জুমু'আর সালাতের ফযীলত ও তা আদায়কারীর জন্য ঘোষিত পুরস্কার
১. কুরবানী করার সাওয়াব অর্জিত হয়: দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু। কুরবানী করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়।আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি জুমু'আর দিন ফরয গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে একটি মুরগি কুরবানী করল। আর পঞ্চম পিরিয়ডে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম সাহেব যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারী: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।
২. মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে ফেরেশতারা অগ্রগামীদের নাম তালিকাভুক্ত করেন: জুমু'আর সালাতে কারা অগ্রগামী, ফেরেশতারা এর তালিকা তৈরি করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমু'আর দিন মসজিদের প্রত্যেক দরজায় ফেরেশতা দাঁড়ানো থাকে। মসজিদে কে প্রথম এল, এরপর কে এল, এ সিরিয়াল অনুযায়ী তারা মুসল্লীদের নাম ফেরেশতাদের খাতায় লিপিবদ্ধ করে থাকেন।আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন,
“জুমু'আর দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা এসে হাজির হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকে। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে ঢুকেন তাদের জন্য উট, ২য় বারে যারা আসেন তাদের জন্য গরু, ৩য় বারে যারা আসেন তাদের জন্য ছাগল, ৪র্থ বারে যারা আসেন তাদের জন্য মুরগি ও সর্বশেষ ৫ম বারে যারা আগমন করে তাদের জন্য ডিম কুরবানী বা দান করার পরিমাণ সওয়াব লিখে থাকেন। আর যখন ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন তখন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান। (বুখারী: ৯২৯, ইফা ৮৮২, আধুনিক ৮৭৬)
৩. দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়: জুমআর দিনের আদব যারা রক্ষা করে তাদের দশ দিনের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালোভাবে পবিত্র হলো অতঃপর মসজিদে এল, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুমু'আর মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সাথে আরো তিন দিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুৎবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল সে যেন অনর্থক কাজ করল। (মুসলিম: ৮৫৭)।
৪. জুমু'আর আদব রক্ষাকারীর দশ দিনের গুনাহ মুছে যায়: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমু'আর সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়।
(ক) এক ধরনের লোক আছে, যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া আর কিছুই পাবে না।
(খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে, যারা জুমু'আয় হাজির হয় সেখানে দু'আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না।
(গ) তৃতীয় প্রকার লোক হলো, যারা জুমুআয় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনে, কারো ঘাড় ডিঙ্গিয়ে। সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুমু'আর মধ্যবর্তী ৭ দিনসহ আরো তিন দিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহখাতা আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেন। (আবু দাউদ: ১১১৩)।
৫. প্রতি পদক্ষেপে এক বছর নফল রোযা ও এক বছর সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার সাওয়াব অর্জিত হয়: যে ব্যক্তি আদব রক্ষা করে জুমু'আর সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছর রোযা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব লিখা হয়। আউস বিন আউস আস সাকাফী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমু'আর দিন যে ব্যক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরয গোসল করে এবং) নিজেও ফরয গোসল করে, পূর্বাহ্নে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনে, কোন কিছু নিয়ে খেল-তামাশা করে না। সে ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছর ব্যাপী রোযা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সাওয়াব।(মুসনাদে আহমদ: ৬৯৫৪, ১৬২১৮)।
৬. দুই জুমু'আর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা: জুমু'আর সালাত জুমু'আ আদায়কারীর জন্য দুই জুমু'আর মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমু'আ থেকে পরবর্তী জুমুআ, এক রমযান থেকে পরবর্তী রমযানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সকল (ছগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে। (মুসলিম: ২৩৩)।