অপ্রকাশ্য শির্ক বলতে এমন সব ব্যাপারকে বুঝানো হচ্ছে যা চোখে দেখা যায় না অথবা কানে শুনা যায়না অথবা অনুভব করা যায় না।
অপ্রকাশ্য শির্ক আবার তিন প্রকার। যা নিম্নরূপ:
১. নিয়্যাতের শির্ক:
নিয়্যাতের শির্ক বলতে কোন নেক আমল একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার উদ্দেশ্যে না করে শুধুমাত্র দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে করাকে বুঝানো হয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْـحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِيْنَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيْهِا وَهُمْ فِيْهَا لاَ يُبْخَسُوْنَ، أُوْلآئِكَ الَّذِيْنَ لَيْسَ لَـهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ، وَحَبِطَ مَا صَنَعُوْا فِيْهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
‘‘যারা পার্থিব জীবন ও উহার সাজসজ্জা চায় আমি তাদের কৃতকর্মের ফল পূর্ণভাবে দুনিয়াতেই দিয়ে দেবো। এতটুকুও তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরা এমন যে, আখেরাতে তাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তাদের সকল আমল তখন অকেজো এবং নিষ্ফল বলে বিবেচিত হবে’’। (হূদ: ১৫, ১৬)
মানুষ যে নেক আমল একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার উদ্দেশ্যে না করে অন্য কোন উদ্দেশ্যে করে থাকে তা চার প্রকার:
১. কোন নেক আমল আল্লাহ্ তা’আলার জন্য করেছে ঠিকই। কিন্তু সে এর মাধ্যমে আখিরাতের কোন পুণ্য চায় না। বরং সে এর মাধ্যমে নিজ পরিবার ও পরিজনের হিফাজত অথবা ধন-সম্পদের উন্নতি ও রক্ষা এমনকি নিয়ামতের স্থায়িত্ব কামনা করে। এমন ব্যক্তির জন্য আখিরাতে কিছুই নেই। আল্লাহ্ চান তো দুনিয়াতে তার আশা পূর্ণ হবে মাত্র। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
২. কোন নেক আমল মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করা। পরকালের পুণ্যের আশায় নয়। এর জন্যও আখিরাতে কিছুই থাকবে না।
৩. শুরু থেকেই কোন নেক আমল দুনিয়ার জন্য করা। আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য নয়। যেমন: সম্পদের জন্য হজ্জ বা জিহাদ করা।
৪. কোন নেক আমল আল্লাহ্ তা’আলার জন্য করেছে ঠিকই। কিন্তু সাথে সাথে সে এমন কাজও করে যাচ্ছে যা তাকে ইসলামের গন্ডী থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেয়। অথবা সে আদতেই কাফির। এ ব্যক্তি তার আমলগুলো একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য করে থাকলেও তা আল্লাহ্ তা’আলার জন্য হবে না। কারণ, সে কাফির এবং এ ব্যক্তির জন্য আখিরাতে কিছুই থাকবে না।
দুনিয়া কামানোর জন্য কোন নেক আমল করা হলে দুনিয়া যে নিশ্চিতভাবেই পাওয়া যাবে তাও কিন্তু সঠিক নয়। বরং আল্লাহ্ তা’আলা যাকে যতটুকু দিতে চাবেন সে ততটুকুই পাবে। এর বেশি কিছু সে পাবে না। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيْهَا مَا نَشَآءُ لِـمَنْ نُّرِيْدُ، ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ، يَصْلاَهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا
‘‘কোন ব্যক্তি পার্থিব কোন সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে ইচ্ছা এবং যা ইচ্ছা অতিসত্বর দিয়ে থাকি। অতঃপর আমি তার জন্য নির্ধারিত করে রাখি জাহান্নাম। যাতে সে প্রবেশ করবে অপমানিত ও লাঞ্ছিতভাবে’’। (ইস্রা/বানী ইস্রাঈল : ১৮)
রাসূল (সা.) দুনিয়াকামী ব্যক্তিদেরকে দুনিয়ার গোলাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা কখনো আল্লাহ্ তা’আলার গোলাম হতে পারে না।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
تَعِسَ عَبْدُ الدِّيْنَارِ وَعَبْدُ الدِّرْهَمِ، وَعَبْدُ الْـخَمِيْصَةِ، إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ، وَإِنْ لَـمْ يُعْطَ سَخِطَ، تَعِسَ وَانْتَكَسَ، وَإِذَا شِيْكَ فَلاَ انْتَقَشَ، طُوْبَى لِعَبْدٍ آخِذٍ بِعِنَانِ فَرَسِهِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، أَشْعَثَ رَأْسُهُ، مُغْبَرَّةٍ قَدَمَاهُ، إِنْ كَانَ فِيْ الْـحِرَاسَةِ كَانَ فِيْ الْـحِرَاسَةِ، وَإِنْ كَانَ فِيْ السَّاقَةِ كَانَ فِيْ السَّاقَةِ، إِنِ اسْتَأْذَنَ لَـمْ يُؤْذَنْ لَهُ، وَإِنْ شَفَعَ لَـمْ يُشَفَّعْ
‘‘ধ্বংস হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম! ধ্বংস হোক পোশাক-পরিচ্ছদের গোলাম! তাকে কিছু দিলে খুশি। না দিলে বেজার। ধ্বংস হোক! কখনো সে সফলকাম না হোক! সমস্যায় পড়লে সমস্যা থেকে উদ্ধার না হোক! (কাঁটা বিঁধলে না খুলুক)। জান্নাত ঐ ব্যক্তির জন্য যে সর্বদা আল্লাহ্’র রাস্তায় ঘোড়ার লাগাম ধরেই আছে। মাথার চুলগুলো তার এলোমেলো। পা যুগল ধূলিমলিন। সেনাবাহিনীর পাহারায় দিলেও রাজি। পশ্চাতে দিলেও রাজি। উপরস্থদের নিকট অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না। কারোর জন্য সুপারিশ করলে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না’’। (বুখারী, হাদীস ২৮৮৬, ২৮৮৭ বায়হাক্বী : ৯/১৫৯, ১০/২৪৫)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! رَجُلٌ يُرِيْدُ الْـجِهَادَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَهُوَ يَبْتَغِيْ عَرَضًا مِنْ عَرَضِ الدُّنْيَا ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: لاَ أَجْرَ لَهُ ، أَعَادَ عَلَيْهِ ثَلاَثًا وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: لاَ أَجْرَ لَهُ
‘‘জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! জনৈক ব্যক্তি আল্লাহ্’র পথে জিহাদ করতে চায়। অথচ তার উদ্দেশ্য দুনিয়া কামানো। তখন রাসূল (সা.) বললেন: তার কোন সাওয়াব হবে না। লোকটি রাসূল (সা.) কে এ কথাটি তিন বার জিজ্ঞাসা করলো। আর রাসূল (সা.) প্রত্যেকবারই একই উত্তর দিলেন’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২৫১৬ হাকিম : ২/৮৫ বায়হাক্বী : ৯/১৬৯ আহমাদ : ২/২৯০, ৩৬৬)
ক্বাতাদা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
مَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ وَنِيَّتَهُ وَطِلْبَتَهُ جَازَاهُ اللهُ بِحَسَنَاتِهِ فِيْ الدُّنْيَا ثُمَّ يُفْضِيْ إِلَى الآخِرَةِ وَلَيْسَ لَهُ حَسَنَةٌ، وَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيُجَازَى بِحَسَنَاتِهِ فِيْ الدُّنْيَا وَيُثَابُ عَلَيْهَا فِيْ الآخِرَةِ
‘‘দুনিয়াই যার আশা, ভরসা, চাওয়া ও পাওয়া হবে আল্লাহ্ তা’আলা তার সকল নেক আমলের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দেবেন। আখেরাতের জন্য একটি নেক আমলও তার জন্য গচ্ছিত রাখা হবে না। তবে খাঁটি ঈমানদার তার নেক আমলের ফল দুনিয়াতেও পাবে আখেরাতেও’’।