আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ فَلَمَّا أَثْقَلَتْ دَعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آَتَيْتَنَا صَالِحًا لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ (189) فَلَمَّا آَتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ (190) أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ (191) وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًا وَلَا أَنْفُسَهُمْ يَنْصُرُونَ
‘‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে; আর তার থেকেই তৈরি করেছেন তার স্ত্রীকে, যাতে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। অতঃপর সে যখন তার স্ত্রীকে আবৃত করল, তখন স্ত্রী হালকা গর্ভধারণ করল। সে তাই নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। তারপর যখন গর্ভ ভারি হয়ে গেল, তখন উভয়ে মিলে তাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র কাছে দুআ করলো। তুমি যদি আমাদেরকে সৎ সন্তান দান করো তবে আমরা তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করলেন, তখন দানকৃত বিষয়ে তারা তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করতে লাগল। বস্ত্তত আল্লাহ্ তাদের শরীক সাব্যস্ত করার বহু উর্ধ্বে। তারা কি এমন কাউকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে যে একটি জিনিষও সৃষ্টি করতে পারেনা; বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট? আর তারা না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজেদের সাহায্য করতে পারে’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৮৯-১৯২)
ব্যাখ্যাঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) সামুরা বিন জুন্দুব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ হাওয়া যখন সন্তান প্রসব করলেন, তখন ইবলীস তাঁর চারপাশে ঘুরঘুর করতে লাগল। আর হাওয়ার কোন সন্তানই বাঁচতনা। ইবলীস হাওয়াকে বলতঃ সন্তানের নাম রাখ আব্দুল হারিছ। আব্দুল হারিছ[1] নাম রাখলে সন্তান বাঁচবে। সুতরাং হাওয়া একবার কোন এক সন্তানের নাম রাখলেন আব্দুল হারিছ। এবার সন্তান বেঁচে গেল। আর এই নাম রাখা ছিল শয়তানের প্ররোচনায় ও আদেশেই।[2]
فَلَمَّا آَتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا ‘‘অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করলেন, তখন দানকৃত বিষয়ে তারা তাঁর অংশীদার নির্ধারণ করতে লাগল’’ঃ ইবনে জারীর হাসান থেকে এই আয়াতের তাফসীর বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ এটি কোনো একটি ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। আদম ও হাওয়ার মধ্যে সংঘটিত হয়নি।[3]
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আদম (আঃ)এর স্ত্রী হাওয়া সন্তান প্রসব করেই যাচ্ছিলেন। যখনই কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণ করত, তিনি সন্তানকে আল্লাহর বান্দা বানাতেন। অর্থাৎ নাম রাখতেন আব্দুল্লাহ, উবাইদুল্লাহ কিংবা অনুরূপ। কিন্তু সব সন্তানই মারা যেত। ইবলীস হাওয়া ও আদমের কাছে এসে বললঃ তোমরা যদি আব্দুল্লাহ, উবাইদুল্লাহ ব্যতীত সন্তানদের অন্য নাম রাখো, তাহলে তোমাদের সন্তান বাঁচবে। অতঃপর হাওয়া একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। শয়তানের পরামর্শ মোতাবেক তারা এবার পুত্রের নাম রাখলেন আব্দুল হারিছ।[4] এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতগুলো নাযিল করেনঃ
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ فَلَمَّا أَثْقَلَتْ دَعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آَتَيْتَنَا صَالِحًا لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ (189) فَلَمَّا آَتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ (190) أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ (191) وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًا وَلَا أَنْفُسَهُمْ يَنْصُرُونَ
‘‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে; আর তার থেকেই তৈরি করেছেন তার স্ত্রীকে, যাতে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। অতঃপর সে যখন স্ত্রীকে আবৃত করল, তখন হালকা গর্ভধারণ করল। সে তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। তারপর যখন গর্ভ ভারি হয়ে গেল, তখন উভয়েই মিলে তাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র কাছে দুআ করলোঃ তুমি যদি আমাদেরকে ভাল সন্তান দান করো তাহলে আমরা তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করলেন, তখন দানকৃত বিষয়ে তারা তাঁর অংশীদার তৈরি করতে লাগল। বস্ত্তত আল্লাহ্ তাদের শরীক সাব্যস্ত করা থেকে বহু উর্ধ্বে। তারা কি এমন কাউকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে যে একটি জিনিষও সৃষ্টি করতে পারেনা; বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট। আর তারা না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজেদের সাহায্য করতে পারে’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৮৯-১৯২)
ইবনে হায্ম (রঃ) বলেনঃ উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, এমন প্রত্যেক নামই হারাম, যা দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের এবাদত করা বুঝায়। যেমন আবদু আমর, আবদুল কা’বা এবং এ জাতিয় অন্যান্য নাম। তবে আবদুল মুত্তালিব এর ব্যতিক্রম।
ব্যাখ্যাঃ ইবনে হাযম ছিলেন আন্দালুসীয়ার (বর্তমান স্পেনের) বিখ্যাত আলেমে দ্বীন। তাঁর পুরো পরিচয় হচ্ছে তিনি হলেন আবু মুহাম্মাদ আলী বিন আহমাদ বিন সাঈদ ইবনে হাযম আলকুরতুবী আয-যাহেরী। তিনি অনেক মূল্যবান কিতাব রচনা করেছেন। ৭২ বছর বয়সে তিনি ৪৫৬ হিজরী সালে মৃত্যু বরণ করেন।
আব্দুল মুত্তালেব হচ্ছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর দাদা। তার বংশ পরিক্রমা হচ্ছে, আব্দুল মুত্তালেব বিন হাশিম আব্দে মানাফ বিন কুসাই বিন কিলাব বিন মুররা বিন কাব বিন লুআঈ বিন গালেব বিন ফিহির বিন মালেক বিন নযর বিন কিনানা বিন খুযাইমা বিন মুদরিকা বিন ইলইয়াস বিন মুযার বিন নায্যার বিন মাআদ বিন আদনান। আদনানের উপরের নসবনামার মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে কোন সন্দেহ নেই যে, তারা সকলেই ইসমাঈল বিন ইবরাহীম খলীল (আঃ)এর বংশধর।
ইবনে হাযম (রঃ) এই মর্মে আলেমদের ইজমা বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেক এমন নাম হারাম, যার মাধ্যমে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদত সাব্যস্ত হয়। কেননা এতে আল্লাহর উলুহীয়াত এবং রুবূবীয়াতে শির্ক হয়ে থাকে। সকল সৃষ্টিই একমাত্র আল্লাহর মালিকানাধীন। তারা সকলেই আল্লাহর গোলাম, দাস ও বান্দা। সব কিছুই আল্লাহ তাআলা একমাত্র তাঁর এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। রুবুবীয়াত ও উলুহিয়াতে একমাত্র তাঁর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। কোন কোন মানুষ রবূবীয়াত ও উলুহীয়াতে কেবল আল্লাহরই এবাদত করছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে কেউ কেউ আল্লাহর রুবূবীয়াত ও আসমায়ে সিফাত স্বীকার করলেও আল্লাহর উলুহীয়াতে শির্ক করছে। আল্লাহর সৃষ্টিগত ও নির্ধারণগত হুকুম-আহকাম মেনে নেয়া ছাড়া তাদের সামনে অন্য কোন পথ নেই। সকলেই আল্লাহর সৃষ্টিগত নীতি ও আহকাম মানতে বাধ্য। আল্লাহ তাআলা সূরা মারইয়ামের ৯৩ নং আয়াতে বলেনঃ
إِنْ كُلُّ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا آَتِي الرَّحْمَنِ عَبْدًا
‘‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে এমন কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহ্র কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবেনা’’। এটি হচ্ছে সাধারণ দাসত্ব। অর্থাৎ সকলেই আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে আল্লাহর বাধ্যগত বান্দা। এখানে মুমিন-কাফেরসহ সকল প্রাণী ও জড়পদার্থও শামিল। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তাদের সকলকে আল্লাহর সামনে আসতেই হবে।
আর আল্লাহর বিশেষ দাসত্ব আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ও আনুগত্যশীলদের সাথে খাস। অর্থাৎ যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করে এবং তাঁর আনুগত্য করে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তাদেরকে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে হেফাযত ও সাহায্য করেন। আল্লাহ তাআলা সূরা যুমারের ৩৬ নং আয়াতে বলেনঃ أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ‘‘আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? মুমিন, মুখলিস এবং আল্লাহর খাস বান্দাদের ফযীলতে এমন আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
তবে আবদুল মোত্তালিব এর ব্যতিক্রমঃ আব্দুল মুত্তালিব সাধারণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েনা। কেননা আব্দুল মুত্তালিব (মুত্তালিবের দাস) দ্বারা সেই দাসত্ব উদ্দেশ্য নয়, যা দ্বারা গোলামী করা উদ্দেশ্য হয়। এটি এমন নাম, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদার সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাকে আব্দুল মুত্তালিব তথা মুত্তালিবের গোলাম বলার কারণ হল, তার চাচা মুত্তালিব যখন তাকে শিশুকালে তার মামার বাড়ি মদীনার বনী নাজ্জার গোত্র থেকে নিয়ে আসলেন তখন কুরাইশরা দেখল যে দীর্ঘ সফরের কারণে তার শরীরের রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। কুরাইশরা বলতে লাগলঃ এই বালকটি عبد المطلب অর্থাৎ মুত্তালিবের দাস। পরবর্তীতে জানা গেল যে, বালকটি মুত্তালিবের ভাই হাশিমেরই ছেলে। এভাবেই ঘটনাক্রমে এই নামের সাথে উবুদীয়াত যুক্ত হয়ে গেল। মুলতঃ দাসত্ব ও গোলামীর কোন অর্থ আব্দুল মুত্তালিবের মধ্যে ছিলনা। কিন্তু এই নামটিই তার জন্য ব্যবহৃত হল, এই নামেই তিনি প্রসিদ্ধ হয়ে গেলেন এবং এই নাম ছাড়া অন্য কোনো নামে তাকে ডাকাই হলনা। অথচ তার আসল নাম ছিল শায়বা।
আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশ এবং সমগ্র আরবের মধ্যে একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন জাহেলী যুগে কুরাইশদের নেতা এবং সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি। তিনিই দ্বিতীয়বার যমযম কূপ খনন করেন। যমযম কূপ খননের সময় যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, তা সীরাত এবং হাদীছের কিতাবসমূহে উল্লেখিত হয়েছে। হাজীদেরকে পানি পান করানোর সম্মান জনক কাজটি তিনিই করতেন। তার পরে তার বংশধরদের মধ্যেই যুগযুগ ধরে এটি সীমিত ছিল।
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ আদম (আঃ) যখন স্ত্রী হাওয়ার সাথে মিলিত হলেন তখন হাওয়া গর্ভবতী হলেন। এমতাবস্থায় শয়তান আদম ও হাওয়ার কাছে এসে বললো, আমি তোমাদের সেই বন্ধু ও সাথী, যে তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করেছে। তোমরা আমার আনুগত্য করো, নতুবা গর্ভস্থ সন্তানের মাথায় হরিণের শিং গজিয়ে দিবো। তখন সন্তান হাওয়ার পেট চিরে বের হবে। আমি অবশ্যই এ কাজ করে ছাড়বো। শয়তান এভাবে তাদেরকে আরো অনেক ভয় দেখাচ্ছিল।
শয়তান বললঃ তোমরা তোমাদের সন্তানের নাম আব্দুল হারিছ রেখো। তখন তাঁরা শয়তানের আনুগত্য করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর তাদের একটি মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হলো। আবারো হাওয়া গর্ভবতী হলেন। শয়তানও পুনরায় তাঁদের কাছে এসে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। এর ফলে তাদের অন্তরে সন্তানের প্রতি ভালবাসা তীব্র হয়ে দেখা দিল। তখন তারা সন্তানের নাম আবদুল হারিছ রাখলেন (কৃষকের বান্দা)।[5] এভাবেই তারা আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের মধ্যে তাঁর সাথে শরীক করে ফেললেন। এটাই হচ্ছে جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا -এ আয়াতের তাৎপর্য। ইবনে আবি হাতিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।[6]
ইবনে আবী হাতিম কাতাদাহ হতে সহীহ সনদে অপর একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ তারা আল্লাহর সাথে শরীক করেছিলেন আনুগত্যের ক্ষেত্রে; এবাদতের ক্ষেত্রে নয়।
সহীহ সনদে মুজাহিদ থেকে ইবনে আবী হাতিম, لَئِنْ آَتَيْتَنَا صَالِحًا এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরো বর্ণনা করেন যে, আদম ও হাওয়া এ ধরণের আশঙ্কায় পড়েছিলেন যে, সন্তানটি মানুষ হয় কি না। হাসান, সাঈদ প্রমুখের কাছ থেকেও আয়াতের এ অর্থই উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যাখ্যাঃ আমাদের সম্মানিত শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রঃ) فَلَمَّا آَتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا ‘‘অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করলেন, তখন দানকৃত বিষয়ে তারা তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করতে লাগল’’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ নিঃসন্দেহে এই ধরণের নাম রাখা শির্ক। তবে আদম ও হাওয়া (আঃ) প্রকৃত পক্ষে ঐ উদ্দেশ্যে নাম রাখেন নি, যা কামনা করেছিল ইবলীস তাদের থেকে।
এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হলেই এখানকার সন্দেহ অর্থাৎ আদম ও হাওয়া শির্কে লিপ্ত হওয়ার সন্দেহ দূর হয়ে যায়। কাতাদার বর্ণনাতেও তাই এসেছে। তিনি বলেনঃ এখানে আনুগত্যের ক্ষেত্রে তারা আল্লাহর শরীক স্থাপন করেছিলেন। এবাদতের ক্ষেত্রে শরীক করেন নি।[7] এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) যেসব নামের মধ্যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের এবাদতের অর্থ নিহিত রয়েছে সে নাম রাখা হারাম।
২) সূরা আরাফের ১৯০ নং আয়াতের তাফসীর জানা গেল।
৩) আলোচিত অধ্যায়ে বর্ণিত শির্ক শুধু নাম রাখার ক্ষেত্রেই হয়েছে। এর দ্বারা শির্কের পারিভাষিক শির্ক উদ্দেশ্য ছিলনা।
৪) আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ সন্তান লাভ করা একজন মানুষের জন্য নেয়ামতের বিষয়।
৫) আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে শির্ক এবং এবাদতের মধ্যে শির্কের ব্যাপারে সালাফে সালেহীনগণ পার্থক্য করেছেন।
[2] - ইমাম ইবনে জারীর তাবারী এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীছটি একাধিক কারণে দুর্বল। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হাদীছ নং- ৩৪২।
[3] - এই বর্ণনার সনদ দুর্বল। কেননা বর্ণনার সনদে রয়েছে। সুফিয়ান বিন অকী। তাকে দুর্বল বলা হয়েছে। তবে এই আছারটি হাসান থেকে বহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ)এর উক্তিই অধিক প্রসিদ্ধ। অধিকাংশ আলেমই তাঁর কথা গ্রহণ করেছেন। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সামনে আছে। দেখুনঃ কুররাতুল উয়ুন, পৃষ্ঠা নং- ৩৬৬।
[4] - অনেক দুর্বল সনদে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনাটি এসেছে। বর্ণনাটি মূলত এ রকম যে, হাওয়া (আঃ) যখন গর্ভবতী হলেন, তখন তাঁর কাছে ইবলীস আগমণ করল। অতঃপর ইবলীস হাওয়াকে বললঃ আমার কথা মেনে চলো। তাহলেই তোমার সন্তান বাঁচবে। সন্তানের নাম রাখো আব্দুল হারিছ। হাওয়া তার কথা মানেন নি। অতঃপর যখন হাওয়া সন্তান প্রসব করলেন, তখন সেই সন্তান মারা গেল।
হাওয়া পুনরায় গর্ভবতী হলেন। শয়তান আবার আসল এবং একই কথা বলল। কিন্তু হাওয়া ইবলীসের আনুগত্য করেন নি। এবারও সন্তান মারা গেল। তৃতীয়বার যখন হাওয়া (আঃ) গর্ভবতী হলেন তখন শয়তান এসে বলতে লাগল, তুমি যদি আমার আনুগত্য কর, তাহলে সন্তান বাঁচবে ও নিরাপদ থাকবে। অন্যথায় পেটের সন্তান মানুষ না হয়ে পশু হবে, সন্তানের শিং হবে এবং তোমার পেট চিরে বের হবে। ইত্যাদি আরো ভয় দেখাল। এতে আদম ও হাওয়া শয়তানের কথা মেনে নিল।
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে অনেক সনদে এগুলো বর্ণিত হয়েছে। যদিও সকল সনদেই দুর্বলতা রয়েছে, তথাপিও সবগুলো সনদ একত্রে মিলে সহীর স্তরে পৌঁছে যায়। ইবনে আববাসের ছাত্রগণও তাঁর থেকে বর্ণনাটি গ্রহণ করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।
সুতরাং বর্ণনাটি সহীহ ধরে নেয়া হলে আয়াতটির ব্যাখ্যা দুইভাবে করা যেতে পারেঃ
(১) فَلَمَّا آَتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا ‘‘অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করলেন, তখন দানকৃত বিষয়ে তারা তাঁর অংশীদার তৈরি করতে লাগল’’। এখানে আদম ও হাওয়া উদ্দেশ্য। ইবনে আববাস এবং অধিকাংশ আলেম এ কথাই বলেছেন।
(২) এখানে আদম ও হাওয়া উদ্দেশ্য নয়। আদমের বংশধর থেকে কারো ঘটনা এখানে বর্ণিত হয়েছে। হাসান বসরী এ কথাই বলেছেন। তারপরে ইবনে কাছীরও এ কথা গ্রহণ করেছেন। তবে এখানে অধিকাংশ আলেমের কথাই অধিক বিশুদ্ধ। আল্লাহই ভাল জানেন।
উপরোক্ত মত দু’টির পর্যালোচনায় বলা যেতে পারে যে, দ্বিতীয় মতের পক্ষের লোকেরা বলেনঃ আল্লাহর পক্ষ হতে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান পাওয়ার পর যারা দানকৃত বিষয়ে আল্লাহর অংশীদার নির্ধারণ করেছিল, তারা শির্কের পথ অবলম্বনকারী বনী আদমেরই একজন নারী ও একজন পুরুষ। তারা আদম ও হাওয়া ছিলেন না। এই কথার দলীল নিম্নরূপঃ
(ক) আমাদের পিতা আদম এবং মাতা হাওয়ার ব্যাপারে এই ধারণা কিভাবে করা সম্ভব যে, তারা শির্ক করেছেন? অথচ ইবলীস একবার তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে জান্নাত থেকে বের করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ মুমিনকে এক গর্ত হতে দুইবার দংশন করা যায়না। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং- ৬১৩৩)
(খ) আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ ‘‘আল্লাহ্ তাদের শরীক সাব্যস্ত করা থেকে বহু উর্ধ্বে’’। এখানে আল্লাহ তাআলা বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, এটি ছিল বনী আদমের মুশরিকদের কাজ। আদম ও হাওয়া তথা দুইজনের কাজ নয়।
(গ) আরো বলা যেতে পারে যে, সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ।
(ঘ) আর অন্যান্য আছার তথা সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীছের জবাবে বলেনঃ এগুলো হচ্ছে ইসরাঈলী বর্ণনা। ইসরাঈলী বর্ণনাগুলোর মধ্যে এমনও বর্ণনা রয়েছে, যা সত্য বলে প্রমাণিত। আর তাতে এমন বর্ণনাও রয়েছে, যা মিথ্যা হিসাবে সাব্যস্ত। তারা এই বর্ণনাটি তথা আদম ও হাওয়া শয়তানের আনুগত্য করে সন্তানের নাম আব্দুল হারিছ রেখেছেন, তা ঐ সমস্ত ইসরাঈলী বর্ণনার অন্তর্ভূক্ত বলে মনে করেন, যা মিথ্যা হওয়া উচিত। আর আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে আদম ও হাওয়ার দ্বারাই কাজটি হয়েছিল বলে যে ধারণা পাওয়া যায়, তার জবাব এভাবে দিয়েছেন যে, এখানে আল্লাহ তাআলার বাণীঃهُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ‘‘তিনিই সে সত্তা যিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে; আর তার থেকেই তৈরি করেছেন তার জুড়িকে, যাতে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারে’’-এরপর সম্বোধন আদম ও হাওয়াকে বাদ দিয়ে অন্য দিকে চলে গেছে। অর্থাৎ আদম ও হাওয়ার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আলোচনায় অন্যদের প্রসঙ্গ এসেছে।
প্রথম দলের অর্থাৎ অধিকাংশ আলেমের পক্ষ হতে দ্বিতীয় মত পোষণকারীদের ১ নং দলীলের জবাবে বলা হয়েছে যে, আসলে আদম ও হাওয়া শির্কই করে ফেলেছেন। তবে এটি হচ্ছে شرك الطاعة অর্থাৎ আনুগত্যের ক্ষেত্রে শির্ক, এবাদতের শির্ক নয়। এ কথার অর্থ হচ্ছে শয়তান যখন তাদেরকে ভয় দেখাল এবং আব্দুল হারিছ নাম রাখার জন্য বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করল, তখন তারা শয়তানের কথা মেনে নিলেন। সুতরাং এর মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে, এবাদতের ক্ষেত্রে তারা কখনই শির্কে লিপ্ত হন নি।
আর তাদের ২ নং দলীল তথা আর আল্লাহর বাণীঃ
فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ (190) أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ (191) وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًا وَلَا أَنْفُسَهُمْ يَنْصُرُونَ
‘‘আল্লাহ্ তাদের শরীক সাব্যস্ত করা থেকে বহু উর্ধ্বে। তারা কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে যে একটি জিনিষও সৃষ্টি করেনি; বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তারা না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজের সাহায্য করতে পারে’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৯০-১৯২)এর জবাবে বলা হয়েছে যে, এখানে বহুবচনের যে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, সে ব্যাপারে কথা হচ্ছে বহুবচনের শব্দ কখনই দুইজনের জন্যও ব্যবহৃত হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা সূরা তাহরীমের ৪ নং আয়াতে বলেনঃإِنْ تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا ‘‘তোমরা দু’জন যদি আল্লাহর কাছে তাওবা করো তবে তা তোমাদের জন্য হবে উত্তম। কেননা তোমাদের মন সরল সোজা পথ হতে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে’’। قلب এর দ্বি-বচন হচ্ছে قلبان। তা না হয়ে এখানে قلوب ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ আয়াতে উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুইজন স্ত্রী। এমনি আল্লাহ তাআলা সূরা মায়িদার ৩৮ নং আয়াতে বলেনঃ وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ‘‘যে পুরুষ ও নারী চুরি করে, তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ্ পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়’’। এখানে দ্বি-বচনের ক্ষেত্রে বহু বচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। মূলতঃ এখানে يدএর দ্বি-বচন يدانِ না হয়ে أيد বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে।
বহু বচনের শব্দ কেন ব্যবহৃত হয়েছে, তার দ্বিতীয় আরেকটি জবাব দেয়া যেতে পারে। তা এই যে, আমাদের পিতা আদম এবং মাতা হাওয়ার পক্ষ হতে যা প্রকাশিত হয়েছে, অনেক বনী আদম থেকেও তা প্রকাশিত হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলার বাণীঃ فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُون‘‘আল্লাহ্ তাদের শরীক সাব্যস্ত করার বহু উর্ধ্বে’’-এর মধ্যে দ্বি-বচনকে বহু বচনের শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আরো বলা যেতে পারে যে, আব্দুল হারিছ নাম রাখার মধ্যে যেই শির্ক রয়েছে, আল্লাহ তাআলা শুধু তা হতেই পবিত্র নন; বরং সকল প্রকার শির্ক থেকে এবং আল্লাহ ব্যতীত যত মাবুদের উপাসনা করা হয়, সে সকল মাবুদ থেকেই তিনি বহু উর্ধ্বে।
দ্বিতীয় মতের সমর্থকদের জবাবে আরো বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
فَلَمَّا آَتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آَتَاهُمَا
‘‘অতঃপর যখন আল্লাহ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করলেন, তখন দানকৃত বিষয়ে তারা তাঁর অংশীদার তৈরি করতে লাগল’’-এর পরে সম্বোধন আদম ও হাওয়াকে বাদ দিয়ে তাদের বংশধরদের প্রসঙ্গে চলে গেছে। (আল্লাহই ভাল জানেন)
আর তাদের ৩ নং দলীলের জবাবে বলা যায় যে, সামুরা (রাঃ)এর হাদীছ যঈফ ঠিকই, কিন্তু তাঁর বর্ণিত হাদীছই এ ব্যাপারে অধিকাংশ আলেমের কথার মূলভিত্তি নয়। বরং এ বিষয়ে সাহাবীদের থেকে বর্ণিত অনেক হাদীছ এবং তাবেয়ীদের থেকেও বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। আয়াতের বাহ্যিক দিক থেকেও তাই বুঝা যায়।
তাদের ৪ নং দলীলের জবাবে বলা হয়েছে যে, বর্ণনা ইসরাঈলী হলেও তা যে মিথ্যা নিশ্চিত করে তা বলা যাচ্ছেনা। কেননা তা বর্ণনা করেছেন একাধিক সাহাবী এবং বিনা প্রতিবাদে তা গ্রহণ করেছেন এই আয়াতের ব্যাখ্যাকারী অধিকাংশ তাবেয়ী। যদি ধরেও নেয়া হয় যে, এটি ইসরাঈলী বর্ণনার অন্তর্ভূক্ত, (অথচ এই কথা সঠিক নয়) তারপরও স্বীকার করতে হবে যে, সব ইসরাঈলী বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত নয়। পূর্বে বলা হয়েছে যে, আয়াতের বাহ্যিক অর্থ এই ব্যাখ্যার বিপরীত নয়। আল্লাহই ভাল জানেন।
আল্লাহর উপর ভরসা করে উপসংহারে বলা যায় যে, এটি এমন একটি কথা, যা বলেছেন কতিপয় সাহাবী। অন্যরা এ কথার বিরোধীতা করেছেন কিনা, তাও জানা যায়নি। অধিকাংশ তাবেয়ীর কথাও তাই। সেই কথাটি আয়াতের বাহ্যিক অর্থের বিরোধীও নয়। সুতরাং আদম ও হাওয়া শয়তানের কথা মেনে সন্তানের নাম আব্দুল হারিছ রেখেছিলেন- এ কথাই অন্যান্য কথার চেয়ে অধিক শক্তিশালী।
সুতরাং সামুরা (রাঃ), ইবনে আববাস এবং অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীছ মুতাবেক প্রথম মতটিই অধিক বিশুদ্ধ। ইবনে জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরে এ মতকেই সমর্থন করেছেন। মহাজ্ঞানী আল্লাহ তাআলাই এ ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত।
[5] - আব্দুল হারিছ শয়তানের উপাধী। সুতরাং আব্দুল হারিছ অর্থ শয়তানের বান্দা।
[6] - এই বর্ণনার সনদ দুর্বল। বিস্তারিত দেখুন, কুররাতুল উয়ুন, পৃষ্ঠা নং- ৩৭০।
[7] - আনুগত্যের ক্ষেত্রে এবং এবাদতের ক্ষেত্রে শির্ক করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যে ব্যক্তি কারো আনুগত্য করতে গিয়ে সাধারণ কোন পাপ কাজে লিপ্ত হয়, সেও আল্লাহ ছাড়া অন্যের হুকুমে পাপ কাজটি করে বলে এক প্রকার শির্কেই লিপ্ত হয়। তবে শয়তান, কুপ্রবৃত্তি ও দুষ্ট বন্ধু-বান্ধবদের আনুগত্য করে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া এবং এবাদতের ক্ষেত্রে অন্যের আনুগত্য করা তথা আল্লাহর সাথে শির্ক করা এক বিষয় নয়। মানুষ অনেক সময় কারো আনুগত্য করে পাপ কাজে লিপ্ত হয়; কিন্তু পাপ কাজের প্রতি বান্দার অন্তরে ভালবাসা থাকেনা এবং যার আনুগত্য করতে গিয়ে পাপ কাজটি করে, তার প্রতিও অন্তরের সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ থাকেনা। সুতরাং এটিকে আল্লাহর এবাদতের স্থলে অন্যের এবাদত বলা চলেনা।
পক্ষান্তরে অন্তরে ভালবাসা, ভয় ও সম্মান সহকারে আল্লাহর রুবুবীয়াত ও উলুহীয়াতে অন্য কাউকে আল্লাহর শরীক করলে তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদতে (শির্কে) পরিণত হয়। আদম ও হাওয়া (আঃ) শয়তানের কথা মেনে নিয়ে যে কাজটি করেছিলেন, তা কখনই এই শির্কের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা। সেটি ছিল প্রথম প্রকার তথা সাধারণ পাপ কাজেরই অন্তর্ভূক্ত, যাকে পরিভাষায় শির্ক বলা হয়না। সুতরাং বিশ্লেষণটি ভালোভাবে বুঝা উচিত।