ছোট শির্ক বলতে এমন কাজ ও কথাকে বুঝানো হয় যা তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে ইসলামের গন্ডী থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দিবেনা বটে, তবে তা কবীরা গুনাহ্ তথা মহা পাপ অপেক্ষা আরো জঘন্যতম।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« فَلاَ تَجْعَلُوْا لِلهِ أَنْدَادًا وَّأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»
‘‘সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করো না। অথচ তোমরা এ সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছো’’। (বাক্বারাহ্ : ২২)
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
الْأَنْدَادُ هُوَ الشِّرْكُ أَخْفَى مِنْ دَبِيْبِ النَّمْلِ عَلَى صَفَاةٍ سَوْدَاءَ فِيْ ظُلْمَةِ اللَّيْلِ، وَهُوَ أَنْ تَقُوْلَ: وَاللهِ وَحَيَاتِكَ يَا فُلاَنُ!! وَحَيَاتِيْ، وَتَقُوْلَ: لَـوْلاَ كَلْبَةٌ هَذِهِ لَأَتَانَا اللُّصُوْصُ، وَلَوْلاَ الْبَطُّ فِيْ الدَّارِ لَأَتَى اللُّصُوْصُ، وَقَوْلُ الرَّجُلِ لِصَاحِبِهِ: مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ، وَقَوْلُ الرَّجُلِ: لَوْلاَ اللهُ وَفُلاَنٌ، لاَ تَجْعَلْ فِيْهَا فُلاَنًا، هَذَا كُلُّهُ بِهِ شِرْكٌ
‘‘আন্দাদ্’’ বলতে শির্ককে বুঝানো হচ্ছে যা অন্ধকার রাতে কালো পাথরে পিঁপড়ার চলন চাইতেও সূক্ষ্ম। যা টের পাওয়া খুবই দুরূহ। যেমন: তোমার এ কথা বলা যে, হে অমুক! আল্লাহ্ তা’আলা এবং তোমার ও আমার জীবনের কসম! অথবা এ কথা বলা যে, যদি এ কুকুরটা না হতো তাহলে চোর অবশ্যই আসতো। যদি ঘরে হাঁসগুলো না থাকতো তাহলে অবশ্যই চোর ঢুকতো। অথবা কারোর নিজ সাথীকে এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ তা’আলা এবং তুমি না চাইলে কাজটা হতো না অথবা কারোর এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ তা’আলা এবং অমুক না থাকলে কাজটা হতো না। অমুক শব্দটি সাথে লাগাবে না। (বরং বলবে: আল্লাহ্ তা’আলা যদি না চাইতেন কাজটা হতো না)। কারণ, এ সব কথা শির্কের অন্তর্গত’’।
ছোট শির্ক ও বড় শিরকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পার্থক্য রয়েছে যা নিম্নরূপ:
১. বড় শির্ক তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে ইসলামের গন্ডী থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়। এর বিপরীতে ছোট শির্ক এমন নয় বটে। তবে তা কবীরা গুনাহ্ তথা মহা পাপ অপেক্ষা আরো জঘন্যতম।
২. বড় শির্ক তাতে লিপ্ত ব্যক্তির সকল নেক আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। এর বিপরীতে ছোট শির্ক শুধু সে আমলকেই বিনষ্ট করে যে আমলে এ জাতীয় শির্কের সংমিশ্রণ রয়েছে। অন্য সকল আমলকে নয়।
৩. বড় শির্ক তাতে লিপ্ত ব্যক্তির জান ও মাল তথা সার্বিক নিরাপত্তা বিনষ্ট করে দেয়। এর বিপরীতে ছোট শির্ক এমন নয়।
৪. বড় শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকালের জন্য জাহান্নামী হয়ে যায়। জান্নাত তার জন্য হারাম। তবে ছোট শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি এমন নয়। বরং সে কিছু দিনের জন্য জাহান্নামে গেলেও পরবর্তীতে তাকে জাহান্নাম থেকে চিরতরে মুক্তি দেয়া হবে।
৫. বড় শির্কে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখা যাবেনা। বরং তার সাথে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যদিও সে নিকট আত্মীয় হোকনা কেন। তবে ছোট শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি এমন নয়। বরং তার সাথে সম্পর্ক ততটুকুই রাখা যাবে যতটুকু তার ঈমান রয়েছে। তেমনিভাবে তার সাথে ততটুকুই সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে যতটুকু তার মধ্যে শির্ক রয়েছে।