রহমানের আওলিয়া ও শয়তানের আওলিয়া

আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ * الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ

অর্থাৎ, জেনে রাখ! আল্লাহর আওলিয়া (বন্ধু)দের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না; যারা ঈমান এনে তাকওয়ার কর্ম করে। (সূরা ইউনুস ৬২-৬৩ আয়াত)।

এই আয়াত নির্দেশ করে যে, মুমিন ও মুত্তাকী ব্যক্তি মাত্রই অলী; যিনি যাবতীয় পাপাচার হতে দূরে থাকেন, নিজ প্রতিপালককেই আহবান করেন এবং তার সহিত অন্যকে শরীক করেন না। এমন অলীর নিকট প্রয়োজনে কারামতও প্রকাশ পায়, যেমন মারয়্যামের কারামত ছিল তিনি তাঁর গৃহে খাদ্যসামগ্রী উপস্থিত পেতেন।

সুতরাং বেলায়ত (অলী হওয়া যায় একথা প্রমাণিত। কিন্তু বেলায়তের যোগ্য একমাত্র আল্লাহ ও তার রসূলের অনুগত তওহীদবাদী মুমিন। পক্ষান্তরে অলী হওয়ার জন্য তাঁর হাতে কারামত প্রকাশ কোন শর্ত নয়। যেহেতু কুরআন এ শর্ত আরোপ করেনি।

গায়রুল্লাহকে আহবানকারী কোন মুশরিক বা ফাসেকের হাতে কারামত প্রকাশ পেতে পারে না। গায়রুল্লাহকে ডাকা মুশরিকদের কর্ম। সুতরাং তারা সম্মানিত আওলিয়া কি করে হতে পারে? অনুরূপ বেলায়ত পূর্বপুরুষদের নিকট হতে উত্তরাধিকার-সুত্রে প্রাপ্য কোন (খেলাফতী) বস্তু বা বিষয় নয়। বরং তা ঈমান এবং নেক আমলের বলে প্রাপ্য অমূল্য উপহার।। পক্ষান্তরে কিছু বিদআতীরা যা প্রদর্শন করে থাকে; যেমন লৌহশলাকা দ্বারা উদরে আঘাত, অগ্নিভক্ষণ প্রভৃতি -তা শয়তানদের কর্মকাণ্ড। এ আল্লাহর তরফ থেকে তাদের জন্য এক প্রকার শৈথিল্য, যাতে তারা ভ্রষ্টতায় চলমান থাকে। আল্লাহ বলেন,

قُلْ مَن كَانَ فِي الضَّلَالَةِ فَلْيَمْدُدْ لَهُ الرَّحْمَٰنُ مَدًّا

অর্থাৎ, বল, যারা বিভ্রান্তিতে আছে আল্লাহ তাদেরকে প্রচুর ঢিল দেবেন। (সূরা মারয়াম ৭৫ আয়াত)

যারা ভারত সফর করেছে তারা অগ্নিপূজকদের নিকট এর চেয়ে অধিক বিস্ময়কর কর্ম দেখেছে, যেমন তাদের একে অপরকে তরবারি দ্বারা আঘাত করা (জিভে সিক ও পেটে ছুরি গাথা) ইত্যাদি, অথচ তারা কাফের! ইসলাম সে সব কর্মে স্বীকৃতি দেয় না, যে সব কর্ম রসূল ঐ ও তাঁর সাহাবাগণ করেননি। যদি তাতে কোন মঙ্গল থাকত, তবে আমাদের চেয়ে অধিকতর যত্নের সাথে তারাই সে কাজ পুর্বেই করে যেতেন।

অনেক মানুষের ধারণা যে, যে গায়েব জানে সেই ব্যক্তিই অলী। অথচ এ (অদৃশ্য জানার) গুণ একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। অবশ্য তিনি ইচ্ছা করলে তার কোন কোন রসূলকে তা প্রকাশ করে থাকেন। তিনি বলেন,

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا * إِلَّا مَنِ ارْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ

অর্থাৎ, তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। মনোনীত রসূল ব্যতীত তিনি তার অদৃশ্যের (গায়েবী) খবর কারো নিকট প্রকাশ করেন না। ( সূরা জিন ২৬-২৭ আয়াত)

অতএব উক্ত আয়াতে আল্লাহর গায়েবী জ্ঞান প্রকাশের ব্যাপারে কেবল রসূলকেই নিদিষ্ট করা হয়েছে। এখানে অন্য কারোর উল্লেখ নেই। কিছু লোক তো কোন কবরের উপর গম্বুজ নির্মিত দেখেই মনে করে ঐ কবরবাসী নিশ্চয় অলী। অথচ বাস্তবে ঐ কবর কোন ফাসেকেরও হতে পারে অথবা কবরে কেউ (সমাহিত) না-ও থাকতে পারে।। পক্ষান্তরে কবরের উপর ইমারত নির্মাণকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। হাদীসে বর্ণিত, নবী (সা.) কবরকে পাকা ও চুনকাম করতে এবং তার উপর ইমারত বানাতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)।

সুতরাং অলী সেই নয়, যাকে মসজিদে সমাধিস্থ করা হয়েছে অথবা তার মাযার নির্মাণ করা হয়েছে অথবা তার কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করা হয়েছে। যেহেতু এসব কর্ম ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী। যেমন নিদ্রাবস্থায় মৃতব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা তার অলী হওয়ার শরয়ী দলীল নয়। কারণ তা শয়তানের তরফ থেকে অর্থহীন বাজে স্বপ্নও হতে পারে।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে