শির্ক কী ও কেন? প্রথম পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি
আল্লাহ তা‘আলার উত্তম নামাবলী ও সুমহান গুণাবলীর বৈশিষ্ট্য

কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে :

﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

‘‘আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নামাবলী রয়েছে, সুতরাং তোমরা তাঁকে সে সব নামাবলীর মাধ্যমে আহ্বান কর।’’[1]

হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

«إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا»

‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিরানববইটি নাম রয়েছে।’’[2] কুরআনুল কারীমের সূরা ‘আল-বাকারাহ’-এর ২৫৫ নং আয়াতে, সূরা ‘আল-হাশর’-এর শেষ তিন আয়াতে ও সূরা ‘আল-হাদীদ’-এর দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সে সব নামসমূহের কতিপয় নামের বর্ণনা দিয়েছেন। জামে‘ তিরমিজীতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ সব নাম সম্বলিত একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে, ‘‘যে ব্যক্তি এ সব নামসমূহ স্মরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’[3] আল্লাহ তা‘আলার এ সব নামের মধ্যকার কেবলমাত্র একটি নাম হচ্ছে তাঁর জাতি বা সত্তাগত নাম। সে নামটি হচেছ-‘আল্লাহ’। আর অবশিষ্ট নামসমূহ হচ্ছে তাঁর সিফাতী বা গুণগত নাম। গুণগত এ নামগুলো প্রকৃতপক্ষে তাঁর রুবূবিয়্যাতের সাথে সম্পর্কিত।

যেমন তাঁর সে সব নামের মধ্যে রয়েছে- তিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক (حَيٌّ و قَيُّوْمٌ), তিনি সকলের সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা خَالِقٌ و رَازِقٌ, তিনি যাবতীয় রকমের কল্যাণ ও অকল্যাণকারী (نَافِعٌ و ضَارٌّ), তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুর জ্ঞানী (عَالِمُ الْغَيْبِ وَ الشَّهَادَةِ) , তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (سَمِيْعٌ و بَصِيْرٌ), তিনি সব কিছু পরিচালনাকারী (مُدَبِّرٌ) ইত্যাদি। মহান আল্লাহ এ সব গুণের অধিকারী হয়েছেন বলেই তিনি এ জগতের সব কিছুর রবের আসনে সমাসীন হয়েছেন। তাঁর এ সব নামের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, তাঁর সৃষ্টির মধ্যকার যে যত বড় গুণী আর উপকারীই হোক না কেন কেউই তাঁর এ সব নামে নামান্বিত ও গুণান্বিত হতে পারে না। সে জন্যে যেমন এ সব নামে কারো নাম রাখা যায় না, তেমনি কাউকে এ সব নামে ডাকাও যায় না, আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমে কেউ এ সব গুণের বিন্দুমাত্র অধিকারীও হতে পারে না। তিনি চিরদিন থেকে এ সব গুণের অধিকারী। এ সব গুণের অধিকারী বলেই তিনি এ বিশ্বজগত পরিচালনা করছেন। এ সব গুণের ক্ষেত্রে তাঁর কোনো শরীক বা সমকক্ষ নেই।

>
[1]. আল-কুরআন, সূরা আল-অ‘রাফ :১৮০।

[2].বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাবুত তাওহীদ, বাব নং ১২, হাদীস নং- ৬৯৫৭; ৬/২৬৯১; মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুয যিকর, বাব নং: ১, হাদীস নং- ২৬৭৭; ৪/২০৬২।

[3]. হাদীসটি নিম্নরূপ :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: إِنَّ للهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً غَيْرَ وَاحِدٍ مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ هُوَ اللهُ الَّذِي لا إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيمُ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلاَمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ الْغَفَّارُ الْقَهَّارُ الْوَهَّابُ الرَّزَّاقُ الْفَتَّاحُ الْعَلِيمُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الْخَافِضُ الرَّافِعُ الْمُعِزُّ الْمُذِلُّ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ الْحَكَمُ الْعَدْلُ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ الْحَلِيمُ الْعَظِيمُ الْغَفُورُ الشَّكُورُ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ الْحَفِيظُ الْمُقِيتُ الْحَسِيبُ الْجَلِيلُ الْكَرِيمُ الرَّقِيبُ الْمُجِيبُ الْوَاسِعُ الْحَكِيمُ الْوَدُودُ الْمَجِيدُ الْبَاعِثُ الشَّهِيدُ الْحَقُّ الْوَكِيلُ الْقَوِيُّ الْمَتِينُ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ الْمُحْصِي الْمُبْدِئُ الْمُعِيدُ الْمُحْيِي الْمُمِيتُ الْحَيُّ الْقَيُّومُ الْوَاجِدُ الْمَاجِدُ الْوَاحِدُ الصَّمَدُ الْقَادِرُ الْمُقْتَدِرُ الْمُقَدِّمُ الْمُؤَخِّرُ الأَوَّلُ الآخِرُ الظَّاهِرُ الْبَاطِنُ الْوَالِيَ الْمُتَعَالِي الْبَرُّ التَّوَّابُ الْمُنْتَقِمُ الْعَفُوُّ الرَّءُوفُ مَالِكُ الْمُلْكِ ذُو الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ الْمُقْسِطُ الْجَامِعُ الْغَنِيُّ الْمُغْنِي الْمَانِعُ الضَّارُّ النَّافِعُ النُّورُ الْهَادِي الْبَدِيعُ الْبَاقِي الْوَارِثُ الرَّشِيدُ الصَّبُورُ قَالَ أَبُو عِيسَى هٰذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

তিরমিযী, আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবন ছাওরা : আল-জামেউস সুনান; (বৈরুত : দ্বার এহইয়াউত তুরাছিল ‘আরাবী, সংস্করণ বিহীন, সন বিহীন, কিতাবুদ দা‘আওয়াত, বাব নং ৮৩, হাদীস নং ৩৫০৭; ৫/৫৩০। (তবে হাদীসটির সনদ দুর্বল। বস্তুত এ নামগুলো ইমাম তিরমিযীর কোনো এক উর্ধ্বতন বর্ণনাকারীর পক্ষ থেকে সংযোজিত। যদিও এর অধিকাংশই কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ থেকে নেওয়া। [সম্পাদক])