(১) মক্কায় সামাজিক পরিবেশ প্রতিকূলে থাকায় সেখানে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পক্ষান্তরে মদীনায় পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবং এখানে সবাই রাসূল (ছাঃ)-এর নেতৃত্ব মেনে নিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ায় রাসূল (ছাঃ)-কে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। এতে বুঝা যায় যে, বিজয়ের সম্ভাবনা ও পরিবেশ না থাকলে যুদ্ধের ঝুঁকি না নিয়ে ছবর করতে হবে। যেমনটি মাক্কী জীবনে করা হয়েছিল।
(২) বদরের যুদ্ধ ছিল মূলতঃ আত্মরক্ষামূলক। আবূ জাহলকে বদরে মুকাবিলা না করলে সে সরাসরি মদীনায় হামলা করার দুঃসাহস দেখাত। যা ইতিপূর্বে তাদের একজন নেতা কুরয বিন জাবের আল-ফিহরী সরাসরি মদীনার উপকণ্ঠে হামলা করে গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জানিয়ে গিয়েছিল। এতে বুঝা যায় যে, আত্মরক্ষা এবং ইসলামের স্বার্থ ব্যতীত অন্য কোন কারণে কাফেরদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি নেই।
(৩) সংখ্যা ও যুদ্ধ সরঞ্জামের আধিক্য বিজয়ের মাপকাঠি নয়। বরং দৃঢ় ঈমান ও আল্লাহর উপরে একান্ত নির্ভরশীলতাই হ’ল বিজয়ের মূল হাতিয়ার। পরামর্শ সভায় কয়েকজন ছাহাবী বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে যুদ্ধ না করে ফিরে যাবার পরামর্শ দিলে আল্লাহ ধমক দিয়ে আয়াত নাযিল করেন (আনফাল ৮/৫-৬)। এতে বুঝা যায়, আল্লাহর গায়েবী মদদ লাভই হ’ল বড় বিষয়।
(৪) যুদ্ধের উদ্দেশ্য হ’তে হবে জান্নাত লাভ। যেটা যুদ্ধ শুরুর প্রথম নির্দেশেই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। অতএব চিন্তাক্ষেত্রের যুদ্ধ হৌক বা ময়দানের সশস্ত্র মুকাবিলা হৌক ইসলামের সৈনিকদের একমাত্র লক্ষ্য থাকতে হবে আখেরাত। কোন অবস্থাতেই দুনিয়া হাছিলের জন্য মুসলমানের চিন্তাশক্তি বা অস্ত্রশক্তি ব্যয়িত হবে না।
(৫) স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যুদ্ধে নামলে আল্লাহ স্বীয় ফেরেশতামন্ডলী পাঠিয়ে সাহায্য করে থাকেন। যেমন বদর যুদ্ধে করা হয়েছিল (আনফাল ৮/৯)।
(৬) যুদ্ধে গণীমত লাভের মাধ্যমে দুনিয়া অর্জিত হ’লেও তা কখনোই মুখ্য হবে না। বরং সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী আমীরের অনুগত থাকতে হবে। বদর যুদ্ধে গণীমত বণ্টন নিয়ে বিবাদ উপস্থিত হ’লেও তা সাথে সাথে নিষ্পত্তি হয়ে যায় রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশে (আনফাল ৮/১)।
(৭) কাফিররা মূলতঃ মুসলমানদের ঈমানী শক্তিকে ভয় পায়। এ কারণেই পরবর্তী ওহোদের যুদ্ধে তারা মহিলাদের সাথে করে এনেছিল। যাতে পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে না যায়।
(৮) বদর যুদ্ধের বড় শিক্ষা এই যে, কুফর ও ইসলামের মুকাবিলায় মুসলমান নিজের সীমিত শক্তি নিয়ে আল্লাহর উপরে ভরসা করে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর এভাবেই চিরকাল ঈমানদার সংখ্যালঘু শক্তি বেঈমান সংখ্যাগুরু শক্তির উপরে বিজয়ী হয়ে থাকে (বাক্বারাহ ২/২৪৯)। এ ধারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে ইনশাআল্লাহ।