(১) মদীনার বনু যাফর(بنو ظَفر) গোত্রের ‘কুযমান’ (قُزمان) ওহোদ যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেছিল। সে একাই কুরায়েশ বাহিনীর ৪ জন পতাকাবাহীসহ ৭/৮ জন শত্রুসৈন্য খতম করেছিল। যুদ্ধের ময়দানে তাকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেলে মুসলিম সেনারা তাকে উঠিয়ে মদীনায় তার মহল্লায় নিয়ে যান এবং জান্নাতের সুসংবাদ শুনান। তখন সে বলল, وَاللهِ إنْ قَاتَلْتُ إلاَّ عَنْ أَحْسَابِ قَوْمِي، وَلَوْلاَ ذَلِكَ مَا قَاتَلْتُ ‘আল্লাহর কসম! আমি যুদ্ধ করেছি আমার বংশের গৌরব রক্ষার জন্য। যদি এটা না থাকত, তাহ’লে আমি যুদ্ধই করতাম না’। অতঃপর যখন তার যখমের যন্ত্রণা অত্যধিক বৃদ্ধি পেল, তখন সহ্য করতে না পেরে সে নিজের তীর দিয়ে নিজেকে হত্যা করে ফেলল। তার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) বলেন,إنَّهُ لَمِنْ أَهْلِ النَّارِ ‘নিশ্চয়ই সে জাহান্নামী’। প্রকৃত অর্থে সে ছিল একজন মুনাফিক।[1] বংশ গৌরবের উত্তেজনাই তাকে যুদ্ধে টেনে এনেছিল। এ প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إنَّ السَّيْفَ لاَ يَمْحُو النِّفَاقَ ‘তরবারি নিফাককে দূরীভূত করে না’।[2] অর্থাৎ জিহাদে নিহত হ’লেও মুনাফেকীর পাপের কারণে সে জাহান্নামী হয়।
(২) হারেছ বিন সুওয়াইদ বিন ছামেত আনছারী : এ ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে মুসলমান ছিল। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে সে মুনাফিক ছিল। মুসলমানদের পক্ষে সে ওহোদ যুদ্ধে যোগদান করে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে সে তার স্বপক্ষীয় মুজাযযার বিন যিয়াদ আল-বালাওয়া (مُجَذَّر بن زياد البَلَوى) আনছারীকে হত্যা করে মক্কায় পালিয়ে যায়। সে তাকে মেরে কুফরী অবস্থায় আউস ও খাযরাজের মধ্যকার কোন এক যুদ্ধে তার পিতা সুওয়াইদকে হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছিল। আর এজন্য সে যুদ্ধের ময়দানকে সুযোগ হিসাবে বেছে নিয়েছিল।[3]
এতে স্পষ্ট হয় যে, কেবলমাত্র আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে যুদ্ধকারীর পরিণতি জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নয়। রাসূল (ছাঃ)-এর পতাকাতলে জিহাদে শরীক হয়েও উক্ত ব্যক্তিদ্বয় জান্নাত থেকে মাহরূম হয়ে গেল নিয়তে ত্রুটি থাকার কারণে। অথচ উছায়রিম ও ‘আমর বিন উক্বাইশ (রাঃ) এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় না করেও কেবল আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করার খালেছ নিয়তের কারণে জান্নাতী হ’লেন। এজন্যেই হাদীছে বলা হয়েছে,إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ ‘সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’।[4]
[2]. দারেমী হা/২৪১১; মিশকাত হা/৩৮৫৯ ‘জিহাদ’ অধ্যায়, সনদ ছহীহ।
[3]. ইবনু সা‘দ ৩/৪১৭; ইবনু হিশাম ২/৮৯, সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১১৪৯)।
[4]. বুখারী হা/১; মুসলিম হা/১৯০৭; মিশকাত হা/১।