নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ওহোদ যুদ্ধের বিষয়ে কুরআন ও বিপর্যয়ের রহস্য (القرآن فى غزوة أحد وسر النكبة)

ওহোদ যুদ্ধ সম্পর্কে সূরা আলে ইমরানের ১২১ হ’তে ১৭৯ পর্যন্ত পরপর ৬০টি আয়াত নাযিল হয়। যার মধ্যে যুদ্ধের এক একটি পর্বের আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর ঐসব কারণগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলির ফলে মুসলিম বাহিনী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেখানে মুনাফিকদের অপতৎপরতার কথাও উল্লেখিত হয়েছে। অতঃপর যুদ্ধের ফলাফল ও এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের উপরে আলোকপাত করে বলা হয়েছে, مَا كَانَ اللهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىَ يَمِيْزَ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ ‘অপবিত্রকে পবিত্র হ’তে পৃথক করে না দেয়া পর্যন্ত আল্লাহ এমন নন যে, ঈমানদারগণকে সে অবস্থাতেই ছেড়ে দিবেন, যে অবস্থায় তোমরা আছ। আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানাবেন...’ (আলে ইমরান ৩/১৭৯)

অর্থাৎ মুনাফিকদের পৃথক করা ও মুমিনদের ঈমানের দৃঢ়তা পরখ করা ছিল এ যুদ্ধের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। আর একথাগুলি অহীর মাধ্যমে না জানিয়ে বাস্তব প্রমাণের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়াই ছিল ওহোদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের অন্যতম রহস্য।

ইবনু হাজার বলেন, বিদ্বানগণ বলেন যে, ওহোদ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয়ের মধ্যে আল্লাহর বিশেষ তাৎপর্য সমূহ নিহিত ছিল। যেমন- (১) রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতার পরিণাম সম্পর্কে মুসলমানদের হুঁশিয়ার করা। কেননা তীরন্দাযগণের অবাধ্যতার ফলে আকস্মিক এই বিপর্যয় নেমে আসে (২) রাসূলগণের জন্য সাধারণ নিয়ম এই যে, তারা প্রথমে বিপদগ্রস্ত হন এবং শেষে বিজয়ী হন। কেননা যদি তাঁরা সর্বদা কেবল বিজয়ী হ’তে থাকেন, তাহ’লে মুমিনদের মধ্যে এমন লোকও ঢুকে পড়বে, যারা তাদের নয়। আবার যদি তারা কেবল পরাজিত হ’তেই থাকেন, তাহ’লে রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্যই হাছিল হবে না। সেকারণ জয় ও পরাজয় দু’টিই একত্রে রাখা হয়, যাতে প্রকৃত বিশ্বাসী ও কপট বিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। (৩) কোন কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য দেরীতে আসলে মুমিনদের হৃদয়ে অধিক নম্রতার সৃষ্টি হয় এবং অহংকার চূর্ণ হয়। তারা অধিক ধৈর্যশীল হয়। পক্ষান্তরে মুনাফিকগণ দিশেহারা হয়। (৪) আল্লাহ মুমিন বান্দাদের জন্য জান্নাতে উচ্চ মর্যাদার এমন স্তরসমূহ নির্ধারণ করেছেন, যেখানে পৌঁছানোর জন্য কেবল তাদের আমলসমূহ যথেষ্ট হয় না। তখন আল্লাহ তাদের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিপদাপদ সমূহ নির্ধারণ করেন। যাতে তারা সেখানে পৌঁছতে সক্ষম হন। (৫) আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণের জন্য সবচেয়ে বড় মর্যাদা হ’ল শাহাদাত লাভ করা। সেকারণ আল্লাহ তাদের নিকটে সে সুযোগ পৌঁছে দেন। (৬) আল্লাহ তার শত্রুদের ধ্বংস করতে চান। সেকারণ তিনি এমন কার্যকারণ সমূহ নির্ধারণ করে থাকেন, যা তাদের কুফরী, সীমালংঘন ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে রূপ লাভ করে। এর দ্বারা তিনি মুমিনদের গোনাহ সমূহ দূর করে দেন ও কাফির-মুনাফিকদের সংকুচিত ও ধ্বংস করেন।[1]

বলা বাহুল্য যে, উপরোক্ত রহস্য ও তাৎপর্য সমূহ কেবল ওহোদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুমিনগণের জন্যই নয়, বরং যুগে যুগে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী সকল মুমিনের জন্য প্রযোজ্য।

[1]. যাদুল মা‘আদ ২/৯৯-১০৮; ফাৎহুল বারী হা/৪০৪০-এর পরে ‘ওহোদ যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ আলোচনা দ্রষ্টব্য।