২.৩৯ জুমুআর মুসল্লীদের ভুল-ত্রুটি - ১৭২. জুমু'আর সাথে সংশ্লিষ্ট সচরাচর কী কী ভুল আমাদের হয়ে যায়?

এমন কিছু ভুল আমরা কেউ কেউ করে থাকি, যেগুলোকে আমরা ভুল বলে মনে করি না বরং ইবাদত মনে করি। অথচ আলেমদের কাছে এর কোনটা বিদআত আর কোনটা হারাম। এর মধ্যে কিছু উদাহরণ নিয়ে উল্লেখ করা হলো:

১. রোগমুক্তির নিয়তে সেদিন জুমু'আ শেষে কেউ কেউ গ্লাসে পানি নিয়ে এতে ফুঁ দেওয়ার জন্য  মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ শরীআতে এ ধরনের কাজের কোন ভিত্তি নেই।

২. খুৎবা চলাকালীন সময়ে প্রবেশকারী মুসল্লীরা দু রাকাআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামায না  পড়েই বসে যায়। এটা সুন্নাতের খেলাফ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ লঙ্ঘন।

৩. খুৎবার আগে কাবলাল জুমু'আ শিরোনামে চার রাকাআত সালাত বাধ্যতামূলক করে নেওয়া। অথচ এর পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই।

৪. সালাত আদায়ের পূর্বে পাগড়ি পরিধান করা। পাগড়ি পরে জুমু'আ আদায় করলে এক জুমু'আয় ৭০ জুমু'আর সওয়াব মিলে- এ মর্মে বক্তব্যটি কোন সহীহ হাদীসে নেই। বরং এটা ‘মওযূ হাদীস' অর্থাৎ বানোয়াট কথা।

৫. জুমুআর আলোচনা ও খুৎবা চলাকালীন সময়ে যাতে কেউ কোন সালাত আদায় না করে  সে জন্য মসজিদে লালবাতি জ্বালিয়ে রাখা- এমন নির্দেশ প্রদান করা জায়েয নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) খুৎবার ভেতরেও দু রাকাআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ' সালাত আদায় করে বসতে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ইমাম সাহেবের বাংলা বয়ানের সময় নতুন আগমনকারী মুসল্লীদেরকে লাল বাতি জ্বালিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়। এটা সম্পূর্ণ সুন্নাতবিরোধী কাজ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

৬. স্বর্ণ ও রেশমি কাপড় পরে পুরুষদের মসজিদে গমন করা। উল্লেখ্য যে, স্বর্ণ ও রেশম নারীদের জন্য হালাল আর পুরুষদের জন্য হারাম।

৭. বিশেষ করে জুমু'আর দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়া- এটা সঠিক নিয়ম নয়।

৮. শুধু শুক্রবার এলে নফল রোযা রাখা- এ কাজ রাসূলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন।

৯. খুৎবার পূর্বে আরেকটি বাংলা বয়ান প্রদান করা। এমন করলে খুৎবার সংখ্যা তিনটি হয়ে যায়, যা শরীআতসম্মত নয়।

১০. কোন কোন এলাকায় কেউ কেউ জুমু'আ পড়ে আবার যোহরও পড়ে। এটা এক ঘৃণিত বিদ'আত।

১১. এ দিনে সূরা দুখান পড়লে সাওয়াব বেশি হয় এমন ধরনের হাদীসটি সহীহ নয়।(যইফ,জামে সগীর: ৫৭, ৬৭, ৪৭৬৮)।

১২. এ দিনে সূরা আলে ইমরান পড়ার হাদীসটিও জাল। (যইফ, জামে সগীর: ৫৭৫৯)

১৩. জুমু'আর সালাত শেষে ৭ বার সূরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ার বিষয়ে দুটি হাদীসের একটি জাল অপরটি দুর্বল। (যইফ, জামে সগীর: ৫৭৫৮, ৫৭৬৪)

১৪. কোন কোন মানুষের জুমু'আয় না যাওয়া বা এর প্রতি গাফলতি করা।

১৫. জুমু'আর নিয়্যত করে মসজিদে না যাওয়া, বরং সাধারণ অভ্যাস হিসেবে যাওয়া। কেননা, জুমু'আ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়্যত একটি অপরিহার্য শর্ত।

১৬. জুমু'আর রাতে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিলম্বে ঘুমানো, যা পরবর্তী দিনের  ফজর পড়তে বিঘ্ন ঘটায়।

১৭. খুৎবার প্রতি অবহেলা প্রদর্শন। ফলে কেউ কেউ খুৎবা শুরু হলে পরে মসজিদে আসে বা  জামা'আত দাঁড়িয়ে গেলে মসজিদে আসে।

১৮. দ্বিতীয় আযানের পরও বেচা-কেনা করা। অথচ এ সময় বৈধ বেচা-কেনাও হারাম। (সূরা জুমু'আ: ৯)।

১৯. সামনে খালি জায়গা রেখে পেছনেই বসে পড়া।

২০. বাচ্চা, শিশু বা অন্য কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসা।

২১. মানুষকে ফাঁক করে, ঘাড় ডিঙ্গিয়ে, চাপাচাপি করে লোকদেরকে কষ্ট দিয়ে সামনে গিয়ে বসা।

২২. জোরে কথাবার্তা বলতে থাকা বা কোন কিছু পড়া, যা অন্যদেরকে ডিস্টার্ব করে।

২৩. আযানের পর বিনা উযরে মসজিদ থেকে বের হওয়া।

২৪. মনোযোগ দিয়ে খুবা শ্রবণ না করা, অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া।

২৫. নামাযরত অবস্থায় অতিমাত্রায় নড়াচড়া করা, সালাম ফেরানোর পর তাড়াহুড়া করে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, মুসল্লীদের সামনে দিয়ে হাঁটা, বের হওয়ার সময় দরজায় ভীড় জমানো ও ধাক্কাধাক্কি করা এবং ফরয সালাতের পর মাসনূন যিকির-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল না করা।

২৬. ইমাম মুক্তাদি মিলে সম্মিলিত দু'আর জন্য বসে থাকা। অথচ আল্লাহর রাসূল (সা.) কখনো এরূপ করেননি।