যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসেনঃ[6]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) হাদীছের এই অংশের ব্যাখ্যায় বলেনঃ এই গুণটি শুধু আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাথে খাস নয়। মুসলিমদের ইমামদের সাথেও খাস নয়। কেননা যে মুত্তাকী মুমিন আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসে, আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসেন। এই হাদীছটি ঐসব নাওয়াসেব তথা আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি ঘৃণা পোষণকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী দলীল, যারা তাঁকে ভালবাসেনা, কিংবা তাঁকে কাফের মনে করে অথবা তাঁকে ফাসেক বলে। খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে ফাসেক মনে করে। যে সমস্ত রাফেযী সাহাবীদের ফযীলতে বর্ণিত হাদীছগুলোকে তাদের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার পূর্বের বলে মনে করে, তাদের কথা অনুপাতে এভাবে দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়। খারেজীরাও আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে একই কথা বলে। অর্থাৎ তারা আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে কাফের মনে করে। এ রকম কথা বাতিল। কেননা যার সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা অবগত আছেন যে, সে কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, আল্লাহ্ তাআলা এবং আল্লাহর রাসূল কখনই তার এ রকম প্রশংসা করতে পারেন না।
এ হাদীছ থেকে জানা গেল যে, মুহাববাত তথা ভালবাসা আল্লাহ্ তাআলার অন্যতম একটি গুণ। জাহ্মীয়া এবং তাদের অনুসারীরা এটিকে বিশ্বাস করেনা। এতে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর ফযীলত প্রমাণিত হয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাসভাবে তাঁকেই যুদ্ধের ঝান্ডা প্রদান করেছেন এবং খায়বারবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দিতে আদেশ করেছেন। দাওয়াত কবুল না করলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলেছেন। যুদ্ধাবস্থায় আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাতে অনেকগুলো কারামত প্রকাশিত হয়েছে। সীরাতের কিতাবসমূহে এ কারামতগুলো উল্লেখিত হয়েছে।
এই হাদীছ থেকে ইসলামের প্রতি মানুষকে আহবান করার গুরুত্ব বুঝা যাচ্ছে। যেই ইসলামের মূলভিত্তি হচ্ছে এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আল্লাহ্ তাআলা সূরা আল-ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলেনঃ
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
‘‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দিবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে’’।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আলী বিন আবি তালিব কোথায়? বলা হল, তিনি চক্ষুর পীড়ায় ভোগছেনঃ লেখক বলেনঃ এতে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়নের বিষয়টি জানা গেল। কেননা যারা ঝান্ডা পাওয়ার চেষ্টা করল, তারা তা পেল না। আর যিনি কোনো চেষ্টাই করেন নি, তিনি পেয়ে গেলেন।
তাঁকে ডেকে পাঠালেনঃ অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর নিকট একজন লোক পাঠালেন। যাতে তিনি তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ডেকে নিয়ে আসেন। মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে, সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ডেকে এনেছিলেন। ইয়াস বিন সালামাহ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, সালামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে নিয়ে এসেছিলেন। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন আসলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উভয় চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য সুস্থতার দুআ করলেন। এতে তিনি তাৎক্ষণিক পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুআর বরকতেই এমনটি হয়েছিল। অন্য হাদীছে এসেছে, তিনি দুআ করলেন। তাঁর দুআ কবুল করা হল। এতেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণিত হয়। এসব কিছু কেবল আল্লাহর পক্ষ হতেই এবং একমাত্র আল্লাহর কুদরতেই হয়েছিল। তিনিই কল্যাণ-অকল্যাণ এবং দেয়া-না দেয়ার একমাত্র মালিক। তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই এবং তিনিই একমাত্র রব।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলীকে ধীরস্থিরতার সাথে খায়বারবাসীর দিকে যেতে বললেন এবং শত্রুদের দূর্গের নিকটবর্তী আঙ্গিনায় অবতরণ করার আদেশ দিয়েছিলেন।
তখন তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করবেঃ এই অধ্যায়ের উদ্দেশ্য এটিই। মুসলিমদের উচিৎ শুধু মানুষকে ইসলামের দিকে হেদায়াত করার উদ্দেশ্যেই জিহাদ পরিচালনা করা। মুসলিম শাসকদের এটিই একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ যেই দ্বীন ইসলামকে আল্লাহ্ তাআলা পছন্দ করেছেন এবং যা দিয়ে তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন, তা হচ্ছে শুধু আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করা এবং ইসলামের মূলনীতিগুলোর প্রতি অন্তর দিয়ে বিশ্বাস পোষণ করা। আল্লাহর সামনে মস্তক অবনত করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য মাবুদসমূহ বর্জন করে একমাত্র আল্লাহর এবাদত করা। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর এবাদত করবে এবং সেই সাথে অন্যান্য ছোট মাবুদগুলোরও এবাদত করবে, সে মুসলিম হিসাবে গণ্য হবেনা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর এবাদত করতে অহংকার করবে, সেও মুসলিম নয়। ঈমানের হাকীকত হচ্ছে, অন্তর দিয়ে সত্যায়ন করা এবং জবান দিয়ে তা স্বীকার ও উচ্চারণ করা।
অতঃপর তাদের উপর আল্লাহর যে হক রয়েছে, সে সম্পর্কে জানিয়ে দাওঃ অর্থাৎ কালেমায়ে তায়্যেবা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’-এর যে সমস্ত হক আল্লাহ্ তাআলা শরীয়তের অন্তর্ভূক্ত করেছেন এবং যে সমস্ত বিষয়ের হুকুম করেছেন, তা তাদেরকে জানিয়ে দাও। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বান্দার আমলসমূহও ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। তবে আশায়েরা ও মুরজিয়া সম্প্রদায় এর বিরোধীতা করেছে। তাদের কথা হল ঈমান শুধু অন্তরের কথার নাম। তাদের ধারণা হল, শুধু তাসদীক বা সত্যায়নকেই ঈমান বলা হয়। এ ক্ষেত্রে তারা কুরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত দলীলসমূহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি। কেননা দ্বীন হচ্ছে ঐ সমস্ত কর্মের নাম, যা করার জন্য আল্লাহ্ তাআলা আদেশ দিয়েছেন এবং ঐ সমস্ত কাজ না করার নাম, যা থেকে আল্লাহ্ তাআলা নিষেধ করেছেন।
এই হাদীছে ঐ সমস্ত নামধারী মুসলিমদের প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা কারামতে আওলীয়ার দোহাই দিয়ে শির্ক-বিদআত জায়েয হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করে থাকে। কেননা কারামত অলীদের অতিরিক্ত ফযীলতের প্রমাণ বহন করে। আমীরুল মুমিনীন আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর এমন অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যা অন্যদের জন্য হয়নি। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাসহ তাঁর আরও অনেক ফজীলত রয়েছে, যা অন্যদের ছিল না। যারা তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল এবং তাঁকেই ইলাহ্ মনে করেছিল গর্ত খনন করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে তিনি তাদেরকে পুড়ে ছাই করেছিলেন। আহলে বাইত এবং অন্যদের ব্যাপারে যারা মুশরিকদের ন্যায় আকীদাহ পোষণ করেছিল, তিনি তাদের সাথে একই আচরণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু অন্যান্য সাহাবীদের তুলনায় শির্ক ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়েছিলেন।
এমনি উমার ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহুর অসংখ্য কারামত থাকা সত্ত্বেও শির্কের পথ বন্ধ করায় অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। সাহাবীদের মধ্যে যারা কারামত প্রাপ্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে এ দু’জন তথা আলী ও উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সর্বোত্তম। তাদের হাতে প্রকাশিত কারামত তাদেরকে তাওহীদের উপর অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করেছে এবং মুশরিকদের প্রতিবাদে কঠোর থেকে কঠোরতর করেছে। আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করার মাধ্যমে এবং হুরমুযানের বাইতুল মালে সাহাবায়ে কেরামগণ যখন দানিয়ালের কবরের সন্ধান পেলেন, তখন তা গোপন করে দেয়ার মধ্যে শির্কের বিরুদ্ধে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর কঠোর ভূমিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। নবী-রাসূলদের হাতে মু’জিযা প্রকাশ তাওহীদের প্রতি দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল এবং মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে তাদেরকে কঠোর করেছিল। যাদের উপর শয়তান জয়লাভ করেছে, তাদের কারো কাছ থেকে কিছু কিছু শয়তানী কার্যকলাপ প্রকাশিত হয়ে থাকে। ফলে তারা তাদের প্রভুর স্মরণকে ভুলে যায়। যে সমস্ত জাহেল লোক শির্কে লিপ্ত তারা এই শয়তানী ভেলকিবাজিকে কারামত মনে করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেগুলো শয়তানের চক্রান্ত ও চালবাজি ছাড়া অন্য কিছু নয়। এর মাধ্যমে অনেক সময় হক ও বাতিল এবং হেদায়াত ও গোমরাহীর মাঝে পার্থক্য করা যায়না। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে লক্ষ্য করে বলেনঃ
فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ إِنَّكَ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
‘‘অতএব অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে, শক্তভাবে তুমি তা আঁকড়ে থাকো। নিশ্চয়ই তুমি সঠিক পথেই রয়েছো’’। (সূরা যুখরুফঃ ৪৩) সুতরাং প্রত্যেকের উচিৎ কুরআন মজীদ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা এবং তা থেকেই হেদায়াত অনুসন্ধান করা। কেননা কুরআনের পথই হচ্ছে সরল ও সঠিক পথ। শয়তানের চাকচিক্যময় পথে দৃষ্টি না দেয়া। শয়তানের সাজানো পথে অগ্রসর হয়ে এই উম্মতের এবং পূর্ববর্তী উম্মতের অনেকেই ধোঁকায় পড়েছে।
তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়াত করেন, তাহলে তোমার জন্য এটি হবে লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তমঃ তৎকালে লাল উট ছিল আরবদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। এখানে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং আল্লাহ্ তাআলার কাছে হেদায়াত প্রার্থনা করা হয়েছে। যাতে করে ইসলামের দাঈগণ হেদায়াত প্রার্থীকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে এই বিরাট ফযীলতটি অর্জন করতে পারেন। সুতরাং এ বিষয়ে মোটেই অলসতা করা ঠিক নয়। আল্লাহই তাওফীক দাতা। এ অধ্যায় থেকে নিম্বোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণকারীর নীতি ও পথ হচ্ছে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করা।
২) ইখলাসের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা। কেননা অনেক লোক হকের পথে মানুষকে আহবান জানালেও মূলতঃ তারা নিজেদের নফস বা স্বার্থের দিকেই আহবান জানায়।[7]
৩) তাওহীদের দাওয়াতের জন্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকা অপরিহার্য্য।
৪) উত্তম তাওহীদের প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার প্রতি গাল-মন্দ আরোপ করা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র থাকা।
৫) আল্লাহ তাআলার প্রতি গাল-মন্দ আরোপ করা নিকৃষ্ট শি©র্কর অন্তর্ভূক্ত।
৬) তাওহীদই হচ্ছে সর্বপ্রথম ফরয।
৭) সর্বাগ্রে এমনকি নামাযেরও পূর্বে তাওহীদের প্রতি আহবান করতে হবে।
৮) আল্লাহর একত্বের ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য প্রদান করা। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই, এ ঘোষণা দেয়া।
৯) একজন মানুষ আহলে কিতাবের অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে তাওহীদ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে পারে কিংবা তাওহীদের জ্ঞান থাকলেও সে অনুযায়ী আমল নাও করতে পারে।
১০) শিক্ষা দানের প্রতি পর্যায়ক্রমে গুরুত্বারোপ করা।
১১) সর্বপ্রথম অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে দাওয়াতী কাজ শুরু করা জরুরী।
১২) যাকাত প্রদানের খাত সম্পর্কে জানা গেল।[8]
১৩) শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রের সংশয় ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব উন্মোচন করা বা নিরসন করা জরুরী।
১৪) যাকাত আদায়ের সময় বেছে বেছে উৎকৃষ্ট মাল নেয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা।
১৫) মজলুমের বদ দুআ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
১৬) মজলুমের বদ দুআ এবং আল্লাহ তাআলার মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকার সংবাদ।
১৭) সাইয়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং বড় বড় সৎ লোকদের উপর যেসব দুঃখ- কষ্ট এবং কঠিন বিপদাপদ আপতিত হয়েছে, তা তাওহীদেরই প্রমাণ পেশ করে।
১৮) আমি আগামীকাল এমন একজনের হাতে পতাকা প্রদান করবো যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ উক্তি নবুওয়াতের অন্যতম একটি নিদর্শন।
১৯) আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর চোখে থুথু প্রদানের মাধ্যমে চোখ ভালো হয়ে যাওয়াও নবুওয়াতের একটি নিদর্শন।
২০) আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা সম্পর্কে জানা গেল।
২১) আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাতে পতাকা তুলে দেয়ার পূর্বে রাতে পতাকা পাওয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের উদ্বেগ ও ব্যাকুলতার মধ্যে রাত্রি যাপন এবং বিজয়ের সুসংবাদে আশ্বস্ত থাকার মধ্যে তাদের মর্যাদা নিহিত আছে।
২২) বিনা প্রচেষ্টায় ইসলামের পতাকা তথা নেতৃত্ব লাভ করা আর চেষ্টা করেও তা লাভে ব্যর্থ হওয়া, উভয় অবস্থাতেই তাকদীরের প্রতি ঈমান রাখা জরুরী।
২৩) ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যাও, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ উক্তির মধ্যে ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দানের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
২৪) যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে ইসলামের দাওয়াত পেশ করা জরুরী।
২৫) ইতিপূর্বে যাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে তাদেরকেও যুদ্ধের আগে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে।
২৬) أخبرهم بمايجب عليهم রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বাণী হিকমত ও কৌশলের সাথে দাওয়াত পেশ করার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
২৭) দ্বীন ইসলামে আল্লাহর হক সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
২৮) আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাতে একজন মানুষ হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়ার ছাওয়াব।
২৯) ফতোয়ার ব্যাপারে মুফতীর কসম করা জায়েয।
এই হাদীছ থেকে এটি প্রমাণিত হয়না যে, আলী (রাঃ) ছিলেন সর্বোত্তম সাহাবী। বরং সাহাবীদের প্রত্যেকেরই রয়েছে বিশেষ বিশেষ ফযীলত।
[7] - অনেক হাদীছেই রিয়া তথা লোক দেখানো আমল হতে সাবধান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
‘‘কাজেই যে তার রবের সাক্ষাতের প্রত্যাশী, সে যেন সৎ আমল করে এবং তার রবের এবাদতে যেন কাউকে শরীক না করে’’। (সূরা কাহাফঃ ১১০) যেই তিন ব্যক্তির দ্বারা কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে, তাদের প্রথম হবে ঐ ব্যক্তি, যে মানুষকে শুনানোর জন্য আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছিল, দ্বিতীয় হবে ঐ ব্যক্তি, যে মানুষকে শুনানোর জন্য কুরআন পড়েছিল এবং তৃতীয় হবে ঐ ব্যক্তি, যে মানুষকে দেখানোর জন্য দান করেছিল।
[8] - হাদীছে মাত্র একটি খাতের কথা বলা হয়েছে। সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা যাকাত বন্টনের সব খাত এক সাথে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
‘‘এসব যাকাত তো আসলে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য৷ আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য৷ তাছাড়া দাস মুক্ত করা এবং ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য৷ এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি নির্ধারিত বিধান এবং আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান’’৷