোনো স্থানে নিক্ষেপ করল’’। (সূরা হজ্জ: ৩১)

আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর অর্থও জানা গেল, তিনি বলেন,

  ﴿يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآَبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾

‘‘হে আমার জেলখানার সাথীরা! তোমরা নিজেরাই ভেবে দেখো, বহু সংখ্যক রব উত্তম, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তোমরা আল্লাহ্কে ছেড়ে এমন কতগুলো নামের ইবাদত করে থাকো, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ এদের কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ ছাড়া কারও হুকুম করার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না। এটিই সঠিক দীন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’’। (সূরা ইউসুফ: ৩৯-৪০)

আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর অর্থও বুঝা গেল, তিনি বলেন,

﴿ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَجُلًا فِيهِ شُرَكَاءُ مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾

‘‘আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। একজন ক্রীতদাস লোকের মনিব অনেক, যারা তাতে পরস্পর কলহপ্রিয় শরীক এবং আরেক ব্যক্তির মনিব কেবল একজন। তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না’’। (সূরা আয যুমার: ২৯)

এ মুশরিকরা যখন এক আল্লাহ তা‘আলার সে ইবাদত বর্জন করেছে, যার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যাতেই তাদের সৌভাগ্যের বিষয়টি নিহিত রয়েছে তখন তারা শয়তানের ইবাদত করার ফিতনায় পড়েছে। প্রবৃত্তির প্ররোচনায় পড়ে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। যেমন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

هربوا من الرق الذي خلقوا له + فبلوا برق النفس والشيطان

যার দাসত্ব করার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার দাসত্ব বর্জন করে তারা এখন নাফ্স ও শয়তানের ইবাদতের ফিতনায় পড়েছে। সুতরাং তাওহীদ ব্যতীত মানুষের অন্তরসমূহ এক হবে না এবং পৃথিবীর মানুষগুলো সংশোধনও হবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَمِ اتَّخَذُوا آلِهَةً مِّنَ الْأَرْضِ هُمْ يُنشِرُونَ لَوْ كَانَ فِيهِمَا آَلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ﴾

‘‘এরা যমীন হতে যেসব উপাস্য গ্রহণ করেছে সেগুলো কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম? নভোম-ল ও ভূমণ্ডলে যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকতো, তাহলে আসমান-যমীন ধ্বংস হয়ে যেতো। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র’’। (সূরা আম্বীয়া: ২১-২২)

এ জন্যই যখন পৃথিবী তাওহীদ মুক্ত হবে, তখনই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। যেমন ইমাম মুসলিম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ

‘‘পৃথিবীতে যতদিন আল্লাহ আল্লাহ বলা হবে ততোদিন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না’’।[1]

পূর্বকালের মুশরিকরা যেমন তাদের ইবাদত ও মাবুদগুলো নিয়ে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছিল, আজও কবরপূজারীরা কবরের ইবাদত নিয়ে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত। তাদের প্রত্যেকেরই একটি করে খাস সমাধি রয়েছে, যে বিভিন্ন প্রকার ইবাদতের মাধ্যমে সেটার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। প্রত্যেক সুফী তরীকার একজন করে শাইখ আছেন, যাকে মুরীদরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের রব হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তাদের রব এমন দীনের প্রবর্তন করে, যে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার কোনো অনুমতি নেই।

 এভাবেই শয়তান বনী আদমের সাথে খেল-তামাশা করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের উপায় অবলম্বন ছাড়া, তার কিতাব ও তার রসূলের সুন্নাতকে মজবুতভাবে ধারণ করা ব্যতীত শয়তানের চক্রান্ত ও প্ররোচনা ছাড়া মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই।


আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করি তিনি যেন আমাদের সামনে সত্যকে সত্য হিসাবে তুলে ধরেন এবং সেটার অনুসরণ করার তাওফীক দেন। আর বাতিলকে বাতিল হিসাবে আমাদের সামনে পরিষ্কার করে দেখান এবং আমাদেরকে যেন সেটা থেকে দূরে রাখেন। তিনিই আমাদের অভিভাবক। তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক, কতই না উত্তম সাহায্যকারী।


[1] . মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।