আল্লাহ তাআলার রয়েছে অতিসুন্দর নামসমূহ - ১

আল্লাহ তাআলা সূরা আরাফের ১৮০ নং আয়াতে বলেনঃ

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

‘‘আর আল্লাহ্‌র জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাকো। আর যারা তার নামগুলো বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করে চলো। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।

ব্যাখ্যাঃ শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রঃ) এই অধ্যায়ের মাধ্যমে ঐ সমস্ত লোকের প্রতিবাদ করেছেন, যারা মৃত ব্যক্তিদের ব্যক্তিসত্তা ও সম্মানকে নিজেদের উসীলা বানায়। অথচ আল্লাহর অতি সুন্দর নাম, সুউচ্চ গুণাবলী এবং নেক আমলের উসীলা ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ের উসীলা দেয়া বৈধ নয়।

আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ وهو وتر يحب الوترَ»

‘‘আল্লাহর এমন নিরানববইটি নাম রয়েছে যে ব্যক্তি এগুলো আয়ত্ত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি এক সংখ্যায় বে-জোড় এবং বে-জোড়কে পছন্দ করেন’’। ইমাম বুখারী ও মুসলিম সুফিয়ান হতে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[1]

ইমাম তিরমিযী স্বীয় কিতাবে ওয়ালীদ বিন মুসলিম শুআইবের সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি يحب الوتر এর পর আল্লাহর নিম্নলিখিত অতি সুন্দর নামগুলো বর্ণনা করেছেনঃ

هُوَ اللَّهُ الَّذِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ তিনিই আললাহ, যিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, الرَّحْمَنُ পরম দয়ালু, الرَّحِيمُ পরম করুণাময়, الْمَلِكُ বাদশাহ, الْقُدُّوسُ মহা পবিত্র, السَّلاَمُ শান্তির আধার, الْمُؤْمِنُ নিরাপত্তা দানকারী, الْمُهَيْمِنُ মহা সংরক্ষণকারী, الْعَزِيز মহা পরাক্রমশালী,الْجَبَّارُ প্রভাব ও প্রতাপশালী, الْمُتَكَبِّرُ মহা গৌরবান্বিত, الْخَالِقُ স্রষ্টা, الْبَارِئُ সৃষ্টিকর্তা, الْمُصَوِّرُ আকৃতি দানকারী, الْغَفَّارُ অত্যাধিক ক্ষমাকারী, الْقَهَّارُ পরাজিতকারী, الْوَهَّابُ মহান দাতা, الرَّزَّاقُ রিযিক দানকারী, الْفَتَّاحُ উন্মোচনকারী, الْعَلِيمُ মহাজ্ঞানী, الْقَابِضُ الْبَاسِطُ সংকীর্ণকারী ও সম্প্রসারণকারী, الْخَافِضُ الرَّافِع নীচুকারী ও উন্নতকারী, الْمُعِزُّ الْمُذِلُّ সম্মান দানকারী এবং অপদস্তকারী, السَّمِيعُ সর্বশ্রোতা, الْبَصِيرُ সর্বদ্রষ্টা, الْحَكَمُ ফয়সালাকারী, الْعَدْلُ ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী, اللَّطِيفُ দয়ালু, الْخَبِيرُ মহা সংবাদ সংরক্ষক, الْحَلِيمُ পরম সহিঞু, الْعَظِيمُ সুমহান, الْغَفُورُ অত্যধিক ক্ষমাশীল, الشَّكُورُ মহা মূল্যায়নকারী, الْعَلِىُّ সুউচ্চ, الْكَبِيرُ অতিব মহান, الْحَفِيظُ হেফাজতকারী, الْمُقِيتُ রুজী দানকারী, الْحَسِيبُ যথেষ্ট, الْجَلِيلُ বড়ত্বের অধিকারী, الْكَرِيمُ মহা অনুগ্রহশীল, الرَّقِيبُ মহা পর্যবেক্ষক, الْمُجِيب কবুলকারী, الْوَاسِعُ প্রশস্তকারী, الْحَكِيمُ প্রজ্ঞাবান, الْوَدُودُ ভালবাসা পোষণকারী, الْمَجِيدُ মর্যাদাবান, الْبَاعِثُ পুনরুত্থানকারী, الشَّهِيدُ সাক্ষ্যদানকারী, الْحَقّ মহা সত্য, الوَكِيْلُ কর্ম সম্পাদনকারী, الْقَوِىُّ শক্তিমান, الْمَتِينُ মহা শক্তিধর, الْوَلِىُّ মহা অভিভাবক, الْحَمِيدُ মহা প্রশংসিত, الْمُحْصِى গণনা ও সংরক্ষণকারী, الْمُبْدِئُ প্রথম সৃষ্টিকারী, الْمُعِيدُ দ্বিতীয়বার সৃষ্টিকারী, الْمُحْيِى জীবন দানকারী, الْمُمِيتُ মৃত্যু দানকারী, الْحَىّ الْقَيُّومُُ চিরঞ্জী, চিরস্থায়ী ও সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রতিষ্ঠাকারী, الْوَاجِد ُসর্বপ্রাপক, الْمَاجِدُ মহিমান্বিত, الْوَاحِدُ الأحَدُ একক ও অদ্বিতীয়, الصَّمَدُ অমূখাপেক্ষী, الْقَادِرُ ক্ষমতাবান, الْمُقْتَدِرُ মহা ক্ষমতাবান, الْمُقَدِّمُ অগ্রসরকারী, الْمُؤَخِّرُ পশ্চাৎকারী, الأَوَّلُ সর্বপ্রথম, الآخِرُসর্বশেষ, الظَّاهِرُ প্রকাশ্য, الْبَاطِنُ অপ্রকাশ্য, الْوَالِى মালিক, الْمُتَعَالِى সুমহান, الْبَرُّ মহা অনুগ্রহকারী, التَّوَّابُ তাওবা কবুলকারী, الْمُنْتَقِمُ প্রতিশোধ গ্রহণকারী, الْعَفُوُّ ক্ষমাশীল, الرَّءُوف দয়াবান, مَالِكُ الْمُلْكِ রাজাধিরাজ, الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ ذُو মহিমাময় ও মহানুভব, الْمُقْسِطُ ইনসাফকারী, الْجَامِعُ একত্রকারী, الْغَنِىُّ ঐশ্বর্যশালী, الْمُغْنِى অভাব দূরকারী, المعطي الْمَانِعُ দানকারী ও বারণকারী, الضَّارُّ النَّافِعُ অকল্যাণ ও কল্যাণকারী, النُّورُ আলো, আলো দানকারী, الْهَادِى হেদায়াতকারী, الْبَدِيعُ পূর্ব নমুনা ছাড়াই সৃষ্টিকারী, الْبَاقِى চিরস্থায়ী, الْوَارِثُউত্তরাধিকারী, الرَّشِيدُ সঠিক পথ প্রদর্শনকারী, الصَّبُورُপরম ধৈর্যশীল, অতঃপর ইমাম তিরমিজী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছ ব্যতীত অনেক বর্ণনাতেই আল্লাহর নামসমূহের আলোচনা আছে বলে জানিনা।[2]

