প্রশ্নঃ (১৯৭) সীরাতে মুস্তাকীম তথা সেই সঠিক পথ কোন্টি, যার উপর চলার জন্যে আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই পথ ব্যতীত অন্য পথে চলতে নিষেধ করেছেন?

উত্তরঃ এই পথটি হচ্ছে দ্বীন ইসলামের পথ, যা দিয়ে আল্লাহ্ তাআলা সমস্ত রাসূল প্রেরণ করেছেন, যার জন্যেই সমস্ত কিতাব নাযিল করেছেন, যে দ্বীন ব্যতীত আল্লাহ্ অন্য কোন দ্বীন কবুল করবেন না, যে দ্বীনের পথে না চললে কেউ নাজাত পাবে না। যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য পথে চলবে, সে সঠিক পথ হারা হয়ে যাবে এবং বিপদগামী হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ

وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ

‘‘এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের দিকে গমণ করোনা। তাহলে সে সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর সঠিক পথ হতে বিপদগামী করে দিবে। (সূরা আনআমঃ ১৫৩) আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)এর বর্ণিত হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতের ব্যাখ্যা অতি সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ

خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا خَطًّا ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ ثُمَّ تَلَا ( وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে মাটিতে একটি রেখা টানলেন। সে রেখার উপর হাত রেখে বললেন, এটি হল আল্লাহর পথ। অতঃপর সে রেখার ডানে ও বামে আরো অনেক গুলো রেখা অঙ্কন করে বললেন, এ সবগুলোই পথ। তবে এ সব পথের মাথায় একটি করে শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। সে সদাসর্বদা মানুষকে ঐ পথের দিকে আহবান করছে।[1] একথা বলার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ

‘‘এটিই আমার সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এই সঠিক পথের অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করনা। তাহলে সে সব পথ তোমাদেরকে আল্লাহর সঠিক পথ হতে বিপদগামী করে দিবে’’। (সূরা আনআমঃ ১৫৩)

অন্য এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা সীরাতুল মুস্তাকীম তথা সঠিক পথের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। মনে করুন একটি সোজা পথ। পথের উভয় পাশে রয়েছে দু’টি প্রাচীর। পথের দুই পাশের প্রাচীরের দরজাগুলো খোলা রয়েছে। দরজাগুলোর উপর পর্দা ঝুলন্ত আছে। সোজা রাস্তার দরজার মুখে একজন আহবানকারী ডেকে বলছেঃ হে লোক সকল! তোমরা সকলেই সোজা পথে প্রবেশ কর। এদিক সেদিক যেয়ো না। আর একজন আহবানকারী রাস্তার উপর থেকে আহবান করছে। কোন মানুষ যখন দুই পাশের প্রাচীরের দরজাগুলোর কোন একটি দরজা খুলতে চায়, তখন সেই আহবানকারী ডেকে বলতে থাকেঃ অমঙ্গল হোক তোমার! দরজা খুলো না। কেননা তুমি যখন উহা খুলবে তখন তাতে প্রবেশ করবে। উপরোক্ত উপমার মধ্যে সোজা পথটি ইসলাম। প্রাচীর দু’টি হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। উন্মুক্ত দরজাগুলো হচ্ছে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্ত্তসমূহ। রাস্তার মাথায় আহবানকারীটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। রাস্তার উপরের আহবানকারীটি হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ হতে একজন নসীহতকারী, যা প্রত্যেক মুসলিমের অন্তরে বিদ্যমান।[2]

[1] - মুসনাদে আহমাদ, (১/৪৬১), মুস্তাদরাকুল হাকেম, (২/৩১৮)। ইমাম হাকেম বলেনঃ হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তাতে একমত পোষণ করেছেন। ইমাম আলবানী হাসান বলেছেন। দেখুনঃ মেশকাতুল মাসাবীহ হাদীছ নং- ১৬৬।

[2] - মুসনাদে আহমাদ, (৪/১৮২), হাকেম, (১/৭৩)। হাকেম বলেনঃ হাদীছটি ইমাম মুসলিমের শর্তে সহীহ।