২.৪৩ অসিয়তনামা : পদ্ধতি ও বিধি-বিধান - ১৭৫. অসিয়তনামা কোন বিষয়ে কাদের জন্য ও কী পরিমাণ?

অসিয়তনামার মৌলিক বিষয়গুলো নিম্নরূপ

১. প্রধানত সম্পদ বিষয়ে অসিয়তনামা লিখবে। অসিয়তনামায় শুধু তাদেরকে সম্পদের অংশ দেবে যারা মীরাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যেমন নিজের পুত্র বা কন্যা মারা যাওয়ার কারণে তার সন্তানেরা অর্থাৎ নাতি-নাতনীরা ওয়ারিশ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়, এসব বঞ্চিতদের জন্য অথবা যারা ওয়ারিশ নয় তাদের জন্য অসিয়ত করা। ওয়ারিশী অংশ পাবে এমন কারো জন্য অসিয়ত বৈধ নয় (আবু দাউদ: ২৮৭০)। আর অসিয়তকারী তার সম্পদের সর্বোচ্চ তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ অসিয়ত করতে পারে, এর বেশি নয়। (বুখারী: ১২৯৬)।

সাক্ষী: অসিয়তনামায় দুইজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখতে হবে। একান্ত অপারগতায় দুইজন অমুসলিমকেও রাখা যাবে।

২. অসিয়ত তিন ভাগের এক ভাগ জায়েয হলেও এর চেয়ে কিছুটা কম করাই উত্তম। আর এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি সম্পদ অসিয়ত করা জায়েয নেই।
৩. তবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ যে, অসিয়তের দ্বারা সম্পদের কোন ভাগীদার বঞ্চিত থাকে এমন উদ্দেশ্য যেন না থাকে।
৪. সম্পদের ভাগীদার অর্থাৎ ওয়ারিশ হিসেবেই সম্পদ পাবে এমন কারোর জন্য সম্পদ কম বেশ করে দেওয়ার ব্যাপারে কোন অসিয়ত করা জায়েয নেই। নিজের কোন এক সন্তানকে একটু মায়া করে তাকে একটু বাড়িয়ে দেওয়া বা রাগ হয়ে কোন সন্তানকে তার প্রাপ্যের চেয়ে কম দেওয়া বা দেওয়ার জন্য অসিয়ত করা জায়েয নেই। (দেখুন, আহমাদ: ২১৭৯১) করলে তা বাতিল হয়ে যাবে। অসিয়ত হতে হবে মৃত সন্তানের সন্তানদের (অর্থাৎ নাতি-নাতনীদের) জন্য, তাছাড়া ঋণ পরিশোধ, মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানায় দান ইত্যাদি খাতে। এগুলো দেওয়ার পর যা থাকবে তা ওয়ারিশদের মধ্যে শরী'আত মোতাবেক বণ্টন হবে।

৫. তাছাড়া অসিয়তনামায় এও থাকবে যে, মৃত্যুর পর যেন লোকেরা কান্নাকাটি না করে, বিলাপ না করে, বিদআতমুক্ত ও সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক গোসল ও কাফন-দাফন শেষ করে। দেখুন বিভিন্ন সাহাবীর অসিয়তনামা (মুসলিম: ১০৪, ৯৬৬, তিরমিযী: ৯৮৬)।

একটি নমুনা অসিয়তনামা

আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সা.) ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রেখে জেনে, বুঝে ও সজ্ঞানে আমার স্ত্রীসন্তানদের (ওয়ারিশদের) এ মর্মে অসিয়ত করছি যে, “তোমরা সদা-সর্বদা ইসলামের উপর অটল ও অবিচল থেকো এবং তোমাদের মৃত্যু যেন হয়। ঈমানের সাথে সেজন্য সচেষ্ট থেকো। সদা-সর্বদা অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয় রেখে চলো। তোমরা সকলে মিলে-মিশে থাকবে। পরস্পর সুন্দর আচরণ করবে। আত্মীয়তার ও রক্ত সম্পর্ক বজায় রেখে চলবে। আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদেরকে দাওয়াত দেবে ও তাদের দাওয়াত কবুল করবে। একজনের প্রয়োজনে অপরজন এগিয়ে যাবে, পরস্পর সহযোগিতা করবে। আল্লাহ না করুক তোমাদের কারোর অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে অপরজনেরা তার পাশে এসে দাঁড়াবে। আল্লাহ তোমাদের ইহ ও পরকালীন মঙ্গল দান করুন।

আমার মৃত্যুর পর কেউই বিলাপ করে কান্নাকাটি করবে না। জানাযা ও কাফন-দাফনে সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক সবকিছু সম্পন্ন করবে। সাত দিনে বা চল্লিশ দিনে কোন খানাপিনার আয়োজন করবে না। বিদআত ও শরীআত বহির্ভূত অন্য কোন কাজ করবে না। আমার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে প্রথমে আমার কৃত ঋণ পরিশোধ, অমুক মসজিদে ... টাকা, অমুক মাদরাসায় .... টাকা এবং অমুক ইয়াতীমখানায় ... টাকা প্রদান করিও।

[দ্র: আর নাতি-নাতনি রেখে নিজের কোন পুত্র-কন্যা মারা গেলে লিখবেন এভাবে....] আমার মৃত অমুক ছেলের ইয়াতীম সন্তানদের জন্য আমার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে মোট।(চার ভাগের এক ভাগ) দিয়ে দিও অথবা লিখবেন তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে দেওয়ার জন্য অসিয়ত করছি। আমার এ অসিয়তনামায় কেউ কোন পরিবর্তন করতে পারবে না, ব্যাঘাত ঘটাবে না। ঘটালে এর পাপের বোঝা তার ঘাড়েই বর্তাবে।


সাক্ষী

নাম:  ---
পিতা: ---

(১) ---

(২) ----

তারিখঃ --