আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ

অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যলাভের অসীলা (উপায় ও মাধ্যম) অন্বেষণ কর। (সূরা মায়েদাহ ৩৫ আয়াত)

কাতাদাহ (রঃ) বলেন, অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য এবং সন্তোষজনক আমল (কর্ম) করে তাঁর নৈকট্যলাভ কর। বিধেয় অসীলা কেবল মাত্র তাই, যার প্রতি কুরআন আমাদেরকে নির্দেশ করেছে, রসূল (সা.) যা বিবৃত করেছেন এবং সাহাবাগণ যা কার্যকর করে গেছেন। এই বিধেয় অসীলা বিভিন্ন প্রকার; যার প্রধান প্রধান নিম্নরূপঃ

১। ঈমানের অসীলা। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের নিজ ঈমানের অসীলায় দুআ করার কথা উল্লেখ করে বলেন,

رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا ۚ رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

অর্থাৎ, (তারা বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এক আহবায়ককে ঈমানের দিকে আহবান করতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন। সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! অতএব তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর, আমাদের গোনাহ মোচন কর এবং মৃত্যুর পর সৎলোকদের দলভুক্ত করো। (সূরা আলে ইমরান ১৯৩ আয়াত)

২। আল্লাহর তওহীদের অসীলা। যেমন মাছের পেটে ইউনুস আলাইহিস সালামের দুআ ঃআল্লাহ তাআলা বলেন,

فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ * فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ

অর্থাৎ, অতঃপর সে অন্ধকার হতে আহবান করল, 'তুমি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র! অবশ্যই আমি সীমালংঘনকারী। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে উদ্ধার করলাম আর এভাবেই মুমিনদেরকে আমি উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া ৮৭-৮৮ আয়াত)

৩৷ আল্লাহর নামের অসীলা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا

অর্থাৎ, আল্লাহর জন্যই উত্তম নামসমূহ, সুতরাং তোমরা তাঁকে সে সব নামেই আহবান কর। (সূরা আ'রাফ ১৮০ আয়াত)

আল্লাহর নামের অসীলায় রসূল (সা.)-এর দুআ, “হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রত্যেক নামের অসীলায় প্রার্থনা করছি।” (তিরমিযী, তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান সহ)।

৪৷ আল্লাহর গুণের অসীলা। যেমন নবী (সা.) এর দুআ, “হে চিরঞ্জীব, হে অবিনশ্বর! আমি তোমার রহমতের অসীলায় তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি।” (হাসান, তিরমিযী)

শায়খ রিফায়ী বলেন, 'আওলিয়াদের প্রতি আল্লাহর মহব্বতের অসীলায় তোমাদের প্রয়োজন আল্লাহর নিকট ভিক্ষা কর।”

৫৷ নেক আমল; যেমন, নামায, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার, অধিকার রক্ষা, আমানতের হিফাযত, দান-খয়রাত, যিকর, কুরআন তেলাঅত, নবী (সা.)-এর উপর দরূদ পাঠ, তার প্রতি এবং তাঁর সাহাবার প্রতি আমাদের মহব্বত প্রভৃতির অসীলা।।

সহীহ মুসলিমে গুহায় আশ্রয় গ্রহণকারী ৩ ব্যক্তির কাহিনীতে প্রমাণিত যে, তারা যখন গুহার মধ্যে (এক প্রস্তর দ্বারা) আবদ্ধ হয়ে পড়লেন। তখন একজন

শ্রমিকের পারিশ্রমিক রক্ষা করে আদায় করা ও দ্বিতীয়জন পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার অসীলায় দুআ করলে আল্লাহ তাদেরকে বিপদমুক্ত করলেন।

৬। পাপাচার যেমন মদ্যপান, ব্যভিচার ইত্যাদি হারাম কর্ম বর্জন করার অসীলায় আল্লাহর নিকট দুআ করা। যেমন উপযুক্ত গুহা-বন্দীদের তৃতীয় জন ব্যভিচার ত্যাগ করার অসীলায় দুআ করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তাদেরকে গুহা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু কিছু মুসলিম আছে, যারা নেক আমল করা এবং তার অসীলায় দুআ করা উপেক্ষা করে রসূল (সা.) ব্লক ও তার সাহাবার পথ ও নীতির বিপরীত চলে মৃত প্রভৃতি অপর ব্যক্তির আমলের অসীলার আশ্রয় গ্রহণ করে!!

৭ জীবিত আম্বিয়া ও সালেহীনদের নিকট দুআর আবেদন করে সেই অসীলায় দুআ। হাদীস শরীফে বর্ণিত যে, এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সা.) -এর নিকট এসে বলল, “আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করেন। তিনি বললেন, “যদি তুমি চাও তোমার জন্য দুআ করব। নচেৎ যদি চাও ধৈর্য ধর এবং সেটাই তোমার জন্য শ্রেয়।” লোকটি বলল, ‘বরং আপনি দুআ করুন।”

সুতরাং তিনি তাকে ওযু করতে বললেন এবং ভালোরূপে ওযু করে দু'রাকআত নামায পড়ে এই দুআ করতে আদেশ দিলেনঃ

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার নবী (সা.), দয়ার নবী (সা.)র সহিত তোমার অভিমুখ হচ্ছি। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার সহিত আমার প্রতিপালকের প্রতি আমার এই প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে অভিমুখী হয়েছি। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তুমি এঁর সুপারিশ গ্রহণ কর এবং এর ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ গ্রহণ কর।”

বর্ণনাকারী বলেন যে, অতঃপর ঐ ব্যক্তি এরূপ করলে সে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। (সহীহ মুসনাদে আহমাদ)

উক্ত হাদীসটি একথা স্পষ্ট করে যে, রসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় ঐ অন্ধের জন্য দুআ করেছিলেন এবং আল্লাহও তার দুআ মঞ্জুর করেছিলেন। অনুরূপ তিনি ঐ লোকটিকে নিজের জন্য দুআ করতে এবং নবী (সা.)র দুআর সহিত আল্লাহর অভিমুখী হতে আদেশ করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তার নিকট হতে

তার আবেদন গ্রহণ করেন। সুতরাং এই দুআ তাঁর জীবনকাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তাঁর মৃত্যুর পর অনুরূপ দুআ করা সম্ভব নয়। যেহেতু সাহাবাগণ এরূপ করেন নি। এবং এই ঘটনার পর অন্যান্য অন্ধ ব্যক্তিরা ঐ রূপ দুআ করে উপকৃত হয়নি।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে