জান্নাত-জাহান্নাম জান্নাত আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

জান্নাত শব্দের অর্থ হলঃ উদ্যান, বাগান, বাগিচা। ফারসী ভাষায় যাকে বেহেশত বলা হয়।

মহান আল্লাহ মহাপ্রতিদান স্বরূপ যা নিজ অনুগত বান্দার মরণের পর পরকালে প্রস্তুত রেখেছেন।

জান্নাত মানে শুধু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগানই নয়; বরং তাতে থাকবে বাসস্থান, অট্টালিকা এবং চরম সুখ-সামগ্রীর এমন সবকিছু, যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। সেখানে এমন সুখ থাকবে, যাতে কোন দুঃখের লেশমাত্র থাকবে না। এমন নির্মল শান্তি থাকবে, যাতে কোন প্রকার অশান্তির মলিনতা নেই। এত সুখসম্পদ থাকবে, যার কাল্পনিক বর্ণনা দিতেও মানুষের মন অক্ষম।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, 'আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য (জান্নাতে) এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন। করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার---

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যার অর্থ, “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কি পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” (সাজদাহঃ ১৭ আয়াত, বুখারী-মুসলিম)।

পার্থিব জগতেই কত বিলাসপ্রিয় ধনকুবেররা বিলাসবহুল বাগান ও বাড়ি বানিয়ে বসবাস করে, কত রকম সুখ-সরঞ্জাম ও বিলাসসামগ্রী ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু সেসব কিছু জান্নাতের তুলনায় নেহাতই তুচ্ছ। যেহেতু জান্নাতের সুখ অনুপম, বেহেশতের শান্তি অতুল। যেহেতু “বেহেশতের একটি চাবুক পরিমাণ জায়গা পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সবকিছু অপেক্ষা উত্তম।” (বুখারী ৩২৫০নং)। “জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর উপর সূর্য উদিত কিম্বা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।” (বুখারী-মুসলিম)।

জান্নাতের সে সুখ-সামগ্রী দেখে দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখী মানুষটিও সমস্ত দুঃখের কথা ভুলে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু! আর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখিনি।” (মুসলিম)

আর সে কারণেই বেহেশতে স্থান লাভ করা এমন সৌভাগ্যের ব্যাপার, যার পর কোন সৌভাগ্য নেই। মহান আল্লাহর ভাষায় সেটাই মহা সফলতা। তিনি বলেন,

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

অর্থাৎ, জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। সুতরাং যাকে আগুন (দোযখ) থেকে দুরে রাখা হবে এবং (যে) বেহেশতে প্রবেশলাভ করবে, সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভােগ ব্যতীত কিছুই নয়। (আলে ইমরানঃ ১৮৫)

وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

অর্থাৎ, আল্লাহ বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদেরকে এমন উদ্যানসমূহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন, যেগুলাের নিম্নদেশে বইতে থাকবে নদীমালা, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আরও (প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন) চিরস্থায়ী উদ্যানসমূহে (জান্নাতে আদনে) পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় (নিয়ামত)। এটাই হচ্ছে মহা সফলতা। (তাওবাহঃ ৭২)

وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

অর্থাৎ, যে আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হয়ে চলবে, আল্লাহ তাকে বেহেস্তে স্থান দান করবেন; যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং এ মহা সাফল্য। (নিসাঃ ১৩)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে