নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ওহোদ যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ- ২৫. এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় না করেও জান্নাতী হ’লেন যারা (أهل الجنة بدون صلاة)

(১) আউস গোত্রের বনু ‘আব্দিল আশহাল শাখার ‘আমর বিন ছাবিত আল-উছায়রিম(عَمْرو بن ثابت الْأُصَيْرِمِ) কে আহতদের মধ্যে দেখতে পেয়ে হতাহতদের সন্ধানকারী মুসলিম বাহিনী হতবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,مَا الَّذِي جَاءَ بِك؟ أَحَدَبٌ عَلَى قَوْمِك أَمْ رَغْبَةٌ فِي الْإِسْلاَمِ؟ ‘কোন বস্ত্ত তোমাকে এখানে এনেছে? নিজ সম্প্রদায়কে সাহায্য করার উত্তেজনা, না-কি ইসলামের আকর্ষণ? উত্তরে তিনি বললেন, بَلْ رَغْبَةٌ فِي الْإِسْلاَمِ آمَنْتُ بِاَللهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ قَاتَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَصَابَنِي مَا تَرَوْنَ ‘বরং ইসলামের আকর্ষণ। আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান এনেছি। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে যুদ্ধ করেছি। অতঃপর যে অবস্থায় উপনীত হয়েছি, তাতো তোমরা দেখছই’। এরপরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বিষয়টি রাসূল (ছাঃ)-কে বলা হ’লে তিনি বলেন, إِنَّهُ لَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‘নিশ্চয়ই সে জান্নাতবাসী’।[1] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন,عَمِلَ قَلِيلاً وَأُجِرَ كَثِيرًا ‘কম আমল করল এবং পুরস্কার বেশী পেল’।[2] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,وَلَمْ يُصَلِّ لِلَّهِ صَلاَةً قَطٌّ ‘অথচ তিনি আল্লাহর জন্য এক রাক‘আত ছালাতও কখনো আদায় করেননি’।[3]

উল্লেখ্য যে, দ্বাদশ নববী বর্ষে মক্কায় অনুষ্ঠিত ২য় বায়‘আতের পর ১২ জন মুসলমানের সাথে ইসলামের প্রথম দাঈ হযরত মুছ‘আব বিন ওমায়েরকে মদীনায় পাঠানো হ’লে তাঁর দাওয়াতে আউস নেতা সা‘দ বিন মু‘আয ইসলাম কবুল করেন এবং স্বীয় গোত্রের সকলকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ইসলাম কবুলের আহবান জানান। নইলে তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলা হারাম ঘোষণা করেন। এমতাবস্থায় সন্ধ্যার মধ্যে সবাই ইসলাম কবুল করে। কেবলমাত্র উছায়রিম বাকী থাকে। উক্ত ঘটনার চার বছর পরে ওহোদ যুদ্ধের দিন তিনি স্বেচ্ছায় ইসলামের কালেমা পাঠ করে যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে যান এবং শহীদ হয়ে যান।[4]

(২) আমর ইবনু উক্বাইশ(عَمْرو بن أُقَيْشٍ) : জাহেলী যুগে তার সূদের টাকা পাওনা ছিল। সেগুলি আদায়ের আগ পর্যন্ত তিনি ইসলাম কবুলে অনাগ্রহী ছিলেন। পরে তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। অতঃপর তিনি ওহোদের দিন চলে আসেন এবং গোত্র নেতা সা‘দ বিন মু‘আয ও তার গোত্রীয় ভাইদের খোঁজ করেন। তিনি জানতে পারেন যে, তারা সবাই ওহোদের যুদ্ধে চলে গেছেন। তখন তিনি পোশাক পরে যুদ্ধের ময়দানে চলে যান। তাকে এ অবস্থায় দেখে মুসলমানরা নিষেধ করল। কিন্তু তিনি বললেন, ‘আমি ঈমান এনেছি’। অতঃপর তিনি যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং আহত অবস্থায় মদীনায় নীত হন। তখন সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ) তার কাছে গিয়ে তার বোনকে বলেন, তুমি ওকে জিজ্ঞেস কর তুমি কি তোমার গোত্রীয় উত্তেজনায় গিয়েছিলে, নাকি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার টানে গিয়েছিলে? জবাবে তিনি বললেন,بَلْ غَضَبًا لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ فَمَاتَ. فَدَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَا صَلَّى لِلَّهِ صَلاَةً ‘বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহববতের টানে’। অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন ও জান্নাতে প্রবেশ করেন। অথচ তিনি আল্লাহর জন্য এক ওয়াক্ত ছালাতও আদায় করেননি’।[5]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/১৮০; ইবনু হিশাম ২/৯০; আহমাদ হা/২৩৬৮৪, সনদ হাসান।

[2]. যাদুল মা‘আদ ৩/৪২; বুখারী ফৎহসহ হা/২৮০৮, ৬/২৫ পৃঃ।

[3]. আহমাদ হা/২৩৬৮৪, সনদ হাসান; যাদুল মা‘আদ ৩/১৮০. আর-রাহীক্ব পৃঃ ২৮০, ১৪৬।

[4]. ইবনু হিশাম ১/৪৩৭, ২/৯০; যাদুল মা‘আদ ৩/১৮০; আর-রাহীক্ব পৃঃ ১৪৬, ২৮০।

[5]. আবুদাঊদ হা/২৫৩৭; হাকেম হা/২৫৩৩, সনদ ছহীহ। ইবনু হাজার উছায়রিম ও ‘আমরকে একই ব্যক্তি বলেছেন। ইনি প্রখ্যাত ছাহাবী হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামানের বোনের পুত্র ছিলেন। উছায়রিম ছিল ‘আমর বিন উক্বাইশের লক্বব (আল-ইছাবাহ, ‘আমর বিন ছাবেত বিন উক্বাইশ ক্রমিক ৫৭৮৯)।