নবীদের কাহিনী নবী চরিত ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
কুরআনের মু‘জেযা হওয়ার প্রমাণ সমূহ- ১৫. একজন উম্মী নবীর মুখনিঃসৃত বাণী (الكلام المخرج من فم نبى أمى)

কুরআনই একমাত্র ইলাহী গ্রন্থ, যা তাওরাত ইত্যাদির ন্যায় ফলকে লিপিবদ্ধ আকারে দুনিয়াতে আসেনি। বরং সরাসরি উম্মী নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। সাথে সাথে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-ই একমাত্র নবী, যিনি النَّبِيُّ الْأُمِّيُّ বা ‘নিরক্ষর নবী’ হিসাবে অভিহিত হয়েছেন (আ‘রাফ ৭/১৫৭, ১৫৮)। কুরআন আল্লাহর কালাম হওয়ার এটাও একটি বড় প্রমাণ যে, যার মুখ দিয়ে দুনিয়াবাসী বিজ্ঞানময় কুরআন শুনেছে, তিনি নিজে ছিলেন ‘উম্মী’ অর্থাৎ নিরক্ষর ব্যক্তি এবং মানুষ হয়েছিলেন নিরক্ষর সমাজে (জুম‘আ ৬২/২)। এমনকি আল্লাহ বলেন, وَمَا كُنْتَ تَتْلُو مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلاَ تَخُطُّهُ بِيَمِيْنِكَ إِذًا لاَرْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ ‘আর তুমি তো এর আগে কোন বই পড়োনি এবং স্বহস্তে কোন লেখাও লেখোনি, যাতে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতে পারে’ (আনকাবূত ২৯/৪৮)। তিনি অন্যত্র বলেন, مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلاَ الْإِيْمَانُ ‘তুমি জানতে না কিতাব কি বা ঈমান কি?’ (শূরা ৪২/৫২)। তাই কুরআনের ভাষা ও বক্তব্যে নিজের থেকে যোগ-বিয়োগ করার সকল প্রকার সন্দেহের তিনি ঊর্ধ্বে ছিলেন।

বস্ত্ততঃ মুহাম্মাদ (ছাঃ) ব্যতীত দুনিয়াতে এমন কোন নবী আসেননি, যার পবিত্র যবান দিয়ে সরাসরি আল্লাহর কালাম বের হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্বের একটি বড় দলীল ও একটি বড় মু‘জেযা। মানছূরপুরী বলেন, খ্রিষ্টানদের সকলে এ বিষয়ে একমত যে, তাদের চারটি ইনজীলের একটিও মসীহ ঈসার উপরে আল্লাহর পক্ষ হ’তে সরাসরি নাযিল হয়নি। বরং এগুলি স্ব স্ব লেখকদের দিকে সম্পর্কিত। উক্ত প্রসিদ্ধ চারটি ইনজীল হ’ল, মথি (إِنْجِيلُ مَتَّى), মুরকুস (مُرْقُس), লূক (لُوقَا) এবং ইউহান্না (يُوحَنَّا)। এগুলির পবিত্রতার পক্ষে খ্রিষ্টানদের যুক্তি হ’ল এই যে, এগুলি পবিত্র রূহ মসীহ ঈসা (আঃ)-এর সাহায্য নিয়ে লেখা হয়েছে’। তাদের এ দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহ’লে চারটি ইনজীলের পরস্পরের মধ্যে এত গরমিল কেন? যেগুলির বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে খৃষ্টান পন্ডিতগণ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি আদম ক্লার্ক, নূরটিন ও হারূণ প্রমুখ খ্রিষ্টান বিদ্বানগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এই যে, ইনজীলগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের কোন সুযোগ নেই। পাদ্রী ফ্রেঞ্চ স্বীকার করেছেন যে, ইনজীলগুলির মধ্যে ছোট-বড় ৩০ হাযার ভুল রয়েছে। কথা হ’ল, চারটি ইনজীলের মিলিত পৃষ্ঠা সংখ্যা একশ’-এর বেশী হবে না’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/২৭৩)। অথচ তার মধ্যেই যদি ত্রিশ হাযার ভুল থাকে, তাহ’লে বিশুদ্ধ কতটুকু আছে? আর ঐসব বইয়ের গ্রহণযোগ্যতাই বা কি? একেই তো বলে ‘সাত নকলে আসল খাস্তা’।

খ্রিষ্টান ধর্মনেতাদের এইসব দুষ্কৃতির প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,

فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ- ‘ধ্বংস ঐসব লোকদের জন্য, যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে। অতঃপর বলে যে, এটি আল্লাহর নিকট থেকে আগত। যাতে তারা এর মাধ্যমে সামান্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অতএব ধ্বংস হৌক তারা যা স্বহস্তে লেখে এবং ধ্বংস হৌক তারা যা কিছু উপার্জন করে’ (বাক্বারাহ ২/৭৯)।