হাদীছের কতিপয় হাফেয বলেনঃ এই হাদীছে আল্লাহর নামগুলো মুদরাজ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো রাবীর পক্ষ হতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন নি। আল্লামা ইবনে কাছীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরে এই কথা বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহর নামসমূহ নিরানববইএর মধ্যে সীমিত নয়। এর দলীল হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর ঐ হাদীছ, যা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ বান্দা যখন দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে এই দুআটি পাঠ করবেঃ

«اللَّهُمَّ إنِّى عَبْدُكَ ابنُ عَبْدِكَ ابنُ أمتِكَ ناصِيَتى بيَدِكَ مَاضٍ فِىَّ حُكْمُكَ عَدْلٌْ فىَّ قضاؤكَ أَسْأَلُكَ أللَّهُمَّ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي ونُورَ صَدْرى وجِلاءَ حُزنى وذَهَابَ هَمِّى إلا أذْهَبَ اللهُ حُزْنَه وهَمَّهُ وأبْدَلَهُ مكانَهُ فرحاً»

‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা। আমি তোমার এক বান্দা ও এক বান্দীর পুত্র। আমার কপাল তোমার হাতে। আমার ব্যাপারে তোমার হুকুম কার্যকর। আমার ব্যাপারে তোমার ফয়সালা ইনসাফপূর্ণ। আমি তোমার সেই প্রত্যেক নামের উসীলা দিয়ে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, যে নামের মাধ্যমে তুমি নিজের নামকরণ করেছ বা তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ বা তোমার কোনো বান্দাকে শিক্ষা দিয়েছো অথবা যে নামগুলোকে তুমি নিজের জ্ঞান ভান্ডারে সংরক্ষিত করে রেখেছ, কুরআনকে আমার অন্তরের প্রশান্তি, বক্ষের নূর, দুঃশ্চিন্তা বিদূরিত হওয়ার মাধ্যম বানিয়ে দাও। যে ব্যক্তি এই দুআ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলা তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে আনন্দ ও খুশীর দ্বারা সেই স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি এটি শিখে নিবোনা? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যে ব্যক্তি তা শুনবে, সে যেন তা শিখে নেয়’’। আবু হাতিম ইবনে হিববান স্বীয় ‘কিতাবুস্ সহীহতে’ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।[3]

ইবনে আবি হাতিম ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, يلحدون فى أسمائه অর্থাৎ তারা তাঁর নামগুলো বিকৃত করে। এর অর্থ হচ্ছে তারা শির্ক করে।

ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে, মুশরিকরা ‘ইলাহ’ থেকে ‘লাত’ আর ‘আযীয’ থেকে ‘উযযা’ নামকরণ করেছে।

আ’মাস থেকে বর্ণিত আছে, মুশরিকরা আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে এমন কিছু শির্কী বিষয় ঢুকিয়েছে, যা তাতে নেই।

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

‘‘আর যারা তার নামগুলো বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করে চলো। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ অর্থাৎ তারা শির্ক করে। ইবনে আবী তালহা আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, إلحاد (ইলহাদ) অর্থ تكذيب তথা অস্বীকার করা।

ব্যাখ্যাকার বলেনঃ আমি বলছি, শির্ক হচ্ছে মুশরিকদের ঐসব বিষয় অস্বীকার করার নাম, যা আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে নাযিল করেছেন এবং যা দিয়ে তিনি তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন। যেমন করেছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের সাথে কুরাইশ সম্প্রদায় এবং অন্যান্য লোকেরা। এই উম্মতের মুশরিকদেরও একই অবস্থা। তারা শির্ক হারাম হওয়া সম্পর্কে এবং শির্ক হতে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত সুস্পষ্ট আয়াতগুলো গ্রহণ করেনি; বরং প্রমাণিত সত্যকে তারা মিথ্যা বলছে এবং অস্বীকার করছে। তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করেছে।

আরবদের ভাষায় ইলহাদের মূল অর্থ হচ্ছে, মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়া এবং সঠিক পথ হতে অন্য দিকে ঝুকে পড়া। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রঃ) বলেনঃ

وحقيقـة الإلحاد فيها الميل

بالإشراك والتعطيل والنكران

ইলহাদ অর্থ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা বা শির্কের দিকে ঝুঁকে পড়া, তাঁর অতি সুন্দর নামসমূহকে বাতিল করা এবং তাঁর নেয়ামত ও অনুগ্রহসমূহ অস্বীকার করা। আল্লাহ তাআলার রয়েছে অনেক অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী। এসব অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী তাঁর পরিপূর্ণতার প্রমাণ করে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সকল আলেমের মাজহাব হচ্ছে আল্লাহর জন্য ঐ সমস্ত সিফাত সাব্যস্ত করতে হবে, যা তিনি নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন এবং যার মাধ্যমে তাঁর রাসূল তাঁকে গুণান্বিত করেছেন। কোনো প্রকার উপমা ছাড়াই এবং কোনো সিফাতকে অস্বীকার করা ব্যতীতই এমনভাবে তা আল্লাহর জন্য ছাবেত করতে হবে, যা তাঁর বড়ত্ব ও সম্মানের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

‘‘কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শূরাঃ ১১) এখানে বিশেষভাবে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহর সিফাতের ব্যাপারে কথা বলা আল্লাহর সত্তা নিয়ে কথা বলার শাখা ও অংশ বিশেষ। তাই আল্লাহর যাত নিয়ে কথা বলা আর তাঁর সিফাত নিয়ে কথা বলার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ যেমন এটি বিশ্বাস করা জরুরী যে, আল্লাহর এমন এক বিশেষ যাত (সত্তা) রয়েছে, যা কোনো মাখলুকের সত্তার মত নয়, তেমনি তার এমন বিশেষ গুণাবলী রয়েছে, যা কোনো মাখলুকের সিফাতের মত নয়।

সুতরাং আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য যেসব সিফাত সাব্যস্ত করেছেন অথবা আল্লাহর রাসূল যেসব সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, তা থেকে যে ব্যক্তি কোনো কিছুকে অস্বীকার করল অথবা সেই সিফাতের বাহ্যিক অর্থ বাদ দিয়ে অন্য কোনো ব্যাখ্যা করল, সে জাহমীয়া ফির্কার লোক বলে গণ্য হবে এবং সে হবে মুমিনদের সঠিক পথ বাদ দিয়ে অন্য পথের অনুসরণকারী।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ সম্পর্কে যে খবর এসেছে এবং যা আল্লাহর সিফাত হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং তা কয়েক প্রকারঃ

(১) যা আল্লাহর সত্তার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন আমরা বলে থাকি আল্লাহর সত্তা আছে। তাঁর অস্তিত্ব রয়েছে।

(২) যা আল্লাহর সিফাতের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার এমন সিফাত রয়েছে, যার অর্থ বিদ্যমান। যেমন العليم জ্ঞানী, القدير ক্ষমতাবান, السميع সর্বশ্রোতা, البصير সর্বদ্রষ্টা ইত্যাদি।

(৩) আল্লাহ সম্পর্কে এমন বিষয় বলা হয়েছে, যা আল্লাহর কর্মসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন الخالق সৃষ্টিকর্তা, الرازق রিযিক প্রদানকারী ইত্যাদি।

(৪) আল্লাহ তাআলা সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সেই সাথে পরিপূর্ণ গুণাবলী আল্লাহর জন্য সাব্যস্তও করতে হবে। কেননা শুধু পবিত্র বলার মধ্যে কোনো কামালিয়াত নেই। যেমন القدوس السلام মহা পবিত্র ও শান্তি দাতা।

(৫) আল্লাহ তাআলার এমন অতি সুন্দর নামও সুউচ্চ গুণাবলী রয়েছে, যা অধিকাংশ লোকই উল্লেখ করেন নি। সেগুলো হচ্ছে এমন নাম, যার একটি অনেকগুলো গুণের প্রমাণ বহন করে, নির্দিষ্ট কোনো গুণের সাথে খাস নয়; বরং একাধিক অর্থ প্রকাশ করে। যেমন আল্লাহর المجيد (আলমাজীদ), العظيم (আলআযীম) এবং الصمد (আস্ সামাদ) নামগুলো। কেননা মাজীদ তাকেই বলা হয়, যার মধ্যে অনেকগুলো সিফাতে কামালিয়া পাওয়া যায় এবং المجيد শব্দটি সেই সব সিফাতে কামালিয়ার প্রমাণ বহন করে। এটি প্রশস্ততা, বিশালতা, আধিক্য এবং অতিরিক্ত-এর অর্থ প্রদান করে। এখান থেকেই বলা হয় استمجد المرخ والعفار মারখ ও উফার বৃক্ষ প্রচুর, বিশাল ও বড় হয়েছে। এই কথা ঠিক তখনই বলা হয়, যখন তা প্রচুর হয়, বড় হয় এবং লম্বা হয়। আর বলা হয় أمجد الناقة علفها উটনীর খাদ্য প্রচুর হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ذُو الْعَرْشِ الْمَجِيدُ‘‘মহান আরশের অধিকারী’’। এখানে মাজীদ শব্দটি আরশের সিফাত হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ মহান ও বিশাল। আরশ যেহেতু বিশাল, প্রশস্ত এবং সম্মানিত, তাই مجيد শব্দ দ্বারা আরশের সিফাত বর্ণনা করা হয়েছে।

হে পাঠক! চিন্তা করুন। আল্লাহ তাআলার এই المجيد নামটি দুরূদ শরীফে এসেছে। এখানে আল্লাহর কাছে দুআ করা হয়েছে যে, তিনি যেন তাঁর নবীর উপর দুরূদ পাঠান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, আমরা যেন তাঁর শেখানো বাক্যগুলো দিয়ে আল্লাহর কাছে তাঁর উপর দুরূদ পাঠানোর দুআ করি। আর যেহেতু এটি আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণ কল্যাণ ও বরকত চাওয়ার স্থান এবং আল্লাহর অনুগ্রহের প্রশস্ততা, আধিক্য এবং স্থায়ীত্ব বর্ণনার সময়, তাই এই দুআয় আল্লাহর এমন নাম নিয়ে আসা হয়েছে, যা উপরোক্ত সকল অর্থই প্রকাশ করে। যেমন আপনি বলে থাকেনঃ اغفرلي وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার উপর রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি অত্যাধিক ক্ষমাকারী ও অত্যাধিক দয়াকারী। এখানে আল্লাহর নাম ও গুনাবলীর উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সময় গাফুর নামের উসীলা এবং রহমত প্রার্থনা করার সময় আল্লাহর রাহীম নামের উসীলা দেয়া হয়েছে। এটি আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য উসীলা। মুসনাদে আহমাদ ও তিরমিযীতে এসেছে, তোমরা يا ذا الجلال والإكرام কে উসীলা বানাও।[4] আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় দুআয় বলতেনঃ

«اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ»

‘‘হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, এই উসীলায় যে, তোমার জন্যই সকল প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। তুমি অত্যন্ত অনুগ্রহকারী এবং কোন নমুনা ছাড়াই আসমান-যমীন সৃষ্টিকারী। ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম (হে সুমহান, সম্মানিত এবং মর্যাদাবান)।[5] এটি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার কাছে একটি দুআ। এখানে আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট উসীলা দিয়ে দুআ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই। তিনি প্রচুর অনুগ্রহকারী। এই দুআয় আল্লাহর নাম ও গুনাবলীর উসীলা দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই দু’আ কবুল হওয়ার খুবই উপযোগী এবং আল্লাহর নিকট এটি খুবই মূল্যবান। আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অধ্যায় তাওহীদের অন্যতম বিরাট একটি অধ্যায়।

(৬) আল্লাহর এমন কতিপয় নাম ও সিফাত রয়েছে, যা দু’টি নাম কিংবা দু’টি সিফাত পরস্পর মিলে একটিতে পরিণত হয়েছে। এককভাবে উক্ত দু’টি নাম বা দু’টি সিফাত যে অর্থ প্রদান করে, উভয়ে পরস্পর মিলে একত্রিত হয়ে তার চেয়ে অধিক অর্থ দেয়। যেমন الغني الحميد (আলগানিউল হামীদ), الغفور القدير (আলগাফুরুল কাদীর), الحميد المجيد (আলহামীদুল মাজীদ) এবং এ ধরণের আরো অনেক মুরাক্কাব (যৌগিক) সিফাত ও নাম কুরআনে রয়েছে। الغِني (অমূখাপেক্ষীতা) আল্লাহর একটি পরিপূর্ণ গুণ। অনুরূপ الحمد (পরিপূর্ণ প্রশংসা) আরেকটি পরিপূর্ণ গুণ। এখানে ‘গিনা’ এবং ‘হামদ’ পরস্পর মিলে অন্য একটি সিফাতে কামাল বুঝায়। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার রয়েছে অমূখাপেক্ষীতার দিক থেকে প্রশংসা, সুন্দর গুণাবলীর দিক থেকেও রয়েছে তাঁর প্রশংসা। অমূখাপেক্ষীতার দিক থেকে প্রশংসা এবং সুন্দর গুণাবলীর দিক থেকে প্রশংসা একসাথে মিলিত হওয়ার কারণে আলাদা আরেকটি প্রশংসায় রূপ নিয়েছে। এ রকমই الغفور القدير (আলগাফুরুল কাদীর), الحميد المجيد (আলহামীদুল মাজীদ) এবং العزيز الحكيم (আল-আযীযুল হাকীম)। সুতরাং বিষয়টি ভালোভাবে বুঝা উচিত। কেননা এটি আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১) আল্লাহ তাআলার অনেক অতি সুন্দর নাম রয়েছে। এই অতি সুন্দর নামসমূহ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব।

২) আল্লাহর অতি সুন্দর নামসমূহ অতি সুন্দর ও মহা পবিত্র।

৩) আল্লাহ তাআলাকে ঐ সমস্ত সুন্দর ও পবিত্র নামে ডাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৪) যেসব মূর্খ ও মুশরিকরা আল্লাহর পবিত্র নাম সমূহের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদেরকে পরিহার করে চলা জরুরী।

৫) এই অধ্যায়ে আল্লাহর নাম বিকৃতি করার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

৬) আল্লাহর নাম পরিবর্তন ও বিকৃতিকারীদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওহীদ।

[2] - এই হাদীছটি বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিজী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছটি গরীব (যঈফ)। সাফওয়ান বিন সালেহ থেকে অনেকেই আমাদের কাছে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। সাফওয়ান বিন সালেহ ব্যতীত অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মুহাদ্দিছদের নিকট সাফওয়ান একজন ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) রাবী। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকেও একাধিক সূত্রে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। তবে এই হাদীছ ব্যতীত যে সমস্ত হাদীছ রয়েছে, তাতে আল্লাহর নামগুলোর আলোচনা নেই। সেই সাথে এই বিষয়ে বর্ণিত হাদীছগুলোর সহীহ কোন সনদও নেই। আদম বিন আবু ইয়াস এই হাদীছকে অন্য সনদে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। আর আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। তাতে তিনি নামগুলো উল্লেখ করেছেন। তবে তার কোন সহীহ সনদ নেই।

মোট কথা আল্লাহর এই নামগুলো নির্দিষ্ট করা এবং এভাবে সীমাবদ্ধ করা সহীহ নয়। বিস্তারিত দেখুনঃ কুররাতুল উয়ুনঃ পৃষ্ঠা নং-৩৭৩।

[3] - মুসনাদে আহমাদ, ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলা সহীহা, হাদীছ নং- (১/১৯৯)।

[4] - হাদীছটি সহীহ। দেখুনঃ সিলসিলা সহীহা, হাদীছ নং- ১৫৩৬।

[5] - হাদীছটি সহীহ। দেখুনঃ সিলসিলা সহীহা, হাদীছ নং- ১৩২৬।
আল্লাহ তাআলার রয়েছে অতিসুন্দর নামসমূহ - ২

এই অধ্যায়ের সাথে অনুবাদকের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তিঃ

দুআর শুরুতে ভূমিকা ও উসীলা স্বরূপ নিম্নের বিষয়গুলো পেশ করা শরীয়ত সম্মতঃ

১) আল্লাহর প্রশংসা, বড়ত্ব এবং তাঁর গুণাবলী তুলে ধরা এবং দুআ করার আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দুরূদ পেশ করাঃ দুআ কারীর উচিত দু’আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা, তাঁর যথোপযুক্ত গুণাবলী বর্ণনা করা এবং তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করা। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরূদ পাঠ করা। অতঃপর আল্লাহর কাছে যা ইচ্ছা দুআ করবে ও চাইবে। এ মর্মে মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ ও তিরমিযী শরীফে হাসান সনদে ফুযালা বিন উবাইদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাযে দুআ করতে শুনলেন। নামাযে সে আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব বর্ণনা করেনি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরূদও পাঠ করেনি। তিনি তখন বললেনঃ এই লোকটি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। অতঃপর তিনি তাঁকে ডেকে অথবা অন্যদেরকে ডেকে বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামায পড়বে, তখন সে যেন তাঁর রবের বড়ত্ব ও প্রশংসা বর্ণনার মাধ্যমেই শুরু করে। অতঃপর যেন সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরূদ পেশ করে। এরপর সে যেন স্বীয় ইচ্ছা অনুপাতে দু’আ করে।

সূরা ফাতিহা সম্পর্কে সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীছেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ

«قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى حَمِدَنِي عَبْدِي وَإِذَا قَالَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى أَثْنَى عَلَيَّ عَبْدِي وَإِذَا قَالَ ( مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ) قَالَ مَجَّدَنِي عَبْدِي وَقَالَ مَرَّةً فَوَّضَ إِلَيَّ عَبْدِي فَإِذَا قَالَ: إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ قَالَ هَذَا بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ قَالَ هَذَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ»

‘‘আমি বান্দার সালাতকে তার মাঝে এবং আমার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করে নিয়েছি, আমার বান্দা যা চায় তাই সে পাবে। বান্দা যখন বলেঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ তখন আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। যখন সে বলেঃ الرحمن الرحيم তখন আল্লাহ্ বলেন আমার বান্দা আমার গুণাবলী বর্ণনা করল। সে যখন বলেঃ مالك يوم الدين তখন আল্লাহ্ বলেনঃ আমার বান্দা আমার বড়ত্ব বর্ণনা করল। অথবা তিনি বলেনঃ বান্দা নিজেকে আমার নিকট সমর্পন করল। যখন সে বলেঃإِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ তখন আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ এ কথাটি আমার এবং বান্দার মাঝের বিষয়। আর বান্দা যা চাইবে তাকে তাই দেয়া হবে। যখন সে বলেঃ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ তখন আল্লাহ্ বলেনঃ এগুলো আমার বান্দার জন্য, আর আমার বান্দা যা চায় তাকে তাই দেয়া হবে।[6]

প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন, আল্লাহর বাণীঃ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيم -এটি হচ্ছে একটি দুআ। দুআটি এসেছে আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর গুণাবলী এবং বড়ত্ব বর্ণনা করার পর। এ কারণেই বান্দা যখন বলেঃ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ‘আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখাও, তাদের পথ যাদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছ। এমন লোকদের পথ নয়, যাদের উপর তুমি রাগান্বিত হয়েছো এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে’ তখন আল্লাহ্ বলেনঃ এগুলো আমার বান্দার জন্য, আর আমার বান্দা যা চায় তাকে তাই দেয়া হবে।

২) দুআর শুরুতে আল্লাহর আসমায়ে হুসনা তথা সুন্দরতম নামগুলোর উসীলা দেয়াঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا ‘‘আর আল্লাহ্‌র জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম’’। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাকো। আল্লাহর অতি সুন্দর নামের উসীলা দিয়ে দুআ করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে কুরআন ও হাদীছে অনেক দলীল পাওয়া যায়। মহান আল্লাহর অন্যতম ও সর্বাধিক বড় নাম (الله)। এ নামটি বাকীসব অতি সুন্দর নামের অর্থকে নিজের মধ্যে একত্র করে নিয়েছে। আপনি যখন বলবেনঃ يا الله اُرْزُقْنِيْ অথবা বলবেন اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِيْ (হে আল্লাহ! আমাকে রিযিক দাও) অথবা যখন বলবেনঃ يَا الله اُنصُرْنِيْ (হে আল্লাহ! আমাকে সাহায্য করো) কিংবা বলবেনঃ اللهم اهدنا (হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত কর) তখন এ সবগুলো কথাই মুস্তাহাব হবে।

৩) আল্লাহর অতি সুন্দর নামের মাধ্যমে নবী-রাসূল ও মুমিনদের দুআ করার কিছু উদাহরণঃ মুসা (আঃ) তাঁর প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ

فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ

‘‘হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের উপর দয়া করো। তুমিই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী’’। (সূরা আরাফঃ ১৫৫) মুসা (আঃ) তাঁর দুআয় আরও বলেছেনঃ

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِأَخِي وَأَدْخِلْنَا فِي رَحْمَتِكَ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ

‘‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করো। আর আমার ভাইকেও ক্ষমা করো এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের শামিল করো। তুমি সর্বাধিক দয়াকারী’’। (সূরা আরাফঃ ১৫১) ঈসা (আঃ) তাঁর দুআয় বলেছেনঃ

اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآَخِرِنَا وَآَيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

‘‘হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক। আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্য ভর্তি একটি খাঞ্চা নাযিল করো। তা আমাদের জন্য, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদেরকে রুযী দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠ রুযীদাতা’’। (সূরা মায়িদাঃ ১১৪) ইয়াকুব (আঃ) তাঁর দুআয় বলেছেনঃ

سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

‘‘সত্ত্বরই আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা চাইব। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু’’। (সূরা ইউসুফঃ ৯৮) সুলায়মান (আঃ) তাঁর দুআয় বলেছেনঃ

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে মাফ করো এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করো যা আমার পরে আর কেউ লাভ করতে পারবেনা। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা’’। (সূরা সোয়াদঃ ৩৫) ঈমানদারগণ দুআয় বলেঃ

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিওনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ করো। তুমিই মহান দাতা’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৮) আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে দুআর নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ

وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

‘‘বলোঃ হে আমার প্রতিপালক, ক্ষমা কর ও রহম কর। রহমকারীদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ রহমকারী’’। (সূরা মুমিনুনঃ ১১৮)

৪) আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত অনুগ্রহ ও রহমতকে উসীলা করে আল্লাহর কাছে দুআ করাঃ যাকারিয়া (আঃ)এর দুআটি এই প্রকার উসীলার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা যাকারিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেনঃ

رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُنْ بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِنْ وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنْ آَلِ يَعْقُوبَ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا

‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো পর্যন্ত নরম হয়ে গেছে। বার্ধক্যের কারণে মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার প্রতিপালক! তোমার কাছে চেয়ে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। আমি ভয় করি আমার পরে আমার বংশধরকে। আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা; কাজেই তুমি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান কর। সে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুব-বংশেরও উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার প্রতিপালক! তাকে একজন পছন্দনীয় মানুষে পরিণত করো’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৪-৬) এটি দুআর অন্যতম প্রকার। এখানে পূর্বে কৃত দুআ কবুল হওয়ার এবং পূর্বে প্রাপ্ত অনুগ্রহের উসীলা দিয়ে পুনরায় দুআ করা হয়েছে।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) ‘আত্ তাফসীরুল কাইয়্যিম’ নামক কিতাবে বলেনঃ কেউ কেউ বলেন যে, এটি হচ্ছে دعاء المسألة অর্থাৎ এমন দুআ, যাতে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হয়েছে। আয়াতে যাকারিয়া (আঃ)এর দুআর অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! তুমি অতীতে বার বার আমার দুআ কবুল করেছ। আমার উপর অনুগ্রহ করেছ। কখনই আমার দুআ কবুল না করে আমাকে ব্যর্থ ও মাহরুম করোনি। সুতরাং এখানে পূর্বের মাকবুল দুআকে উসীলা করে আবার দুআ করা হয়েছে।

বর্ণিত হয়েছে যে, এক লোক অন্য কোন এক ব্যক্তির কাছে কিছু চাইতে গিয়ে বললঃ আপনি তো ইতিপূর্বে আমাকে অমুক সময় অমুক বস্ত্ত দান করেছেন। তখন সেই ব্যক্তি বললঃ ঐ ব্যক্তিকে মোবারকবাদ, যে আমাদের উসীলা দিয়েই আমাদের কাছে চাচ্ছে এবং আমাদের দান নিয়ে স্বীয় প্রয়োজন পূরণ করছে।

আমি বলছি, যাকারিয়া (আঃ)এর দুআর অর্থ হচ্ছে, তিনি তাঁর রবকে বলছেনঃ হে আমার রব! তুমি সীমাহীন দাতা! তুমি আমার উপর অনেক অনুগ্রহ করেছো, আমার কোনো দুআই ফেরত দাওনি, ইতিপূর্বে তুমি কখনই আমাকে মাহরুম করোনি এবং আমার দুআ ফেরত দিয়ে আমাকে ব্যর্থ করোনি। সুতরাং তুমি আমার এই দুআ কবুল করো। কাজেই তুমি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান কর। সে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুব-বংশেরও উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার প্রতিপালক! তাকে একজন পছন্দনীয় মানুষে পরিণত কর।

যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, সূরা আল-ইমরানের ৮ নং আয়াতে তাদের দুআও এর অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর বাণীঃ رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা’’। তাদের উপর পূর্বে কৃত অনুগ্রহ তথা তাদেরকে হেদায়াত করাকে উসীলা বানিয়ে তারা আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন। তারা যেন এ কথা বলছেনঃ হে আমাদের প্রভু! তুমি হেদায়াতের মাধ্যমে আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছ এবং হেদায়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে ধন্য করেছ। সুতরাং হেদায়াতের পর আমাদের অন্তরকে বিপথে পরিচালিত করোনা। এখানে পূর্বের নেয়ামত ও অনুগ্রহকে স্বীকার করা হয়েছে।

উপরে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) যা উল্লেখ করেছেন, তা পরিস্কার করে বুঝানোর জন্য আল্লাহর তাওফীক চেয়ে নিম্নে আরো কিছু কথা বর্ণনা করছি।

কখনো কখনো প্রথমে আমলে সালেহ উল্লেখ করা হয়। অতঃপর দুআ করা হয়। আল্লাহ তাআলা সূরা আল-ইমরানের ৫৩ নং আয়াতে মুমিনদের নিম্নোক্ত দুআ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

رَبَّنَا آَمَنَّا بِمَا أَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা সে বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যা তুমি নাযিল করেছ, আমরা রাসূলের অনুগত হয়েছি। অতএব, আমাদেরকে সাক্ষ্যদান কারীদের তালিকাভুক্ত করে নাও’’। এখানে মুমিনগণ আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আনয়ন, আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য কবুল করে নেয়াকে উসীলা ও ভূমিকা হিসাবে পেশ করেছেন। অতঃপর তারা দুআ করেছেন। আল্লাহ তাআলা সূরা আল-ইমরানের ৯৩ নং আয়াতে আরো বলেনঃ

رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آَمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآَمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে। আহবানকারী বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনো, তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! অতঃপর আমাদের সকল! অপরাধ মাফ করো এবং আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে’’। এখানেও মুমিনগণ ঈমানের প্রতি আহবানকারীর আহবান কবুল করাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট উসীলা হিসাবে পেশ করেছেন। সূরা মুমিনূনের ১০৯ নং আয়াতে মুমিনদের দুআ বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

رَبَّنَا آَمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি রহম করো। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু’’। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«انْطَلَقَ ثَلاثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَوُا الْمَبِيتَ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الْغَارَ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لا يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلاَّ أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمُ: اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ، وَكُنْتُ لا أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلاً وَلا مَالاً، فَنَأَى بِي فِي طَلَبِ شَيْءٍ يَوْمًا، فَلَمْ أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا، فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا، فَوَجَدْتُهُمَا نَائِمَيْنِ، وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلاً أَوْ مَالاً، فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ أَنْتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الْفَجْرُ، فَاسْتَيْقَظَا فَشَرِبَا غَبُوقَهُمَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ، فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لا يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ»، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: وَقَالَ الآخَرُ: اللَّهُمَّ كَانَتْ لِي بِنْتُ عَمٍّ كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ، فَأَرَدْتُهَا عَنْ نَفْسِهَا فَامْتَنَعَتْ مِنِّي، حَتَّى أَلَمَّتْ بِهَا سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ، فَجَاءَتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفَعَلَتْ، حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا، قَالَتْ: لا أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الْخَاتَمَ إِلاَّ بِحَقِّهِ، فَتَحَرَّجْتُ مِنَ الْوُقُوعِ عَلَيْهَا، فَانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ، وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ، غَيْرَ أَنَّهُمْ لا يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهَا» قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «وَقَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ فَأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهَبَ، فَثَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الأَمْوَالُ فَجَاءَنِي بَعْدَ حِينٍ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللَّهِ أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِي، فَقُلْتُ لَهُ: كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أَجْرِكَ مِنَ الإِبِلِ وَالْبَقَرِ وَالْغَنَمِ وَالرَّقِيقِ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللَّهِ لا تَسْتَهْزِئُ بِي، فَقُلْتُ: إِنِّي لا أَسْتَهْزِئُ بِكَ، فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فَاسْتَاقَهُ فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا، اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ»

‘‘অতীত কালে তিনজন লোক পথ চলছিল। পথিমধ্যে রাত্রি যাপন করার জন্য তারা একটি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ল। উপর থেকে বিশাল আকারের একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তাদের জন্য বের হওয়ার কোনো সুযোগ অবশিষ্ট রইলনা। তাদের একজন অপরজনকে বলতে লাগল, তোমরা প্রত্যেকেই আপন আপন সৎআমল আল্লাহর নিকট তুলে ধরে তাঁর উসীলা দিয়ে দু’আ করা ব্যতীত এই পাথর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই।

তাদের একজন বললঃ হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অতি বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছিল। আমি তাদের পূর্বে আমার পরিবার-পরিজন কিংবা দাস-দাসীকে দুধ পান করাতাম না। একদিন ঘাসের সন্ধানে আমি অনেক দূরে চলে গেলাম। তারা ঘুমিয়ে পড়ার পূর্বে আমি ফেরত আসতে পারলাম না। আমি তাদের জন্য দুধ দোহন করলাম। অতঃপর আমি পেয়ালা নিয়ে তাদের মাথার পাশে দাড়িয়ে রইলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলাম। আমি তাদের পূর্বে পরিবার-পরিজন কিংবা দাস-দাসীকে দুধ পান করানো অপছন্দ করলাম। দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে তাদের জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকলাম। এভাবে সারা রাত কেটে গিয়ে ফজর উদীত হল। আমার পিতা-মাতা ঘুম থেকে জেগে দুধ পান করলেন।

হে আল্লাহ! আমি এ কাজটি যদি একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে থাকি তাহলে এই পাথরটির কারণে আমরা যে বিপদে পড়েছি তা থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করো। এভাবে দু’আ করার সাথে সাথে পাথরটি একটু সরে গেল, কিন্তু তখনো বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দ্বিতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। সে ছিল আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। আমি তার কাছে আমার মনোবাসনা পেশ করলাম। সে অস্বীকার করল। অবশেষে একবছর খুব দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তখন সে খাদ্যাভাবে পড়ে সাহায্যের জন্য আমার নিকট আসল। আমি তাকে একশত বিশ দীনার দিলাম এই শর্তে যে, সে আমার সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে। সে রাজি হয়ে গেল। কিন্তু আমি যখন সম্পূর্ণ সুযোগ লাভ করলাম তখন সে বলতে লাগলঃ আমি তোমাকে অন্যায়ভাবে মোহর ভাঙ্গার অনুমতি দিতে পারি না। (অন্যায়ভাবে তুমি আমার সতীত্ব হরণ করতে পারনা) ফলে আমি তার সাথে সহবাস করাকে পাপের কাজ মনে করলাম। সুতরাং সে আমার সবচেয়ে পছন্দের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আমি তার কাছ থেকে চলে আসলাম। আর আমি তাকে যেই স্বর্ণ দিয়েছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম।

হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে থাকি তাহলে এই পাথরটির কারণে আমরা যে বিপদে পড়েছি তা থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করো। এভাবে দু’আ করার সাথে সাথে পাথরটি একটু সরে গেল, কিন্তু তখনো বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তৃতীয়জন বললঃ হে আল্লাহ! নির্ধারিত মজুরীর বিনিময়ে আমি কয়েকজন শ্রমিক নিয়োগ করলাম। কাজ শেষে আমি তাদেরকে পারিশ্রমিক প্রদান করলাম। কিন্তু একজন লোক মজুরী গ্রহণ না করেই চলে গেল। আমি তার প্রাপ্য টাকা বাড়াতে থাকলাম। এক পর্যায়ে তা প্রচুর সম্পদে পরিণত হল। কিছুকাল পর সে আমার নিকট এসে বললঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমার মজুরী দিয়ে দাও। আমি তাকে বললামঃ এসব উট, গরু, ছাগল এবং গোলাম যা তুমি দেখতে পাচ্ছ তা সবই তোমার। সে বললঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমার সাথে বিদ্রুপ করোনা। আমি বললামঃ আমি তোমার সাথে বিদ্রুপ করছিনা, এগুলো তোমারই। অতঃপর সে সমস্ত সম্পদ নিয়ে চলে গেল। একটিও রেখে যায় নি।

হে আল্লাহ! তুমি তো জান, আমি একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করেছি, সুতরাং আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। সাথে সাথে পাথরটি সম্পূর্ণরূপে সরে গেল। তারা নিরাপদে সেখান থেকে বের হলো।

মোটকথা দান-সাদকাহ, নামায, কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর যিকির এবং অন্যান্য আমল করার পর দুআ করবে। কেননা সৎকর্মকে উসীলা করে দুআ করলে দুআ কবুল হয়। আল্লাহ তাআলা সূরা আম্বীয়ার ৯০ নং আয়াতে বলেনঃ

إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ

‘‘তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত’’। সুতরাং তারা দুআ করার সাথে সাথে সৎকাজেও দ্রুত অগ্রসর হত। এমনি আল্লাহর বান্দারা কিয়াম, রুকূ ও সাজদা করা অবস্থায় রাত্রি কাটায় এবং বলেঃ

رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। নিশ্চয়ই এর আযাব তো সর্বনাশা’’। (সূরা ফুরকানঃ ৬৫) সুতরাং তাদের দুআ হয়েছিল রুকূ ও সাজদাহ অবস্থায়। এমনি ইবরাহীম খলীল ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কাবা ঘর নির্মাণ করার সময় বলছিলেনঃرَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের সৎকর্ম কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ’’। (সূরা বাকারাঃ ১২৭) মসজিদ বানানো ও প্রাচীর উঁচু করার সময় পিতা-পুত্র মিলে আল্লাহর কাছে দুআ করছিলেন, তাদের এই আমল কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করছিলেন এবং তাদের দুইজনকে ও তাদের বংশধরকে মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার আবেদন করছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের সেই কথা সূরা বাকারার ১২৮ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের এবাদতের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু’’। সহীহ মুসলিম শরীফে রাবীআ বিন কাব আসলামী হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ

«كُنْتُ أَبِيتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فأَتِيهِ بِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ فَقَالَ لِيْ: سَلْنِيْ فَقُلْتُ أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ قَالَ أَوَ غَيْرَ ذَلِكَ قُلْتُ هُوَ ذَاكَ قَالَ فَأَعِنِّي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ»

‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে রাত কাটাতাম এবং তাকে প্রয়োজনীয় জিনিষ অথবা অযুর পানি এনে দিতাম। একদা তিনি আমাকে বললেনঃ ‘‘তুমি আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললামঃ আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। তিনি বললেনঃ এর সাথে আরো কিছু চাও কি? আমি বললামঃ শুধু এটাই। তিনি বললেনঃ ‘‘অতএব বেশী বেশী সাজদা করে তোমার জন্য আমাকে সহযোগিতা কর’’।

সৎ লোকদের দুআ ও দুর্বলদের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করাঃ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«يَأْتِي زَمَانٌ يَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: فِيكُمْ مَنْ صَحِبَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم؟ فَيُقَالُ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ عَلَيْهِ، ثُمَّ يَأْتِي زَمَانٌ فَيُقَالُ: فِيكُمْ مَنْ صَحِبَ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم؟ فَيُقَالُ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ ثُمَّ يَأْتِي زَمَانٌ فَيُقَالُ: فِيكُمْ مَنْ صَحِبَ صَاحِبَ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم؟ فَيُقَالُ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لهم»

‘‘মানুষের নিকট এমন সময় আসবে যখন একদল লোক আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। তখন বলা হবে তোমাদের মধ্যে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের কেউ আছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। তখন তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। অতঃপর মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যখন বলা হবে তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের সাহচর্য লাভ করেছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। তখন তাদেরকে বিজয় দান করা হবে। অতঃপর মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যখন বলা হবে তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছেন? বলা হবে হ্যাঁ আছেন। তখন তাদেরকেও বিজয় দান করা হবে’’।

সা’দ রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন দেখলেন যে, ধন-সম্পদ ও অন্যান্য বিষয়ে লোকদের তুলনায় তার অধিক ফযীলত রয়েছে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেনঃ

«هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ»

‘‘তোমাদের দুর্বল ও অসহায়দের কারণেই তোমরা রিযিক ও সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে থাকো’’।[7]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ তোমরা আমার জন্য দুর্বল ও অসহায়দেরকে তালাশ করো। কেননা তোমরা দুর্বলদের মাধ্যমে রিযিক প্রাপ্ত হয়ে থাকো এবং দুর্বলদের কারণেই তোমাদেরকে শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করা হয়ে থাকে।[8]

নাসাঈ শরীফে সহীহ সূত্রে এ ব্যাপারে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«إِنَّمَا يَنْصُرُ اللَّهُ هَذِهِ الْأُمَّةَ بِضَعِيفِهَا بِدَعْوَتِهِمْ وَصَلَاتِهِمْ وَإِخْلَاصِهِمْ»

‘‘আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে তাদের দুর্বল লোকদের মাধ্যমে সাহায্য করেন। তাদের দুআর মাধ্যমে, নামাযের মাধ্যমে এবং এখলাসের তথা তাদের আমলের মাধ্যমে’’।[9]

সুতরাং কেউ যদি রিযিকের সন্ধানে বের হয়ে এভাবে দুআ করে যে, হে আল্লাহ! আমি ছোট শিশুদের ভরণপোষণ ও প্রতিপালন করি, দুর্বল ও অসহায়দের জন্য খরচ করি, ইয়াতীম ও বিধবাদের পরিচর্যা করি, এভাবে নিজের দুর্বলতা ও প্রয়োজন আল্লাহর সামনে তুলে ধরে কেউ যদি উপরোক্ত কথাগুলো বলে এবং সে যদি আরো বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! এদেরকে রিযিক দেয়ার সাথে আমাকেও রিযিক দাও, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় তার দুআ কবুল হবে এবং তার প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার আশা করা যায়।

আল্লাহ তাআলার কাছে উসীলা দেয়ার আরো অনেক পদ্ধতি রয়েছে। দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় এতটুকই যথেষ্ট মনে করছি।

[6] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। হাদীছ নং- ৫৯৮।


[7] - বুখারী, অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে জিহাদের সময় দুর্বল ও সৎ লোকদের মূল্যায়ন ও দুআর দ্বারা আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া।

[8] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ দুর্বল মুসলিমদের মাধ্যমে বিজয় কামনা করা। হাদীছ নং- ১৭০২।

[9] - নাসাঈ, অধ্যায়ঃ দুর্বলের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা। হাদীছ নং- ৩১৭৮।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে