পীরদের আস্তানা, দরবার বা তথাকথিত খান্ক্বা শরীফ ইসলামের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য বিদ্রোহ। শুধু আক্বীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই নয় বরং তারা আমলের ক্ষেত্রেও রাসূল (সা.) আনীত বিধানের সাথে বিদ্রোহ করেছে। বাস্তব কথা এইযে, খান্ক্বা, মাযার, দরবার বা পীরদের আস্তানায় ইসলামের যতটুকু অসম্মান হয়েছে ততটুকু অসম্মান মন্দির, গির্জা বা চার্চেও হয়নি।
পীর-বুযুর্গদের কবরের উপর ঘর বা গুম্বজ তৈরী করা, কবরকে সাজ-সজ্জা বা আলোকিত করা, কবরের উপর ফুল ছড়ানো, কবরকে গোসল দেয়া, কবরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কবরের খাদিম হয়ে তার পার্শ্বে অবস্থান করা, কবরের জন্য কোন কিছু মানত করা, কবরকে উপলক্ষ করে খানা বা শিরনি বিতরণ করা, পশু জবাই করা, কবরের জন্য রুকূ’-সিজ্দাহ্ করা, কবরের সামনে দু’ হাত বেঁধে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো, কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট কোন কিছু চাওয়া, তাদের নামে চুলের বেণী রাখা বা শরীরের কোথাও সুতা বেঁধে দেয়া, তাদের নামের দোহাই দেয়া বা বিপদের সময় তাদেরকে ডাকা, মাযারের চতুষ্পার্শ্বে তাওয়াফ করা, তাওয়াফ শেষে কুরবানী করা বা মাথা মুন্ডানো, মাযারের দেয়ালে চুমু খাওয়া, বরকতের জন্য কবরের মাটি যত্ন সহকারে সংগ্রহ করা, খালি পায়ে কবর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং উল্টো পায়ে ফিরে আসা ইত্যাদি ইত্যাদি তো যে কোন কবরের জন্যই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যা শির্ক ও বিদ্’আত ছাড়া আর অন্য কিছু নয়।
কোন কোন খান্ক্বার খিদমতের জন্য তো ছোট বাচ্চা বা যুবতী মেয়েও ওয়াক্ফ করা হয় এবং নিঃসন্তান মহিলাদেরকে নয় রাতের জন্য খাদিমদের খিদমতে রাখা হয়। তথাকথিত যমযমের পানি পান করানো হয়। আবার কোন কোন মাযারে তো মদ, গাঁজা ও আফিমের আড্ডা জমে। কোন কোন মাযাওে তো যেনা-ব্যভিচার বা সমকামিতার মতো নিকৃষ্ট কাজও চর্চা করা হয়। আবার কোন কোন মাযারকে তো হত্যাকারী ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলও মনে করা হয়।
উরস উপলক্ষে পুরুষ ও মহিলাদের সহাবস্থান, নাচ-গান তো নিত্য দিনেরই ব্যাপার। পাকিস্তানের সরকারী হিসেবে যখন সেখানে প্রতি বছর ৬৩৪ টি উরস তথা প্রতি মাসে ৫৩ টি উরস সংঘটিত হয়ে থাকে তখন বাংলাদেশে প্রতি মাসে বিশ-ত্রিশটা উরস তো হয়েই থাকবে এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, লাহোরের মুসলমানরা ‘‘মধু লাল’’ নামক এক ব্রাহ্মণের কবরের উপরও মাযার বানিয়েছে যার উপর শেখ হুসাইন নামক এক বুযুর্গ আশিক হয়েছিলেন। মধু লালের মৃত্যুর পর শেখ হুসাইনের ভক্তরা মধু লালকে তার আশিকের পাশেই দাফন করে দেয় এবং উভয় নামকে মিলিয়ে তাদের মাযারকে মধু লাল হুসাইনের মাযার বলে আখ্যায়িত করে।