বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ছোট শির্কের প্রকারভেদ (ক . প্রকাশ্য শির্ক) মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

ঝাঁড় ফুঁকের শির্ক বলতে এমন মন্ত্র পড়ে ঝাঁড় ফুঁক করাকে বুঝানো হয় যে মন্ত্রের মধ্যে শির্ক রয়েছে।

যায়নাব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমার স্বামী ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রা.) একদা আমার গলায় একটি সুতো দেখে বললেন: এটি কি? আমি বললাম: এটি মন্ত্র পড়া সুতো। এ কথা শুনা মাত্রই তিনি তা খুলে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। অতঃপর বললেন: নিশ্চয়ই আব্দুল্লাহ্’র পরিবার শির্কের কাঙ্গাল নয়। বরং ওরা যে কোন ধরনের শির্ক হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তিনি আরো বললেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ، قَالَتْ: قُلْتُ: لِـمَ تَقُوْلُ هَذَا؟ وَاللهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِيْ تَقْذِفُ، وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلاَنٍ الْيَهُوْدِيِّ يَرْقِيْنِيْ، فَإِذَا رَقَانِيْ سَكَنَتْ! فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: إِنَّمَا ذَاكَ عَمَلُ الشَّيْطَانِ؛ كَانَ يَنْخَسُهَا بِيَدِهِ، فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا؛ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكِ أَنْ تَقُوْلِيْ كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

‘‘নিশ্চয়ই ঝাঁড় ফুঁক, তাবিজ কবচ ও ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার্য বস্ত্ত শির্ক। যায়নাব বললেন: আমি বললাম: আপনি এরূপ কেন বলছেন? আল্লাহ্’র কসম! আমার চোখ উঠলে ওমুক ইহুদীর নিকট যেতাম। অতঃপর সে মন্ত্র পড়ে দিলে তা ভালো হয়ে যেতো। তখন ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রা.) বলেন: এটি শয়তানের কাজ। সেই নিজ হাতে তোমার চোখে খোঁচা মারতো। অতঃপর যখন মন্ত্র পড়ে দেয়া হতো তখন সে তা বন্ধ রাখতো। তোমার এতটুকু বলাই যথেষ্ট ছিলো যা রাসূল (সা.) বলতেন। তিনি বলতেন: হে মানুষের প্রভু! আপনি আমার রোগ নিরাময় করুন। আপনি আমাকে সুস্থ করুন। কারণ, আপনিই একমাত্র সুস্থতা দানকারী। আপনার নিরাময়ই সত্যিকার নিরাময়। যার পর আর কোন রোগ থাকে না’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৩ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৫৯৬)

সকল মন্ত্রই শির্ক নয়। বরং সেই মন্ত্রই শির্ক যাতে শির্কের সংমিশ্রণ রয়েছে। যাতে ফিরিশ্তা, জিন ও নবীদের আশ্রয় বা সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। তাদের নিকট ফরিয়াদ কামনা করা হয়েছে বা তাদেরকে ডাকা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। অতএব আল্লাহ্ তা’আলার নাযিল করা কিতাব, তাঁর নাম ও বিশেষণ দিয়ে ঝাঁড় ফুঁক করা জায়িয।

’আউফ বিন্ মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা জাহিলী যুগে অনেকগুলো মন্ত্র পড়তাম। তাই আমরা রাসূল (সা.) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:

اِعْرِضُوْا عَلَيَّ رُقَاكُمْ، لاَ بَأْسَ بِالرُّقِيِّ مَا لَـمْ يَكُنْ فِيْهِ شِرْكٌ

‘‘তোমরা তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার সামনে উপস্থিত করো। কারণ, শির্কের মিশ্রণ না থাকলে যে কোন মন্ত্র পড়তে কোন অসুবিধে নেই’’। (মুসলিম, হাদীস ২২০০ আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৬)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

رَخَّصَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ الرُّقْيَةِ مِنَ الْعَيْنِ وَالْـحُمَةِ وَالنَّمْلَةِ

‘‘রাসূল সা. কুদৃষ্টি তথা বদনযর, বিচ্ছু বা সর্পবিষ ইত্যাদি এবং পিপড়ার মন্ত্র পড়ার অনুমতি দেন’’। (মুসলিম, হাদীস ২১৯৬ তিরমিযী, হাদীস ২০৫৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৫৮১)

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. মন্ত্র পড়া নিষেধ করে দিলে ’আমর বিন্ ’হায্মের গোত্ররা তাঁর নিকট এসে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমরা একটি মন্ত্র পড়ে বিচ্ছুর বিষ নামাতাম। অথচ আপনি মন্ত্র পড়তে নিষেধ করে দিয়েছেন। অতঃপর তারা রাসূল (সা.) কে মন্ত্রটি শুনালে তিনি বললেন:

مَا أَرَى بَأْسًا، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَّنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ

‘‘এতে কোন অসুবিধে নেই। তোমাদের কেউ নিজ ভাইয়ের উপকার করতে পারলে সে তা অবশ্যই করবে’’। (মুসলিম, হাদীস ২১৯৯)

শুধু কোন মন্ত্রের ফায়দা প্রমাণিত হলেই তা পড়া জায়িয হয়ে যায়না। বরং তা শরীয়তের কষ্টি পাথরে যাচাই করে নিতে হয়। দেখে নিতে হয় তাতে শির্কের কোন মিশ্রণ আছে কি না?

ইবনুত্ তীন (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

إِنَّ الْـحَيَّةَ لِعَدَاوَتِهَا الْإِنْسَانَ بِالطَّبْعِ تُصَادِقُ الشَّيَاطِيْنَ لِكَوْنِهِمْ أَعْدَاءَ بَنِيْ آدَمَ، فَإِذَا عُزِمَ عَلَى الْحَيَّةِ بِأَسْمَاءِ الشَّيَاطِيْنِ أَجَابَتْ وَخَرَجَتْ مِنْ مَكَانِهَا، وَكَذَا اللَّدِيْغُ إِذَا رُقِيَ بِتِلْكَ الْأَسْمَاءِ سَالَتْ سُمُوْمُهَا مِنْ بَدَنِ الْإِنْسَانِ

‘‘সাপ স্বভাবগতভাবে মানুষের শত্রু হওয়ার দরুন তার সাথে মানুষের আরেকটি শত্রু শয়তানের ভালো সখিত্ব রয়েছে। এতদ্কারণেই সাপের উপর শয়তানের নাম পড়ে দম করা হলে সে তা মান্য করে নিজ স্থান ত্যাগ করে। তেমনিভাবে সাপের ছোবলে আক্রান্ত ব্যক্তিকেও শয়তানের নামে ঝাঁড় ফুঁক করা হলে মানুষের শরীর হতে বিষ নেমে যায়’’।

মোটকথা, চার শর্তে ঝাঁড় ফুঁক করা জায়িয। যা নিম্নরূপ:

১. তা আল্লাহ্ তা’আলার নাম বা গুণাবলীর মাধ্যমে হতে হবে।

২. নিজস্ব ভাষায় হতে হবে। যাতে করে তা সহজেই বোধগম্য হয় এবং তাতে শির্কের মিশ্রণ আছে কিনা তা বুঝা যায়।

৩. যাদুমন্ত্র ব্যতিরেকে এবং শরীয়ত সমর্থিত জায়িয পন্থায় হতে হবে। কারণ, যে কোন উদ্দেশ্যে যাদুর ব্যবহার শরীয়তের দৃষ্টিতে কুফরীর শামিল।

৪. এ বিশ্বাস বদ্ধমূল থাকতে হবে যে, আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছে ছাড়া মন্ত্র (তা যাই হোক না কেন) কোন কাজই করতে পারবেনা। আর এর বিপরীত বিশ্বাস হলে তা বড় শির্কে রূপান্তরিত হবে।