বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

ফরিয়াদের শির্ক বলতে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য আহবান করাকে বুঝানো হয়। যে ধরনের সাহায্য সাধারণত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ করতে সক্ষম নয়। যেমন: রোগ নিরাময় বা নৌকোডুবি থেকে উদ্ধার ইত্যাদি।

এ জাতীয় ফরিয়াদ গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।

যে কোন সঙ্কট মুহূর্তে সাহায্যের জন্য ফরিয়াদ করা হলে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই সে ফরিয়াদ শুনে থাকেন এবং তদনুযায়ী বান্দাহ্কে তিনি সাহায্য করেন। অন্য কেউ নয়।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«إِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ»

‘‘স্মরণ করো সেই সংকট মুহূর্তের কথা যখন তোমরা নিজ প্রভুর নিকট কাতর স্বরে প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তোমাদের সেই প্রার্থনা কবুল করেছিলেন’’। (আনফাল্ : ৯)

মক্কার কাফিররা সংকট মুহূর্তে নিজ মূর্তিদের কথা ভুলে গিয়ে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই ফরিয়াদ করতো। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে সেই সংকট থেকে উদ্ধার করতেন। এরপর তারা আবারো আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে গিয়ে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমান যুগের কবর বা পীর পূজারীরা আরো অধঃপতনে পৌঁছেছে। তারা সংকট মুহূর্তেও আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে গিয়ে নিজ পীরদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে।

আল্লাহ্ তা’আলা মক্কার কাফিরদের সম্পর্কে বলেন:

«فَإِذَا رَكِبُوْا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ، فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُوْنَ»

‘‘তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকে। অন্য কাউকে নয়। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে পানি থেকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন তখন তারা আবারো তাঁর সাথে শির্কে লিপ্ত হয়’’। (আনকাবূত: ৬৫)

তিনি আরো বলেন:

«قُلْ أَرَأَيْتَكُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُ اللهِ أَوْ أَتَتْكُمُ السَّاعَةُ أَغَيْرَ اللهِ تَدْعُوْنَ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ، بَلْ إِيَّاهُ تَدْعُوْنَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُوْنَ إِلَيْهِ إِنْ شَآءَ وَتَنْسَوْنَ مَا تُشْرِكُوْنَ»

‘‘আপনি ওদেরকে বলুন: তোমরাই বলো! আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে কোন শাস্তি অথবা কিয়ামত এসে গেলে তোমরা কি তখন আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবে? তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে অবশ্যই সঠিক উত্তর দিবে। সত্যিই তোমরা তখন অন্য কাউকে ডাকবেনা। বরং তখন তোমরা ডাকবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাকে। তখন তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। আর তখন তোমরা অন্যকে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে শরীক করা ভুলে যাবে’’। (আন্’আম : ৪০-৪১)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَإِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِيْ الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ إِلاَّ إِيَّاهُ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ، وَكَانَ الإِنْسَانُ كَفُوْرًا»

‘‘সমুদ্রে থাকাকালীন যখন তোমরা কোন বিপদে পড়ো তখন আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য সকল শরীক তোমাদের মন থেকে উধাও হয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন তখন তোমরা আবারো তাঁর প্রতি বিমুখ হয়ে যাও। সত্যিই মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ’’। (ইস্রা/বানী ইস্রাঈল : ৬৭)

তিনি আরো বলেন:

«وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُوْنَ، ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنْكُمْ إِذَا فَرِيْقٌ مِّنْكُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُوْنَ»

‘‘তোমরা যে সকল নিয়ামত ভোগ করছো তা সবই আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হতে। অতঃপর যখন তোমরা দুঃখ দীনতার সম্মুখীন হও তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে ডাকো। অতঃপর যখন তিনি তোমাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করে দেন তখন আবারো তোমাদের একদল নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে শির্কে লিপ্ত হয়ে যায়’’। (নাহ্ল : ৫৩-৫৪)

আল্লাহ্ তা’আলা এ জাতীয় শির্কে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামী বলেছেন। তিনি বলেন:

«وَإِذَا مَسَّ الإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهُ مُنِيْبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهُ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْ إِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ وَجَعَلَ للهِ أَنْدَادًا لِّيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِهِ، قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيْلًا، إِنَّكَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ»

‘‘মানুষকে যখন দুঃখ দুর্দশা পেয়ে বসে তখন সে একনিষ্ঠভাবে তার প্রভুকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি ওর প্রতি কোন অনুগ্রহ করেন তখন সে ইতিপূর্বে আল্লাহ্ তা’আলাকে স্মরণ করার কথা ভুলে গিয়ে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে অন্যদেরকে তাঁর পথ থেকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। (হে রাসূল!) তুমি বলে দাও: আরো কিছু দিন কুফরীর মজা ভোগ করো। নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামীদের অন্যতম’’। (যুমার : ৮)

পীর বা কবর পূজারীরা যতই নিজ ওলী বা বুযুর্গদের নিকট ফরিয়াদ করুকনা কেন, যতই তাদের পূজা অর্চনা করুকনা কেন তারা এতটুকুও নিজ ভক্তদের দুর্দশা ঘুচাতে পারবে না।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«قُلِ ادْعُوْا الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُوْنِهِ فَلاَ يَمْلِكُوْنَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلاَ تَحْوِيْلًا»

‘‘আপনি বলে দিন: তোমরা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া যাদেরকে পূজ্য বানিয়েছো তাদেরকে ডাকো। দেখবে, তারা তোমাদের কোন দুঃখ দুর্দশা দূর করতে পারবে না। এমনকি সামান্যটুকু পরিবর্তনও নয়’’।

(ইস্রা/বানী ইস্রাঈল : ৫৬)

তিনি আরো বলেন:

«أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْـمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الأَرْضِ، أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ، قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ»

‘‘মূর্তীদের উপাসনা করাই উত্তম না সেই সত্তার উপাসনা যিনি আর্তের ডাকে সাড়া দেন, বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং যিনি পৃথিবীতে তোমাদেরকে প্রতিনিধি বানিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলার সমকক্ষ অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো’’। (নাম্ল : ৬২)

একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই সকল সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তা যাই হোকনা কেন এবং যে পর্যায়েরই হোকনা কেন।

আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

يَا عِبَادِيْ! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُوْنِيْ أَهْدِكُمْ، يَا عِبَادِيْ! كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلاَّ مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُوْنِيْ أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِيْ! كُلُّكُمْ عَارٍ إِلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُوْنِيْ أَكْسُكُمْ، يَا عِبَادِيْ! إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ

‘‘(আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাহ্দেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন) হে আমার বান্দাহরা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট। শুধু সেই ব্যক্তিই হিদায়াতপ্রাপ্ত যাকে আমি হিদায়াত দেবো। অতএব তোমরা আমার নিকটই হিদায়াত চাও। আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দেবো। হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত। শুধু সেই ব্যক্তিই আহারকারী যাকে আমি আহার দেবো। অতএব তোমরা আমার নিকটই আহার চাও। আমি তোমাদেরকে আহার দেবো। হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা সবাই বিবস্ত্র। শুধু সেই ব্যক্তিই আবৃত যাকে আমি আবরণ দেবো। অতএব তোমরা আমার নিকটই আবরণ চাও। আমি তোমাদেরকে আবরণ দেবো। হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা সবাই রাতদিন গুনাহ্ করছো। আর আমি সকল গুনাহ্ ক্ষমাকারী। অতএব তোমরা আমার নিকটই ক্ষমা চাও। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো’’। (মুসলিম, হাদীস ২৫৭৭)