১. হানাফী আলেমগণের মতে, বিতরের সালাত ওয়াজিব। অপর তিন মাযহাবের ইমামগণের মতে, এ সালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
২. এ সালাতের ওয়াক্ত হলো ইশার পর থেকে ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। শেষ রাতে ফজরের পূর্বে আদায় করা উত্তম। কেননা, সে সময় আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আর সে সময় দু'আ কবুল হয়ে থাকে। তবে ঘুম থেকে উঠতে না পারার আশঙ্কা থাকলে ইশার নামাযের পরই বিতর পড়ে নেওয়া ভালো।
৩. বিতর ৩, ৫,৭, ৯, ১১ ও ১৩ রাকআত পর্যন্ত পড়া যায়। এমনকি এক রাকআতও পড়া জায়েয আছে। (আবু দাউদ: ১৪২২, নাসাঈ: ১৭১২)
৪. প্রথম রাকআতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরূন এবং তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাছ পড়া সুন্নাত। তবে যেকোন সূরা দিয়ে পড়া বৈধ।
৫. বিতরে দু'আ কুনুত পড়া ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাত। তাই কখনো কুনূত ছুটে গেলে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না। কুনূত কেউ না জানলে শেখার চেষ্টা করবে। তবে এর বিকল্প হিসেবে অন্য কিছু পড়ার দরকার নেই।
৬. দু'আ কুনূত শেষ রাকআতে পড়তে হয়। কিরাআত শেষ করার পর রুকূর আগে বা রুকু থেকে উঠার পর উভয় অবস্থায় দু'আ কুনূত পড়া জায়েয (বুখারী: ১০০১ ও ১০০২)।
৭. রাসূলুল্লাহ (স) কখনো কখনো ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং ইশাতেও দুআ কুনূত পড়েছেন।
অর্থাৎ শেষ রাকআতে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’ বলার পর এ কুনূত পড়তেন। এটাকে বলা হয় কুনূতে নাযেলা'। এটা পড়া হতো যালিমদের প্রতি বদদু'আ ও অসহায় মুসলিমদের সাহায্যের জন্য। কুনূতে নাযেলা ইমাম সাহেব আওয়াজ করে পড়বেন। আর মুসল্লীরা ‘আমীন’, ‘আমীন’ বলবে।
৮. দু'আ কুনুত পড়ার শুরুতে তাকবীরে তাহরীমার মতো পুনরায় দু'হাত উঠানো অর্থাৎ ‘রাফউল ইদাঈন’ করা এবং সে সময় আল্লাহু আকবার' বলে তাকবীর দেওয়ার পক্ষে কোন সহীহ হাদীস খুঁজে পাওয়া যায় না। কাজেই এটা করা সুন্নাহ পরিপন্থী।
৯. দু'আ কুনূত’ যেহেতু দুআ, সেহেতু ঐ সময় হাত উত্তোলন করা মুস্তাহাব। অনেক সাহাবী দুআ কুনূত পড়ার সময় বুক বরাবর দু হাত তুলতেন। উমর (রা) জোরে জোরে দুআ কুনূত পড়েছেন। (বায়হাকী- ২/২১২)।
১০. দু'আর পর দু’হাত মুখে মোছার পক্ষে কোন সহীহ হাদীসের প্রমাণ পাওয়া যায় না।
১১. বিতরের সালাম ফেরানোর পর অন্য তাসবীহ পড়ার আগে ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্স’ এটি শব্দ করে তিন বার বলা সুন্নাত।
১২. বিতরের পর রাসূলুল্লাহ (স) দু' রাকআত নফল সালাতও আদায় করেছেন। তবে সদা সর্বদা নয়, মাঝে মধ্যে এটা করা সুন্নাত। এ নফল সালাত কখনো কখনো বসে আদায় করেছেন।
১৩. ভুলে বিতর না পড়ে থাকলে পরবর্তী দিনের বেলায় এটা আদায় করা যেতে পারে।
১৪. এক রাতে দু’বার বিতর আদায় করতে রাসূলুল্লাহ (স) নিষেধ করেছেন।
১৫. যদি কেউ বিতর পড়ে ঘুমিয়ে যায়, পরে আবার রাতে জেগে তাহাজ্জুদ পড়ে, তাহলে দ্বিতীয় বার বিতর পড়ার দরকার নেই।
১৬. রমযান মাস ছাড়াও তাহাজ্জুদ ও বিতর জামা'আতের সাথে পড়া যায়।
১৭. দু'আ কুনূত এক বা একাধিক পড়া যায়। হাদীসে বর্ণিত যত দু'আ আছে সেগুলোও পড়া যেতে পারে। প্রসিদ্ধ দু'টি দু'আ কুনূত নিচে দেওয়া হলো:
দু'আ কুনূত-১
اللھم اهدني فيمن هديت وعافني فيمن عافيت وتولني فيمن توليت وبارك لي فيما أعطيت وقني شر ما قضيت إنك تقضي ولا يقضى عليك وإنه لا يذل من واليت ولا يعز من عاديت تباركت ربنا وتعاليت
আল্লাহুম্মাহ দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া’আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক লী ফীমা আ’তাইত, ওয়াক্বিনী শাররামা ক্বাদাইত, ইন্নাকা তাক্বদী ওয়ালা ইউক্দা ‘আলাইকা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইত, ওয়ালা ইয়াইয্যু মান ‘আ-দাইত, তাবা-রাকতা রব্বানা ওয়া তা'আলাইত।
অর্থ: “হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো, যাদের তুমি হেদায়াত করেছ এবং আমাকে তাদের দলভুক্ত করো, যাদের তুমি রক্ষা করেছ। আমাকে অন্তর্ভুক্ত করো তাদের সাথে, যাদের তুমি পছন্দ করেছ, যা কিছু আমাকে দিয়েছ তার মধ্যে বরকত দাও এবং তুমি যে সিদ্ধান্ত নির্ধারিত করেছ, তার অনিষ্টতা থেকে আমাকে রক্ষা কর। কেবল তুমিই সকল ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নাও, কেউ তোমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তুমি যাকে বন্ধু হিসেবে নিয়েছ, সে কখনো অপমানিত হতে পারে না। তুমি যাকে শত্রু মনে কর সে সম্মান পেতে পারে না। হে আমাদের রব! তুমি বরকতময় অতি মহান! ” (তিরমিযী: ৪৬৪, নাসাঈ: ১৭৪৫, আবু দাউদ: ১৪২৫)
দু'আ কুনূত-২
اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু'মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াকালু 'আলাইকা, ওয়া নুছনী 'আলাইকাল খাইরা, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস'আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ক।
“হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমরা তোমার সাহায্য কামনা করি এবং তোমারই নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাই। তোমাকেই বিশ্বাস করি এবং তোমার উপরই ভরসা করি, তোমারই উত্তম প্রশংসা করি। সকল কৃতজ্ঞতা তোমারই প্রতি, আমরা অকৃতজ্ঞ নই। যারা তোমার অবাধ্য তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করি। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমারই জন্য সালাত আদায় করি, তোমাকেই সিজদা করি, তোমারই ইবাদাতের জন্য অগ্রসর হই, তোমারই ইবাদাতে সচেষ্ট থাকি, তোমারই রহমতের প্রত্যাশায় থাকি, তোমার আযাবকে ভয় করি।নিশ্চয়ই তোমার আযাব কাফিরদের জন্য অবধারিত।” (ইবনে খুযাইমা: ১১০০)