বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ছোট শির্কের প্রকারভেদ (ক . প্রকাশ্য শির্ক) মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

গণনার শির্ক বলতে যে কোন পন্থায় বা যে কোন বিষয়ে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করাকে বুঝানো হয়।

এর মূল হচ্ছে ঐশী বাণী চুরি। অর্থাৎ জিনরা কখনো কখনো ফিরিশ্তাদের কথা চুরি করে গণকদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর গণকরা এর সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা জুড়িয়ে মানুষকে বলে বেড়ায়। তাই তাদের কথা কখনো কখনো সত্য প্রমাণিত হয়।

’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

سَأَلَ أُنَاسٌ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْكُهَّانِ، فَقَالَ: إِنَّهُمْ لَيْسُوْا بِشَيْءٍ، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! فَإِنَّهُمْ يُحَدِّثُوْنَ بِالشَّيْءِ يَكُوْنُ حَقًّا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: تِلْكَ الْكَلِمَةُ مِنَ الْـحَقِّ، يَخْطَفُهَا الْـجِنِّيُّ، فَيُقَرْقِرُهَا فِيْ أُذُنِ وَلِيِّهِ كَقَرْقَرَةِ الدَّجَاجَةِ، فَيَخْلِطُوْنَ فِيْهِ أَكْثَرَ مِنْ مِئَةِ كَذْبَةٍ

‘‘সাহাবায়ে কিরাম নবী (সা.) কে গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: তারা কিছুই নয়। তখন সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! তারা কখনো কখনো সত্য কথা বলে থাকে। তখন তিনি বললেন: সে সত্য কথাটি ঐশী বাণী। জিনরা ফিরিশ্তাদের মুখ থেকে তা ছোঁ মেরে নিয়ে মুরগির করকর ধ্বনির ন্যায় তাদের ভক্তদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর তারা এর সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা জুড়িয়ে দেয়।

(বুখারী, হাদীস ৫৭৬২, ৬২১৩, ৭৫৬১ মুসলিম, হাদীস ২২২৮ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২৫৮ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ২০৩৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৮ আহমাদ : ৬/৮৭)

গণনা বা ভবিষ্যদ্বাণী করা দু’টি কারণেই শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কারণ দু’টি নিম্নরূপ:

১. এগুলো করতে গেলে জিনদের সহযোগিতা নেয়ার জন্য তাদের নামে মানত বা কোরবানি দিতে হয় কিংবা যে কোন ভাবে তাদের নৈকট্য লাভ করতে হয়। যা শির্কের অন্তর্গত।

২. গণকরা ইল্মুল্ গায়েবের দাবি করে থাকে। তাও একটি মারাত্মক শির্ক বৈ কি?

গণকের নিকট যাওয়াই শরীয়ত বিরোধী তথা হারাম কাজ। বরং কুফরিও বটে।

মু’আবিয়া বিন্ ’হাকাম (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ حَدِيْثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالْإِسْلاَمِ، وَإِنَّ مِنَّا رِجَالًا يَأْتُوْنَ الْكُهَّانَ، قَالَ: فَلاَ تَأْتِهِمْ

‘‘আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল! বেশি দিন হয়নি আমি বরবর ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে মুসলমান হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন। আর এ দিকে আমাদের অনেকেই গণকদের নিকট আসা যাওয়া করে। তাদের নিকট যেতে কোন অসুবিধে আছে কি? তখন রাসূল (সা.) বললেন: তাদের নিকট কখনো যেও না।

(মুসলিম, হাদীস ৫৩৭ আবু দাউদ, হাদীস ৯৩০, ৩৯০৯ ইবনু হিববান/ইহ্সান, হাদীস ২২৪৪, ২২৪৫ নাসায়ী : ৩/১৪-১৬ বায়হাক্বী : ২/২৪৯-২৫০ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৮/৩৩ আহমাদ : ৫/৪৪৭)

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ سَاحِرًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم

‘‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা যাদুকরের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তখনই সে মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি অবতীর্ণ বিধান তথা কুর’আন মাজীদকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ কাফির হয়ে গেলো’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১০ হাদীস ১০০০৫)

’ইম্রান বিন্ ’হুসাইন ও ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ

‘‘যে ব্যক্তি কোন কর্ম যাত্রার অশুভতা নির্ণয় করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এবং যে ব্যক্তি আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে অথবা যার জন্য তা করা হয়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি যাদু করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এ সকল ব্যক্তি আমার উম্মত নয়’’। (বায্যার, হাদীস ৩০৪৩, ৩০৪৪)

গণককে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলে জিজ্ঞাসাকারীর চল্লিশ দিনের নামায বিনষ্ট হয়ে যায়।

’হাফসা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةُ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً

‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট গেলো এবং তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলো তাতে করে তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবেনা’’। (মুসলিম, হাদীস ২২৩০)

অপর দিকে গণকের কথা বিশ্বাস করলে বিশ্বাসকারী সাথে সাথে কাফির হয়ে যায়।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوْ امْرَأَةً فِيْ دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم

‘‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করলো অথবা কোন মহিলার মলদ্বার ব্যবহার করলো অথবা কোন গণকের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তখনই সে মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি অবতীর্ণ বিধান তথা কুর’আন মাজীদকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ কাফির হয়ে গেলো’’।

(তিরমিযী, হাদীস ১৩৫ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯০৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৬৪৪ ত্বাহাওয়ী/মুশকিলুল্ আ-সার, হাদীস ৬১৩০ ইবনুল্ জারূদ/মুনতাক্বা, হাদীস ১০৭ বায়হাক্বী : ৭/১৯৮ আহমাদ : ২/৪০৮, ৪৭৬)