ফির্‌কাহ নাজিয়া ঈমানের শাখাসমূহ আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

রসূল (সা.) বলেন, “ঈমান ষাটের অধিক শাখাবিশিষ্ট; যার উত্তম (ও প্রধান) শাখা “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই) বলা এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্র শাখা পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা।” (মুসলিম)

ইবনে হিব্বান যা উপস্থাপিত করেছেন তার সারাংশ পেশ করে হাফেয। (ইবনে হাজার) ফতহুল বারী’তে বলেন, এই শাখা-প্রশাখাগুলি হৃদয়, জিহ্বা এবং দেহের বিভিন্ন কর্মকান্ডেরই অংশ।

১। অন্তর সংক্রান্ত কর্ম ও যাবতীয় আকীদাহ ও নিয়ত (বিশ্বাস, ইচ্ছা ও। উদ্দেশ্য)। আর তা হল ২৪টি বিষয়ঃ

আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাঁর সত্তা ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান, “তার সদৃশ কোন কিছুই নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” এ বিষয়ে তাঁর তওহীদ, তিনি ব্যতীত সব কিছু নবঘটিত ও সৃষ্ট এ বিশ্বাসও পর্যায়ভুক্ত।

তার ফিরিশ্যামন্ডলী, গ্রন্থাবলী, নবী ও রসূলবর্গ এবং তকদীরের ভালোমন্দের উপর ঈমান। পরকালের উপর ঈমান; আর কবরে প্রশ্নোত্তর, সেখানে।

শান্তি অথবা শাস্তি, পুনর্জীবন ও পুনরুত্থান, হিসাব, মীযান, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নাম এরই শ্রেণীভুক্ত।

আল্লাহকে ভালোবাসা, তার সন্তুষ্টিতে কাউকে ভালোবাসা ও ঘৃণাবাসা। নবী (সা.)-কে ভালোবাসা; আর তার যথার্থ তা'যীম ও সম্মান করা, তাঁর উপর দরূদ পাঠ ও তার সুন্নাহর অনুসরণ করা এর পর্যায়ভুক্ত।

ইখলাস ও বিশুদ্ধ-চিত্ততা; আর রিয়া (লোক প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ইবাদত করা) ও মুনাফেকী ত্যাগ করা এর অন্তর্ভুক্ত।

তওবা, আল্লাহকেই ভয়, তারই নিকট আশা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, অঙ্গীকার পালন, ধৈর্যধারণ, ভাগ্যের উপর সন্তুষ্টি, আল্লাহর উপরই ভরসা, সৃষ্টির প্রতি দয়া এবং বিনয়; আর বয়োজ্যেষ্ঠর প্রতি শ্রদ্ধা এবং বয়োকনিষ্ঠর প্রতি স্নেহ, গর্ব ও অহংকার ত্যাগ, হিংসা, দ্বেষ ও ক্রোধ বর্জন এরই শ্রেণীভুক্ত।

২। জিহ্বা সংক্রান্ত কর্ম ৭ টি বিষয়ে সংশ্লিষ্টঃ তওহীদ উচ্চারণ (আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল এই সাক্ষ্য প্রদান), কুরআন তেলাঅত, ইলম (দ্বীনী জ্ঞান) শিক্ষা করা ও দেওয়া, দুআ, যিকর; আর ক্ষমা প্রার্থনা ও তসবীহ পাঠ এরই অন্তর্ভুক্ত, অনুরূপ অসার ও বাজে ক্রিয়া-কলাপ হতে জিহ্বাকে হিফাযতে রাখা।

