বর্তমানে বিদ্যমান কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত:

 শিয়াগণ মুসলিমদের নিকট বর্তমানে বিদ্যমান কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তিন কারণে:

প্রথম কারণ:

শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ সকলেই মিথ্যাবাদী।

“আর তারা বিশ্বাস করে মিথ্যা বলা ইবাদত”।

অনুরূপভাবে আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ মিথ্যাবাদী এবং ‘তাকীয়া’-র অনুসারী।

“আর তারা বিশ্বাস করে মিথ্যা বলা ইবাদত”।

সুতরাং যখন সকল সাহাবী ও আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ মিথ্যাবাদী হয়ে যায়, তখন তারা কারা, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এই কুরআন মাজীদ যথাযথভাবে পৌঁছাবে?

দ্বিতীয় কারণ:

অনুরূপভাবে শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ মিথ্যাবাদী ছিলেন। আর তারাই আল-কুরআনুল কারীম কপি করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন।

আর আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ তা বর্ণনা, সংকলন ও সত্যায়ন কোনটাই করেনি; সুতরাং কিভাবে রাফেযী ও শিয়াগণ বিদ্যমান এই কুরআনের বিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আস্থা পোষণ করবে?

তৃতীয় কারণ:

শিয়াদের মত অনুযায়ী তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে বর্ণিত বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ; যার সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে (যা তাদের নিকট মুতাওয়াতির বর্ণনা বলে বিবেচিত)। আর প্রত্যেকটি বর্ণনাই স্পষ্ট করে বলে যে, আমাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন বিকৃত, পরিবর্তিত এবং তার থেকে কম-বেশি করা হয়েছে; আর আমরা শিয়াদের গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি বিশুদ্ধ বর্ণনাও পাব না, যা প্রমাণ করবে যে, আমাদের নিকট বিদ্যমান কুরআন পরিপূর্ণ, অবিকৃত এবং অপরিবর্তিত। সুতরাং মনে হয় যেন সাব্যস্ত হওয়ার দিক থেকে (আমাদের নিকট বিদ্যমান) কুরআন মাজীদের অবস্থান শিয়াদের নিকট বিশুদ্ধ হাদিসের অবস্থানের চেয়েও অপূর্ণাঙ্গ।

আর শিয়ারা তাদের আলেম শরীফ মুর্তযা, আবূ জাফর আত-তুসী, আবূ আলী আত-তাবারসী এবং শাইখ সাদুক এ চার জন আলেমের বক্তব্য দ্বারা দলীল পেশ করে থাকে যে, তারা চারজন কুরআন বিকৃত হওয়াকে অস্বীকার করেছেন[1]। বস্তুত শিয়াদের দ্বারা (কুরআন বিকৃত না হওয়ার পক্ষে) ঐ চারজনের বক্তব্য পেশকরা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। কারণ, শিয়া মাযহাবের গণ্ডি বা পরিধি তাদের নিষ্পাপ ইমামগণ ও অধিকাংশ হাদিসবিদের বক্তব্যসমূহের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত; আর তাদের রেওয়ায়েত তথা বর্ণনার পরিমাণ দুই হাজারের বেশি, যার সবগুলোই কুরআন বিকৃত হওয়ার পক্ষে বক্তব্য প্রদান করছে। সুতরাং তাদের নিষ্পাপ(!) ইমামগণ, অধিকাংশ হাদিসবেত্তা এবং শিয়াদের প্রবীণ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যসমূহের সামনে ঐ চার মিসকীনের বক্তব্যের কোন ভারত্ব নেই। তাছাড়া ঐ চারজন এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে ‘তাকীয়া’ পদ্ধতির অনুসরণ করে (আল-কুরআনুল কারীম) অবিকৃত বলে মন্তব্য করেছেন, যে পরিস্থিতিতে তাদের (আল-কুরআনুল কারীম) বিকৃত বলে মন্তব্য করার কোন সুযোগ ছিল না; বিশেষ করে যখন সে ‘তাকীয়া’-এর ফযিলত এবং তাদের নিকট তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জানতে পারল। অচিরেই আমরা তার কিছু দিক এই গ্রন্থের মধ্যে যথাস্থানে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এমনকি শিয়াদের বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ ঐ চারজন আলেমের বক্তব্যসমূহের কড়া সমালোচনা করেছেন। যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-

নূরী আত-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ (فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب) নামক কিতাবের ৩৩ পৃষ্ঠায় যা এসেছে তার ভাষ্য হচ্ছে,

(لم يعرف من القدماء موافق لهم)

অর্থাৎ পূর্ববর্তী মনিষীগণ থেকে এ চারজনের মতের সপক্ষে কোন মত পাওয়া যায় না[2]।

আর শিয়াদের অধিকাংশ মুহাদ্দিস আল-কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা বিকৃতি হওয়ার কথা বিশ্বাস করে, যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ (فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب) নামক কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করে বলেন,

(وهو مذهب جمهور المحدثين الذين عثرنا على كلماتهم)

(আর এটা অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মাযহাব, যাদের বক্তব্যসমূহ আমরা জানতে পেরেছি)।

আমাদের ইচ্ছা যে, আমরা শিয়াদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে সামান্য কিছু পরিমাণ বর্ণনা সূত্র সহ পেশ করব, যাতে প্রমাণ হবে যে, তারা আল-কুরআন বিকৃত হয়েছে বলে বিশ্বাস করে থাকে।

মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থে ( باب أنه لم يجمع القرآن كله إلا الأئمة و أنهم يعلمون علمه كله) অধ্যায়, ইমামগণই আল-কুরআনকে পরিপূর্ণ সংকলন করেন এবং তারাই তার পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে) শিরোনামের অধীনে বর্ণনা করেন:

“জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ জাফর আ.-কে বলতে শুনেছি, মানুষের মধ্যে মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউ দাবি করতে পারে না যে, আল্লাহ যেভাবে কুরআন নাযিল করেছেন, সে তা পরিপূর্ণভাবে সেভাবে সংকলন করেছে; বরং আলী ইবন আবি তালিব ও তার পরবর্তী ইমামগণই আল্লাহ যেভাবে তা নাযিল করেছেন, ঠিক সেভাবে সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন।”

কুলাইনী তার উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থের ৬৭ পৃষ্ঠায় (ভারতীয় ছাপা) আরও বর্ণনা করেন:

“সালেম ইবন সালামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট (কুরআন থেকে) পাঠ করছিল; আর আমি আল-কুরআনের এমন কতগুলো শব্দ শুনলাম, যা কুরআনের সর্বজনবিদিত পাঠের মত নয়। অতঃপর আবূ আবদিল্লাহ বললেন: তুমি এই ধরনের পাঠ থেকে বিরত থাক; পাঠ কর মানুষ যেভাবে পাঠ করে; যতক্ষণ না কায়েম বা মাহদীর উত্থান ঘটবে, যখন সে কায়েম বা মাহদীর উত্থান হবে, তখন আল্লাহর কিতাবকে তার সীমারেখায় রেখে পাঠ করা হবে; আর তিনি কুরআনের ঐ কপিটি বের করবেন, যা আলী আ. লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি আরও বললেন, আলী আ. যখন তা লিপিবদ্ধ করে অবসর হলেন, তখন তিনি জনগণের নিকট তা বর্ণনা করলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন: এটা আল্লাহ তা‘আলার কিতাব, যেমনিভাবে তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেছেন; আমি দু’টি ফলক থেকে তা সংকলন করেছি। তখন লোকেরা বলল: আমাদের নিকটে তো কুরআন সংকলিত রয়েছে; এর কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। অতঃপর আলী বললেন: জেনে রাখ! আল্লাহর শপথ, আজকের এই দিনের পরে তোমরা তা আর কখনও দেখতে পাবে না; কারণ, যখন আমি তা সংকলন করি, তখন আমার উপর দায়িত্ব ছিল যে, আমি তা তোমাদেরকে জানাব, যাতে তা তোমরা পাঠ করতে পার।”[3]

কুলাইনী তার উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থের (ভারতীয় ছাপা) ৬৭০ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণনা করেন:

“আহমদ ইবন মুহাম্মদ ইবন আবি নসর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার নিকট আবুল হাসান আ. একটি কুরআনের কপি হস্তান্তর করলেন এবং বললেন, তুমি তাতে দৃষ্টি দেবে না; কিন্তু আমি তা খুলে ফেললাম এবং তাতে পড়লাম "لم يكن الذين كفروا" অতঃপর তাতে পিতার নামসহ কুরাইশ বংশের সত্তর ব্যক্তির নাম পেলাম।”

কুলাইনী তার উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থের ২৬৩ পৃষ্ঠায় ( باب فيه نكت و نتف من التنزيل في الولاية) নামক অধ্যায়ে বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত: " و لقد عهدنا إلي آدم من قبل كلمات في محمد و علي و فاطمة و الحسن و الحسين و الأئمة من ذريتهم فنسي " (আর আমি ইতঃপূর্বে আদমের প্রতি তার বংশধরের মধ্য থেকে মুহাম্মদ, আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন এবং ইমামদের ব্যাপারে কতগুলো নির্দেশ দান করেছিলাম; কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল।) আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অনুরূপই অবতীর্ণ হয়েছিল।”

কুলাইনী তার উসুলুল কাফী (أصول الكافي) নামক গ্রন্থের ২৬৩ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আ. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এই আয়াত নাযিল করেন:

" يا أيها الذين أوتوا الكتاب آمنوا بما نزلنا في علي نورا مبينا "

“হে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে! আমরা আলী’র ব্যাপারে যে সুস্পষ্ট নুর বা আলো অবতীর্ণ করেছি, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর।”

আর তাদের কেউ কেউ বলে: ওসমান কুরআনের কপিগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে এবং আলী আ. ও তার পরিবার-পরিজনের মর্যাদা বর্ণনায় যেসব সূরা ছিল, সে তা ধ্বংস কর দিয়েছে; তন্মধ্যে এই সূরাটিও ছিল:

" بسم الله الرحمن الرحيم يا أيها الذين آمنوا آمنوا بالنورين أنزلناهما يتلوان عليكم آياتي و يحذرانكم عذاب يوم عظيم نوران بعضهما من بعض و أنا السميع العليم ".

(আল্লাহর নামে শুরু করছি; হে ঈমানদারগণ! তোমরা দুই নুরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমরা নাযিল করেছি; তারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং মহান দিবসের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করবে; উভয় নুর পরস্পর পরস্পরের অংশ; আর আমি শ্রবণকারী, জ্ঞানী।)[4]

আর মোল্লা হাসান উল্লেখ করেন:

“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে কম-বেশি করা না হত, তবে কোন বিবেকবানের কাছেই আমাদের হক (অধিকার) গোপন থাকত না।”[5]

আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী ‘আল-ইহতিজাজ’ (الاحتجاج) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন:

“আবূ যর গিফারী থেকে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন, তখন আলী কুরআন সংকলন করেন এবং তা মুহাজির ও আনসারদের নিকট নিয়ে আসেন; অতঃপর তিনি তা তাদের নিকট পেশ করেন; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই জন্য তাকে অসিয়ত করেছিলেন। অতঃপর যখন আবূ বকর তা খুললেন, তখন প্রথম পৃষ্ঠার শুরুতেই বের হয়ে আসল সম্প্রদায়ের লোকদের দোষ-ত্রুটি ও অসম্মানের কথা; অতঃপর ওমর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল এবং বলল: হে আলী! তুমি তা ফেরত নিয়ে যাও; কারণ, এতে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। অতঃপর আলী আ. তা ফেরত নিয়ে নিলেন এবং সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। অতঃপর যায়েদ ইবন সাবিতকে হাযির করা হল, আর সে ছিল কুরআনের কারী (পাঠক); অতঃপর তাকে ওমর বলল: আলী আমাদের নিকট এমন এক কুরআন নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে মুহাজির ও আনসারদের অসম্মান ও অপমান করা হয়েছে। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, আমরা কুরআন সংকলন করব এবং তার থেকে ঐ অংশ বাদ দেব, যাতে মুহাজির ও আনসারদের অসম্মান ও অপমান করা হয়েছে। অতঃপর যায়েদ তার আহ্বানে সাড়া দিল এবং বলল, যদি আমি তোমাদের দাবি মোতাবেক কুরআন সংকলনের কাজ সমাপ্ত করি; আর আলীও তার সংকলন করা কুরআন প্রকাশ করে, তবে কি তোমরা যে কাজ করেছ, তা বাতিল করে দেবে না? তখন ওমর বলল: তাহলে উপায় কী? যায়েদ বলল: উপায় সম্পর্কে তোমরাই ভাল জান। তখন ওমর বলল: তাকে হত্যা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই এবং আমাদের স্বস্তিও নেই। অতঃপর সে খালিদ ইবন ওয়ালিদের হাতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করল, কিন্তু এই কাজে সে সক্ষম হয়নি। সুতরাং যখন ওমর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন তারা আলী আ.-এর নিকট আবেদন করে যে, তিনি যেন তাদের নিকট কুরআন হস্তান্তর করেন; যাতে তারা তাতে পরিবর্তন করতে পারে। অতঃপর ওমর বলল: হে হাসানের পিতা! যদি আপনি ঐ কুরআনটা নিয়ে আসতেন, যা আপনি আবূ বকরের নিকট নিয়ে এসেছিলেন; কেননা শেষ পর্যন্ত আমরা তার ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছি; তখন তিনি বললেন: অসম্ভব! এটা পুনরায় নিয়ে আসার আর কোন সুযোগ নেই; আমি তো আবূ বকরের নিকট তা শুধু এই জন্য নিয়ে এসেছিলাম, যাতে তোমাদের উপর দলিল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তোমরা কিয়ামতের দিন এই কথা বলতে না পার: (إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَٰذَا غَٰفِلِينَ) (আমরা তো এই বিষয়ে গাফিল ছিলাম); অথবা তোমরা বলতে না পার: (مَا جِئۡتَنَا بِبَيِّنَةٖ) (তুমি তো আমাদের নিকট প্রমাণ নিয়ে আস নি)। আমার নিকট যে কুরআন রয়েছে, তা পবিত্র ব্যক্তিগণ ও আমার বংশের অসীগণ ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবে না; অতঃপর ওমর বলল: তা প্রকাশ করার কোন নির্দিষ্ট সময় আছে কি? তখন আলী আ. বলল: হ্যাঁ, যখন আমার বংশধর থেকে কায়েম (অর্থাৎ মাহদী) শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তখন সে তা প্রকাশ করবে এবং জনগণ তা গ্রহণ করবে।”[6]

আর নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ (فصل الخطاب)-এর মধ্যে বলেন:

“আমীরুল মুমিনীনের একটি বিশেষ কুরআন ছিল, যা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের পর নিজেই সংকলন করেন এবং তা জনসমক্ষে পেশ করেন; কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করে। অতঃপর তিনি তা তাদের দৃষ্টি থেকে গোপন করে রাখেন; আর তা ছিল তার সন্তান তথা বংশধরের নিকট সংরক্ষিত, ইমামত তথা নেতৃত্বের সকল বৈশিষ্ট্য ও নবুয়তের ভাণ্ডারের মত যার উত্তরাধিকারী হয় এক ইমাম থেকে অপর ইমাম। আর তা প্রমাণ (মাহদী) এর নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। -আল্লাহ আল্লাহ দ্রুত তাকে মুক্ত করে দিন- ; তিনি তখন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন এবং তাদেরকে তা পাঠ করার নির্দেশ দিবেন; আর তা সংকলন, সূরা ও আয়াতসমূহের ধারাবাহিকতার দিক থেকে বিদ্যমান এই কুরআনের বিপরীত; এমনকি শব্দসমূহও কম-বেশি করার দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিপরীত। আর যেখানে সত্য আলী’র সাথে; আর আলী সত্যের সাথে, সেখানে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে উভয়দিক থেকেই পরিবর্তন রয়েছে; আর এটাই উদ্দেশ্য।”[7] হ্যাঁ, সে (নূরী তাবরসী এর) এ রকম ভাষ্য ও শব্দে এ জঘন্য কথাটি বলেছে, আল্লাহ তার উপর অভিশাপ করুন।

আর আহমাদ ইবন আবী তালিব আত তাবারসী তার আল-ইহতিজাজ গ্রন্থে বলেন, তারপর তাদের কাছে যে সমস্ত মাসআলা আপতিত হলো নিজেদের পক্ষ থেকে তাদের কুফরীকে সাব্যস্ত করার জন্য তারা সেগুলোকে একত্রিত করতে ও সংকলন করতে বাধ্য হলো... তাছাড়া তারা আরও এমন কিছু তাতে বর্ধিত করলো যার অগ্রহণযোগ্যতা ও অস্বীকৃতির ব্যাপারটি ছিল প্রকাশিত .. এভাবে মুলহিদ শ্রেণীর লোকদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী এর উপর মিথ্যাচার করে কুরআন শুরু করল। আর এজন্যই মিথ্যা ও অসার কথা তারা বলেছে এবং বলে থাকে[8]। [9]

হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ (فصل الخطاب) নামক গ্রন্থের মধ্যে আরো বলেন:

“অনেক প্রবীণ রাফেযীর নিকট থেকে বর্ণিত আছে যে, আমাদের নিকট যে কুরআন বিদ্যমান আছে, তা ঐ কুরআন নয়, যা আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন; বরং তা রদবদল করা হয়েছে এবং করা হয়েছে তাতে কম-বেশি।”[10]

মোল্লা হাসান বর্ণনা করেন:

“আবূ জাফর থেকে বর্ণিত, আল-কুরআন থেকে অনেক আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে; আর কতগুলো শব্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।”[11]

মোল্লা হাসান আরও বলেন:

“আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের সুত্রে বর্ণিত এসব কাহিনী ও অন্যান্য বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের মধ্যে প্রচলিত কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ কুরআনের মত পরিপূর্ণ নয়; বরং তার মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার পরিপন্থী আয়াত যেমন রয়েছে; আবার তেমনি পরিবর্তিত ও বিকৃত আয়াতও রয়েছে। আর তার থেকে অনেক কিছু বিলুপ্ত করা হয়েছে; তন্মধ্যে অনেক জায়গায় আলী’র নাম বিলুপ্ত করা হয়েছে; আবার একাধিক বার "آل محمد" (মুহাম্মদের বংশধর) শব্দটি বিলুপ্ত করা হয়েছে; আরও বিলুপ্ত করা হয়েছে মুনাফিকদের নামসমূহ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পছন্দসই ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানোও নয়।”[12]

আর কুলাইনী বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় জিবরাঈল আ. যে কুরআন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে এসেছে, তাতে আয়াত সংখ্যা সতের হাজার।”[13]

অথচ আমাদের সামনে বিদ্যমান কুরআনে আছে ছয় হাজার ছয়শত ছেষট্টি আয়াত[14]। সুতরাং মনে হচ্ছে যেন তার থেকে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আয়াত বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং শুধু এক তৃতীয়াংশ আয়াত বাকি আছে। ‘মিরআতুল ‘ওকুল’ (مرآة العقول) নামক গ্রন্থের লেখক কুলাইনী কর্তৃক আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীসের টীকায় বলেন: ‌সুতরাং হাদিসটি বিশুদ্ধ; আর এই কথা অস্পষ্ট নয় যে, আল-কুরআনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও রদবদলের ব্যাপারে এই হাদিসটি ও আরও বহু বিশুদ্ধ হাদিসের বক্তব্য সুস্পষ্ট। আর আমার মতে, এই অধ্যায়ের হাদিসগুলো অর্থের দিক থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ের এবং সামগ্রিকভাবে এগুলোকে উপেক্ষা করার মানে মূলত হাদিসের উপর নির্ভরশীলতাকে বাধ্যতামূলকভাবে উপেক্ষা করা; বরং আমার ধারণা, এই অধ্যায়ের হাদিসগুলো ইমামতের হাদিসের চেয়ে কম নয়। সুতরাং তারা কিভাবে হাদিস দ্বারা তা সাব্যস্ত করবে।[15]

‘আল-কাফী’ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার মোল্লা খলিল আল-কাযবীনী উপরে উল্লেখিত হাদিসের সত্যতা প্রসঙ্গে ফারসি ভাষায় বলেন, যার আরবি অনুবাদের (বাংলা) হল:

“তার (হাদিস) দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বহু আয়াত আল-কুরআন থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে; আর তা প্রসিদ্ধ কপিসমূহের মধ্যে নেই। আর বিশেষ ও সাধারণ পদ্ধতিতে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসসমূহ আল-কুরআনের একটা বিরাট অংশ বিলুপ্তির প্রমাণ করে। আর এই হাদিসগুলো একটা বিরাট সংখ্যায় পৌঁছেছে, যার সবগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা রীতিমত দুঃসাহস বলে বিবেচনা করা হয়। আর দাবি করা হয় যে, গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান এই কুরআন জটিলতা মুক্ত নয়। আর আবূ বকর, ওমর ও ওসমানের কর্মকাণ্ড উপলব্ধি করার পর আল-কুরআন সংকলনের ব্যাপারে সাহাবী ও ইসলামের অনুসারীগণ কর্তৃক গুরুত্বারোপের দলিলগুলো দুর্বল দলিল বলে প্রমাণিত। আর অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ) আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করাটা দলিলের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। কারণ, এখানে আয়াতটি অতীতকালীন শব্দ দ্বারা পেশ করা হয়েছে এবং তা মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। আর এই সূরা নাযিল হওয়ার পর মক্কাতে আরও অনেক সূরা অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই সূরাগুলো ছাড়া মদিনাতেও আরও বহু সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাতে এই কথা বুঝায় না যে, গোটা কুরআন সংরক্ষিত ...। আর কুরআন সংরক্ষণের দ্বারা এই কথাও বুঝায় না যে, তা সকল মানুষের নিকট সংরক্ষিত থাকবে। কারণ, হতে পারে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তা সংরক্ষিত থাকবে যুগের ইমাম ও তার অনুসারীদের নিকট, যারা তার গোপন রহস্যের অধিকারী।”[17]

হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ (فصل الخطاب) নামক গ্রন্থের মধ্যে আরও বলেন:

“কুরআনের বিশেষ বিশেষ স্থানের ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসসমূহ পূর্বে আলোচিত পদ্ধতিসমূহের কোন এক পদ্ধতিতে কুরআনের কোন কোন শব্দ, আয়াত ও সূরার পরিবর্তন ও রদবদল প্রমাণ করে। আর এর পরিমাণ অনেক বেশি; এমনকি সাইয়্যেদ নিয়ামত উল্লাহ আল-জাযায়েরী তার কোন কোন গ্রন্থে বলেন: এই বিষয়টি প্রমাণ করার মত হাদিসের সংখ্যা দুই হাজারেরও অধিক এবং এই হাদিসগুলো প্রসিদ্ধ হাদিস বলে দাবি করেছেন মুফিদ, পণ্ডিত দামাদ, আল্লামা আল-মুজাল্লেলী প্রমুখের মত একদল; তাছাড়া শাইখও তার ‘তিবয়ান’ গ্রন্থে তার সংখ্যাধিক্যতার কথা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। এমনকি আরও একদল হাদিসগুলোকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে দাবি করেছে, যাদের আলোচনা আসছে এই অধ্যায়ের শেষে।”[18]

হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: মুহাদ্দিস সাইয়্যেদ আল-জাযায়েরী ‘আনওয়ার’ গ্রন্থে বলেন, যার অর্থ হল: বিশেষ ব্যক্তিবর্গ প্রসিদ্ধ তথা মুতাওয়াতির হাদিসসমূহের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন, যা আল-কুরআনের মধ্যে বাক্যগত, শব্দগত ও ই‘রাবগত রদবদল ও বিকৃতি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ বহন করে।[19]

আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিস সুস্পষ্ট করে দিয়েছে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে বিকৃতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও কম-বেশি সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে, যা বিচ্ছিন্নভাবে পূর্ববর্তী দলিলসমূহের মধ্যে আলোচিত হয়েছে। আর মানুষ ও জিন জাতির নেতার হৃদয়ে মু‘জিযা স্বরূপ আয়াত অথবা সূরার সাথে নির্দিষ্ট না করে যা নাযিল করা হয়েছে, এই কুরআন তার থেকে অনকে কম ও অপূর্ণাঙ্গ। আর তা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান আছে।[20]

আন-নুরী আত-তাবারসী আরও বলেন: জেনে রাখবেন, এই হাদিসগুলো নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে উদ্ধৃত; শরীয়তের বিধি-বিধান ও সুন্নাতে নববী সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে আমাদের সহকারীবৃন্দ যার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে।[21]

শিয়া আলেমগণ অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করেছেন, যেগুলো আল-কুরআনের মধ্যে ব্যাপক আকারে বিকৃতির প্রমাণ করে এবং আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী আল-কুরআনের মধ্যে বিকৃতির ব্যাপারে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণও পেশ করেছেন; যেমন তিনি বলেন: আকল তথা বিবেকের ফয়সালা হল, যখন আল-কুরআন জনগণের নিকট বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আকারে ছিল এবং তা সংকলনের জন্য যারা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তারা নিষ্পাপ ছিল না; তখন স্বাভাবিকভাবেই তার পরিপূর্ণ ও যথাযথ সংকলন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে, স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তি তথা ইমামের আবির্ভাব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মানুষ গ্রন্থসমূহ (মাসহাফ) ও তিলাওয়াতের মধ্যে যা আছে, সে অনুযায়ী আমল করতে বাধ্য। এটাও আহলে বাইত আ. সুত্রে জানা ও মুতাওয়াতির বিষয়। আর এই অধ্যায়ের অধিকাংশ হাদিস আল-কুরআনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও রদবদলের উপর দলিল; অচিরেই তার অনেকগুলো দলিল সামনের অধ্যায়সমূহে আসবে; বিশেষ করে আল-কুরআনের ফযিলতের অধ্যায়ে। আল্লাহ তা‘আলা চাহে তো এই প্রসঙ্গে প্রাণভরে অনেকগুলো বক্তব্য পেশ করব।[22]

আর ঐসব বর্ণনার (রেওয়ায়েতের) অংশ বিশেষ বিস্তারিত আলোচনা করার পর, যা শিয়াগণ তাদের গ্রন্থসমূহে বর্ণনা করেছে এবং তাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে সত্যায়ণ করেছে যে, নিশ্চয় তা (এসব বর্ণনা) কুরআনের মধ্যে বিকৃতি হওয়ার ব্যাপারে বিশুদ্ধ, সুস্পষ্ট ও মুতাওয়াতির পর্যায়ের; আমরা এই বর্ণনা অনুযায়ী তাদের আকিদার উল্লেখ করব এইভাবে যে, নিশ্চয় বিদ্যমান কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত; সুতরাং ‘আত-তাফসীরুস সাফী’ (التفسير الصافي)-এর গ্রন্থকার বলেন:

“এই ব্যাপারে আমাদের শাইখবৃন্দের আকিদা-বিশ্বাস ইসলামের বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী’র বক্তব্য ও বিশ্বাস থেকে পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট; তিনি কুরআনের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও বিকৃতির আকিদায় বিশ্বাসী। কারণ, তিনি এই অর্থে তার ‘কাফী’ নামক গ্রন্থে বহু বর্ণনার (রেওয়ায়েতের) অবতারণা করেছেন; কিন্তু তাতে দোষ-ত্রুটি প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি; এমনকি গ্রন্থের শুরুতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাতে যা বর্ণনা করেছেন, তা তিনি সত্য বলে বিশ্বাস করেন। অনুরূপ হলেন তার শিক্ষক আলী ইবন ইবরাহীম আল-কুমী; কারণ, তার তাফসীরখানা এ ধরণের বর্ণনা দ্বারা ভরপুর এবং তাতে তার বাড়াবাড়িও আছে। আর অনুরূপ হলেন শাইখ আহমদ ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী; কেননা তিনিও তার ‘ইহতিজাজ’ নামক গ্রন্থে তাদের পথ ও পন্থে চলেছেন।”[23] অর্থাৎ তাদের মত করে তিনি তার গ্রন্থে এ সব বর্ণনা উল্লেখ বর্ণনা করেছেন।

আর শিয়া মুহাদ্দিসদের অনেকে এই বিষয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন; তাতে তারা প্রমাণ করেছেন যে, আল-কুরআন বিকৃত এবং তাতে রদবদল করা হয়েছে। যেমন হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নূরী আত-তাবারসী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ (فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب ) -এর মধ্যে ঐসব গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন।

আর তিনি তার কিতাবের ভূমিকায় বলেন: এটা একটি চমৎকার গ্রন্থ ও পবিত্র কিতাব, যা আমি সম্পাদন করেছি আল-কুরআনের বিকৃতি এবং অত্যাচারীদের লজ্জাজনক কাজের প্রমাণ স্বরূপ; আর তার নামকরণ করেছি ‘ফাসলুল খিতাব ফি তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ (فصل الخطاب في تحريف كتاب رب الأرباب )।

অতঃপর তিনি এই বিষয়ের উপর যেসব গ্রন্থ রচনা করেছেন, এই কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় তার একটি তালিকা পেশ করেছেন; তিনি উল্লেখ করেছেন:

১. কিতাবুত তাহরীফ (كتاب التحريف)

২. কিতাবুত তানযীল ওয়াত তাগয়ীর (كتاب التنزيل و التغيير)

৩. কিতাবুত তানযীল মিনাল কুরআন ওয়াত তাহরীফ (كتاب التنزيل من القرآن و التحريف)

৪. কিতাবুত তাহরীফ ওয়াত তাবদীল (كتاب التحريف و التبديل)

৫. আত-তানযীল ওয়াত তাহরীফ (التنزيل و التحريف)

সুতরাং এই গ্রন্থসমূহ আমাদেরকে জানাচ্ছে যে, তাদের নিকট এই আকিদাটি (বিশ্বাসটি) দীনের জরুরী বিষয়সমূহের অন্যতম একটি; যার কারণে তারা এই বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।

আর এই বর্ণনাগুলো দুর্বল বলে শিয়াদের কেউ কেউ যে আপত্তি উত্থাপন করে, তা এক ধরনের দুর্বল আপত্তি; কারণ, অধিকাংশ শিয়া মুহাদ্দিস ও তাদের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এই বর্ণনাসমূহ পেশ করেছে এবং সত্যায়ণ করেছেন। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ এই বর্ণনাসমূহের বিপরীত কোন বর্ণনা পেশ করে নি এবং বর্ণনা করে নি এই আকিদার বিপরীত ভিন্ন কোন আকিদা; বরং তারা নিশ্চিন্তমনে কুরআন বিকৃত হওয়ার আকিদায় বিশ্বাসী। আর আমরা শিয়া আলেমদের নিকট আবেদন করি, তারা যখন স্বীকৃতি প্রদান করে যে, আল-কুরআন অবিকৃত ও অপরিবর্তিত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে, তখন তাদের উপর বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে:

প্রথমত: তারা তাদের নিষ্পাপ ইমামদের নিকট থেকে একটি বর্ণনা (রেওয়ায়েত) নিয়ে আসবে, যা তাদের নিকট নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের মধ্য থেকে যে কোন একটি কিতাবে উল্লেখ আছে এবং তা প্রমাণ করবে যে, আল-কুরআন পরিপূর্ণভাবে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে; কিন্তু তারা এই ধরনের বর্ণনা কিয়ামত পর্যন্ত কখনও নিয়ে আসবে না।

দ্বিতীয়ত: তাদের উপর আবশ্যক হয়ে পড়বে ঐ ব্যক্তিকে কাফির বলা, যে ব্যক্তি আল-কুরআনকে বিকৃত বলে এবং তাদের এই আকিদাকে পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা।

আর তাদের উপর আরও আবশ্যক হয়ে পড়বে আল-কুরআন বিকৃত হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ বর্ণিত এই বর্ণনাসমূহ তাদের সভা ও সমাবেশে প্রচার ও প্রচলন না করা; বরং এসব বর্ণনার ধারক ও বাহকগণের উপর আবশ্যক হয়ে পড়বে তাদের সভা ও সমাবেশে এগুলো প্রচার করা থেকে বিরত থাকা এবং ঐসব কিতাবসমূহকে ভুল বলে আখ্যায়িত করা, যেগুলোতে এই ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও ভ্রান্ত বর্ণনাসমূহ বর্ণিত হয়েছে। যেমন উসূলুল কাফী (أصول الكافي), আল-ইহতিজাজ (الاحتجاج) ইত্যাদি।

আমরা এই পৃষ্ঠাগুলোতে আল-কুরআনের মধ্যে বিকৃতি হওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট শিয়াদের আকিদা উপস্থাপন করেছি, যেই আকিদাকে সমর্থন যুগিয়েছে তাদের মতানুসারে মুতাওয়াতির পর্যায়ের বর্ণনা (রেওয়ায়েত) এবং তাদের মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যসমূহ। সুতরাং তাদের মধ্য থেকে কেউ তা অস্বীকার করতে পারবে না; আর তাদের এই বক্তব্যগুলো তাদের কুৎসিত চেহারা থেকে মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে এবং আমাদের সামনে পবিত্র কিতাবকে কেন্দ্র করে তাদের আকিদাসমূহ স্পষ্ট করে দিয়েছে, অথচ এ কিতাব এমন যে, বাতিল তার সামনে ও পেছনে কোনভাবেই আগমন করতে পারে না। কারণ এটি প্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব। এই সম্মানিত কিতাবের ব্যাপারে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলেন:

﴿ الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ﴾ [سورة البقرة: 1-2[

“আলিফ-লাম-মীম, এটা সেই কিতাব; এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তকীদের জন্য তা পথ প্রদর্শক” —(সূরা আল-বাকারা: ১-২)

তিনি আরও বলেন:

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [سورة الحجر: 9]

“আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক”। — (সূরা আল-হিজর: ৯)

তিনি আরও বলেন:

﴿ لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ١٦ إِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهُۥ وَقُرۡءَانَهُۥ ١٧ فَإِذَا قَرَأۡنَٰهُ فَٱتَّبِعۡ قُرۡءَانَهُۥ ١٨ ثُمَّ إِنَّ عَلَيۡنَا بَيَانَهُۥ ١٩ ﴾ [سورة القيامة: 16-19]

“তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ব করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা তার সাথে সঞ্চালন করো না। এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি, তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর; অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।” — (সূরা আল-কিয়ামা: ১৬-১৯)

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ ﴾ [سورة البقرة: 23]

“আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ কোন সূরা নিয়ে আস।” — (সূরা আল-বাকারা: ২৩)

তিনি আরও বলেন:

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [سورة الإسراء: 88]

“বল, যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন নিয়ে আসার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, তবুও তারা এর অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না।” — (সূরা আল-ইসরা: ৮৮)

আর মুসলিমগণ সামগ্রিকভাবে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, নিশ্চয় পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত এবং তন্মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থানরত মুসলিমদের সামনে বিদ্যমান আল-কুরআনের কপিগুলোর প্রথম থেকে শুরু করে সূরা ফালাক ও নাসের শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার বাণী এবং তার ওহী, যা তিনি তাঁর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন। সুতরাং তার একটি হরফ (অক্ষর) যে অস্বীকার করবে, সে কাফির।তবে শিয়াদের কোন কোন অসতর্ক ব্যক্তি যখনই পরিপূর্ণ সংরক্ষিত বিদ্যমান কুরআনের প্রতি তার বিশ্বাস প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তখনই বলতে থাকে যে যদিও আমাদের কিতাবসমূহে কুরআন বিকৃত হওয়া সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ মওজুদ রয়েছে, তাতে কোন সমস্যা নেই।

কারণ, তোমাদের কিতাবগুলোতেও তিলাওয়াত রহিত হওয়া ও কিরাতের বিভিন্নতার কথা উল্লেখ আছে। বস্তুত: তাদের এই ধরণের প্রমাণ গ্রহণ করা ডুবন্ত ব্যক্তির খড়কুটো আঁকড়ে ধরার ন্যায়। কারণ, তিলাওয়াত রহিত হওয়ার বিষয়টি আল-কুরআনের ভাষ্য দ্বারা প্রমাণিত; অনুরূপভাবে কিরাতের বিভিন্নতার বিষয়টিও। সুতরাং কোথায় ভিজা মাটি, আর কোথায় আকাশের তারকারাজি। নির্বোধ গোঁড়ামীকারীদের থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। বর‍ং সেই অসতর্ক ব্যক্তির উচিত আমাদের সামনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলেমদের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য বা উদ্ধৃতি উপস্থাপন করা, যা সুস্পষ্ট করে বলবে যে, আল-কুরআন বিকৃত অথবা তাতে রদবদল করা হয়েছে; বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকলেই বিশ্বাস করেন যে, ‘আল-কুরআন বিকৃত’-এই কথার প্রবক্তা কাফির, মুসলিম মিল্লাত (জাতি) থেকে বহিষ্কৃত।

[1] এ চারজনের বক্তব্য যদিও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্যের অনুরূপ, কিন্তু শিয়ারা তাদের ‘তাকিয়া’ বা আসল বক্তব্য গোপন করে প্রকাশ্যে ভিন্ন বক্তব্য প্রদানের নীতি অবলম্বন করার কারণে তাদের এ বক্তব্য কতটুকু তাদের মন থেকে বের হয়েছে, তা নির্ধারণ করা কঠিন। সুতরাং শিয়ারা যখন এ চারজনের বক্তব্য পেশ করে বোঝাতে চায় যে, তাদের আলেমরাও কুরআন বিকৃত হয়েছে সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো অস্বীকার করেছে, তখন তারা তাদের অগণিত অসংখ্য বর্ণনা (যাতে কুরআন বিকৃত হয়েছে বলে বর্ণনা এসেছে) সেগুলো গ্রহণ করবে নাকি এ চারজনের বক্তব্য (যা তাকিয়া নীতির মাধ্যমে বলা হয়েছে কিনা জানা যায় না তা) গ্রহণ করবে সেটা স্পষ্ট নয়। [সম্পাদক]

[2] এর অর্থ হচ্ছে, উক্ত গ্রন্থের লেখকের মতে, পূর্ববর্তী সবাই একবাক্যে বলেছেন যে, কুরআনে বিকৃতি হয়েছে। এ চারজন পূর্ববর্তীদের মতের বিরোধিতা করে কুরআনে বিকৃতি হয় নি বলে নতুন কথা বলেছেন। [সম্পাদক]

[3] নাউযুবিল্লাহ, কুরআন বিকৃতির বিশ্বাস কেউ করলে তার ঈমান থাকার কথা নয়; আর তারা সেই কুফরি বিশ্বাসটিকে আলী রা. এর দিকেই সম্পর্কযুক্ত করল। [সম্পাদক]

[4] ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب), (ইরানি সংস্করণ) পৃ. ১৮০

[5] মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী (تفسير الصافي), পৃ. ১১

[6] আল-ইহতিজাজ আত-তাবারসী (الاحتجاج الطبرسي), নাজাফ সংস্করণ, পৃ. ২২৫; অনুরূপ রয়েছে তাফসীরুস সাফী (تفسير الصافي)-এর মধ্যে, পৃ. ১১; অনুরূপ রয়েছে ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب)-এর মধ্যে, পৃ. ৭

[7] ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب), পৃ. ৯৭

[8] আল-ইহতিজাজ, পৃ. ৩৮৩; আহমাদ ইবন আবী তালেব আত-তাবারসী কর্তৃক রচিত।

[9] নাউযুবিল্লাহ, এভাবে সে (লেখক আহমাদ ইবন আবী তালেব আত-তাবারসী) এ উম্মতের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি মিথ্যাচার করে তাদেরকে কুরআনের মধ্যে মিথ্যা প্রবেশ করানোর অপবাদ দিল। আল্লাহ তার উপর লানত করুন।

[10] ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب), (ইরানি সংস্করণ) পৃ. ৩২

[11] মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী (تفسير الصافي), পৃ. ১১

[12] মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী (تفسير الصافي), পৃ. ১৩

[13] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), (ভারতীয় সংস্করণ) পৃ. ৬৭১

[14] গ্রন্থকার এখানে কুরআনের আয়াতসংখ্যা বর্ণনায় একটি মারাত্মক ভুল করেছেন, কুরআনের আয়াত সংখ্যা মূলত: ৬২৩৬। কোনভাবেই তার সংখ্যা ৬৬৬৬ নয়। [সম্পাদক]

[15] মোল্লা মুহাম্মদ আল-বাকের আল-মজলিসী, মিরআতুল ‘ওকুল শরহুল উসূল ওয়াল ফুরু‘ ( مرآة العقول شرح الأصول و الفروع), দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৫৩৯

[16] অর্থাৎ- “আমরাই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমরা তার সংরক্ষক”। — (সূরা আল-হিজর: ৯)

[17] মোল্লা খলিল আল-কাযবীনী, আস-সাফী শরহু উসূলুল কাফী (الصافي شرح أصول الكافي), কিতাবু ফদলুল কুরআন (كتاب فضل القران), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৭৫

[18] হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী, ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب), পৃ. ২২৭

[19] হোসাইন আন-নুরী আত-তাবারসী, ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب), পৃ. ৩১

[20] ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب), পৃ. ২১১

[21] ফসলুল খিতাব (فصل الخطاب), পৃ. ২২৮

[22] মুহাম্মদ আল-বাকের আল-মজলিসী, মিরায়াতুল ‘ওকুল শরহুল উসূল ওয়াল ফুরু‘ ( مرآة العقول شرح الأصول و الفروع), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭১।

আমরা বলব, মিথ্যবাদীদের উপর আল্লাহর লা‌নত [সম্পাদক]

[23] মোল্লা হাসান, তাফসীরুস সাফী (تفسير الصافي), পৃ. ১৪
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে