প্রশ্ন-৫৫ : বিভিন্ন দলীয় বই-পুস্তক অথবা এদেশে বহিরাগত জামাত সমূহের ভুল-ত্রুটি বর্ণনা করার দ্বারা কি দাঈদের দাওয়াতী কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা বুঝায়?

উত্তর : না এটা দাঈদের দাওয়াতী কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা নয়।[1]

কেননা তাদের বইগুলো দাওয়াতী বই নয়। এ পুস্তকাদি ও এ মতবাদগুলোর প্রতি আহবায় করা ‘ইলম, স্পষ্ট জ্ঞান ও হকের দিক থেকে আল্লাহর পথের দাঈ নয়।

সুতরাং আমরা এ বই-পুস্তকের অথবা এ সকল দাঈর ভুল-ত্রুটি বর্ণনা করব। তাদের ভুল-ত্রুটি বর্ণনা করা তাদের নিন্দা করার অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা উম্মাহর জন্য কল্যাণকামিতার অন্তর্ভুক্ত।[2]

তা না করা হলে উম্মাহর মাঝে বাতিল মতবাদ অনুপ্রবেশ করে ঐক্য বিনষ্ট করবে। জামাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আমাদের উদ্দেশ্য ব্যক্তিকে আঘাত করা নয়। আমাদের  উদ্দেশ্য হলো তাদের বই-পুস্তকে থাকা ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনা যা দাওয়াতের নামে আমাদের মাঝে অনুপ্রবেশ করেছে।[3]


[1]. সালাফী মানহাজের দাঈগণ বিদাতী, ভ্রষ্ট, দলবাদী দাঈদের থেকে তাদের বই-পুস্তক থেকে সতর্ক করা এমনকি প্রয়োজনে তাদের ব্যক্তিত্বের সমালোচনা করাকেও  দাঈদের পথরুদ্ধ করা মনে করে না। বরং বিদাতী ও তাদের বই-পুস্তক থেকে সতর্ক করাকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মানহাজ মনে করে। সুন্নাহ এবং জারহু ওয়াত তা‘দীলের কিতাবাদিতে এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। সালাফী মানহাজের দাঈগণ বিদাতী  ও তাদের বই-পুস্তক থেকে সতর্ক করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করে।

ইমাম শু‘বা (রহ.) বলেন, আসুন আমরা কিছুক্ষণ আল্লাহর ওয়াসেত্ম দোষ-ত্রুটি আলোচনা করি অর্থাৎ আল-জারহু ওয়াত তা‘দীল নিয়ে পর্যালোচনা করি। (শারহু ‘ইলালিত তিরমিযী খ. ০১ পৃষ্ঠা নং ৩৪৯, আল-কিফায়াহ পৃ. ৯১

শায়খ আবু যুর‘আহ আদ-দিমাশক্বী (রহ.) বলেন, আমি মুসহির (রহ.) কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে শুনেছি। ঐ ব্যক্তি ভুল ভ্রান্তি করত, বিকৃতভাবে লিখত। বর্ণনা কারী বলেন, মুসহির (রহ.) উক্ত ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মুসহিরকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করাকে গিবত মনে করলেন না? তিনি প্রতুত্তরে বললেন না। (শারহু ইলালিত তিরমিযী খ. ০১ পৃষ্ঠা নং ৩৪৯)

আব্দুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, আবু তুরাব আন নাখশাবী আমার পিতার নিকট এলেন। আমার পিতা বর্ণনা করতে লাগলেন, অমুকে দ্ব‘ঈফ (দুর্বল), অমুকে ছীক্বাহ (গ্রহণযোগ্য) ইত্যাদি।

আবু তুরাব আমার পিতাকে বলল, হে শায়খ আলিমদের গিবত করবেন না। আমার বাবা প্রতুত্তরে বললেন, তোমার জন্য আফসোস। এটা গিবত নয়। বরং এটা হলো উম্মাহর জন্য নছীহত বা কল্যাণ কামনা। (শারহু ইলালিত তিরমিযী খ.০১ হা. ৩৪৯ আল-কিফায়াহ লিল খত্বীব পৃ. ৪৬)

আমি বলব, আমি বলব সংশয়ে পতিত লোকদের নিকট বিদাতী ও প্রবৃত্তিবাদীদের বই-পুস্তক নিয়ে সমালোচনা করা হলে তাদের মধ্যে যারা জীবিত তারা সতর্ক হয়।

[2]. ব্যক্তির পর্যালোচনা করা যদি তার ‘আদালত (ন্যায়পরায়ণতা), তাওছিক (গ্রহণযোগ্যতা) তার দ্বার অন্যরা ধোঁকায় পতিত হয় এরকম কোন বিষয়ে হয়ে থাকে বিশেষত যে ব্যক্তিদের প্রভাব ও ভক্ত রয়েছে। যেমন; বিভিন্ন আন্দোলনের নেতাদের ক্ষেত্রে তাদের ভুল-ত্রুটি বর্ণনা আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল ও জীবনী গ্রন্থ সমূহে বিদ্যমান। যদি ব্যক্তির মাঝে বাস্তবেই এই ভুল-ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে তা বর্ণনা করাতে কোন সমস্যা নাই। বরং তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনার উদ্দেশ্য হলো তাদের অবস্থা উল্লেখ করে লোকজনকে তাদের থেকে সতর্ক করা। তাদের ভুল-ভ্রান্তি ও দোষ-ত্রুটি ছড়ানো উদ্দেশ্য নয়।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহ.) এর প্রতি লক্ষ্য করুন, তাকে হুসাইন আল-কারাবিসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাবে বলেছিলেন, সে বিদাতী। (তারীখু বাগদাদ খ. ০৮ পৃষ্ঠা নং ৬৬)

মুহাসিবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি রহিমহুল্লাহ বলেছিলেন, সে একজন মন্দলোক। তুমি তার সাথে কথা বলা বলবে না, তার কোন মর্যাদা নাই। এ বইয়ে এর আগেও এ বিষয়ে আলোচনা অতিক্রান্ত হয়েছে।

আবু যুর‘আহ রহিমহুল্লাহকে হারিছ আল-মুহাসিবী ও তার বই-পুস্তক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তুমি এসকল বই পুস্তক থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে। এবইগুলো বিদআত ও ভ্রষ্ঠতায় পূর্ণ। তোমার কাজ হবে আছার (সুন্নাহকে) আঁকড়ে ধরা (আত-তাহযীব ২/১১৭)।

[3]. বড়ই পরিতাপের বিষয় হলো, এই তাওহীদের দেশে কিছু যুবককে এ সকল সংশয়পূর্ণ, বিকৃত বই-পুস্তক গ্রহণ করতে দেখা যায়। তারা ভালোর বিনিময়ে মন্দ এবং মঙ্গলের বিনিময়ে অমঙ্গল গ্রহণ করে। কখনো কখনো তাদের কেউ কেউ আবুল আ‘লা মওদুদী, মুহাম্মাদ সুরুর যায়নুল আবিদীন, হাসানুল বান্না, সাইয়্যিদ কুতুব, হাসান আত-ত্বুরাবী, সলাহ আসছাবী, মুহাম্মাদ আহমাদ রাশিদ গংদের ও তাদের বই-পুস্তকের প্রশংসা করে থাকে।

যদি কেউ বলে, তুমি কেন সবাইকে একত্রে উল্লেখ করলে? উল্লেখিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ তো প্রসিদ্ধতায় এতদূর পৌছে গেছে যতদূর তুমি পৌঁছতে পারনি।

আমি আপত্তি উত্থাপনকারীর জবাবে বলব, হাক বর্ণনা করা আমাদের নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয়। কারে প্রসিদ্ধি হাক বর্ণনার প্রতিবন্ধক নয়। নেতিবাচক মানহাজ সমূহ থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে সালাফে সালেহীনের মানহাজ সুস্পষ্ট।

আপত্তি উত্থাপনকারীর প্রতি উল্লেখিত ব্যক্তিদের বই-পুস্তক থেকে তাদের পদস্খলনের দলীল পেশ করা হলো।

প্রথমত : মওদুদী সে তার রসাঈল-মাসাঈল নামক পুস্তিকার (প্রকাশ ১৩৫১ হিজরী) ৫৭ নং পৃষ্ঠায় বলেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধারণা করতেন যে দাজ্জাল তার যুগে অথবা তার নিকটবর্তী যুগে বের হবে। কিন্তু সাড়ে তেরশত বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও দাজ্জাল বের হয়নি। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সেই ধারণা সঠিক ছিল না।

১৩৬২ হিজরীর পরবর্তী সংস্করণে আরো যোগ করে বলেছে, হাজার বছর....চলে গেছে দাজ্জাল এখনও বের হয়নি এটাই হলো বাস্তবতা।

এটা স্পষ্ট যে সে এর দ্বারা দাজ্জালের বের হওয়াকে অস্বীকার করেছে। অথচ এবিষয়ে অনেক মুতাওয়াতির সহীহ হাদীছ রয়েছে।

সে ৫৫ নং পৃষ্ঠায় বলেছে, দাজ্জাল সম্পর্কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে এর সবই তার নিজস্ব মত, অনুমান এবং ধারণা মাত্র।

এটা কী দাজ্জালকে অস্বীকার করা এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মিথ্যাচার নয়? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়। (সূরা নাজম ৩-৪)

আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবনে ‘আলী আল বার-বাহারী বলেন, কোন আহলে কিবলাকে (কিবলার অনুসারীকে) কুরআনের কোন আয়াত বা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন হাদীছকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কাফির বলা যাবে না। কিন্তু যদি সে এর কোন একটি করে বসে তাহলে তাকে ইসলামের গণ্ডী থেকে বের করে দেওয়া তোমার উপর ওয়াজিব। কেউ যদি উল্লেখিত কাজ দু’টির কোনটিই না করে এবং সে যদি ইসলামের কোন আমল না করে তাহলে সে প্রকৃত নয় বরং নামমাত্র মুমিন বা মুসলিম বলে গণ্য হবে। (ত্ববাক্বাতুল হানাবিলাহ খ. ০২ পৃ. ২৩)

মওদুদী তার ‘আরবা‘আতু মুসত্বলাহাতিল কুরআন আল-আসাসিয়্যাহ’ (কুরআনের মৌলিক মূলনীতির পরিভাষা সমূহ) নামক গ্রন্থের ১৫৬ নং পৃষ্ঠায় বলেছে, আল্লাহ তা‘আলা ‘ সূরাতুন নাছরে’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার দায়িত্ব (নবুওয়াতি দায়িত্ব) পালনে যে সকল ভুল-ত্রুটি হয়েছে তা থেকে ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করার জন্য আদেশ প্রদান করেছেন। নাউযুবিল্লাহ। আমরা আল্লাহর নিকট এই অপবাদ থেকে মুক্তি চাচ্ছি।

আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের অসংখ্য জায়গায় মনুষ্য জাতির সবচেয়ে বড় গুণ ‘বান্দা বা দাস’ হওয়ার গুণে তার রসূল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গুণান্বিত করেছেন। এটা কি মওদুদীর জন্য যথেষ্ট নয়?

সে কি সেই তিন ব্যক্তি সম্পর্কিত হাদীছ দেখেনি? তারা রসূল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন জেনে রাখো, আমি তোমাদের সকলের চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি। আল হাদীছ।

মওদুদীর সুন্নাহ নিয়ে হঠকারিতা সর্বজন জ্ঞাত বিষয়। ভারত বর্ষের অনেক আহলুল হাদীছ ‘আলিম তার ও তার ইসলাম যুক্ত নাম বিশিষ্ট ফিরকার ভ্রষ্ঠতাকে দলীলের আলোকে খণ্ডন করেছেন। তারা তাঁর ও তার কথিত ইসলামী দলের গোমরাহীগুলিকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

দ্বিতীয়ত : মুহাম্মাদ সুরুর ইবনে নাইফ ইবনে যায়নুল ‘আবিদীন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত আস সুন্নাহ ম্যাগাজিনের মালিক। সে তার ম্যাগাজিনকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দ্বারা পূর্ণ করেছে। সে এই ম্যাগাজিন দ্বারা শাসকদেরকে কাফির বলা, সাঊদী আরবের নেতা সালাফী রববানী আলিমদেরকে অপবাদ দেয়া এবং মা‘ছিয়্যাতের কারণে তাকফির করার প্রতি যুবকদেরকে উস্কে দিচ্ছে। সে নিজেই উক্ত কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখানে আর দীর্ঘ আলোচনা করতে চাচ্ছি না। আপনি ২৮ নং প্রশ্নের সংশিস্নষ্ট টীকায় দেখুন।

তৃতীয়ত : হাসানুল বান্না : এ সম্পর্কে ৪০ নং প্রশ্নের সংশিস্নষ্ট টীকায় আলোচিত হয়েছে।

চতুর্থত : সাইয়্যিদ কুতুব এ সম্পর্কে ১৯ ও ৩১ নং প্রশ্নের টীকায় দেখুন।

উসমান (রা.) এর সমালোচন ও কটাক্ষ করে সে তার ‘‘আল ‘আদালাহ আল ইজতিমাঈয়্যাহ ফিল ইসলাম’’ নামক পূর্ণ করেছে। সে বলেছে যে, উসমানের যুগের বাস্তব চিত্র হলো খিলাফাতে অধিষ্ঠিত অবস্থায় তাকে বার্ধক্যে পেয়ে বসলে পর্দার অন্তরাল থেকে মারওয়ান ইবনে হাকাম শাসনের চাবিকাঠি নাড়তে থাকে। সে অনেক ইসলামী বিষয়ের পরিবর্তন সাধন করে। (পৃ. ২১৪ সপ্তম সংস্করণ)।

সে আরো বলেছে, ‘‘বায়তুল মাল থেকে তার জামাই হারিছ ইবনে হাকামকে দুই লক্ষ দিরহাম, একদিন যুবাইরকে সাত লক্ষ দিরহাম এবং ত্বলহাকে দুই লক্ষ দিরহাম প্রদান করেছিলেন। এবং মারওয়ান ইবনে হাকামকে আফ্রিকার খারাজের এক পঞ্চমাংশ বরাদ্দ করে দিয়েছিলেন।

আমরা বলব, ‘‘ছাদ স্থাপনের আগে ভিত্তি ঠিক করো অর্থাৎ হুকুম সাব্যস্ত করার আগে দলীল পেশ করো।

তোমার এই মারাত্মক কথার উৎস কী?

সম্মানিত পাঠক, এই অপবাদ খণ্ডন বিষয়ে আবু বাকর আল ক্বাযী ইবনুল ‘আরাবী কতৃক রচিত ‘‘আল ‘আওয়াছিবম মিনাল কওয়াছিবম’’ নামক গ্রন্থের ৬১-১৪৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

সাইয়্যিদ কুতুব ‘‘আল আদালাহ’’ নামক পুস্তকের ২১৭ নং পৃষ্ঠায় বলেন, উছমান আল্লাহর রহমাতের দিকে চলে গেছে (মৃত্যু বরণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে সে তার কর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে বিশেষত শামে উমাইয়্যাহ রাষ্ট্র কায়িম করেছে এবং ইসলামের রূহের প্রতি কঠোর উমাইয়্যাহ রাজতন্ত্রের নিয়ম কানুন প্রণয়ন করেছে, যা ইসলামের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।

তিনি ২৩৪ নং পৃষ্ঠায় বলেন, আমরা আলী (রা.) এর পূর্বের দুইজন শায়খের খিলাফতের বিসত্মৃতির ভিত্তিতে আলী (রা.) এর খিলাফতের প্রতি ঝুঁকি। আর মাঝখানে উছমান (রা.) এর যুগ। যে যুগে মারওয়ান শাসন করত। এর কোন ভিত্তি ছিল না। এটা ছিল এক আকস্মিক ঘটনা মাত্র।

বিস্তারিত জানার জন্য শায়খ রবি‘ ইবনে হাদী আল-মাদখালী কর্তৃক লিখিত ‘‘ মাত্বা‘ইনু সাইয়্যিদ কুতুব ফি আসহাবি রসূলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’’ নামক কিতাবে দেখুন।

সাইয়্যিদ কুতুব তার ‘‘মা‘রিকাতুল ইসলামি ওয়ার রসমালিয়্যাহ’’ নামক বইয়ের ৬১ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘ইসলামেরই বিচার ফায়ছালা করা উচিত। কেননা ইসলামই হলো একক ইতিবাচক সৃষ্টিশীল ‘আকীদা যা একইসাথে খৃষ্টবাদ ও কমিউনিজম থেকে গঠিত। যা মিশ্র ও পরিপূর্ণ। সকল উদ্দেশ্য একত্র করে অধিকন্তু ফায়ছালায় সমন্বয় সাধন-মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে  ও ভারসাম্য বজায় রাখে।’’

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল উছায়মিন (রহ.) কে এ প্রবন্ধের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জবাবে বলেন, আমরা তাকে বলব, খ্রিষ্টানধর্ম বিকৃত ধর্ম, কমিউনিজম বাতিল ধর্ম এর কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি বলে যে ইসলাম হলো এ দু’য়ের মিশ্রিত রূপ সে ব্যক্তি হয় ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ নতুবা খ্রিষ্টান ও কমিউনিষ্ট কাফিরদের দ্বারা ধোঁকাগ্রস্থ।

এই প্রবন্ধের জবাবে শায়খ ইসমাইল ইবনে মুহাম্মাদ আল-আনসরী (রহ.) বলেন, উল্লেখিত ব্যক্তির কথা ধর্মসমূহের মাঝে সমন্বয় সাধন করার দাবি করে।

শায়খ হাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল আনছারী (রহ.) উল্লেখিত প্রবন্ধের জবাবে বলেন, যে ব্যক্তি এই কথা বলেছে সে জীবিত থাকলে তাকে তাওবাহ করতে নির্দেশ দেয়া হবে। তাওবাহ করলে ভালো নতুবা তাকে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হিসেবে হত্যা করা হবে। আর যদি উক্ত ব্যক্তি ইতোমধ্যে মৃত্যু বরণ করে থাকে তাহলে তার একথা যে বাতিল তা বর্ণনা করা ওয়াজিব। এমতাবস্থায় আমরা তাকে কাফির বলব না। কেননা আমরা তার উপর হুজ্জাত (দলীল) কায়িম  করতে পারিনি (আল ‘আওয়াছিম মিম্মা ফি কুতুবি সাইয়্যিদ কুতুব মিনাল কওয়াছিম পৃ. ২২ দ্বিতীয় সংস্করণ গ্রন্থ থেকে অত্র বিষয়গুলি সংকলিত করা হয়েছে)।

পঞ্চমত : হাসান আত-তুরাবী, সে তার কিতাব ‘আদ-দীন ওয়াল ফান্ন প্রথম সংস্করণ প্রকাশ ১৪০৮হিজরী পৃষ্ঠা ৯১ তে বলেন দীন যেহেতু প্রতীকী প্রাকটিস এবং অদৃশ্য নিয়ে কাজ করা ও দুনিয়ার বাহ্যিক দিক কে অতিক্রম করা এবং স্থায়িত্বের বিষয়ে জানা। সুতরাং প্রত্যেক জিনিস থেকে দীন নিদর্শন গ্রহণ করে এবং সবকিছুকেই আল্লাহর পথের ওছীলা হিসেবে গ্রহণ করে। সুতরাং শিল্প-কলা দীনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দীন এবং শিল্প কলার জন্য একই সাথে পথচলা সম্ভব। শিল্পী ঈমানের  পথে হিদায়াত করতে পারে। তার ঈমান তাকে আরো দক্ষ শিল্প-কলাবিদ হিসেবে গড়ে তুলবে।’’ (এটা যে ভ্রান্ত কথা তা বলার প্রয়োজন নাই)।

তুরাবী উক্ত বইয়ের ৯৮ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘ইসলামী শিল্প-কলা আরবদেশে প্রথম ধাপেই রেনেসাঁ পর্যায়ে যেতে পারেনি। বিশেষত সংস্কৃতি ও শিল্প বিষয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সামান্য কবিতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কিন্তু যখন ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্র সমূহ আরব দেশে ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ল এবং হিজাযে ইসলামিক ফাউন্ডেশান প্রতিষ্ঠার পর লোকজন অবসর পেল । তাদের জীবন ও সুযোগ সুবিধা প্রসারিত হলো; সঙ্গীত, বিনোদন এবং মিউজিক্যাল যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে পড়ল। অনেক তাবি‘ঈ ও আলিমও যে গান শুনতেন এ বিষয়ে বর্ণনা আছে’।

সম্মানিত পাঠক, চিন্তা করে দেখুন সে কীভাবে গান বিনোদনের গুণকীর্তন করছে এবং তাবি‘ঈ ও আলিমদেরকে অপবাদ দিচ্ছে যে তারাও নাকি গান শুনতেন। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ তুরাবীর প্রাপ্য অনুযায়ী তার সাথে ব্যবহার করুন।

উক্ত বইয়ের ১০৬ নং পৃষ্ঠায় বলেন, সুতরাং ছবি অাঁকা, জিনিসপত্র বা দৃশ্যের চিত্র তৈরি করাতে কোন সমস্যা নাই। ভালো ও সুন্দর সুন্দর কথার দ্বারা কবিতা, বীরত্বপূর্ণ কবিতা (যুদ্ধের ময়দানে অনুপ্রেরণা দায়ক) নাটক অথবা গান তৈরি করাতে কোন সমস্যা নাই। বিষয় মন্দ না হলে সম্বোধন মূলক, গল্পমূলক ইত্যাদি বিষয় গদ্য তৈরি করাতে কোন সমস্যা নাই। কোন দৃশ্য বা শ্রাব্য শিল্প-কলা যদি নিষিদ্ধ চরিত্রের দ্বারা না হয় তাহলে এমন গান, অভিনয়, সংগীতে কোন সমস্যা নাই। এমনিভাবে পরিকল্পিত শিল্প-কলা যেমন; নাট্যমঞ্চে অভিনয় করা অথবা ব্যাপক উদ্দেশ্য রেখে পরিকল্পিত ভাবে নির্মিত সিনেমা, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে কোন সমস্যা নাই’।

এটা দীনের উপর কত্বড় ধৃষ্টতা! আমরা আল্লাহর নিকট মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি। গান, সংগীত, নৃত্য, নাট্য অভিনয়, সিনেমা ইত্যাদিকে বৈধ মনে করা থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি।

আয় আল্লাহ তুমি মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্টকারীকে হিদায়াত দান করো। আমীন।

সম্মানিত পাঠক, যদি মানুষকে সতর্ক করার জন্য এই ব্যক্তি এবং এই শ্রেণির লোকদের ভুল-ভ্রান্তি, বিচ্যুতি-ভ্রষ্টতা বর্ণনা করা ওয়াজিব না হতো; যাতে লোকজন এদেরকে চিনতে পেরে, এদের থেকে সতর্ক হয়, এদের দ্বারা ধোঁকায় পতিত না হয় ইত্যাদি তাহলে আমি এসকল রুগ্ন দুর্বল কথা বর্ণনা করে আপনার কান ভারী করতাম না।

তুরাবী উক্ত কিতাবের ১১০ নং পৃষ্ঠায় বলেছে, শিল্প-কলাকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে বর্জন করা ওয়াজিব। কেননা শিল্প-কলার দ্বারা অনেকে বিপথগামী হয়। সুতরাং এর দ্বারা যারা হিদায়াত গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য হিদায়াত গ্রহণ করা সম্ভব হবে। যে ব্যক্তি এটাকে উপেক্ষা করবে অর্থাৎ শিল্প-কলাকে উপেক্ষা করলো, সে যেন আল্লাহর পথে বিনোদনমূলক ফিতনা এবং পাপাচারের প্রতি আহবায়কদেরকে বর্জন করলো। আর যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো। সে যেন আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহবানের এবং ইবাদত করার সুন্দর থেকে সুন্দরতর এক প্রশস্তপথ উন্মুক্ত করলো।

শিল্প-কলার প্রতি তুরাবীর এই প্রকাশ্য দাওয়াত এবং যে ব্যক্তি শিল্প-কলাকে উপেক্ষা করবে তার থেকে সতর্ক করার প্রতি লক্ষ্য করুন। তার মতে, ‘‘যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো সে একটা পথ উন্মুক্ত করলো যা তার জন্য যথেষ্ট হবে, প্রকারান্তরে সে আল্লাহর পথে দাওয়াতেরই একটা প্রশস্ত পথ উন্মুক্ত করলো। ’’

এই হলো ইখওয়ানুল মুসলিমীনের অবস্থা তারা অভিনয়, বিদাতী সুফিদের অভিনয়, মিথ্যাচার এবং ধোঁকাবাজী সব কিছুকে জায়েয মনে করে। তাদের দাবিতে দাওয়াতের কল্যাণের স্বার্থে এগুলো সবই বৈধ। ইখওয়ানুল মুসলিমীনকে চেনার ও এটা একটা আলামাত যে তাদের মতে ‘উদ্দেশ্য ওছীলাকে  (মাধ্যমকে) দোষ-ত্রুটি থেকে অব্যহতি দেয়।

তাদের কে চেনার অন্যতম আলামাত হলো গ্রীষ্মকালীনকেন্দ্র, ভূ-ভ্রমণ ও তাবু স্থাপন ইত্যাদি। এগুলো হলো ইখওয়ান প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্নার পরিকল্পনাকৃত। প্রমাণ হলো ‘মুযাককিরাতুদ দাওয়াহ ওয়াদ দাঈয়াহ’ নামক গ্রন্থের ২৭০ নং পৃষ্ঠায় হাসানুল বান্নার মত; তিনি বলেন, আমি এ ফিরকাগুলোকে প্রতিষ্ঠা করেছি তাদের মাঝে দাওয়াহ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। তারা তাদের প্রথম দলের প্রতি আগ্রহী। আমি নিজ হাতে প্রথম দল স্থাপন করেছি। আমি তাদের শারীরিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে সবসময় লেগে থাকি।

সম্মানিত পাঠক, এই গ্রীষ্মকালীন সফর সমূহে  কি ঘটে জানেন? হাসানুল বান্না তার ‘‘মুযাককিরা’’ নামক গ্রন্থের ২৮০ নং পৃষ্ঠায় বলেন, তৎপরতার দিক সমূহ’’ শিরোনামে বলেন, গ্রীষ্মকালীন সফর বিভাগ: এই সফর সমূহের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, (ক) সদস্যদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া। (খ) পরস্পর পরিচিত হওয়া। (গ) দাওয়াহ ছড়িয়ে দেয়া। (ঘ) প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ভ্রমণ সমূহকে গ্রীষ্মকালীন অনুমতির মাসে এবং তারা শর্তারোপ করে যে ইখওয়ান সদস্যদের  সবার নিকট সফর করার পোশাক এবং সামরিক প্রশিক্ষণ থাকে।

হাসানুল বান্নার কথা চলছিল। সে বলেছে গ্রীষ্মকালিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সামরিক প্রশিক্ষণশালা। মুক্ত আবহাওয়ায় শারীরিক অনুশীলন, এবং রোমান ব্যায়াম করা। অংশগ্রহণকারী ইখওয়াকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা হবে। এখানে অংশগ্রহণের  জন্য শর্ত হলো প্রত্যেক ভাইয়ের নিকট পর্যটকের পোশাক এবং গ্রীষ্মকালীন সেন্টার সমূহের তাবুতে রাত্রীতে প্রতিরক্ষা, আক্রমণ এবং আকস্মিক আক্রমন বিষঢেয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

যেমন তারা পর্বত আরোহনের প্রশিক্ষণ দেয় এবং দাবি করে যে, তারা যে কোন সময় যে কোন স্থানে জিহাদের জন্য প্রস্ত্ততি নিচ্ছে! তারা বিস্ফোরণ করা ও গুপ্তহত্যাকে জিহাদ মনে করে।’’ (তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করে এবং মূর্তিপূজকদেরকে ছেড়ে দেয়।)

সম্মানিত পাঠক, হাসানুল বান্না কতৃক আবিষ্কৃত গ্রীষ্মকালীন কেন্দ্র, সামরিক প্রশিক্ষণশালা এবং তাবু (যেগুলো আপনি কোনদিন অংশগ্রহণ করেছেন অথবা আপনার ছেলেরা অংশগ্রহণ করেছে অথবা আপনি আর্থিকভাবে তাদেরকে সাহায্য করেন) এগুলো সম্পর্কে যদি নিশ্চিত হতে চান তাহলে দেখুন হাসানুল বান্না এ সম্পর্কে কি বলেছে। ‘‘(বর্ণনাকারী বলেন) আমাকে তিনি  নিজেই বলেছেন, তিনি কোন এক রাতে ফজরের পূর্বে পালাক্রমে প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। এসময় তিনি তাবু সমূহ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। তাবুগুলো ছিল ছাহাবীদের নামে নামকরণকৃত। যেমন; খীমাহ আবু বাকর, খীমাহ আবু উবাইদাহ, খীমাহ খালিদ, খীমাহ আবু ওয়াক্কাস ইত্যাদি। (আল মুযাক্কিরাত পৃষ্ঠা নং ২৮৯)

আমি বলব, ‘আকীদার ক্ষেত্রে  এবং আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের কে কটাক্ষসূচক বিদাতীদের এই সকল কথাবার্তা নকল করার পরেও যে ব্যক্তি তাদেরকে সম্মান-মর্যাদা করবে, তাদের বই পুস্তককে মূল্যবান মনে করবে, তাদের পক্ষে ওকালতি করবে তাহলে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। তার কোন মর্যাদা থাকবে না।

এটাই হলো সালাফে সালেহীনের মানহাজ। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে বিদাতীদের সাথে সম্বন্ধ করবে,অথবা তাদের প্রতিরক্ষা করবে,অথবা তাদের প্রশংসা করবে, তাদের বই-পুস্তককে মূল্যবান মনে করবে, অথবা তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, অথবা তাদের সমালোচনা করাকে অপছন্দ করবে, অথবা তাদের পক্ষে ওকালতি করবে তাকে শাস্তি দেয়া উচিত। বরং প্রত্যেক যে ব্যক্তিই বিদাতীদের অবস্থা জানার পরেও তাদের মুকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে না তাকেই শাস্তি দেয়া ওয়াজিব। কেননা বিদাতীদের মুক্বাবিলা করা সবচেয়ে বড় ওয়াজিব। মাজমু‘ ফাতওয়া খ.০২ পৃ.১৩২

ইবনু ‘আওন বলেন, আমাদের মতে বিদাতীর নিকট যে বসে সে বিদাতী ব্যক্তির চেয়েও বেশি মারাত্মক। আল-ইবানাহ খ.০২ পৃ. ৪৭৩।

সুফইয়ান ছাওরী (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি বিদাতীর সাথে চলাফেরা করে আমাদের নিকট সেও বিদাতী বলে গণ্য।