৩৷ দৈহিক কর্ম ৩৮টি বিষয়ে সম্পৃক্ত ও (ক) কিছু কর্ম ব্যক্তিক জীবনের সহিত সংযুক্ত, আর তা হল ১৫টি বিষয়; দেহ ও মনকে পবিত্র রাখা; আর অপবিত্র বস্তুসমূহ হতে দুরে থাকা ও লজ্জাস্থান আবৃত রাখা এরই পর্যায়ভুক্ত। ফরয ও নফল নামায আদায়, যাকাত প্রদান, দাস মুক্তকরণ, বদান্যতা; অন্নদান ও অতিথি সেবা এরই অন্তর্ভুক্ত। ফর্য ও নফল রোজা পালন, ই'তিকাফ করা, শবেকদর অন্বেষণ, হজ্জ ও উমরাহ পালন, তওয়াফ করা, দ্বীন রক্ষার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ; আর শির্কের দেশ হতে ঈমানের দেশে হিজরত এরই শ্রেণীভুক্ত। ন্যর পূরণ করা, কসম ও শপথে যথার্থতা অনুসন্ধান (একান্ত প্রয়োজনে হলফ করা), কাফফারাহ আদায় (যেমন, কসম এবং রমযানের দিবসে স্ত্রী সঙ্গমের কাফফারাহ আদায়)।

(খ) কিছু পারিবারিক ও আনুগতিক জীবনের সহিত সংযুক্ত, আর তা হল ৬টি বিষয়ঃ বিবাহ দ্বারা চারিত্রিক পবিত্রতা, পরিবারের অধিকার আদায়, পিতা-মাতার সেবা; আর তাদের অবাধ্যতা হতে দূরে থাকা এরই পর্যায়ভুক্ত। সান-সন্ততির প্রতিপালন ও সুশিক্ষার দায়িত্ব পালন, জ্ঞাতি-বন্ধন অক্ষুন্ন রাখা, (আল্লাহর অবাধ্যতা বিনা) প্রভুর আনুগত্য এবং দাসদের সহিত নম্র ব্যবহার। (গ) কিছু তো সর্বজনীন ও সামাজিক জীবনের সহিত সংশ্লিষ্ট; আর তা ১৭টি বিষয়ঃ

ন্যায়পরায়ণতার সহিত নেতৃত্ব ও শাসন, জামাআতের মতানুবর্তী হওয়া, শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য করা যদি তারা পাপকর্মে আদেশ না দেন তবে। মানুষের মাঝে শান্তি, সম্প্রীতি ও সন্ধি স্থাপন; আর খাওয়ারেজ* ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এর পর্যায়ভুক্ত। সৎ ও সংযমশীলতা (তাক্ওয়া)র কর্মে অপরের সহযোগীতা; আর সৎকার্যের আদেশ ও অসৎকার্যে বাধা প্রদান এরই অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামী দন্ডবিধি প্রতিষ্ঠা, জিহাদ করা; আর শত্ৰু-সীমান্তে প্রতিরক্ষার খাতিরে প্রস্তুত থাকা এরই শ্রেণীভুক্ত। আমানত আদায় এবং যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ আদায় এরই অন্তর্ভুক্ত। ঋণ দেওয়া ও পরিশোধ করা, প্রতিবেশীর সম্মান করা, সদ্ব্যবহার করা, হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জন ও যথাস্থানে তা ব্যয় করা; আর অপচয় ও অযথা ব্যয় না করা এরই পর্যায়ভুক্ত।

সালামের জওয়াব দেওয়া, কেউ হচির পর ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বললে তার প্রত্যুত্তর দান, মানুষের ক্ষতি না করা, অসার ক্রিয়া ও ক্রীড়াদি হতে দুরে থাকা এবং পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। পুর্বোল্লেখিত হাদীসটি নির্দেশ করে যে, তওহীদ তথা কলেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হল ঈমানের সর্বোচ্চ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পর্যায়। তাই দাওয়াত পেশকারীদের উচিত প্রথমে সর্বোচ্চ অতঃপর ধাপে ধাপে তদপেক্ষা নিম্নতর পর্যায়ের ঈমান দ্বারা দাওয়াত আরম্ভ করা, ইমারতের দেওয়াল-গাঁথনির পুর্বেই ভিত্তি মজবুত করা এবং প্রথমে অতীব গুরুত্বপূর্ণ অতঃপর অন্যান্য বিষয়ে মনোনিবেশ করা। যেহেতু তওহীদই আরব-অনারব সমস্ত উম্মাহকে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং তাদেরকে নিয়ে মুসলিম ও তওহীদের রাষ্ট্র রচনা করেছে।

* যারা কাবীরা গোনাহর গোনাহগার মুসলিমকে কাফের ও চির জাহান্নামী বলে থাকে।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে